পেসমেকার
(Pacemaker)
পেসমেকার
হল হাতঘড়ি সাইজের ব্যাটারি চালিত একটি যন্ত্র। এর কাজ হৃদ্পিণ্ডে
বৈদ্যুতিক তরঙ্গঘাত পাঠিয়ে হৃদ্পিণ্ডের স্পন্দনকে নিয়মিত রাখা।
এটির ব্যবহার প্রথম সুরু করা হয়েছিল কৃত্রিমভাবে হৃদ্পিণ্ডকে
উদ্দীপিত করে মন্থর হওয়া হৃদ্স্পন্দনের গতিকে স্বাভাবিক অবস্থায়
ফিরিয়ে আনার জন্য। এখন এটির ব্যবহার আরও বিস্তৃত হয়েছে।
মূলতঃ দুধরণের পেসমেকার
আজকাল ব্যবহৃত হয়:
(১) এক-প্রকোষ্ঠ পেসমেকার (Single-chamber pacemaker): এই পেসমেকার
হৃদ্পিণ্ডের একটি প্রকোষ্ঠ - হয় উপরের প্রকোষ্ঠ (অলিন্দ বাatrium
) অথবা নিচের প্রকোষ্ঠকে (নিলয় বাventricle ) উদ্দীপিত করে।
(২) দ্বিপ্রকোষ্ঠ পেসমেকার (Dual-chamber pacemaker): এটি অলিন্দ
ও নিলয় দুই প্রকোষ্ঠতেই বৈদ্যুতিক তরঙ্গঘাত পাঠায়। দুই প্রকোষ্ঠে
তরঙ্গঘাত পাঠানোর সময়দুটি এমনভাবে নিয়ন্ত্রিত করা হয় যাতে তারা
হৃদ্স্পন্দনের স্বাভাবিক ছন্দের ছকে মিলে থাকে।
নতুন পেসমেকারগুলি স্পন্দনহার-সমবেদী
(physiologic)। অর্থাৎ, এগুলি তাদের তরঙ্গঘাত পাঠানোর হার বাড়ায়
যখন শরীর ব্যায়াম বা পরিশ্রম করছে, যাতে হৃদ্স্পন্দন দ্রুত হতে
পারে; আবার কমায় যখন শরীর বিশ্রাম নিচ্ছে। পুরনো পেসমেকারগুলি
একই হারে তরঙ্গঘাত পাঠিয়ে চলে। উভয় ক্ষেত্রেই পেসমেকার তার কাজ
সুরু করে যখন হৃদ্স্পন্দনহার একটি নির্দিষ্ট নিম্নমানে নেমে
আসে।
পেসমেকার সার্জারি করে
বুকের ভেতরে বসিয়ে দিতে হয়। সার্জারিটি করতে ঘণ্টাখানেকের বেশি
লাগে না। দুয়েকদিনের মধ্যেই রোগী বাড়িতে ফিরে যেতে পারে এবং
সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই মোটামুটি ভাবে তার স্বাভাবিক কাজকর্ম
সুরু করতে পারে। তবে বেশি পরিশ্রম সুরু করার আগে বেশ কয়েক সপ্তাহ
বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। পেসমেকারের ব্যাটারি ৫ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত
কাজ করে। তারপর সেটিকে বদলাতে হয়।
অনেক সময়ে জরুরী প্রয়োজনে অস্থায়ী পেসমেকারও বসানো হয়। সেক্ষেত্রে
পেসমেকার শরীরের বাইরে থাকে এবং সংলগ্ন তারটি কোনো শিরার মধ্যে
দিয়ে হৃদ্পিণ্ডে নিয়ে যাওয়া হয়।
পেসমেকারের
ব্যাপারে কিছু সতর্কতা :
অনেক কারণে হৃদ্পিণ্ডে
পাঠানো পেসমেকারের সংকেত বিঘ্নিত হতে পারে। সেইজন্য পেসমেকার
ব্যবহার করলে ডাক্তারদের নির্দেশ মেনে চলা প্রয়োজন। পেসমেকারের
জন্য কিছু কিছু শারীরিক পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না; যেমন, পেসমেকার
বসানো থাকলে MRI করা যায় না। সুতরাং পেসমেকার থাকলে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা
বা সার্জারির আগে সেটা ডাক্তারদের আগে থেকে জানিয়ে রাখা দরকার।
পেসমেকার থাকলে বিমানবন্দর বা অন্য কোনো সুরক্ষিত জায়গায় ঢোকার
জন্য মেটাল ডিটেক্টরের মধ্যে যেতে হলে সেটা বেজে উঠবে। সুতরাং
নিরাপত্তা রক্ষীদের সেটা আগে থেকেই জানিয়ে দেওয়াটা যুক্তিযুক্ত।
পেসমেকারের
সমস্যা :
সাধারণভাবে বুকে পেসমেকার
বসালে যে সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে, তা হল:
• রক্তপাত
• হৃদপিণ্ড ফুটো হয়ে যাওয়া
• নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট বোধ হওয়া
• হৃদ্স্পন্দন অনিয়মিত হয়ে যাওয়া
• সংক্রমণ
• ব্লাড ক্লট বা রক্ত-জমে যাওয়া, ইত্যাদি
এ ধরণের কোনো সমস্যা দেখা
দিলেই ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রয়োজন।
[স্বাস্থ্য
বিষয়ক যে-সব আলোচনা অবসর-এ রয়েছে তার উদ্দেশ্য সাধারণ ভাবে স্বাস্থ্য
ও বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে পাঠকদের অবহিত করা। এই আলোচনা কোনও ভাবেই
ডাক্তারের পরামর্শের বিকল্প নয়। কারোর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনও
সমস্যা থাকলে, তাঁর উচিত সরাসরি কোনও ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ
করা।]