ফ্লোটার্স ও ফ্ল্যাশেস (Floaters and Flashes)
চোখের
সামনে খুব ছোট ছোট ফুটকি বা দাগের মত কিছু মেঘের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে
– এই অভিজ্ঞতা এক আধ সময়ে অনেকেরই হয়। এগুলোকে বলা হয় ফ্লোটার্স।
ফ্লোটার্স নানা আকার নিতে পারে - ফুটকি, দাগ, মাকড়সার ছেঁড়া
জাল , ইত্যাদি। এগুলো বিশেষ করে দেখা যায় যখন সাদা দেয়ালের দিকে
বা নীল আকাশের দিকে কেউ তাকিয়ে থাকে।
ফ্লোটার্স হল আমাদের চোখের
ভিট্রেয়াস (vitreous)-এর ভেতরে কোষ বা gel-এর খুব ছোট ছোট তাল
বা ডেলা। ভিট্রেয়াস হল চোখের ভেতরে ভরে থাকা স্বচ্ছ জেলি (gel)
জাতিয় তরল পদার্থ।
চোখের সামনে যে ফুটকি,
দাগ, ছেঁড়া মেঘ বা মাকড়সার জালের মত কিছু ভেসে বেড়াচ্ছে, সেগুলো
কিন্তু চোখের সামনে ভাসছে নয়, সেগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে চোখের ভেতরে।
যেটা আমরা দেখছি, সেটা হল ওগুলো রেটিনার ওপর যে ছায়া ফেলছে –
সেটা। রেটিনা হলো চোখের পিছনের দিকে অবস্থিত স্নায়ুকোষযুক্ত
একটি পাতলা স্তর। রেটিনাতে আলোক সংবেদী কোষ থাকে, যাতে আলো পড়লে
আমরা দেখতে পাই।
কেন ফ্লোটার্স
হয়?
যখন লোকে মধ্যবয়সে পৌঁছয়,
তখন চোখের ভিট্রেয়াস জেল অনেক সময় ঘনীভূত হতে থাকে অথবা সঙ্কুচিত
হতে শুরু করে। ভিট্রেয়াস জেল চোখের পেছন থেকে খুলে আসতে শুরু
করে, যাকে বলা হয় পোস্টিরিয়র ভিট্রেয়াস ডিটাচমেণ্ট (posterior
vitreous detachment)। এই প্রক্রিয়ায় চোখের ভেতরে ডেলা বা সুতোর
মত পদার্থ তৈরি হয়। এটাই ফ্লোটার্স সৃষ্টি হবার মূল কারণ।
যাঁরা near-sighted, অর্থাৎ
খালি চোখে দূরের জিনিস ভাল দেখতে পান না, যাঁদের ক্যাটারাক্ট
অপারেশন হয়েছে বা YAG সার্জারি হয়েছে কিংবা যাঁদের চোখের ভেতরে
প্রদাহ হয়েছে, তাঁদের পোস্টিরিয়র ভিট্রেয়াস ডিটাচমেণ্ট হবার
সম্ভাবনা বেশী।
চোখে হঠাৎ ফ্লোটার্স দেখা
দিলে স্বাভাবিক ভাবেই দুশ্চিন্তা হতে পারে, বিশেষ করে যদি হঠাৎ
এগুলো দেখা দেয়। ফ্লোটার্স দেখতে শুরু করলে চোখের ডাক্তারের
কাছে কাছে যাওয়া উচিত।
ফ্লোটার্স
কি ক্ষতিকারক?
ভিট্রেয়াস যখন সঙ্কুচিত
হয়ে চোখের পেছনে রেটিনা থেকে খুলে আসতে চায়, তখন রেটিনার ছিঁড়ে
যাবার সম্ভাবনা থাকে। সেখান থেকে রক্তপাত হয়, এবং সেগুলি নতুন
ফ্লোটার্স হিসেবে দেখা দিতে পারে। রেটিনা ছিঁড়ে যাওয়া একটা গুরুতর
সমস্যা। এর থেকে রেটিনা পুরোপুরি খুলে আসতে পারে (retinal detachment),
যার পরিণাম ভয়াবহ। তাই চোখে ফ্লোটার্স দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে
চোখের ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।
ফ্লোটার্স
কি দূর করা যায়?
রেটিনা না ছেঁড়ার জন্যে
যদি ফ্লোটার্স হয়, তাহলে সে নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কারণ নেই।
এগুলি না মিলিয়ে গেলেও আমরা এতে অভ্যস্ত হয়ে যাই এবং এর অস্তিত্ব
আমাদের তেমন বিরক্ত করে না। কিন্তু ফ্লোটার্সের কারণ যদি রেটিনা
ছিঁড়ে যাওয়া হয়, তাহলে তার চিকিৎসার প্রয়োজন। রেটিনা খুলে এলে
সেটি ঠিক করার সার্জারি দুরূহ। বহু বছর ধরে যাঁদের চোখে ফ্লোটার্স
আছে তাঁরাও যদি নতুন ফ্লোটার্স দেখতে শুরু করেন , তাহলেও তাঁদের
ডাক্তেরে সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।
চোখে অকারণে ফ্ল্যাশিং লাইট বা আলোর ঝলকানি
কেন দেখা যায়?
ভিট্রেয়াস জেল যখন রেটিনাতে
ঘষা দেয় বা টানাটানি করে, তখন আলোর ঝলকানি দেখা দেয়। এ ধরণের
ঝলকানি হঠাৎ চোখে ধাক্কা লাগলে আমরা দেখতে পাই – যাকে আমরা চোখে
সর্ষেফুল দেখা বলি।
চোখে আলোর ঝলকানি মাঝে
মাঝে দেখা দিয়ে মাসের পর মাসও থাকতে পারে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে
এটা হবার প্রবণতা বাড়ে। তবে চোখে ফ্ল্যাশ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে
চোখের ডাক্তারকে দেখানো উচিত।
অনেক সময়ে লোকে চোখে যখন
ফ্ল্যশ দেখে তখন মনে হয় আঁকাবাঁকা লাইন বা ঢেউয়ের মত। এটা বেশ
কিছুক্ষণ প্রায় ১০ থেকে কুড়ি মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
এটা ঘটে যখন মস্তিষ্কে রক্তবাহী নলিতে খেঁচুনি ঘটে। এটাকে বলা
হয় মাইগ্রেন। এর পর যদি মাথা ধরে তাহলে তাকে মাইগ্রেন হেডেক
বলা হয়। তবে সবসময় যে এরকম আলোর ঝিলিকের পরে যা মাথা ধরবে, তা
নয়। মাথা না ধরলে, এধরনের আলোর ঝিলিককে বলা হয় অপ্থ্যালমিক
মাইগ্রেন। এ ধরণের কোন উপসর্গ দেখা দিলেও চোখের ডাক্তারের সঙ্গে
যোগাযোগ করা উচিত।
[স্বাস্থ্য বিষয়ক যে-সব আলোচনা
অবসর-এ রয়েছে তার উদ্দেশ্য সাধারণ ভাবে স্বাস্থ্য ও বিভিন্ন
রোগ সম্পর্কে পাঠকদের অবহিত করা। এই আলোচনা কোনও ভাবেই ডাক্তারের
পরামর্শের বিকল্প নয়। কারোর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনও সমস্যা
থাকলে, তাঁর উচিত সরাসরি কোনও ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা।]