জিয়ার্ডিয়াসিস
(giardiasis)
জিয়ার্ডিয়াসিস
এক ধরণের পেটের অসুখ, যার ফলে পেটে ব্যথা, পেটে ফোলা ফোলা ভাব,
বমি পাওয়া এবং পাৎলা পায়খানা হয়। এর
মূলে রয়েছে এক ধরণের ক্ষুদ্র পরজীবী, যেগুলি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ
ও দূষিত জলের মধ্যে বেশী দেখা যায়।
কর্পোরেশনের জলে, দীঘি বা পুকুরে, সুইমিং পুলে, কুয়োতে - যেখানে
দূষিত জল থাকার সম্ভাবনা - সেখানে এগুলি দেখা যায়। জিয়ার্ডিয়া
অসুখ একজনের থেকে অন্যজনে সংক্রামিত হতে পারে।
সাধারণত এই অসুখ সপ্তাহ
ছয়েকের মধ্যেই চলে জ্যায়। কিন্তু চলে যাবার পরেও পেটের সমস্যা
বহুদিন ধরে চলতে পারে।
জিয়ার্ডিয়া পরজীবী ধ্বংস করার বেশ কিছু ওষুধ বাজারে পাওয়া জ্যায়,
কিন্তু সবার ক্ষেত্রে সবকিছু কাজ করে না।
রোগলক্ষণ:
অনেকে জিয়ার্ডিয়া অসুখে
ভুগছে, অথচ কোনও রোগলক্ষণ নেই - এমনও দেখা যায়। এদের বিষ্ঠা
জলকে দূষিত করে অসুখটা অন্যদের মধ্যে সংক্রামিত করতে পারে। তবে
সাধারণ ভাবে জিয়ার্ডিয়ার সংক্রমণ হলে, এক থেকে দু-সপ্তাহের মধ্যেই
রোগ-লক্ষণ প্রকাশ পায়। লক্ষণগুলি হল -
- পাৎলা বা নরম দুর্গন্ধময়
পায়খানা
- ক্লান্তিভাব
- পেটে ব্যথা এবং ফোলা
ভাব
- বমি বমি ভাব
- ওজন কমা
এগুলি কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই
চলে যেতে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটা অনেকদিন থাকতে পারে।
এইধরনের রোগলক্ষণ এক সপ্তাহের মত থাকলে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ
করা উচিত।
কেন এই
রোগ ছড়ায়?
এই পরজীবীগুলি পেটের মধ্যে
বসবাস করে। যখন মলের সঙ্গে বেরিয়ে আসে, তখন এটির বাইরে
একটি শক্ত খোলস তৈরি হয়ে জ্যায়। ফলে পেটের বাইরে এসেও এগুলি
মাসের পর মাস বাঁচে থাকে।
জল ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে পেটের মধ্যে ঢুকলে সেই খোলস গলে যায়
আর পরজীবীগুলি বেরিয়ে আসে।
জলের মধ্যে দিয়েই এই অসুখ
সবচেয়ে বেশী সংক্রামিত হয়ে। তবে অন্যভাবেও এর সংক্রমণ সম্ভব।
যেমন, জিয়ার্ডিয়া-সংক্রামিত ছোট বাচ্চাকে পরিষ্কার করার সময়
পরজীবীগুলি হাতে লেগে যেতে পারে।
সেই হাত ভাল করে না ধুয়ে খেলে, পরজীবীগুলি পেটে চলে যেতে পারে।
দুষিত জলে ধোয়া ফল খেলে ফলের গায়ে লেগে থাকা পরজীবীগুলি পেটে
চলে যেতে পারে।
অসুখটাকি ভয়াবহ?
যেসব জায়গায় চিকিৎসা ব্যবস্থা
কিছুটা রয়েছে সেখানে জিয়ার্ডিয়া সংক্রমণে মৃত্যু হবার সম্ভাবনা
নেই। কিন্তু জিয়ার্ডিয়া
সংক্রমণে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। জিয়ার্ডিয়া সংক্রমণের
ফলে ল্যাকটোজ সহ্য করার অক্ষমতা দেখা দিতে পারে।
অসুখ সেরে যাবার পরও বহুদিন এই সমস্যা থেকে যেতে পারে। ঘন ঘন
পায়খানা হলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে - তার পরিণতি ভয়াবহ হবার সম্ভাবনা
থাকে।
চিকিৎসা:
অনেক সময়ে নিজের থেকেই
এটা সেরে জ্যায় - কোন ওষুধ খাবার দরকার পাড়ে না। কিন্তু যদি
অসুখটা চলতে থাকে ডাক্তাররা নীচের ওষুধগুলির একটি দিতে পারেন:
মেট্রোনিডাজল, টিনিডাজল, নিটাজোক্সানাঈড বা প্যারামোমাইসিন।
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এগুলি খাওয়া উচিত নয়।
কি ভাবে
এই রোগ থেকে নিজেকে সুস্থ রাখা যায়:
- অপরিস্রুত জল ভালো করে
ফুটিয়ে (অন্তত ১০ মিনিও) খাওয়া।
- সাঁতার কাটার সময় মুখ
বন্ধ করে থাকা - যাতে জল মুখ দিয়ে পেটে না যেতে পারে।
- খাবার আগে হাত ভালো
করে সাবান দিয়ে ধোয়া। ইত্যাদি
[স্বাস্থ্য বিষয়ক যে-সব আলোচনা
অবসর-এ রয়েছে তার উদ্দেশ্য সাধারণ ভাবে স্বাস্থ্য ও বিভিন্ন
রোগ সম্পর্কে পাঠকদের অবহিত করা। এই আলোচনা কোনও ভাবেই ডাক্তারের
পরামর্শের বিকল্প নয়। কারোর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনও সমস্যা
থাকলে, তাঁর উচিত সরাসরি কোনও ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা।]