সর্প
দংশন (সাপের কামড়)
অনেক
সাপই বিষধর নয়। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে নির্বিষ সাপের কামড়েও অ্যালার্জিক
প্রতিক্রিয়ায় বিপদের সম্ভাবনা থাকে। আর যে-সব সাপ বিষধর, তাদের
কামড়ে প্রতি বছরই বহু লোকের মৃত্যু ঘটে। সাধারণতঃ সাপের বিষ
তিন রকম ভাবে দেহকে আক্রান্ত করে :
• 'হেমোটক্সিন্স' ( haemotoxins)
হল সেই বিষ, যেটা রক্তের লোহিত কণিকাকে বিভক্ত করে (haemolyse)
অথবা রক্তের জমাট বাঁধার ক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলে।
• নিউরোটক্সিন্স ( neurotoxins) নার্ভকে আক্রান্ত করে, যার ভয়াবহ
পরিণতি হল যেসব পেশীর সংকোচন প্রসারণে আমরা খাবার গিলতে পারি
বা নিঃশ্বাস নিতে পারি - সেগুলি অকেজো হওয়া।
• কার্ডিওটক্সিন্স (cardiotoxins) - এটি হৃদ্-যন্ত্রকে সরাসরি
আক্রমণ করে এবং রক্ত-চলাচল বন্ধ করে দিতে পারে।
এছাড়াও অন্যান্য নানাভাবে
সাপের বিষ দেহকে আক্রান্ত করে, যেমন অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া।
সাপ কামড়েছে কিনা বোঝার উপায় কি ?
সাপের কামড়ে কি প্রতিক্রিয়া
হবে তা স্থির ভাবে বলা শক্ত। তবে মোটামুটি ভাবে সাপ কামড়ালে
নিচের লক্ষণগুলি প্রকাশ পেতে পারে :
• ক্ষতস্থান থেকে রক্ত
পড়া
• চামড়াতে সাপের দাঁতের দাগ এবং সেই জায়গাটা ফুলে যাওয়া
• দংশনের জায়গাতে তীব্র যন্ত্রণা
• পেট খারাপ হওয়া
• জ্বালা ভাব
• সংজ্ঞাহীন হয়ে যাওয়া
• মাথা ঘোরা
• চোখে ঝাপসা দেখা
• অত্যাধিক ঘাম হওয়া
• গলা শুকিয়ে যাওয়া
• জ্বর
• বমি ভাব বা বমি হওয়া
• অসাড়তা বা ঝিঁ-ঝিঁ ধরা
• নাড়ীর গতি বেড়ে যাওয়া
সাপ কামড়ালে প্রাথমিক কর্তব্য
:
সাপ কামড়েছে জানলে দ্রুত হাসপাতালে বা ডাক্তারের কাছে যাওয়া
দরকার। কিন্তু যতক্ষণ চিকিৎসার বন্দোবস্ত না হচ্ছে ততক্ষণ যা
করা দরকার, তা হল:
• সাবান জল দিয়ে ক্ষতস্থানটা ধুয়ে ফেলা
• শরীরের যে অংশে সাপ কমড়েছে সেটা যতটা সম্ভব স্থির করে রাখা।
• ক্ষতস্থানটা পরিস্কার কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা।
সাপ কামড়ানোর পর যদি ৩০ মিনিটের মধ্যে কোনও চিকিৎসকের সঙ্গে
যোগাযোগ সম্ভব না হয়, তাহলে আমেরিকান রেড ক্রসের উপদেশ হল:
সাপ যেখানে কামড়েছে তার দুই থেকে চার ইঞ্চি উঁচুতে (অর্থাৎ হৃদ্পিণ্ডের
দিকে) একটা জড়ানো ব্যাণ্ডেজ বাঁধা। ব্যাণ্ডেজটা খুব কষে বাঁধা
যেন না হয়, সেক্ষেত্রে রক্ত-চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। মোটামুটি ভাবে
ব্যাণ্ডেজের তলা দিয়ে যাতে একটা আঙুল গলিয়ে দেওয়া যায় - সেটা
দেখতে হবে। এইবার ক্ষতের উপর কোনো 'সাক্শন' যন্ত্র সাবধানে বসিয়ে
(যাতে কেটেছড়ে না যায়) বিষটাকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করা। এই ধরণের
'সাক্শন' যন্ত্র সর্প-দংশন কিট-এ পাওয়া যায়। তবে এই 'সাক্শন'
পদ্ধতি ব্যবহারের ব্যাপারে দ্বিমত আছে। এতে বিষের অল্প অংশই
বার করা যায়, বরং ঘষাঘষিতে বিষটি শরীর মধ্যে ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা
বাড়ে বলে অনেকের অভিমত।
সাপের কামড়ের ক্ষেত্রে
সবচেয়ে কার্যকরি প্রাথমিক চিকিৎসা ঠিক কি হবে, সেটা বলা একটু
মুশকিল। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরণের বিষধর সাপ থাকে। প্রত্যেক
সাপের বিষ একরকম ভাবে দেহকে আক্রমণ করে না। ফলে এক রকম সাপের
বিষের ক্ষেত্রে যে প্রাথমিক চিকিৎসা কার্যকরি অন্য অন্য সাপের
ক্ষেত্রে সেটি ভালোর থেকে মন্দ বেশি করতে পারে। তাই এ ব্যাপারে
স্থানীয় স্বাস্থ্যবিভাগের পরামর্শ নেওয়াটা বিশেষ প্রয়োজনীয়।
সর্প দংশনে কি সাপ কামড়েছে, সেটা জানা দরকার। সাধারণতঃ চিকিৎসকরা
অ্যাণ্টিভেনিন বা অ্যাণ্টিভেনম (সাপের বিষের অ্যাণ্টিডোট, অর্থাৎ
প্রতিরোধক) ব্যবহার করেন। দুরকমের অ্যাণ্টিভেনিন এখন পাওয়া যায়।
এককালে অ্যাণ্টিভেনিন তৈরি করা হত ঘোড়ার উপর সাপের বিষ প্রয়োগ
করার ফলে ঘোড়ার রক্তে যে প্রতিরোধ (অ্যাণ্টিবডি) গড়ে ওঠে সেটি
সংগ্রহ করে। ১৯৫৪ সালে এই ধরণের অ্যাণ্টিভেনিন আমেরিকাতে প্রথম
চালু হয়। এগুলি ব্যবহার করলে কিছু কিছু লোকের বিরূপ প্রতিক্রিয়াও
হয়, সেইজন্য ডাক্তারদের এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।
ইদানীং কালে এক ধরণের নতুন অ্যাণ্টিভেনিন বেরিয়েছে ভেড়ার অ্যাণ্টিবডি
ব্যবহার করে। এটিতে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া কম হয়।
সাপের কামড় থেকে আত্মরক্ষার
উপায় :
• সাপ নজরে পড়লে সেটির থেকে দূরে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। সাপকে
মারতে গিয়ে অনেকে সাপের কামড় খান।
• উঁচু উঁচু ঘাস বা জঙ্গলের মধ্যে না হাঁটাই শ্রেয়।
• যে জায়গাটা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না সেখানে হাত বা পা-ঢোকানো
অনুচিত। যেমন, যেসব জায়গায়
সাপের ভয় আছে, সেখানে ঘরের বাইরে জুতো থাকলে সেটার ভেতরটা না
দেখে পা-গলানো অনুচিত। বা বাইরের চিঠির বাক্স ভালো করে পরীক্ষা
না করে সেখানে হাত ঢোকানো ঠিক নয়। মাটি থেকে পাথর বা কাঠ তুলবার
সময় জায়গাটা ভালোভাবে পরীক্ষা করে নেওয়া দরকার, যে নিচে সাপ
লুকিয় আছে কিনা।
• অনেক সময়ে দেশে গাঁয়ে রাতের অন্ধকারে হাঁটার সময়ে জোরে জোরে
জোরে পা দাপিয়ে বা হাত তালি দিয়ে লোকে হাঁটে, যাতে বাতাসে স্পন্দনে
সাপরা টের পায় কেউ আসছে এবং তারা পথ থেকে সরে যায়। কিন্তু এটির
কার্যকারিতা সম্পর্কে প্রশ্ন আছে। সুতরাং টর্চ-বাতি (ফ্ল্যাশলাইট)
ব্যবহার না করে অন্ধকারে পথ হাঁটা উচিত নয়।
[স্বাস্থ্য
বিষয়ক যে-সব আলোচনা অবসর-এ রয়েছে তার উদ্দেশ্য সাধারণ ভাবে স্বাস্থ্য
ও বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে পাঠকদের অবহিত করা। এই আলোচনা কোনও ভাবেই
ডাক্তারের পরামর্শের বিকল্প নয়। কারোর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনও
সমস্যা থাকলে, তাঁর উচিত সরাসরি কোনও ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ
করা।]