ম্যাকুলার
ডিজেনারেশন (Macular
degeneration)
চোখের ম্যাকুলার ধীরে ধীরে
নষ্ট হয়ে যাওয়াকে ম্যাকুলার ডিজেনারেশন বলা হয়। ম্যাকুলা হল
চোখের পেছনে রেটিনাতে একটা ছোট্ট জায়গা যা দিয়ে আমরা সূক্ষ্ম
জিনিসও পরিষ্কার ভাবে দেখতে পাই (যেমন, বইয়ের অক্ষরগুলো পড়তে
পারি)। ম্যাকুলা যদি ঠিকমত কাজ না করে, তাহলে চোখের মাঝখান দিয়ে
দেখার ক্ষমতা হ্রাস পাবে - ঝাপসা দেখাবে, কিছু কিছু জায়গা অন্ধকার
মনে হবে বা সরল রেখাও ঢেউয়ের মতো দেখতে লাগবে। ম্যাকুলা নষ্ট
হতে থাকলে কাছের ও দূরের - দুটি দৃষ্টিশক্তিই ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
এটি নষ্ট হতে থাকলে পড়া, গাড়ি চালানোর, সূচের কাজ করা, ইত্যাদি
নানা ক্ষমতা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাওয়া সম্ভব।
ম্যাকুলা নষ্ট হতে থাকলে
চোখের মাঝখান দিয়ে দেখার ক্ষমতা কমে গেলেও পাশ দিয়ে দেখার ক্ষমতা
(side বা peripheral vision) অটুট থাকতে পারে। যেমন, ঘডি়র বাইরের
গোলটা দেখতে অসুবিধা হবে না, কিন্তু ভেতরে ঘডি়র কাঁটাটা দেখতে
পাওয়া যাবে না, ফলে সময়টা বুঝতে পারা যাবে না।
অর্থাত্ বলা যেতে পারে,
ম্যাকুলা নষ্ট হতে থাকা মনে অন্ধ হয়ে যাওয়া নয়। ম্যাকুলা প্রায়
নষ্ট হয়ে গেলেও, দৃষ্টিশক্তি যতটুকু থাকে, তাতে নিজেকে দেখভাল
করা সম্ভব। অনেক সময়েই ম্যাকুলা নষ্ট হতে শুরু করলেও দৈনন্দিন
জীবনযাত্রা চালিয়ে যাওয়া যায়।
কেন ম্যাকুলা
নষ্ট হয়?
সাধারণতঃ বয়সের সঙ্গে সঙ্গী
এটি হবার সম্ভাবনা বাডে় - এটা বয়সের স্বাভাবিক ধর্ম। বিভিন্ন
ধরণের ম্যাকুলার সমস্যা হতে পারে, যেটা সবচেয়ে বেশী হতে দেখা
যায়, সেটা হল ARD-বা Age-Related Degeneration। কেন, এটা ঘটে
- সেটা এখনও অজ্ঞাত। এর কোনও বাধা ধরা বা কার্যকরি চিকিত্সা
এখনও নেই। সাধারণভাবে ৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক লোকদের এটা একটা বড়
সমস্যা।
'শুষ্ক' (dry) ম্যাকুলার
ডিজেনারেশন (ATROPHIC):
বেশির ভাগ লোকদেরই এটা হতে দেখা যায়। এটা হল ম্যাকুলার টিস্যু
পাত্লা হয়ে যাওয়া। এতে দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকে।
'সিক্ত' (wet) ম্যাকুলার
ডিজেনারেশন:
সাধারণতঃ ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে এটা ঘটে। এটা হতে দেখা যায় যখন রেটিনার
নীচে অস্বাভাবিক রক্তনালী সৃষ্টি হয়। এই রক্তবাহী নালী থেকে
রক্ত বা তরল পদার্থ বার হয়ে চোখের মধ্যকার দৃষ্টিশক্তিকে ব্যাহত
করে। এক্ষেত্রে দৃষ্টিশক্তি দ্রুত গতিতে কমতে থাকে।
ম্যাকুলার
ডিজেনারেশন হচ্ছে কিনা কী করে বোঝা যাবে?
বিভিন্ন লোকের ক্ষেত্রে
লক্ষণ বিভিন্ন হয়। প্রথম দিকে এটা ধরতে পারা বেশ কঠিন। অনেক
সময় একটা চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে, কিন্তু অন্য ভালো চোখের জন্যে
সেটা ধরা পডে় না। যদি দুটো চোখেই সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে এটা
নজরে আসে।
নীচে কতগুলো লক্ষণ বলা
হল:
*
যদি পড়ার সময় অক্ষরগুলো ঝাপসা দেখায়
*
একটা অন্ধকার জায়গা চোখের সামনে দেখা যায়
*
সোজা লইন ঢেউয়ের মত দেখায় - যেমন এই ছবিতে দেখানো হয়েছে।
কী ভাবে ডাক্তাররা এটা বুঝতে পারেন?
চোখের ডাক্তাররা পরীক্ষা
করে এই রোগটিকে প্রথম দিকেই ধরতে পারেন। একটা সহজ পরীক্ষা করা
হয় amsler grid ব্যবহার করে (যেটা ছবিতে দেওয়া হল)।
অফ্থ্যাল্মোস্কোপ দিয়ে
ম্যাকুলা পরীক্ষা করে
একটা বিশেষ ধরণের ছবি তুলে
রেটিনার নীচে রক্তনালী গডে় উঠেছে কিনা দেখে।
এর চিকিত্সা
কি?
যদিও ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের
সঠিক কারণ এখনও জানা যায় নি, এর গতি রোধ করতে অণ্টি-অক্সিডেণ্ট
ভিটামিন এবং zinc ক্ষেত্র বিশেষে খানিকটা সাহায্য করতে পারে।
তবে মনে রাখতে হবে যে,
ভিটামিন ARD নিরাময় করে না, এবং দৃষ্টিশক্তি হ্রাস হওয়াও রোধ
করতে পারে না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অধিকতর সমস্যা রোধে কিছুটা
সাহায্য করতে পারে।
সিক্ত ম্যাকুলার ডিজেনারেশনে
অনেক সময়ে লেজার সার্জারি ব্যবহার করা হয়। লেজারের সাহায্যে
রক্তবাহী নলীগুলি থেকে রক্ত বা তরলের ক্ষরণ রোধ করা যায়। এই
রক্তনলীগুলো যে সব রসায়নিক পদার্থের জন্য সৃষ্টি হয় সেগুলি কমানোর
জন্যেও ডাক্তাররা অনেক ওষুধ প্রয়োগ করেন।
তবে এগুলি সবই চোখের শক্তিকে
অক্ষুণ্ণ রাখার চেষ্টা করা - যা ক্ষতি হয়ে গিয়েছে সেটাকে ঠিক
করা নয়।
আজকাল ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের
ফলে দৃষ্টি শক্তি খানিকটা হারিয়েও জীবনযাত্রা চালানো যায়। তারজন্যে
বিভিন্ন ধরণের অপ্টিক্যাল যন্ত্র রয়েছে - বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে
সাহায্য করতে পারেন। ম্যাগনিফাইং গ্লাস, বড় অক্ষরে লেখা বই,
কম্পিউটার ইত্যাদির সাহায্যে দৃষ্টি কম থাকলেও অনেক কিছু কাজই
করা সম্ভব।
--------------------
amsler grid
চার ইঞ্চি ষ চার ইঞ্চি
স্কোয়ারে লাইন টেনে টেনে একটা গ্রাফ করুন। তার মাঝখানে একটা
বিন্দু অাঁকুন।
এবার এই চার্টটা সামনে রেখে -
আপনার বই পড়ার চশমা পরে ১২ থেকে ১৫ ইঞ্চি দূর থেকে দেখুন।
একটা চোখ বন্ধ রাখবেন,
দৃষ্টি স্থির রাখবেন বিন্দুটার দিকে। দেখুন কোনও কোনও লাইন ঢেউয়ের
মত লাগছে কিনা, অথবা অন্ধকার বা ঝাপসা লাগছে কিনা।
এবার অন্য চোখটা বন্ধ করে
একই ভাবে তাকান।
[স্বাস্থ্য বিষয়ক যে-সব
আলোচনা অবসর-এ রয়েছে তার উদ্দেশ্য সাধারণ ভাবে স্বাস্থ্য ও বিভিন্ন
রোগ সম্পর্কে পাঠকদের অবহিত করা। এই আলোচনা কোনও ভাবেই ডাক্তারের
পরামর্শের বিকল্প নয়। কারোর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনও সমস্যা
থাকলে, তাঁর উচিত সরাসরি কোনও ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা।]
[স্বাস্থ্য বিষয়ক যে-সব আলোচনা
অবসর-এ রয়েছে তার উদ্দেশ্য সাধারণ ভাবে স্বাস্থ্য ও বিভিন্ন
রোগ সম্পর্কে পাঠকদের অবহিত করা। এই আলোচনা কোনও ভাবেই ডাক্তারের
পরামর্শের বিকল্প নয়। কারোর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনও সমস্যা
থাকলে, তাঁর উচিত সরাসরি কোনও ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা।]