প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

বাই-পোলার ডিস-অর্ডার (Bipolar Disorder)

বাই-পোলার ডিস-অর্ডারে যারা ভুগছে তাদের মেজাজ বা 'মুড' বিশাল পরিবর্তন- চক্রে আবর্তিত হয়। এক এক সময়ে উত্তেজনা ও উন্মত্ততায় মন বিক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে (manic phase), আবার অন্য সময়ে অহেতুক দুঃখের ভারে অবসাদগ্রস্ত হয়ে (depression) পড়ে।

'ম্যানিক' অবস্থায় রোগী আনন্দ ও উত্তেজনায় ভরপুর থাকে। বাড়াবাড়ি রকমের আত্মবিশ্বাসের ফলে নানান অসম্ভব এবং ভয়াবহ কাজেও আত্মনিয়োগ করতে পারে। ঘুমনোর প্রয়োজন বোধ করে না। টাকা খর্চা করতে দ্বিধা করে না। এই অবস্থাটা চলে গিয়ে মনটা হয় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে, অথবা উল্টোদিকে চলে গিয়ে অবসাদগ্রস্ত হয়। নৈরাশ্য তখন পেয়ে বসে। কোনও কিছু পরিস্কার ভাবে চিন্তা করা বা কোনও ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্তে নেওয়া তখন কঠিন হয়। স্মৃতিশতিও তখন একটু দুর্বল হয়ে যায়। আগে যা ভালো লাগতো, তা তখন আর ভালো লাগে না।

মনের ভাবের এই পরিবর্তন অনেক সময়ে ধীরে ধীরে আসতে পারে - কয়েকদিন বা কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে। আবার দ্রুতও আসতে পারে - মাত্র কয়েকঘণ্টা বা মিনিটের ব্যবধানে। আর মনের এই দু অবস্থা কয়েকঘণ্টা থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত থাকতে পারে।

এই রোগকে অনেক সময়ে ম্যানিক ডিপ্রেসিভ ডিস-অর্ডারও বলা হয়। উপযুক্ত ওষুধের ব্যবহার মনের ভাব বা মুড-এর এই নাগরদোলাকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে পারে। বাই-পোলার ডিস-অর্ডারের তীব্রতা বেশি হলে অসুস্থ ব্যক্তির পক্ষে নিয়মিত কাজকর্ম করা সম্ভবপর নাও হতে পারে।

বাড়াবাড়ি না হলে এই অসুখ সব সময়ে বোঝা যায় না। এটিকে দৈনন্দিন জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া বলে মনে হতে পারে। কিন্তু যত তাড়াতাড়ি অসুখটিকে ধরতে পারা যায়, এটিকে আয়ত্তের মধ্যে রাখা ততোই সুবিধাজনক হয়।
এর নানান ওষুধ আছে। কিন্তু কোনটে ভালো কাজ করবে জানতে হলে বিভিন্ন ওষুধ চেষ্টা করে দেখার প্রয়োজন হতে পারে। নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যাওয়া এবং কোন ওষুধ কাজ করছে বা করছে না - সে বিষয়ে তাঁকে জানিয়ে তাঁর পরামর্শ নেওয়া এই অসুখে জরুরী।

সাধারণতঃ 'ম্যানিক' অবস্থায়, যখন মনটা ফুরফুরে থাকে, তখন ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ না করে ওষুধ বন্ধ করার প্রবণতা অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। কিন্তু সব অবস্থাতেই নিয়মিত ভাবে ওষুধ খেয়ে যাওয়া উচিত - যখন মনটা ঝরঝরে লাগছে তখনও। ডাক্তার ওষুধ বন্ধ করতে বললে অবশ্য অন্যকথা।

যখন কোনও ওষুধ 'ম্যানিক' অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দেওয়া হয়, তখন বোঝার চেষ্টা করতে হয় কখন সেই অবস্থাটা আসছে, যাতে আগেভাগেই ওষুধ খেতে শুরু করে নিজেকে প্রস্তুত করা যায়। মনের ভাবের এই পরিবর্তন সম্পর্কে অবহিত হওয়ার ব্যাপারে কাউন্সেলিং কিছুটা সাহায্য করে।

এই অসুখে অনেক সময়েই নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়, কারণ মনটা নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। রোগীর এই কষ্ট ও তার বহিঃপ্রকাশ পরিবারের অন্যান্যদের জীবনের উপরেও বিরূপ প্রভাব ফেলে। এটির সঙ্গে ঝুঝতে না পেরে তাঁরাও ভেঙ্গে পড়তে পারেন। তাই তাঁদেরও নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অভিজ্ঞ কাউন্সেলরের সাহায্য নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

বাইপোলার ডিস-অর্ডার নির্ণয় করাটা কঠিন। এর জন্য কোনও সহজ পরীক্ষা নেই। সাধারণতঃ মনোচিকিত্সক বা মনোবিদ নানান প্রশ্ন করে এটি নির্ণয় করার চেষ্টা করেন। তবে যদি ম্যানিক অবস্থাটা কয়েক সপ্তাহ ধরে চলে, এবং এই অসুখের কতগুলি লক্ষণ প্রকট ভাবে দেখা দেয়, যেমন অত্যাধিক কথা বলা, ঘুমের স্বল্পতা, উল্টোপাল্টা দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যবহার, মনের মধ্যে চিন্তার ঝড় বওয়া - তখন এটি নির্ণয় সহজ হয়। এই অবস্থায় রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা করে অন্যান্য রোগের সম্ভাবনা বাদ দিয়ে ডাক্তাররা রোগটি সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হন।

সাধারণভাবে বাই-পোলার অসুখে ডাক্তাররা এক বা একাধিক ওষুধ দেন:
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই একটি মুড স্টেবিলাইজার দেওয়া হয় । ম্যানিক অবস্থার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য অzাণ্টি-সাইকোটিক ওষুধও অবস্থা বিশেষে দেওয়া হয়।
ডিপ্রেশন বা অবসাদকে মোকাবিলা করার জন্য অ্যান্টি-ডিপ্রেসেণ্ট দেওয়া হয়।

কেন বাই-পোলার ডিস-অর্ডার হয় সেটা এখনও পরিস্কার ভাবে জানা যায় নি। এটি কিছুটা বংশগত বলে মনে করা হয়। কিন্তু পরিবেশের প্রভাবও একটা আছে বলে অনেকে বিশ্বাস করেন। মস্তিষ্কে কেমিক্যাল-এর একটা অসাম্য এর মূলে রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। বাইপোলার ডিসর্ডার-এ অনেকেই ভোগেন। মোটামুটিভাবে শতকরা একজন এতে ভুগছেন বলে অনুমিত হয়।

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

[স্বাস্থ্য বিষয়ক যে-সব আলোচনা অবসর-এ রয়েছে তার উদ্দেশ্য সাধারণ ভাবে স্বাস্থ্য ও বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে পাঠকদের অবহিত করা। এই আলোচনা কোনও ভাবেই ডাক্তারের পরামর্শের বিকল্প নয়। কারোর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনও সমস্যা থাকলে, তাঁর উচিত সরাসরি কোনও ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা।]

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।