মাইগ্রেন
(Migraine)
মাথাধরার নানান রকমভেদ আছে। যে মাথাধরাতে
গা গোলায়, বিবমিষা বা বমি হয় অথবা আলোর দিকে তাকাতে খুব অসুবিধা
হয়, তাকে মাইগ্রেন বলা হয়। মাইগ্রেনে মাথা টন টন করে - অনেক
সময় সেই টন টনে ব্যথাটা মাথার একদিকে হয়। মাইগ্রেন সাধারণত হঠাৎ
করেই শুরু হয়। তবে সেটা কেউ কেউ আগে থেকেই টের পায়।
মাইগ্রেন সাধারণত দেখা দেয় ছোট
বয়স থেকে (১০ বছর) মাঝ বয়সের (৪৫ বছর) মধ্যে। আরও কয়েকটা লক্ষণীয়
জিনিস হল –
মাইগ্রেন ছেলেদের থেকে মেয়েদের বেশী হয়।
অনেক সময় এর পারিবারিক সূত্র থাকে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে মেয়েরা গর্ভবতী অবস্থায় কম মাইগ্রেনে ভোগে।
উত্তেজনা, বিশেষ কোনও খাবার খাওয়া
বা পারিপার্শ্বিক অবস্থার দরুন মস্তিষ্কে যখন কোন অস্বাভাবিক
প্রক্রিয়া শুরু হয়, তখনই মাইগ্রেনের সূত্রপাত হয়। তবে ঠিক কী
ভাবে এটা ঘটে – এটা এখনো অজ্ঞাত। তবে মস্তিষ্ক থেকেই এটা শুরু
- পরে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন স্নায়ু পথে, রক্ত চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।
সাধারণ ভাবে দেখা যায় মাইগ্রেন শুরু
হচ্ছে –
অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়ায়
মদ্যপানে
তীব্র আলো চোখে পড়লে
বিশেষ কোনও গন্ধ নাকে এলে
বিকট শব্দে
ধোঁয়ার গন্ধে
শারীরিক বা মানসিক উত্তেজনায়
ঘুমের ব্যাঘাতে
কারো কারো এটা হয় বিশেষ খাবার খেলে।
যেমন,
চকলেট,
দুগ্ধজাত খাবার, যে সব খাবারে মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (msg) আছে,
যে সব খাবারে টাইরামাইন আছে, যেমন, লাল মদ, মেটে, ডুমুর ফল,
ইত্যাদি
কিছু কিছু ফলে - যেমন, কলা, কমলা জাতিয় ফল
বাদাম
পেঁয়াজ
ইত্যাদি
মাইগ্রেন আসছে কিনা অনেক সময় বোঝা
যায় চোখের সাময়িক সমস্যা থেকে – যেমন,
ঝাপসা দেখা
চোখে ব্যথা হওয়া
চোখে নানা রকমের লাইন বা তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে দেখা
টানেল ভিসন
সবার ক্ষেত্রে অবশ্য এটা ঘটে না।
মাইগ্রেনের ব্যথা চোখের পেছনে,
ঘাড়ে, মাথার পেছনে – সব জায়গাতেই হতে পারে। ভীষণ ভাবে দপ দপ
করা, টন টন করা – তীব্র মাইগ্রেনের লক্ষণ। মাথার একদিকে এটা
বেশী ভাবে বোধ হয়। শুরু হয় প্রথমে আস্তে আস্তে, কিন্তু পরে দ্রুত
এটা বাড়তে থাকে। এর জের ৬ ঘণ্টা থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত চলতে
পারে। আর এই উপসর্গের সঙ্গে ক্লান্তি, ঘন ঘন প্রস্রাব, বমি বমি
ভাব বা বমি হওয়া, আলো বা আওয়াজে অসুবিধা, ঘামা, কথা বলতে অসুবিধা,
খিদে চলে যাওয়া, ইত্যাদি থাকতে পারে। এমনকি মাইগ্রেন চলে যাবার
পরও ঘাড়ে ব্যথা, ঘুম ঘুম ভাব, মাথাটা জ্যাম হয়ে থাকার উপসর্গ
সঙ্গে সঙ্গে না মিলিয়ে যেতে পারে।
মাইগ্রেনের কোনও চিকিৎসা নেই। তবে
যেসব অবস্থা থেকে মাইগ্রেন শুরু হতে পারে, সেগুলো যাতে করে না
সৃষ্টি হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা। মাইগ্রেন হলে, তার আগে কি ঘটেছিল
(যেগুলো থেকে মাইগ্রেন দেখা দিতে পারে) লিখে রাখা, যাতে ভবিষ্যতে
সেগুলো সম্ভব হলে এড়ানো যায়)।
মাইগ্রেন শুরু হয়ে গেলে, প্রচুর
পরিমাণে জল খাওয়া (বিশেষ করে বমি হয়ে থাকলে), অন্ধকার ঘরে বিশ্রাম
করা, ঠাণ্ডা কাপর মাথায় জড়িয়ে রাখা উচিত।
কিছু কিছু ওষুধ ডাক্তাররা দেন। অল্পস্বল্প
মাইগ্রেনে উপসর্গগুলো কমানোর জন্যে অ্যাসিটামিনফিন (টাইলানল
বা ক্যালপল জাতিয় ওষুধ), আইবুপ্রোফেন বা অ্যাসপিরিন কাজে দেয়।
তীব্র মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে ডাক্তারেরা আরও জোরদার ওষুধ দেবেন।
এছাড়া, বমিভাব কামানোর জন্যে, ঘুমের জন্যে অন্যান্য ওষুধ ডাক্তারেরা
দেন।
[স্বাস্থ্য বিষয়ক যে-সব আলোচনা
অবসর-এ রয়েছে তার উদ্দেশ্য সাধারণ ভাবে স্বাস্থ্য ও বিভিন্ন
রোগ সম্পর্কে পাঠকদের অবহিত করা। এই আলোচনা কোনও ভাবেই ডাক্তারের
পরামর্শের বিকল্প নয়। কারোর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনও সমস্যা
থাকলে, তাঁর উচিত সরাসরি কোনও ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা।]