প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

ক্যাফিন (Caffeine) - কিছু তথ্য


ক্যাফিন কথাটির সঙ্গে অল্পবিস্তর প্রায় সবাই পরিচিত। চায়ের পাতা, কফির বীজ, বা কোকো বাদাম ইত্যাদিতে এটি স্বাভাবিক ভাবেই থাকে। ফলে চা, কফি, ইত্যাদি পানীয়তে এটি পাওয়া যায়। কিছু কিছু পানীয়তে এটি কৃত্রিম উপায়েও যুক্ত করা হয়। ৬-আউন্স কাপ কফিতে সাধারণতঃ ১০০ মিলিগ্রাম ক্যফিন থাকে। চায়ের ক্ষেত্রে এই ক্যাফিনের পরিমান প্রায় ৭০ মিলিগ্রাম। কোকাকোলা, পেপ্সি ইত্যাদি কোলার ১২ আউন্সের ক্যান-এ ৫০ মিলিগ্রামের মত ক্যাফিন থাকে। বাজারে যে চকলেট দুধ পাওয়া যায়, তাতে ক্যাফিনের পরিমান আউন্সে ৬ মিলিগ্রামের মত। এছাড়া অ্যানাসিন, ডেক্সাট্রিম ইত্যাদি ওষুধে ক্যাফিন থাকে। সারাদিন আমরা কত কাপ চা বা কফি খাই হিসেব করলে মোটামুটি আন্দাজ করা যাবে কতটা ক্যাফিন আমরা প্রতিদিন শরীরের নিচ্ছি।
ক্যাফিনের বৈজ্ঞানিক নাম হল ট্রাইমিথাইলজ্যান্থিন (trimethylxanthine) এবং এর রাসায়নিক ফর্মুলা হল C8H10N4O2 । এটি বিশুদ্ধ অবস্থায় সাদা গুঁড়োর মত, যার স্বাদ অত্যন্ত তিতো।

ক্যাফিনের প্রভাব এক এক জনের উপর এক এক রকম। ক্যাফিনের জন্য অনেকের ঘুমোতে অসুবিধা হয়। ক্যাফিন মস্তিষ্কের রক্তপ্রবাহী নালীকে সঙ্কুচিত করে, ফলে অনেক সময়ে মাথা দপ্দপ করার ব্যথা এর ফলে কমে। অ্যানাসিন ইত্যাদিতে এই জন্যেই ক্যাফিন ব্যবহার করা হয়। ক্যাফিনের প্রভাবে অনেকের বুক ধড়ফড় করে, রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। ক্যাফিন যকৃত রক্তে শর্করা পরিমান বাড়িয়ে দিয়ে শরীরকে আরও এনার্জি দেয়। বেশ অনেকটা কফি বা চা খাওয়ার পর ক্যাফিনের এইসব প্রভাবগুলো অল্পবিস্তর অনেকে নুভব করতে পারেন।

ক্যাফিন শরীরে ডোপামিনের পরিমান বাড়িয়ে দেয়। এক্ষেত্রে ক্যাফিন অনেকটা অ্যামফেটামিনের মত কাজ করে। ডোপামিন এক ধরণের নিউরো-র্ট্যান্সমিটার (neurotransmitter) যা মস্তিষ্কের কিছু কিছু অংশে আরামের অনুভুতিকেন্দ্রকে উদ্দীপিত করে। কেউ কেউ মনে করেন ক্যাফিনের নেশার সঙ্গে এই ব্যাপারটি যুক্ত। একটু ঘুম ঘুম ফেলে এক কাপ চা বা কফি জেগে থাকতে সাহায্য করে ঠিকই, কিন্তু এর ক্রিয়া বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। বার বার চা বা কফি খাওয়া শরীরের পক্ষে ভালো নয়, কারণ এটি শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া কেন্দ্রগুলিকে অকারণে উত্তেজিত করে।

ক্যাফিনের অত্যাধিক ব্যবহার মানুষের ঘুম বা বিশ্রাম নেবার ক্ষমতাকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করে। ক্যাফিনের প্রভাব থেকে মুক্ত হতে শরীরের বহুঘণ্টা লাগে। ঘুমের আগে কফি বা চা পান করলে, তার প্রভাবে ঘুম হলেও সেই ঘুম গভীর ঘুম হয় না। ফলে সকালে ঘুম কাটানোর জন্য আবার কফি বা চা খেতে হয় - এইভাবে অনেক সময়ে ক্যাফিন-চক্র চলে।

যাঁরা চা, কফি, কোলা ইত্যাদি পান করতে চান, কিন্তু ক্যাফিন সহ্য করতে পারেন না, তাঁদের জন্য এগুলি ক্যাফিন-শূন্য করা হয়। এই ক্যাফিন-মুক্ত পানীয়ের আগে 'ডিক্যাফিনেটেড' শব্দটা জুড়ে বিক্রি করা হয়। পানীয় থেকে ক্যাফিন দূর করার জন্য নানা রকমের প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়। যেমন,মিথাইল ক্লোরাইড প্রক্রিয়া, এথাইল অ্যাসিটেট প্রক্রিয়া, কার্বন ডায়ক্সাইড প্রক্রিয়া, জলীয় প্রক্রিয়া, ইত্যাদি।

কোনো পদ্ধতিতেই ক্যাফিন সম্পূর্ণভাবে দূর করা হয় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী ক্যাফিনের পরিমান ২.৫ শতাংশের কম থাকলে সেটিকে ডিক্যাফিনেটেড বলা যায়।

[স্বাস্থ্য বিষয়ক যে-সব আলোচনা অবসর-এ রয়েছে তার উদ্দেশ্য সাধারণ ভাবে স্বাস্থ্য ও বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে পাঠকদের অবহিত করা। এই আলোচনা কোনও ভাবেই ডাক্তারের পরামর্শের বিকল্প নয়। কারোর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনও সমস্যা থাকলে, তাঁর উচিত সরাসরি কোনও ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা।]

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।