প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

ডাউন সিন্ড্রম (Down Syndrom)


১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দে ইংল্যাণ্ডের সারে শহরের এক মানসিক প্রতিবন্ধী আবাসের সুপারিণ্টেণ্ড জন ল্যাংডন ডাউন খেয়াল করেন প্রতিবন্ধীদের মধ্যে একাংশ চেহারায় অন্যদের থেকে একটু আলাদা। এদের মুখ একটু চ্যাপ্টা, ঘাড়টা ছোট। ডাউন এদের মোঙ্গলয়েড নাম দেন। বিংশ শতাব্দীর ষাট দশকে এই নাম এশিয়ার মোঙ্গলজাতীর প্রতি অসন্মানসূচক বলে, এটি ডাউন'স সিনড্রম বা শুধু ডাউন সিনড্রম বলে চিকিৎসাবিজ্ঞানে স্থান পায়। বেশ কিছু শিশু ডাউন সিন্ড্রম নিয়ে জন্মায়। এটি জীবনব্যাপী প্রতিবন্ধন। তবে উপযুক্ত পরিবেশ এবং বিশেষ শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে বড় করতে পারলে, এরা সুখী এবং কিছুটা কর্মক্ষম হয়ে অর্থবহ জীবনযাপন করতে পারে।

১৯৫৯ সালে জেরোমি লেজেউনে এবং প্যাট্রিশিয়া জেকব স্বতন্ত্রভাবে ডাউন সিনড্রমের অন্যতম কারণ ২১ তম ক্রোমোজমের ট্রাইসমি (ত্রয়ীকরণ) বলে আবিষ্কার করেন। ভ্রুণ সৃষ্টি হবার সময়ে অস্বাভাবিক কোষ-বিভাজনের ফলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। স্বাভাবিক ভ্রুণকোষে ২৩ জোড়া ক্রোমোজম থাকে - প্রতিটি জোড়ার একটি আসে বাবা আর আরেকটি আসে মায়ের কাছ থেকে। । ডাউন সিনড্রোমের ক্ষেত্রে একটি অতিরিক্ত ক্রোমোজম ২১ নম্বর ক্রোমোজমের জায়গায় ঢুকে পড়ে। এই অবস্থাকে ট্রাইসোমি২১ (Trisomy21) বলা হয় এবং শতকরা ৯৫ শতাংশ ডাউন সিনড্রমের মূলে আছে এই সমস্যা (ছবি দেখুন)। এছাড়া অস্বাভাবিক কোষবিভাজনে নিয়মবহির্ভূত (irregular) ক্রোমোজম শরীরের কিছু বা সব কোষেই সৃষ্টি হতে পারে, তার ফলেও ডাউন সিনড্রম দেখা দেয়। দেহকোষে ক্রোমোজমগুলিই DNA বা জিন (gene) বহন করে। তাই অধিক বা নিয়ম-বহির্ভূত ক্রোমোজমের অস্তিত্ব দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধিকে স্বাভাবিক পথে চলতে দেয় না।

চ্যাপ্টামুখ ক্ষুদ্র ঘাড় ছাড়া ছোট কান ও মুখের হাঁ ডাউন সিনড্রমযুক্ত শিশুদের বৈশিষ্ট্য। তবে এগুলি ক্ষেত্র-বিশেষে কমবেশী হয়। বেশীর ভাগ ডাউনসিনড্রমযুক্ত শিশুদের পেশী বা মাস্ল অশক্ত হয়। বুদ্ধির স্বল্পতা এবং দৈহিক অসুবিধাগুলির জন্যে তাদের দেহমনের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। এছাড়া ডাউন সিনড্রমযুক্ত শিশু অনেক সময়ে এক বা একাধিক শারীরিক সমস্যা নিয়েও জন্মাতে পারে; যেমন ত্রুটিযুক্ত হৃদ্পিণ্ড, শ্রবণকেন্দ্র, স্বাসনতন্ত্র, প্রভৃতি। এর ফলে অনেক সময়ে এই সব শিশুরা ভালো শুনতে পায় না, বুকের ও নিঃশ্বাসের অনেক অসুখে ভোগে।

গর্ভাবস্থায় পরীক্ষা করে বোঝা যায়, ভ্রুণের ডাউন সিন্ড্রম বা অন্য কোনো অস্বাভাবিক অবস্থার সম্ভাবনা কতটা আছে।

আলট্রাসাউণ্ডের সাহায্যে ভ্রুণের ও প্ল্যাসেণ্ট্রার প্রতিকৃতি পাওয়া যায়। সেই প্রতিকৃতিতে ভ্রুণের ঘাড়ের মাপ দেখে বিশেষজ্ঞরা কিছুটা বুঝতে পারেন ভ্রুণের ডাউন সিনড্রম নিয়ে জন্মাবার সম্ভাবনা কতটা। এছাড়া অন্যান্য পরীক্ষাও কিছু আছে, কিন্তু যে পরীক্ষার সাহায্যে ডাক্তাররা মোটামুটি সঠিক ভাবে ডাউন সিনড্রমের সম্ভাবনা বিচার করতে পারেন, সেটি হল এক ধরণের ক্রোমোজন অ্যানালিসিস, ক্যারিওটাইপ (karyotype)। এই পরীক্ষাটি অ্যামনিওসেণ্টেসিস (amniocentesis) করে অ্যামনিওটিক ফ্লুইডে (amniotic fluid) করতে হয়। এই পরীক্ষার সমস্যা হল এতে গর্ভপাত হয়ে যাবার সম্ভাবনা একটু বৃদ্ধি পায়। সেইজন্য, অন্য পরীক্ষাগুলি ফলাফল থেকে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেলে - তবেই এই পরীক্ষাটি করা হয়। যেসব নারী অপেক্ষাকৃত বেশী বয়সে (৩৫ বছর বা তার বেশী) গর্ভবতী হচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রে সন্তানের ডাউন সিনড্রম নিয়ে জন্মানোর সম্ভাবনা বেশী থাকে। তাদের ক্ষেত্রে অনেক সময়ে ডাক্তাররা করিওটাইপ টেস্ট এমনিতেই করেন।

ডাউন সিনড্রম নিয়ে বাচ্চা জন্মালে সেটি সারাবার কোনো উপায় নেই। তখন শিশুটির প্রাথমিক চিকিৎসা বা যত্নের ব্যবস্থা স্থির করতে হয় শিশুটির প্রয়োজন বিচার করে। প্রথম দিকে শিশুর শারীরিক সমস্যাগুলো কি করে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তার চেষ্টা ডাক্তাররা করেন। পরে খাবার ইত্যাদিতে যাতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি থাকে, শিশুরা যাতে উপযুক্ত স্পিচ ও ল্যাংগুয়েজ থেরাপি এবং ফিজিক্যাল থেরাপির মধ্যে দিয়ে যায় - সেগুলি দেখা হয়। শিশু বড় হবার সময়ে কি ধরণের কাজ সে করতে পারবে এবং কী ভাবে স্বনির্ভর জীবনযাপন করতে পারবে, তার জন্যও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ দরকার। দুর্ভাগ্যক্রমে, পাশ্চাত্য দেশগুলিতে এ ব্যাপারে যে সুযোগসুবিধা আছে, সে তুলনায় আমাদের দেশে প্রায় কিছুই নেই। ডাউন'স সিনড্রম ফেডারেশন অফ ইণ্ডিয়া প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৪ সালে চেন্নাইয়ে চালু হয়েছে। কলকাতার মনোবিকাশকেন্দ্র ও আর কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অন্যান্য মানসিক প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে ডাউন সিনড্রমযুক্ত শিশুদের বিশেষ শিক্ষার ব্যাপারে সাহায্য করে (অবসর-এ বিশেষ স্কুল দেখুন)। তবে প্রতিষ্ঠানগুলির শিক্ষাব্যবস্থা কি রকম বা তার কার্যকারিতা কতটা - সেটা এই নিবন্ধ-লেখকের জানা নেই।

ডাউন সিনড্রমযুক্ত মানুষের আয়ু দীর্ঘকাল নয়। তবে উপযুক্ত চিকিৎসা, ভালোবাসা ও সুযোগ-সুবিধা পেলে পাশ্চাত্য দেশে এরা অনেক সময়ে পঞ্চাশ বছরের বেশিও বাঁচে। আমাদের দেশে তার সম্ভাবনা কম।
ছবির সূত্র: Trisomy21 - The Story Of Down Syndrome by Len Leshin, MD, FAAP

[স্বাস্থ্য বিষয়ক যে-সব আলোচনা অবসর-এ রয়েছে তার উদ্দেশ্য সাধারণ ভাবে স্বাস্থ্য ও বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে পাঠকদের অবহিত করা। এই আলোচনা কোনও ভাবেই ডাক্তারের পরামর্শের বিকল্প নয়। কারোর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনও সমস্যা থাকলে, তাঁর উচিত সরাসরি কোনও ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা।]

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।