বায়ু-দূষণ,
ভিটামিন ডি, অ্যালার্জি
এ যুগের স্বাস্থ্য গবেষকদের
মতে শরীরে ভিটামিন ডি কম থাকলে অ্যাসমা ও অ্যালার্জি হবার সম্ভাবনা
বৃদ্ধি পায়। ভিটামিন ডি আমরা সাধারণতঃ সংগ্রহ করি সূর্যালোক
থেকে। দিনের বেলায় বাড়ি বা অফিসঘরে বেশির ভাগ সময়ে থাকলে এবং
বাইরে বেরিয়ে হাঁটার বদলে বাসে বা গাড়িতে যাতায়াত করলে শরীর
সূর্যের আলো কমই লাগে। সেক্ষেত্রে খাদ্যে যথেষ্ট ভিটামিন ডি
না থাকলে বা আলাদা ভাবে বিটামিন ডি না খেলে, দেহে এর অপ্রতুলতা
ঘটবে। ফলে অ্যাসমা এবং অ্যালার্জিতে ভোগার সম্ভাবনা বাড়বে। সম্প্রতি
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির একট গবেষণায় দেখা গেছে যে, গর্ভবতী
মায়েরা ভিটামিন ডি পর্যাপ্ত পরিমানে খেলে জন্মের তিন থেকে পাঁচ
বছরের মধ্যে সন্তানদের অ্যাজমা হবার সম্ভাবনা প্রায় ৪০ শতাংশ
কমে। এই গবেষকদের ধারণা মায়ের শরীরে ভিটামিন ডি কম থাকলে গর্ভস্থ
সন্তানের ফুসফুস (lungs) এবং অনক্রম্যতা (immunity) পরিপূর্ণভাবে
গড়ে ওঠে না। ফলে তাদের অ্যাসমা এবং অ্যালার্জি হবার সম্ভাবনা
বাড়ে। গবেষকদের এই মতবাদের একটা ভৌগলিক সমর্থন আছে। যেসব শিশুরা
বিষুবরেখার কাছাকাছি উষ্ণ জায়গায় থাকে এবং প্রচুর সূর্যের আলো
পায়, তাদের তুলনায় পাশ্চাত্যদেশের শিশুরা, যারা বিশেষ করে শীতকালে
ঠাণ্ডার জন্য বেশির ভাগ সময়েই ঘরের মধ্যে কাটায় - তাদের মধ্যে
অ্যাসমা এবং অ্যালার্জি রোগের প্রকোপ বেশি।
কলকাতা, ঢাকা ও তাদের পার্শ্ববর্তী
অঞ্চল এই ব্যাপারে ভৌগলিক সুবিধা ভোগ করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ,
অন্য একটি কারণে কলকাতা সহ অনেক শহরাঞ্চলই ধীরে ধীরে এই সুবিধা
হারাচ্ছে। সূর্যালোক থেকে ভিটামিন ডি সংগ্রহ করতে পারলেও অত্যাধিক
বায়ুদূষণের ফলে এই সব অঞ্চলের শিশুদের মধ্যে অ্যাজমা ও অ্যালার্জি
বাড়ছে। যদিও বায়ুদূষণের ফলে অ্যাজমা রোগ হয় বলে কোনও প্রত্যক্ষ
প্রমাণ এখনও পাওয়া যায় নি, তবে অ্যাজমা অ্যাটাক যে অনেক ক্ষত্রেই
বায়ুদূষণ দ্বারা প্রভাবিত হয়, সেটা জানা গেছে। বায়ুদূষণে অ্যালার্জিতে
কাবু অনেকেই হন - বিশেষকরে যাঁরা ইউরোপ আমেরিকায় অপেক্ষাকৃত
কম বায়ুদূষণের মধ্যে বসবাস করেন, তাঁরা শীতকালে কলকাতায় বেড়াতে
এসে অল্প-বিস্তর অনেকেই অ্যালার্জি-জনিত অসুখে ভোগেন। কলকাতাবাসীদের
থেকে একটু বেশিই ভোগেন, কারণ তাঁদের শরীর এতোটা বায়ুদূষণে অভ্যস্থ
নয়, তারওপর পাশ্চাত্য দেশে থাকায় তাঁদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমান
ভিটামিন ডি কম থাকা বিচিত্র নয়। ভিটামিন ডি, বায়ুদূষণ, অ্যাজমা,
অ্যালার্জি - এগুলি কি ভাবে পরস্পরকে প্রভাবিত করছে - সেটা এখন
গবেষণার বিষয়। সম্প্রতি লণ্ডনে এই নিয়ে একটা বড় রকমের গবেষণা
সুরু হয়েছে।
যিনি যেখানেই থাকুন, সবারই
দেখা উচিত যে, যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন ডি সূর্যালোক বা খাবার
থেকে তাঁরা পাচ্ছেন কিনা। না পেলে ডাক্তারদের সঙ্গে যোগাযোগ
করে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি খাওয়াটা হবে বাঞ্ছনীয়। প্রসঙ্গতঃ,
আজকাল অনেক সময়ে যেসব রোগীরা অ্যাসমার জন্য ডেক্সামেথাসোন (এক
ধরণের কর্টিকোস্টেরয়েড) ওষুধ খাচ্ছেন, তাঁদেরও ভিটামিন ডি-৩
দেওয়া হয়, কারণ তাতে শরীরে এই ওষুধের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
[স্বাস্থ্য
বিষয়ক যে-সব আলোচনা অবসর-এ রয়েছে তার উদ্দেশ্য সাধারণ ভাবে স্বাস্থ্য
ও বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে পাঠকদের অবহিত করা। এই আলোচনা কোনও ভাবেই
ডাক্তারের পরামর্শের বিকল্প নয়। কারোর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনও
সমস্যা থাকলে, তাঁর উচিত সরাসরি কোনও ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ
করা।]