ক্রেতা
সুরক্ষা আইন
(পশ্চিমবঙ্গ
সরকারের কনজিউমার এফেয়ার্স এণ্ড ফেয়ার বিজনেস প্র্যাক্টিসেস-এর
প্রকাশিত তথ্য-পুস্তিকা থেকে সংগৃহীত)
ক্রেতা
সুরক্ষা আইন কি?
উচিত দামে সঠিক পণ্য বা
জিনিস পাওয়া হল ক্রেতাদের মৌলিক অধিকার। এই অধিকার রক্ষার্থে
১৯৮৬ সালে একটি আইন প্রণয়ন করা হয়। এই আইনটির পরিধি আরও বিস্তৃত
করার জন্য ১৯৯৩ সালে এটি সংশোধিত হয়। বর্তমানে এই আইনটি শুধু
ক্রেতাদের (buyers) মধ্যেই সীমিত নয়, এটি উপভোক্তাদের (consumers)
অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়।
ক্রেতা
বা উপভোক্তা কারা?
যিনি বা যাঁরা নিজেদের
ব্যবহারের জন্য দাম দিয়ে জিনিস কেনেন, অথবা কোনও কিছু ভাড়া নেন,
কিংবা কোনও পরিষেবা গ্রহণ করেন - তাঁরা সকলেই হলেন ক্রেতা বা
উপভোক্তা। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, পুরো দাম নগদ না দিলেও চলবে।
পরে দাম দেবেন কথা দিয়ে আংশিক অগ্রিম দিলেও তাঁরা ক্রেতা বা
উপভোক্তা হিসেবে গণ্য হবেন। কিন্তু ব্যবসার উদ্দেশ্যে জিনিস
কিনলে বা পরিষেবা গ্রহণ করলে এই আইনের সংজ্ঞা অনুসারে তাঁরা
ক্রেতা বা উপভোক্তা হিসেবে গণ্য হবেন না।
ক্রেতা
সুরক্ষার আইনের সুযোগ কারা পেতে পারেন?
জম্মু ও কাশ্মীর বাদ দিয়ে
অন্য যে-কোনও রাজ্যের ক্রেতা/ উপভোক্তা এই আইনের সুযোগ নিতে
পারেন।
ক্রেতা
হিসেবে আপনি কোন কোন ক্ষেত্রে এই আইনের সুযোগ নিতে পারেন?
আপনি নিম্নলিখিত পরিস্থিতিগুলির
ক্ষেত্রে এই আইনের সুযোগ নিতে পারেন।
- আপনি যে জিনিস কিনেছেন বা কিনতে সন্মত হয়েছেন, তাতে যদি এক
বা একাধিক দোষ বা ত্রুটি থাকে।
- আপনি যে পরিষেবা ভাড়া করেছেন বা ভাড়া করার জন্য চুক্তি করেছেন,
তাতে যদি কোন অপরিপূর্ণতা বা ঘাটতি থাকে।
- যদি কোনও ব্যবসায়ী জিনিসের জন্য নির্ধারিত দামের অতিরিক্ত
দাম আপনার কাছ থেকে নিয়ে থাকেন। (নির্ধারিত দাম বলতে এখানে বোঝাচ্ছে
- জিনিসটির ওপর বা যে প্যাকেজের মধ্যে জিনিসটি আছে তার ওপর লিখিত
দাম কিংবা আইনের দ্বারা স্বীকৃত দাম)।
- ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে-সব জিনিস জীবনের পক্ষে বিপদ্জনক - নিরাপত্তা
হানিকর সেই সমস্ত জিনিস যখন নির্দেশিত বিধি না মেনে বিক্রি করা
হয় বা বিক্রির উদ্দেশ্যে তার তথ্যাদি প্রদর্শন করা হয়।
- যদি কোনও ব্যবসায়ী অবৈধ ব্যবসা বা নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবসা চালায়
বা অনুশীলন করে।
কোন
ধারার ওপর ভিত্তি করে আপনি আপনার অভিযোগপত্র জমা দেবেন?
ক্রেতা সুরক্ষা আইনের 12
নং ধারায় আপনার আবেদনপত্র বা অভিযোগপত্র জমা দিন।
অভিযোগপত্র
কার কাছে জমা দেবেন?
- আপনার ক্ষতিপূরণের মূল্য
যদি পাঁচ লক্ষ টাকার মধ্যে হয়, তাহলে আপনার অভিযোগপত্র জমা দেবেন
জেলা কন্সিউমার ফোরামে।
- আপনার ক্ষতিপূরণের মূল্য যদি পাঁচ লক্ষ থেকে কুড়ি লক্ষ টাকার
মধ্যে হয়, তাহলে আপনার অভিযোগপত্র জমা দেবেন রাজ্য কমিশনে।
- আপনার ক্ষতিপূরণের মূল্য যদি কুড়ি লক্ষ টাকার অধিক হয়, তাহলে
আপনার অভিযোগপত্র জমা দেবেন জাতীয় কমিশনে।
অভিযোগপত্র কিভাবে জমা দেবেন?
আপনার অভিযোগপত্র সাদা
পাতায় লিখিত ভাবে জমা দিলেই চলবে।
অভিযোগপত্র জমা দেবার ফি কত?
অভিযোগপত্র জমা দিতে কোনও
কোর্ট ফি লাগে না।
অভিযোগপত্র কত দিনের মধ্যে জমা দেবেন?
ঘটনার সময় থেকে দু বছরের
মধ্যে আপনার অভিযোগ পত্র দাখিল করতে পারেন। তবে বিচারক ইচ্ছে
করলে এই সময়ের পরেও আপনার অভিযোগ পত্র গ্রহণ করতে পারেন।
অভিযোগপত্র জমা দেবার জন্য কি কোনও উকিলের
প্রায়োজন আছে?
অভিযোগ দাখিলের জন্য (কিংবা
তারপরেও) কোনও উকিল লাগে না।
অভিযোগ পত্র জমা দেবার
কত দিনের মধ্যে আপনি প্রতিবিধান পাবেন?
সাধারণতঃ বিবাদীপক্ষ ফোরামের
বিজ্ঞপ্তি পাবার পর থেকে ৯০ দিনের মধ্যে আপনি আপনার প্রতিবিধান
পেতে পারেন।
কারা উপভোক্তা বা ক্রেতা নন?
ব্যবসার উদ্দেশ্যে কেউ
কিছু ক্রয় করলে বা কোনও পরিষেবা গ্রহণ করলে - এই আইন অনুসারে
তাকে ক্রেতা বা উপভোক্তা বলে গণ্য করা হয় না।
কোন কোন সংস্থার ক্ষেত্রে আপনি এই আইনের
সাহায্য পেতে পারেন?
সাধারণ দোকান বা বিক্রয়কারী
সংস্থাগুলি অবশ্যই এর আওতায় পড়ে। তবে এই আইনের বিস্তৃতি খুবই
ব্যাপক। যেমন, ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস, টেলিফোন, বিদ্যুত্, রান্নার
গ্যাস, চিকিত্সক, ফ্রিজ, রেল, কেব্ল টিভি, ক্যুরিয়ার সার্ভিস,
ইত্যাদির বিরুদ্ধে আপনার অভিযোগ থাকলে আপনি এদের বিরুদ্ধে আপনার
অভিযোগ পত্র দাখিল করতে পারেন। প্রভিডেণ্ট ফাণ্ড, গ্র্যাচুইটি,
পেনসন অথবা অবসরকালীন সুবিধে না পাওয়ার জন্য মালিকের বিরুদ্ধে
আপনার অভিযোগ পত্র দাখিল করার অধিকার আছে। বেসরকারী হাসপাতাল,
নার্সিংহোম, বেসরকারী চিকিত্সক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (কিছু ক্ষেত্রে)
ইত্যাদির বিরুদ্ধে আপনার অভিযোগও এই আইনের আওতায় পরে।
হেরে গেলে বা ক্ষতিপূরণ না পেলে আপনি কি করতে পারেন?
আপনার অভিযোগের সুরাহা
না হলে আপনি অবশ্যই আপীল করতে পারেন।
আপীল করলে কোথায় তা করবেন?
- জেলা ফোরামের রায়ের বিরুদ্ধে
আপীল করতে হলে আপনাকে তা ৩০ দিনের মধ্যে করতে হবে রাজ্য কমিশনে।
- রাজ্য কমিশনের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করতে হলে আপনাকে তা ৩০
দিনের মধ্যে করতে হবে জাতীয় কমিশনে।
কেসের রায় কার্যকরী না করলে কোন শাস্তিমূলক
বিধান এই আইনে আছে কি?
কেসের সিদ্ধান্ত অভিযুক্ত
না মানলে অভিযুক্তকে নিম্নোক্ত যে কোন একটি বা সব কটি শাস্তিই
দেওয়া হতে পারে:
- কম পক্ষে একমাস, সর্বাধিক তিন বছরের কারাবাস।
- কম পক্ষে 2,000 (দু হাজার) টাকা, সর্বাধিক 10,000 (দশ হাজার)
টাকা জরিমানা।
অভিযোগ পত্রে কি কি লিখবেন?
- আপনার নাম ও সম্পূর্ণ
ঠিকানা।
- যার বা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন, তার বা তাদের নাম ও সম্পূর্ণ
ঠিকানা।
- জিনিস কেনা/ভাড়া নেওয়া/পরিষেবা গ্রহণের তারিখ।
- দাম হিসেবে দেওয়া টাকার পরিমান।
- কেনা বা ভাড়া নেওয়া জিনিসটির বর্ণনা ও তার পরিমাণ/পরিমাপ বা
পরিষেবার প্রকৃতি।
- অভিযোগ কি ধরণের; অসাধু ব্যবসা সম্পর্কে/ত্রুটিপূর্ণ দ্রব্য
সম্পর্কে/পরিষেবা ক্ষেত্রে ঘাটতির বিষয়/বেশী দাম নেওয়া সম্পর্কে।
- মূল্যপত্র বা বিল/ভাউচার/রসিদ আর এই ব্যাপারে চিঠিপত্র যদি
কিছু থাকে।
- আপনি কি ধরণের প্রতিবিধান চাইছেন।
মনে রাখবেন:
তুচ্ছ কারণে বা হয়রাণি করার উদ্দেশ্যে অভিযোগ দায়ের করলে অভিযোগকারীরই
জরিমানা হতে পারে।
কয়েকটি ক্রেতা-সুরক্ষা জেলা ফোরামের (কনসিউমার ডিসপিউট্স রিড্রেসাল
ফোরাম) ঠিকানা:
উত্তর 24 পরগনা: 7 কে.বি.
বোস রোড, বারাসত।
দক্ষিণ 24 পরগনা: 18 জজেস
কোর্ট রোড, আলিপুর, কলকাতা 700027, ফোন 2479-4335।
হাওড়া: রেড কোর্ট বিল্ডিং,
হাওড়া, 711001, ফোন 2660-0892।
কলকাতা (ইউনিট 1): ভবানী
ভবন (এক তলা), কলকাতা 700027, ফোন 2479-4862।
কলকাতা (ইউনিট 2): 8বি
নেলী সেনগুপ্ত সরণী (সাত তলা), কলকাতা 700087।
পশ্চিমবঙ্গের ক্রেতা-সুরক্ষা রাজ্য কমিশনের
ঠিকানা:
স্টেট কনসিউমার ডিস্প্যুটস
রিড্রেসাল কমিশন: ভবানী ভবন (এক তলা), কলকাতা 700027, ফোন 2479-4916।
অন্যান্য জেলা ফোরামের ঠিকানার জন্য ক্রেতা
সুরক্ষা দপ্তরে যোগাযোগ করুন:
ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের
ঠিকানা:
11এ মির্জা গালিব স্ট্রিট
কলকাতা 700087
ইমেইল sec.cons@wb.nic.in
ওয়েবসাইট: http:kolkata.wb.nic.in/consumer
[আইন বিষয়ক যে-সব আলোচনা
অবসর-এ রয়েছে তার উদ্দেশ্য সাধারণ ভাবে আইনের ব্যাপারে
পাঠকদের অবহিত করা। এই আলোচনা কোনও ভাবেই উকিলের পরামর্শের
বিকল্প নয়। কারোর আইন সংক্রান্ত কোনও সমস্যা থাকলে,
তাঁর উচিত সরাসরি কোনও আইনজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা।]