প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

হাই-অল্টিচুড সিকনেস (High Altitude Sickness)


আজকাল বাঙালীদের অনেকেই ছুটি কাটাতে ট্রেকিং-এ যান। হিমালয়ের যেসব অঞ্চল ট্রেকারদের জনপ্রিয় গন্তব্যস্থল তার অনেকগুলিই সমুদ্রতট থেকে দশ বারো হাজার ফুট উপরে। সাধারণতঃ যাঁরা কলকাতার মতো জায়গায় বসবাস করেন, যেগুলো সমুদ্রতট থেকে অল্প উঁচুতে অবস্থিত, তাঁদের ৮০০০ ফুট তার তার চেয়ে উঁচু জায়গায় যাবার আগে হাই-অল্টিচুড সিকনেস বা অসুস্থতা সম্পর্কে জানা এবং এ ব্যাপারে কি কি সাবধানতা নেওয়া উচিত সেগুলি পরিস্কার ভাবে বুঝে নেওয়া উচিত।

সমুদ্রতট থেকে উচ্চতা যত বাড়তে থাকে, বাতাসে অক্সিজেনের পরিমান ততোই কমতে থাকে। ৮০০০ হাজার ফুট উপরে অক্সিজনের পরিমাণ এতোটাই কমে যে, নিম্ন উচ্চতায় যাঁরা অভ্যস্থ, তাঁরা শরীর অক্সিজেনের অভাবে অসুস্থ বোধ করতে পারেন। তবে অসুস্থতাটা অনেকেই এড়াতে পারেন যদি সেই উচ্চতায় দ্রুত না গিয়ে শরীরকে ধীরে ধীরে সইয়ে সইয়ে যান। সেক্ষেত্রে শরীর অল্প অক্সিজেনেও অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে যায়।

তিন ধরণের উচ্চতা-জনিত অসুস্থতা আছে :

• সাধারণ মাউণ্টেন সিকনেস
• হাই অল্টিচুড পাল্মোনারি এডেমা (HAPE ), যেটা ফুসফুসকে আক্রান্ত করে।
• হাই অল্টিচুড সেরিব্রাল এডেমা (HACE), যেটা মস্তিষ্ককে আক্রান্ত করে।

সমুদ্রের উপরিতল থেকে উচ্চতা যতো বাড়তে থাকে, অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা ততোই বৃদ্ধি পায়। অতি-উচ্চ জায়গায় অক্সিজেন আলাদা ভাবে না নিলে ঘোরতর অসুস্থ হয়ে পড়া এবং তা থেকে মৃত্যু ঘটা অস্বাভাবিক নয়। প্রসঙ্গতঃ, ২৯০০০ ফুট উচ্চতা অতিক্রম করে মউণ্ট এভারেস্ট যাঁরা জয় করেছেন, হাতে গোনা যায় এমন কয়েকজন ছাড়া সবাই অক্সিজেন ব্যবহার করেছেন। অক্সিজেন ফুরিয়ে যাবার জন্য বহু পর্বতারোহীর মৃত্যু ঘটেছে পর্বত জয় করতে গিয়ে।

ট্রেকিং-এ যাঁরা সাধারণতঃ যান তাঁরা অবশ্য বারো বা চোদ্দ হাজার ফুটের বেশি ওপরে ওঠেন না। কিন্তু সাবধান না হলে তাতেও ঘোরতর অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। আগেই বলা হয়েছে, উচ্চতা জনিত অসুস্থতা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হলে, প্রধান কাজ হচ্ছে দ্রুত সেই উচ্চতায় না পৌঁছনো। গাড়ি করে কেউ যদি ৮০০০ ফুট উঁচুতে কয়েক ঘণ্টায় গিয়ে হাজির হন, তাহলে অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা খুবই বেড়ে যায়। অন্যপক্ষে প্রতিদিন যদি একটু একটু করে ১০০০ ফুটের মতো ওঠা যায়। তাহলে ৮০০০ ফুট উঠতে বেশ কয়েক দিন লাগবে ঠিকই, কিন্তু অসুস্থ হবার সম্ভাবনা কম থাকবে। আর একটা ব্যাপারে সতর্ক হলে, অসুস্থ হবার সম্ভাবনা আরও কমানো যায়। সেটা হল দিনের বেলা যে উচ্চতায় হাঁটা-চলা করছেন, রাত্রে শোবার সময়ে তার থেকে কিছুটা নিচুতে এসে ঘুমনো।

উচ্চতা জনিত অসুস্থতার লক্ষণগুলো কি ?

এটা সুরু হয় মাথা ধরা, মাথা হালকা লাগা, ঘুমোতে অসুবিধা, পেট খারাপ ইত্যাদি দিয়ে। নিচুতে নেমে এলেই এই উপসর্গগুলো দূর হয়। তবে এর থেকেও ভয়াবহ উপসর্গ হতে পারে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, কাশি, বোধবুদ্ধি লোপ পাওয়া, সোজা ভাবে হাঁটতে না পারা। এই রকম অবস্থা হলে সঙ্গে সঙ্গে নিচুতে নেবে আসা এবং ডাক্তারের সাহায্য নেওয়া আবশ্যিক।

হাই অল্টিচুড সিকনেস হলে কি করা উচিত ?

উপসর্গ যদি তীব্র হয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে নিচুতে নেমে আসা উচিত। হাজার বা দু হাজার ফুট নেমে এলে উপসর্গগুলির তীব্রতা কমবে। আরও নামলে সেটা মিলিয়ে যাবে। তবে উপসর্গ যদি অল্প-স্বল্প হয়, তাহলে সেই উচ্চতায় হাঁটা-চলা বেশি না করে বিশ্রাম করলে দেহ অল্প-অক্সিজেনে অভ্যস্ত হবার সুযোগ পাবে। যদি অভ্যস্ত হতে পারে, তাহলে উপসর্গগুলি আপনা থেকেই মিলিয়ে যাবে।

হাই অল্টিচুড অসুস্থতার উপসর্গ কমানোর জন্য অনেক সময়ে অ্যাসিটাজোলোমইড এবং নিফেডিপাইন জাতিয় ওষুধ ডাক্তাররা দেন। তবে ডাক্তারদের পরামর্শ ছাড়া এগুলো খেয়ে উপসর্গগুলো উপেক্ষা করা ঠিক নয়। হাই-অল্টিচুড সিকনেস হঠাৎ ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। উপসর্গ যদি তীব্র হয় সঙ্গে সঙ্গে উচ্চতা থেকে নেমে এসে ডাক্তারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রয়োজন।

কাদের উচ্চতায় যাওয়া উচিত নয় :

যাদের সিক্ল সেল অ্যানিমিয়া আছে, ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পাল্মোনারি ডিজিজ (COPD) বা এম্ফিজিমা আছে, তাঁদের ডাক্তারদের সঙ্গে কথা না বলে উচ্চতায় ট্রেকিং করতে যাওয়া অনুচিত।

[স্বাস্থ্য বিষয়ক যে-সব আলোচনা অবসর-এ রয়েছে তার উদ্দেশ্য সাধারণ ভাবে স্বাস্থ্য ও বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে পাঠকদের অবহিত করা। এই আলোচনা কোনও ভাবেই ডাক্তারের পরামর্শের বিকল্প নয়। কারোর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনও সমস্যা থাকলে, তাঁর উচিত সরাসরি কোনও ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা।]

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।