প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

অঙ্গ প্রতিস্থাপন (Organ Transplant)

দেহের কোনও অঙ্গ অকেজো হয়ে গেলে সেটা বাদ দিয়ে সেখানে কোনও সুস্থ অঙ্গ প্রতিস্থাপন (transplant) করা যায় কিনা সে নিয়ে গবেষণা বহুদিনই চলছিল। বছর ষাটেক আগে পশুদের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে কিছুটা সাফল্য আসে। কিন্তু তখনও বোঝা যায় নি যে, ব্যাপক হারে মানুষের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য হবে কিনা।

গত শতাব্দীর ৫০ দশকে মানবদেহে কিডনি প্রতিস্থাপনে কিছু সাফল্য আসায় - চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বিশেষ আশান্বিত হন। এরপর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রচেষ্টা শুরু হয়। সব অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা যায় না। সাধারণত কিডনি, যকৃত প্রতিস্থাপনই বেশি হয়। তবে ফুসফুস বা হৃদপিণ্ডও প্রতিস্থাপন করা হয়। এখন যে সমস্যাটা দেখা দিয়েছে সেটা প্রতিস্থাপনের সমস্যা নয়, প্রতিস্থাপনের জন্য অঙ্গ পাবার সমস্যা। বহু ব্যক্তিকে বহু মাস বা বছর অপেক্ষা করতে হয় তার দেহের উপযুক্ত অঙ্গ পাওয়ার জন্যে।

অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ব্যাপারে তিনটি জিনিস জড়িত। এক হল উপযুক্ত অঙ্গ খুঁজে পাওয়া। উপযুক্ত অঙ্গ পাওয়া যাবে কোত্থেকে? মানুষের শরীরে দুটো কিডনি থাকে। তাই জীবিত নিকটাত্মীয়েরা অনেক সময় একটি দান করতে পারেন। যকৃতের কিছু অংশ বাদ দিলে সেটি আবার নিজের থেকেই গড়ে ওঠে। তাই অনেক সময়ে আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে যকৃতের কিছু অংশও পাওয়া যেতে পারে। নইলে মুশকিল। কেউ দিতে স্বীকৃত হলেও সেটা কাজে না লাগতে পারে যদি রোগীর দেহের সঙ্গে সেটা ম্যাচ না করে। অল্প সংখ্যক অঙ্গ আসে যেসব ব্যক্তিরা তাঁদের অঙ্গ প্রতিস্থাপন বা চিকিৎসাবিজ্ঞানের স্বার্থে দান করে যান। ভারতে অঙ্গ কেনা বে-আইনী - বহু দেশেই তাই। ভারতে টাকা দিয়ে অঙ্গ কেনা বে-আইনী ঘোষণা করা হয়েছে the Human Organ Transplantation Act of 1994 প্রণয়ন করে। তবে ব্ল্যাক মার্কেট চলছে বলে অনুমান করা হয়। বে-আইনী অঙ্গ বিক্রির বাজার নানান দেশেই সক্রিয়- বিশেষ করে গরীব দেশগুলিতে। তবে এ ব্যাপারে সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন। নিউ ইংল্যাণ্ড জার্নাল অফ মেডিসিন-এর একটা তথ্য অনুযায়ী ম্যানিলাতে কিডনি ১০০০ থেকে ২০০০ মার্কিন ডলারে পাওয়া যায়। ল্যাটিন আমেরিকাতে তার দাম ১০ হাজার ডলার। কিছু কিছু দেশ, যেমন চীন বিদেশীদেরও অঙ্গ বিক্রি করে। এগুলি তারা সংগ্রহ করে প্রাণ-দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীদের দেহ থেকে। এটি অমানবিক এবং অনৈতিক বলে বিতর্কিত।

অঙ্গ-প্রতিস্থাপন সহজ কাজ নয়। এ ব্যাপারে দক্ষ সার্জেনের সংখ্যা বেশী নয়। সাফল্যময় সার্জারির পরেও দেহে নতুন অঙ্গকে মানিয়ে রাখতে নানান ওষুধ খেতে হয়। নইলে রোগ-প্রতিরোধ প্রণালী immune system এই নতুন অঙ্গকে বাইরে থেকে আগত শত্রু মনে করে বিনষ্ট করতে উদ্যত হয়। এইসব ওষুধ যথেষ্ট দামি এবং শরীরের ওপর এদের প্রভাব ক্ষতিকারক। অনেক ক্ষেত্রেই কোনটে কম খারাপ সেই বিবেচনায় ডাক্তারি শাস্ত্রকে চলতে হয়।

যদি হার্ট বা হৃদপিণ্ড কিংবা দুটো ফুসফুসই প্রতিস্থাপন করতে হয়, তাহলে মৃত ব্যক্তির অঙ্গ নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু সেই মৃত ব্যক্তিকে ব্রেন-ডেড হতে হবে, অর্থাৎ তার শরীরের রক্ত চলাচল ব্যাহত হলে চলবে না। একমাত্র সেক্ষেত্রেই সেই অঙ্গ ব্যবহারযোগ্য হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্গান প্রকিওরমেণ্ট এণ্ড ট্র্যান্সপ্ল্যাণ্টেশন নেটওয়ার্ক আছে (OPTN) । যদি কোন রোগীর মস্তিষ্ক-মৃত ব্যক্তির দেহ থেকে অঙ্গ নিয়ে প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়, তাহলে সেখানে নাম লেখাতে হবে। নাম লেখানোর আগে যে ডাক্তার অঙ্গ-প্রতিস্থাপন করবেন এবং তাঁর অন্যান্য সহযোগীরা স্থির করবেন যে রোগী অঙ্গ-প্রতিস্থাপনের উপযুক্ত প্রার্থী কিনা। তাঁদের বিচার-বিবেচনায় উপযুক্ত হলে তাঁরা অর্গান প্রকিওরমেণ্ট অর্গানাইজেশনকে জানাবেন। কবে সেই অঙ্গ পাওয়া যাবে, বা সময়মত আদৌ পাওয়া যাবে কিনা, তা নির্ভর করছে এই সংস্থার বিচার-বিবেচনার উপরে। অঙ্গ পাওয়া গেলে সেটিকে উপযুক্ত অবস্থায় রোগীর কাছে নিয়ে আসাও সহজ ব্যাপার নয়।

অঙ্গ-প্রতিস্থাপন অত্যন্ত ব্যয়সাধ্য - সাধারণ লোকের ক্ষমতার বাইরে। যাদের টাকা আছে, তারা এগুলো করতে পারে বলে অঙ্গ সরবরাহের ভার দায় গরীবদের উপর বর্তাবার সম্ভাবনা থাকে। টাকার লোভে গরীবরা তাদের অঙ্গ- বেচে দিতে পারে । অর্থলোভে কোনও ডাক্তার সেটাকে প্রতিস্থাপনের চেষ্টাও করতে পারে। প্রায় সব দেশের প্রশাসনই এ ব্যাপারে উদবিগ্ন।

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)


[স্বাস্থ্য বিষয়ক যে-সব আলোচনা অবসর-এ রয়েছে তার উদ্দেশ্য সাধারণ ভাবে স্বাস্থ্য ও বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে পাঠকদের অবহিত করা। এই আলোচনা কোনও ভাবেই ডাক্তারের পরামর্শের বিকল্প নয়। কারোর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনও সমস্যা থাকলে, তাঁর উচিত সরাসরি কোনও ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা।]

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।