গ্লুট্ন
(gluten) ইনটলারেন্স
হুইট (wheat) অ্যালার্জি,
সিলিয়াক (celiac) অসুখ এবং গ্লুট্ন (gluten) ইনটলারেন্স - ইদানীং
এই কথাগুলো অনেকের মুখেই শোনা যায় – বিশেষ করে আমেরিকায়। এগুলো
ঠিক এক নয়, যদিও অনেক সময়ে এগুলোকে এক বলে কেউ কেউ ভুল করেন।
হুইট অ্যালার্জি হল সাধারণ
অ্যালার্জি বলতে আমরা যা বুঝি তাই। অর্থাৎ, কোনও অ্যালার্জেনের
সংস্পর্শে এসে শরীরে অ্যাণ্টিবডি-র সৃষ্টি হওয়া। এক্ষেত্রে অ্যালার্জেন
হল হুইট বা গমজাত খাদ্য (আটার তৈরি রুটি, পাঁউরুটি ইত্যাদি)।
হুইট অ্যালার্জি অন্যান্য অ্যালার্জির মতই (যেমন পোলেন) সংস্পর্শে
এলেই (এক্ষেত্রে খাওয়া) সঙ্গে সঙ্গে দেখা দেবে। ছোটদের মধ্যে
হুইট অ্যালার্জি বেশি দেখা যায়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অনেকের আবার
এটা চলে যায়।
সিলিয়াক
অসুখ সম্পর্কে অবসর-এ আগে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে আমরা শুধু
গ্লুট্ন ইনটলারেন্স নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করব।
গ্লুট্ন
কি?
গ্লুটন হল এক ধরণের প্রোটিন
কম্পোসিট যেটা পাওয়া যায় গম, বার্লি, রাই ইত্যাদিতে। এইসব শস্যদানাকে
যখন গুঁড়ো করা হয়, তখন এই গ্লুট্নই গুঁড়োগুলোকে একত্রে ধরে
রাখে এবং এই শস্যগুলি থেকে তৈরি খাদ্যে আমরা যে চিবানোর অনুভূতি
পাই – তা মূলতঃ এই গ্লুট্ন থেকেই আসে।
গ্লুট্ন
ইনটলারেন্স বলতে কি বোঝায়?
এটা নিয়ে এখন অনেক গবেষণা
চলছে। এটার কিছু কিছু ‘রোগ’- লক্ষণ সিলিয়াক অসুখের মত, কিন্তু
রক্ত পরীক্ষা করলে সিলিয়াক অসুখে যেগুলো দেখতে পাওয়া যায়, সেগুলো
দেখতে পাওয়া যায় না। তাই কারোর গ্লুট্ন ইনটলারেন্স আছে কিনা,
সেটা এখন পর্যন্ত একমাত্র বোঝা যাবে – যদি গ্লুট্ন ছাড়া খাবার
খেয়ে কেউ সুস্থ থাকে। আমরা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সের সঙ্গে বেশী
পরিচিত। অনেকের দুধ, দই, চিজ, মাখন, ইত্যাদি খেলে পেটের গোলমাল
হয়। সেগুলো যেসব খাবারে আছে – সেগুলো বর্জন করলে সমস্যাটা চলে
যায়। এটাও সেরকম। মুশকিল হল, কিসে গ্লুট্ন আছে, কিসে নেই –
সেটা সঠিক ভাবে জানা এবং খেয়াল করে সেগুলো না খাওয়া।
গ্লুট্ন
ইনটলারেন্সের লক্ষণ কি?
এটার রোগলক্ষণ নানা রকম
হতে পারে –
(১) বারবার কিছুদিন কোষ্ঠকাঠিন্যের
পর হঠাৎ কোনও কারণ ছাড়াই পেটখারাপ হওয়া।
(২) পেটে গ্যাস হওয়া
(৩) পেটে মোচড়ানো
(৪) পেটে অস্বোয়াস্তি
(৫) পেট গুড়গুড় করা
(৬) ক্লান্তিবোধ
(৭) ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স
(৮) হাতে বা পায়ে অবশভাব বা ঝিঁ ঝিঁ ভাব
(৯) মাথা ধরা
ইত্যাদি।
গ্লুট্ন ইনটলারেন্স থাকলে কি ধরণের খাবার
খাওয়া উচিত?
সাধারণত মাছ, মাংস বা ডিমে
গ্লুট্ন থাকে না। কিন্তু তাতে এমন কিছু দেওয়া উচিত নয়, যাতে
গ্লুট্ন আছে। ফিশ-ফ্রাইয়ে গ্লুট্ন থাকতে পারে যদি ব্রেড-ক্রাম্ব
বা গ্লুট্ন-যুক্ত কিছু মেখে সেটা ভাজা হয়।
সবজি, বা ফল-মূলে গ্লুট্ন
থাকে না।
চাল বা ডালে গ্লুট্ন নেই।
কিন্তু ডালে হিং দিলে, সেখানে গ্লুট্ন চলে আসবে, কারণ হিং-এ
গ্লুট্ন আছে। আজকাল আমেরিকায় খাবার লেবেল-এ হুইট আছে কিনা লিখতে
হয়, কিন্তু বার্লি, রাই ইত্যাদি না লিখলেও চলে। সেইজন্যে সব
সময়ে লেবেল দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় না।
আজকাল গ্লুট্ন নেই লেবেল
দিয়ে বিস্কুট, কুকি পাঁউরুটি অনেক কিছুই বিক্রি হচ্ছে। কলকাতাতেও
গ্লুট্ন-মুক্ত খাবার বিক্রি হয়। গুগ্ল সার্চ করে আপনার বাড়ির
কাছাকাছি কোথাও এরকম খাবার পাওয়া যায় কিনা দেখে নিতে পারেন।
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
[স্বাস্থ্য বিষয়ক যে-সব আলোচনা
অবসর-এ রয়েছে তার উদ্দেশ্য সাধারণ ভাবে স্বাস্থ্য ও বিভিন্ন
রোগ সম্পর্কে পাঠকদের অবহিত করা। এই আলোচনা কোনও ভাবেই ডাক্তারের
পরামর্শের বিকল্প নয়। কারোর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনও সমস্যা
থাকলে, তাঁর উচিত সরাসরি কোনও ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা।]