পার্কিনসন্স
ডিজিজ (Parkinson's Disease)
পার্কিনসনের অসুখ (পার্কিনসন্স
ডিজিজ) হল এক ধরণের স্নায়বিক রোগ (নিউরোলজিকাল ডিজিজ) যা মস্তিষ্কের
কতগুলি বিশেষ সেল বা নিউরনকে আক্রমণ করে। এই বিশেষ সেলগুলিতে
ডোপামিন (এক ধরণের কেমিক্যাল) তৈরি হয়। এই ডোপমিনের ভেতর দিয়েই
মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ নিজেদের মধ্যে সংকেত বিনিময় করতে পারে,
যার ফলে শরীরের মাসেলগুলিকে সুসংযত ভাবে চালনা করা মস্তিষ্কের
পক্ষে সম্ভব হয়। পার্কিনসনের অসুখের ফলে এই সেলগুলি ধীরে ধীরে
ধবংস প্রাপ্ত হয়। তার ফলে শরীর আর স্বাভাবিক ভাবে চলতে ফিরতে
পারে না।
পার্কিনসনের অসুখের লক্ষণ:
- মাসল শক্ত হয়ে যাওয়া।
- হাত-পা কাঁপা।
- চলা-ফেরার গতি স্লথ যাওয়া।
- হাঁটা-হলার ধরণ পাল্টে যাওয়া।
- ব্যালেন্সের অভাব - ফলে মাঝে মাঝে মাটিতে পড়ে যাওয়া, ইত্যাদি।
বংশানুক্রমে পার্কিনসনের
অসুখ সংক্রামিত হতে পারে বলে মনে করা হয়। সাধারণত এটি প্রকাশ
পায় বয়স বছর ষাটেকের কোঠায় পৌঁছলে। কিন্তু তার আগেও এই রোগ দেখা
দিতে পারে। পার্কিনসনের অসুখ নির্ণয় করাটা কঠিন। সাধারণত রোগ-লক্ষণ
দেখে এবং সিটি স্ক্যান বা এম.আর.আই করে অন্যান্য অসুখের (যাদের
রোগ-লক্ষণও অনেকটা পার্কিনসনের মত) সম্ভবনাগুলিকে বাতিল করে
ডাক্তাররা এই রোগ নির্ণয় করেন।
পার্কিনসনের অসুখ সারিয়ে
তোলার কোনও ওষুধ নেই। এ নিয়ে অনেক গবেষণা চলছে এবং অনেকেই আশাবাদী
যে অদুর ভবিষ্যতে এই অসুখের মোকাবিলা করা ডাক্তারদের পক্ষে সম্ভব
হবে। নিরাময়ের ওষুধ না থাকলেও এই রোগের চিকিত্সা আছে। ডাক্তাররা
দুভাবে এর চিকিত্সা করার চেষ্টা করেন। একটা চিকিত্সা হল মস্তিষ্কে
ডোপামিনের হ্রাসটা যতটা পারা যায় রুদ্ধ করা। দ্বিতীয় চিকিত্সা
হল পার্কিনসনের লক্ষণগুলিকে নানা উপায়ে কমিয়ে রাখা।
রোগলক্ষণগুলি কমানোর জন্য
ডাক্তাররা অনেক সময়েই লেভোডোপা (অনেক সময় এটিকে এল-ডোপা বলা
হয়) ব্যবহার করেন। লেভোডোপা আমাদের মস্তিষ্কের সাধারণভাবেই থাকে।
কিন্তু যখন ওষুধ হিসেবে দেওয়া হয়, তখন এটি যে-সব স্নায়ু-সেলে
ডোপামিন তৈরি হয় - সেখানে চলে যায়। সেখানে গিয়ে ডোপামিনে পরিবর্তিত
হয়। লেভোডোপার সঙ্গে ডাক্তাররা আরেকটি ওষুধ কার্বিডোপা ব্যবহার
করেন শরীরের ওপর লিভোডোপার অন্যান্য প্রতিক্রিয়াগুলি (বমি বমি
ভাব, হার্টের স্পন্দন-জনিত সমস্যা, ইত্যাদি) কমাতে। তবে এই ওষুধগুলির
বহুদিন ব্যবহার করলে শরীরের অস্থিরতা বৃদ্ধি পাওয়া, চিন্তাশক্তির
বিশৃঙ্খলতা, দেহাংশ (হাত-পা ইত্যাদি) অনিচ্ছাকৃত ভাবে আন্দোলিত
হওয়া, ইত্যাদি হতে পারে। লেভোডোপার পরিবর্তে, ডাক্তাররা অনেক
সময় ডোপামিন অ্যাগনিস্টস জাতীয় ওষুধ দিয়ে থাকেন। এই ওষুধগুলির
কাজ হল মস্তিষ্কে ডোপামিনের কাজগুলির নকল করা। কিন্তু এই ওষুধগুলি
ব্যবহার করলে আবার প্রথম প্রথম বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
এগুলি ছাড়াও আরও অনেক ওষুধ ডাক্তাররদের খাতায় রয়েছে। তবে মনে
রাখতে হতে হবে পারকিনসনের অসুখের ভালোভাবে মোকাবিলা করতে হলে
অনেকের সাহায্যের দরকার - ডাক্তার (স্নায়ু-রোগ বিশেষজ্ঞ) থেকে
শুরু করে, ফিজিক্যাল থেরাপিস্ট, কাউন্সিলর, স্পিচ থেরাপিস্ট
(এই অসুখে মাসল ভালো কাজ না করায় কথাও জড়িয়ে যেতে পারে), ডায়েটিশিয়ান,
ইত্যাদি - যেটি খুবই অর্থ সাপেক্ষ।
[স্বাস্থ্য বিষয়ক যে-সব আলোচনা
অবসর-এ রয়েছে তার উদ্দেশ্য সাধারণ ভাবে স্বাস্থ্য ও বিভিন্ন
রোগ সম্পর্কে পাঠকদের অবহিত করা। এই আলোচনা কোনও ভাবেই ডাক্তারের
পরামর্শের বিকল্প নয়। কারোর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনও সমস্যা
থাকলে, তাঁর উচিত সরাসরি কোনও ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা।]