আইনের কথা: মানহানি ও ব্যভিচার
মানহানি
(Defamation):
মুখের কথা ব্যবহার করে,
লেখার মাধ্যমে, অঙ্গভঙ্গীর সহায্যে, বা যা লোকের চোখে পড়ে -
এমন কিছুর সাহায্যে একজনের মানহানি করা যায়। কোনো ব্যক্তি যদি
কারোর সুনাম ক্ষুণ্ণ হবে বা হবার যুক্তিযুক্ত সম্ভাবনা আছে জেনেও
কারোর বিরুদ্ধে নিন্দা বা অপপ্রচার করেন, তাহলে প্রথম ব্যক্তি
দ্বিতীয় ব্যক্তির মানহানি করেছেন বলে বিবেচিত হবে। মানহানি হয়েছে
প্রমাণিত হলে তার জন্য শাস্তি কারাবাস (যা দুবছর পর্যন্ত হতে
পারে) কিংবা জরিমানা, অথবা দুইই। অবশ্য আইনের চোখে এ ব্যাপারে
বেশ কিছু ব্যতিক্রম আছে। সেগুলি হল:
যে জিনিস সত্য এবং যে সত্যের
প্রচার জনস্বার্থে করা প্রয়োজন, সেটি নিন্দার কথা হলেও মানহানি
হিসেবে ধরা হবে না।
সরকারী কাজ সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো সরকারী কর্মচারীর ব্যবহার বা
চরিত্র সম্পর্কে কোনো অভিমত জানালে সেটি মানহানির আওতায় পড়বে
না - যদি সেই সেই অভিমতটি ব্যক্ত করা হয় কোনো দুরভিসন্ধি ছাড়া
অর্থাত্ শুভ-বিশ্বাসে (good faith)।
যেখানে জনস্বার্থ জড়িত, সেখানে যে কোনো ব্যক্তির আচরণ বা চরিত্র
সম্পর্কে পূর্ণ-বিশ্বাসে দেওয়া অভিমত মানহানির কারণ হবে না।
কোর্টের কোনো রায় ছাপালে বা সেই সম্বন্ধে মোটামুটি ভাবে নির্ভুল
তথ্য পরিবেশন করলে - সেটি মানহানির মধ্যে পড়বে না।
যে মামলা কোর্টে নিষ্পত্তি হয়ে গেছে, সেই মামলা সম্পর্কে নিজের
মতামত ব্যক্ত করা বা সেই মামলার কোনো সাক্ষী বা বাদী-বিবাদীর
আচরণ সম্পর্কে মতামত ব্যক্ত করা (যদি সেগুলি শুভ-বিশ্বাসে করা
হয়) মানহানির বিষয় হবে না।
কোনো লেখকের প্রকাশিত লেখা সম্পর্কে শুভ-বিশ্বাসে দেওয়া কোনো
অভিমত মানহানির মধ্যে পড়বে না।
আইন বা চাকরির চুক্তি অনুসারে যখন একজন অন্যের অধীনে কাজ করে,
তখন অধীনস্ত কর্মচারীকে কাজের ব্যাপারে শুভ-বিশ্বাসে তীরস্কার
বা ভতর্্সনা করা মানহানির মধ্যে পড়বে না।
কেউ যদি নিজের স্বার্থ বা অন্যের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য শুভ-বিশ্বাসে
কারোর চরিত্র সম্পর্কে নিন্দনীয় কিছু বলে তাহলে সেটি মানহানির
মধ্যে পড়বে না।
কাউকে সাবধান করা যেটা তার ভালোর জন্য বা জনস্বার্থে - সেটিও
মানহানির আওতায় পড়বে না।
ব্যভিচার
(Adultery):
ভারতীয় দণ্ডমূলক আইনের
(পেনাল কোডের) ৪৯৭ পরিচ্ছদ অনুসারে ব্যভিচার তখনই ঘটে যখন কোনো
বিবাহিত পুরুষ পরস্ত্রীর সঙ্গে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করে এবং
পুরুষটি জানে যে, নারীটি
বিবাহিতা অথবা না জানলেও সেটি বিশ্বাস করার যুক্তিযুক্ত কারণ
থাকে;
যৌনসম্পর্ক স্থাপিত হয় সেই নারীর স্বামীর অনুমতি বা পরোক্ষ সন্মতি
ছাড়া;
সেই যৌনমিলন ধর্ষণের আওতায় পড়ে না।
দণ্ডমূলক আইনে লিঙ্গবৈষম্য রয়েছে; পুরুষ এই অসংগত আচরণের জন্য
শাস্তি পাবে, কিন্তু পর-পুরুষকে এই অসত্ কাজে সহায়তা করার জন্য
সংশ্লিষ্ট নারীর জন্য কোনো শাস্তি বিধানে নেই। প্রসঙ্গতঃ, পিনাল
কোডের ধারা অনুযায়ী কোনো বিবাহিত পুরুষ যদি অবিবাহিত নারী বা
বিধবা নারীর সঙ্গে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করে, তাহলে সেটা ব্যভিচার
বলে ধরা হবে না।
এই আইনটি রচিত হয় ১৮৬০
সালে; সেই যুগে স্ত্রীকে স্বামীর সম্পত্তি বলে মনে করা হত। ধরা
যেতে পারে, এই আইনটি সৃষ্টি হয়েছিল যাতে করে মহিলার স্বামী ব্যভিচারে
লিপ্ত পুরুষকে আইনের সাহায্যে শাস্তি দিয়ে প্রতিশোধ নিতে পারে।
সেই জন্যেই স্ত্রীর প্রতি কোনো শাস্তির বিধান এই আইনে নেই এবং
নারী অবিবাহিতা বা বিধবা হলে এই আইনে পুরুষও কোনো শাস্তি পায়
না।
ভারতীয় বিবাহ আইনে অবশ্য
ব্যভিচারকে অন্য রকম চোখে দেখা হয়। সেখানে ব্যভিচার ব্যবহৃত
হয় আরো অনেক ব্যাপক অর্থে। এই আইনে ব্যভিচার তখনই ঘটে যখন বিবাহিত
থাকা অবস্থায় কোন পুরুষ (বা নারী) অন্য কোনো বিবাহিত বা অবিবাহিত
নারীর (বা পুরুষের) সন্মতিতে তার সঙ্গে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করে।
এখানে 'অন্য কোনো বিবাহিত' বলতে বোঝাচ্ছে যে নিজের স্ত্রী বা
স্বামী নয়।
যখন ব্যভিচারের জন্য কেউ
বিবাহ-বিচ্ছেদ বা আলাদা থাকার জন্য আবেদন করে, তখন সেটি ব্যভিচারী
বা ব্যভিচারিনীর (যে তার স্বামী বা স্ত্রী) বিরুদ্ধে করে। এ
ক্ষেত্রে অভিযোগটি নিজের স্বামী বা স্ত্রীর বিরুদ্ধে (এখানে
কোনো লিঙ্গ-বৈষম্য নেই); কারণ দণ্ডমূলক ও বিবাহ আইন দুটিতেই
ব্যভিচার বিবাহের ক্ষেত্রে একটা অপরাধ।
[আইন বিষয়ক যে-সব আলোচনা
অবসর-এ রয়েছে তার উদ্দেশ্য সাধারণ ভাবে আইনের ব্যাপারে
পাঠকদের অবহিত করা। এই আলোচনা কোনও ভাবেই উকিলের পরামর্শের
বিকল্প নয়। কারোর আইন সংক্রান্ত কোনও সমস্যা থাকলে,
তাঁর উচিত সরাসরি কোনও আইনজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা।]