নিউ
জার্সি ডিভিশন অফ ইউথ এণ্ড ফ্যামিলি সার্ভিস (DYFS)
কিছুদিন
আগে দেশের নানান সংবাদ পত্রে নিউ জার্সির একটি বাঙালী দম্পতির
কাছ থেকে তাদের শিশুপুত্রকে কেড়ে নিয়ে যাবার খবর প্রকাশিত হয়েছিলে।
এ ধরণের খবর শুনতে আমরা দেশে অভ্যস্ত নই। শিশুর স্থান তার নিজের
বাড়িতে - সেখানেই সে আদরে ভালোবাসায় বড় হবে – সেটাই স্বাভাবিক।
সরকার সেখানে নাক গলাতে আসবে কেন? এই নিবন্ধের উদ্দেশ্য নিউ
জার্সি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারি সংস্থাগুলি
শিশুদের সুরক্ষার ব্যাপারে ভূমিকা নেয় – সে নিয়ে আলোচনা করা।
প্রসঙ্গত, এই বাঙালী দম্পতির বিশেষ ক্ষেত্রে ঠিক কি ঘটেছে –
সেটা আমরা জানি না। ঘটনাটি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত দুঃখজনক, আশা
করব ব্যাপারটির একটি সুষ্ঠু পরিণতি যেন ঘটে।
DYFS (এর নাম এখন পালটে Division of Child Protection and Permanency
করা হয়েছে) একটি সরকারি রাজ্য-সংস্থা যাদের দায়িত্ব হল শিশুদের
সুরক্ষা। শিশুদের ওপর অত্যাচার বা অবহেলার কোনও খবর এলেই এই
সংস্থার কাজ হল তার তদন্ত করা। তারজন্যে শিশুর বাড়িতে গিয়ে পরিবারে
লোকজনদের সঙ্গে কথা বলা, শিশুর শিক্ষক, ডাক্তার ও অন্যান্য নিকটজনের
কাছ থেকে তথ্য নেওয়া – এই সবই DYFS-এর তদন্তকারী কর্মীর দায়িত্ব।
তদন্তে যদি স্থির হয় যে শিশুর রক্ষণাবেক্ষণকারী শিশুর ক্ষতি
করেছে বা শিশুটিকে এমন অবস্থায় রেখেছে যে শিশুটির ক্ষতি হবার
ঝুঁকি রয়েছে, তাহলে DYFS সুপিরিয়র কোর্টে মামলা আনতে পারে। সাধারণভাবে
DYFS-এর ফৌজদারি (criminal) মামলা আনার অধিকার নেই।
নিউ জার্সির আইনে শিশু নির্যাতন ও অবহেলার সংজ্ঞা হলঃ
- শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি (harm) করা অথবা অন্য কাউকে শারীরিক
বা মানসিক ক্ষতি করার সুযোগ দেওয়া
- শিশুদের শারীরিক ক্ষতি হতে পারে এমন অবস্থার সৃষ্টি করা বা
অন্য কাউকে সেটা সৃষ্টি কয়ার সুযোগ দেওয়া
- শিশুকে যৌনভাবে নিগ্রহ করা অথবা অন্য কাউকে যৌননিগ্রহ করার
সুযোগ দেওয়া
- ঠিকমত দেখভাল না করে শিশুর শারীরিক ক্ষতি করা অথবা ক্ষতি হবার
সম্ভবনা সৃষ্টি করা
- বাড়াবাড়ি রকমের শারীরিক শাস্তি দেওয়া; অথবা
- শিশুকে পরিত্যক্ত করা
বাবা-মা বা যে শিশুকে যে
দেখভাল করছে, তার হাতে শিশুকে অবহেলিত হচ্ছে কিনা বা শিশুর তারা
কোনও ক্ষতি করেছে কিনা সেটা প্রথমে বিচার করে DYFS । বিচার করে
যে সিদ্ধান্তে তারা আসে, সেটা তাদের শিশুটির বাবা-মাকে জানাতে
হয় । এই সিদ্ধান্তের ফল সুদূর প্রসারী হতে পারে - যার একটি হল
নিউ জার্সির শিশু-নির্যাতন রেজিস্ট্রি খাতায় অভিযুক্তের নাম
লিপিবদ্ধ হওয়া । এর ফলে অনেক ক্ষেত্রেই বাবা-মায়েদের অসুবিধা
হতে পারে; যেমন, চাকরির ক্ষেত্রে শিশুদের সংস্পর্শে আসার সম্ভবনা
থাকলে কিংবা যে কাজ বয়স্ক বা প্রতিবন্ধীদের নিয়ে সেগুলি পাবার
কোনও উপায় থাকবে না ।
DYFS-এর এই সিদ্ধান্তের
সঙ্গে একমত না হলে অভিযুক্তকে ২০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হয়।
আপিল করার সময়ে সব ক্ষেত্রেই DYFS-এর ব্যাপারে যেসব উকিল অভিজ্ঞ
তাদের নিযুক্ত করা উচিত। অনেক সময়ে বাবা-মার মধ্যে শুধু একজন
নির্যাতনকারি বলে অভিযুক্ত হলেও আদালতে বাবা-মা দুজনের বিরুদ্ধেই
অভিযোগ আনা হয়। সেক্ষেত্রে বাবা এবং মা দুজনের জন্যে দুজন উকিলের
প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। উকিলের টাকা দেবার সঙ্গতি যাদের ত্থাকে
না, নিউ জার্সির পাবলিক ডিফেন্ডা্রের তরফ থেকে তাদের উকিল দিয়ে
সাহায়্য করা হয়। সময়মত উকিল যদি জোগাড় করা সম্ভব না হয়, তাহলে
বিচারককের কাছে শুনানির দিন পেছনের জন্যে আবেদন করা যেতে পারে।
আইন অনুসারে DYFS-এর কাজ
হল শিশুর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে শিশুর স্বার্থ মাথায় রেখে ভবিষ্যৎ
করণীয় ঠিক করা । অনেক সহায়ক সংস্থা সন্তান পালনের ব্যাপারে শিশুর
বাবা মাকে সাহায্য করতে পারে। DYFS-এর দায়িত্ব তার সেগুলোর হদিশ
বাবা-মাকে জানানো । শিশুর স্বার্থে অনেক সময়ে বাবা-মাকে কাউন্সেলরের
সহায়তা, শিশুদের যত্ন ও দেখভাল কি করে করতে হয় তার প্রশিক্ষণ,
ইত্যাদি নিতে বলা হয় । অহং বিসর্জন দিযে এগুলোর সহায়তা নেওয়া
হবে সঠিক পদক্ষেপ । DYFS যদি স্থির করে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে
শিশুকে বাড়িতে রাখা অনুচিত হবে, সেক্ষেত্রে বাবা-মার পরিচিত
তেমন আত্মীয়স্বজন কাছাকাছি যদি থাকে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে সেটা
DYFS-এ জানানো উচিত। DYFS যদি শিশুকে বাইরে অপরিচিত কারোর কাছেও
যদি রাখে, তাহলেও বাবা-মার অধিকার থাকবে শিশুটিকে দেখা করতে
পারার।
সুপিরিয়র কোর্টের বিচারক
যদি বাবা-মা-র উকিল এবং DYFS-এর কথা শুনে মনে করেন যে শিশুটিকে
কিছুদিন আর কারো তত্ত্বাবধানে (foster care) রাখাটা যুক্তিযুক্ত
তাহলে সেরকম নির্দেশ দেবেন। যদি এক বছরের বেশী কাউকে foster
care- থাকতে হয়, তখন আদালতে আরেকটা শুনানি (Permanency Hearing)
হয়। এই শুনানিতে DYFS-কে জানাতে হয় শিশুটির জন্য তাদের কি সুপারিশ
–
(১) শিশুকে শিগগিরি বাবা-মার কাছে ফেরৎ পাঠানো
(২) বাবা-মার অধিকার কেড়ে নিয়ে ওন্য কাউকে শিশুটিকে দত্তক হিসেবে
গ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া
(৩) বাবা-মার কোনও নিকট আত্মীয়কে শিশুটির আইনসঙ্গত অভিভাবকের
দায়িত্ব দেওয়া।
এই শুনানির পরে শিশুর ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়।
DYFS-এর কাজে বহু বাবা-মা
সন্তুষ্ট নয়। সরকার এদের অজস্র ক্ষমতা দিয়েছে। কিন্তু যে গুরুভার
এদের দেওয়া হয়েছে, সেটা বহন করার শিক্ষা ও যোগ্যতা DYFS কেস-ওয়ার্কারদের
কতটা রয়েছে সে নিয়ে কারো কারো প্রশ্ন আছে। এক দিক থেকে এদের
রিপোর্টের ভিত্তিতে সন্তানকে অন্তত সাময়িক ভাবে হারানোর সম্ভাবনা
থাকছে। অন্যপক্ষে যেখানে সন্তানদের সরা্নোর বিশেষ প্রয়োজন ছিল
এদের অবিবেচনায় সন্তানদের সেখানে ফেলে রেখে পরোক্ষভবে তাদের
মৃত্যুর কারণ এরা হয়েছে – এমন অভিযোগও রয়েছে।
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
[আইন বিষয়ক যে-সব আলোচনা
অবসর-এ রয়েছে তার উদ্দেশ্য সাধারণ ভাবে আইনের ব্যাপারে
পাঠকদের অবহিত করা। এই আলোচনা কোনও ভাবেই উকিলের পরামর্শের
বিকল্প নয়। কারোর আইন সংক্রান্ত কোনও সমস্যা থাকলে,
তাঁর উচিত সরাসরি কোনও আইনজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা।]