বন্ধ্যতা
(Infertility)
গর্ভধারণের
অক্ষমতাকে বন্ধ্যতা বলা হলেও, এটির প্রচলিত বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা
কিন্তু সেটি নয়। সাধারণভাবে ১২ মাস ধরে অবাধ যৌনসংগমের পরও যখন
গর্ভসঞ্চার ঘটে না, তখন সেটিকে গর্ভ-ধারণ সমস্যা বা বন্ধ্যতা
বলা হয়। গর্ভ-সঞ্চার হওয়ার পর সেটিকে পূর্ণাবস্থা পর্যন্ত ধরে
রাখার অক্ষমতাও এই সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে।
গর্ভধারণের ক্ষমতা বয়সের উপর নির্ভর করে। মেয়েরা ২০ থেকে ৩০
বছরের মধ্যে সহজে গর্ভবতী হতে পারে। ৩৫ বছর বয়সের পরে গর্ভধারণ
ক্ষমতা দ্রুত কমতে সুরু করে এবং গর্ভ-বিপর্যয়ের (miscarriage)
সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
গর্ভধারণের সমস্যা প্রায়
১৫ শতাংশ দম্পতির ক্ষেত্রেই ঘটে। ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে এই সমস্যার
কারণ নারীর শারীরিক সমস্যা- নারীর ফ্যালোপিয়ান টিউব, গর্ভাশয়
(uterus), কিংবা ডিম্বাশয়ের (overies) সমস্যা। ৩৫ শতাংশ ক্ষেত্রে
সমস্যাটি পুরুষের - যার মধ্যে সবচেয়ে প্রধান হল বীর্যে শুক্রাণুর
স্বল্পতা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মেয়েদের বন্ধ্যতার কারণ তাঁরা
নিজেরা যখন মাতৃগর্ভে ছিলেন - তখন তাঁদের মায়ের ধশি ওষুধ ব্যবহার।
অনেক সময়ে বন্ধ্যতার সঠিক কারণ ডাক্তাররা খুঁজে পান না।
সন্তানলাভে ইচ্ছুক দম্পতিদের
প্রথম জানা দরকার মাসের কোন দিনগুলিতে স্ত্রীর গর্ভবতী হবার
সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। স্ত্রীর বিশ্রামকালীন দেহের তাপমান বা
উষ্ণতা মেপে এই সময়টা মোটামুটি বুঝতে পারা যায়। ডিম্বানু পূর্ণতা
প্রাপ্ত হলে সেটি ডিম্বাশয় থেকে মুক্ত হয়ে জরায়ু বা গর্ভাশয়ের
দিকে যায় (ovulation)। ডিম্বাণু গর্ভাশয়-মুক্ত হওয়ার একটু আগে
দেহের তাপমান কমে যায়। তার ২৪ ঘণ্টা পরেই তাপমান দ্রুত বৃদ্ধি
পায়। প্রত্যেকদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বিছানা ছাড়ার আগে যদি দেহের
তাপমানের একটা চার্ট তৈরি করা যায়, তাহলে সেটি পরীক্ষা করে,
কখন গর্ভসঞ্চার হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বা কম - সেটা নির্ধারণ
করা সম্ভব। এর জন্য উষ্ণতা মাপার যে থার্মোমিটার ব্যবহার করা
হয়, সেটিতে তাপমানের অল্প তারতম্যও ভালোভাবে দেখতে পাওয়া যায়।
তাপমান সাধারণতঃ ০.৪ ডি ফারেহাইট (০.২ ডি সেণ্টিগ্রেড) থেকে
১ ডি ফারেনহাইট (০.৬ ডি সেণ্টিগ্রেড) বাড়ে। মেয়েদের ঋতুচক্রে
এটি নিয়মিত ঘটে বলে দেহের তাপমাত্রা ঋতুচক্রের কোন সময়ে প্রথমে
কমে তারপর বেড়ে যাচ্ছে জানা থাকলে গর্ভসঞ্চারের সবচেয়ে সম্ভাবনাময়
দিনগুলি বার করা সম্ভব। সাধারণভাবে ডিম্বাণু-মুক্তির ৫ দিন আগে
থেকে ডিম্বাণু-মুক্তির দিন পর্যন্ত যৌনমিলনে গর্ভসঞ্চারের সম্ভাবনা
বেশি থাকে। ( ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু মুক্ত হবার পর ১২ থেকে
২৪ ঘণ্টা তাজা অবস্থায় থাকে; পুরুষদের শুক্রাণুও ৩ থেকে ৫ দিন
নারীদের জননেন্দ্রিয়র মধ্যে সজীব অবস্থায় থাকতে পারে। সেইজন্য
ডিম্বাণু-মুক্তির দিন পাঁচেক আগে যৌনমিলন হলেও শুক্রাণু ডিম্বাণুকে
নিষিক্ত করতে পারে )|
এছাড়া অন্য উপায়েও সন্তান
ধারণের জন্য সবচেয়ে অনুকূল সময়ে বার করা যায়। সাধারণভাবে মেয়েরা
প্রতিমাসে ৫ দিন উর্বরা অবস্থায় থাকে। এই উর্বরা সময়টি হল ঋতুচক্র
বা মাসিক সুরু হবার ১২ থেকে ১৬ দিন পর্যন্ত। যাদের ঋতুচক্র নিয়মিত,
তাদের ক্ষেত্রেই শুধু এটা মোটামুটি ভাবে সত্য। ঋতুচক্র (অর্থাৎ
মাসিক সুরু হবার দিন থেকে পরের মাসিক সুরু হবার দিন পর্যন্ত)
সাধারণতঃ ২৮ দিনের হয়, আর ডিম্বাণু ডিম্বাশয়-মুক্ত হয় ঋতুচক্রের
মাঝামাঝি। সেই থেকেই এই সময়ের হিসেবটা পাওয়া যায়।
স্ত্রীর বয়স ৩৫ বছরের কম হলে, এক বছর চেষ্টা করার পরও যদি তাঁর
গর্ভধারণ না হয়, তাহলে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। ডাক্তাররা
নানাভাবে এর চিকিৎসা করতে পারেন :
• ওষুধ দিয়ে যাতে ডিম্বাণুর
ডিম্বাশয়-মুক্তি সহজে ঘটে
• কৃত্রিম উপায়ে নারীদের গর্ভাশয়ে শুক্রাণু স্থাপন করা (artficial
insemination)
• ফ্যালোপিয়ান টিউব-এর মধ্যে কোনো সমস্যা থাকলে সার্জারি করে
সেটিকে ঠিক করা
• পুরুষদের বীর্যে শুক্রাণু স্বল্পতা দূর করার চেষ্টা করা। ইত্যাদি।
এইসব প্রক্রিয়া কাজ না
করলে, অনেকে ' ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন '-এর কথা চিন্তা করেন।
এই পদ্ধতিতে ডিম্বাণু ও শুক্রাণু ল্যাবোরেটরিতে কৃত্রিম উপায়ে
একসঙ্গে রেখে ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করা হয়। তারপর সেই নিষিক্ত
ডিম্বাণুকে নারীর গর্ভাশয়ে স্থাপন করা হয়।
এইসব পরীক্ষা বা পদ্ধতি
শারীরিক ও আর্থিক উভয় দিক থেকেই কষ্টসাধ্য হতে পারে। সুতরাং
এ ব্যাপারে একটু চিন্তাভাবনা করে এগোনোই হবে যুক্তিযুক্ত।
[স্বাস্থ্য
বিষয়ক যে-সব আলোচনা অবসর-এ রয়েছে তার উদ্দেশ্য সাধারণ ভাবে স্বাস্থ্য
ও বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে পাঠকদের অবহিত করা। এই আলোচনা কোনও ভাবেই
ডাক্তারের পরামর্শের বিকল্প নয়। কারোর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনও
সমস্যা থাকলে, তাঁর উচিত সরাসরি কোনও ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ
করা।]