প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

বিবাহ-বিচ্ছেদ বনাম আদালতের নির্দেশে আলাদা হওয়া

অনেক সময়ে নানা কারণে স্বামী-স্ত্রীর পক্ষে একসঙ্গে থাকা সম্ভবপর হয় না, সেক্ষেত্রে তাঁদের দুটি পথ খোলা থাকে - বিবাহ বিচ্ছেদ (Divorce) অথবা আদালতের নির্দেশে আলাদা (Judicial Separation) বসবাস করা।

ডিভোর্স বা বিবাহ-বিচ্ছেদ হল স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণ ভাবে ছিন্ন হওয়া। ডিভোর্সের পরে দুজনেই আবার কাউকে বিয়ে করে নতুন সংসার পাততে পারেন। (এখানে মনে রাখতে হবে বিবাহ ভারতবর্ষে ব্যক্তিগত আইনে আওতায় পড়ে। সবার জন্য ধর্ম-নিরপেক্ষ বিশেষ বিবাহ আইন (Special Marraiage Act, 1954) থাকলেও, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর জন্য বিভিন্ন বিবাহ আইন রয়েছে। যেমন মুসলিম বিবাহ আইনে ডিভোর্স না করেও স্বামীর পক্ষে মোট চারটি স্ত্রী গ্রহণ করা সম্ভব।)

জুডিশিয়াল সেপারেশন হল আদালতের আদেশে স্বতন্ত্র ভাবে বসবাস করার অধিকার। এক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক ছিন্ন হল না, কিন্তু তারা আলাদা ভাবে বসবাসের অনুমতি পেলেন। ফলে এঁদের কেউই অন্য কারোর সঙ্গে নতুন করে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হতে পারবেন না। বলা বাহুল্য যে, মুসলিম বিবাহ আইনের ক্ষেত্রে জুডিশিয়াল সেপারেশন প্রযোজ্য হবে না, কারণ সেই আইনে পুরুষের একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু যদি কোনও মুসলিম পুরুষ ও নারী বিশেষ বিবাহ আইন, ১৯৫৪ অনুসারে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন, কিংবা মুসলিম মতে বিবাহের পর বিশেষ বিবাহ আইনে নিজেদের বিবাহ রেজিস্ট্রি করেন, তাহলে তাঁরা বিশেষ বিবাহ আইনের আওতায় পড়বেন। এবং সেই আইনের সমস্ত বিধি-নিষেধ তাঁদের উপরে বর্তাবে।

জুডিশিয়াল সেপারেশনের ক্ষেত্রে স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর সম্পত্তির উপর স্ত্রীর অধিকার অক্ষুণ্ণ থাকে। এছাড়া ফৌজদারী দণ্ডবিধির 125 ধারা অনুসারে আলাদা হবার পর স্ত্রী খোরপোষের আবেদন করতে পারেন। খোরপোষের আবেদন বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটলেও করা যায়। কিন্তু সেই খোরপোষের আদেশ আবার বিয়ে করলে আর বলবত্ থাকে না।

নানান কারণে ডিভোর্স বা জুডিশিয়াল সেপারেশনের জন্য আবেদন করা যায়। তার অনেকগুলি নিচে দেওয়া হল। সেই সঙ্গে দেওয়া হল কোন কোন ধর্মের বিবাহের ক্ষেত্রে সেগুলি প্রযোজ্য। এ ছাড়াও অন্য কারণে আবেদন করা সম্ভব। দুজনের মিউচুয়াল কনসেণ্ট বা সহমতের ভিত্তিতেও আদালত বিবাহ-বিচ্ছেদের আবেদন মঞ্জুর করতে পারেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে বিচ্ছেদ পেতে তাঁদের এক বছর আলাদা থাকতে হয় এবং সহবাস করা থেকে বিরত থাকতে হয়।

কারণ - নিষ্ঠুরতা: স্ত্রীর উপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার (যেমন, মারধোর করা, যৌন-নিপীড়ন, স্ত্রীর স্বাধীনতায় অন্যায় হস্তক্ষেপ, সংসার না দেখে মদ-জুয়োতে টাকা ওড়ানো, ইত্যাদি)

কোন কোন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য:

হিন্দু, মুসলিম, ক্রিশ্চান, পার্সী, সিভিল ম্যারেজ, এবং স্পেশাল ম্যারেজ এক্ট, 1954, অনুযায়ী রেজিস্টিকৃত বিবাহ।

কারণ - ব্যাভিচার (Adultry): স্বামীর (বা স্ত্রীর) অন্য কোনও নারীর (বা পুরুষের) সম্মতিতে তার সঙ্গে যৌন-সম্পর্ক স্থাপন।

কোন কোন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য:

হিন্দু, ক্রিশ্চান, পার্সী, সিভিল ম্যারেজ, এবং স্পেশাল ম্যারেজ এক্ট, 1954, অনুযায়ী রেজিস্টিকৃত বিবাহ।

কারণ - স্বামী বা স্ত্রীর দু-বছরের অধিক কাল সংসার ত্যাগ করে চলে যাওয়া:

কোন কোন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য:

হিন্দু, ক্রিশ্চান, পার্সী, সিভিল ম্যারেজ, এবং স্পেশাল ম্যারেজ এক্ট, 1954, অনুযায়ী রেজিস্টিকৃত বিবাহ। মুসলিম আইনের ক্ষেত্রে তিন বছরের বেশি সময় হলে।

কারণ - স্বামী বা স্ত্রীর সাত বছরের বেশি কারাদণ্ড হওয়া:

কোন কোন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য:

পার্সী, সিভিল ম্যারেজ, এবং স্পেশাল ম্যারেজ এক্ট, 1954, অনুযায়ী রেজিস্টিকৃত বিবাহ।

কারণ - স্বামী বা স্ত্রী সাত বছর নিরুদ্দিষ্ট থাকা:

কোন কোন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য:

হিন্দু, সিভিল ম্যারেজ, এবং স্পেশাল ম্যারেজ এক্ট, 1954, অনুযায়ী রেজিস্টিকৃত বিবাহ। মুসলিম আইনে চার বছরের বেশি সময হলে।

কারণ - স্বামী বা স্ত্রী মস্তিষ্ক বিকৃতি:

কোন কোন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য:

আবেদনের প্রাক্কালীন তিন বছর ধরে - হিন্দু, সিভিল ম্যারেজ, এবং স্পেশাল ম্যারেজ এক্ট, 1954, অনুযায়ী রেজিস্টিকৃত বিবাহ। মুসলিম বিবাহ আইন।

কারণ - যৌন ব্যধি:

কোন কোন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য:

মুসলিম বিবাহ আইন। রোগ সংক্রামক হলে - হিন্দু, সিভিল ম্যারেজ, এবং স্পেশাল ম্যারেজ এক্ট, 1954, অনুযায়ী রেজিস্টিকৃত বিবাহ।

কারণ - স্বামী বা স্ত্রীর অন্য ধর্ম গ্রহণ:

কোন কোন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য:

হিন্দু, পার্সী ও মুসলিম বিবাহ আইন।

কারণ - স্বামীর যৌন অক্ষমতা:

কোন কোন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য:

মুসলিম বিবাহ আইন।

বিবাহ বিচ্ছেদের কারণগুলির কোনও একটির ভিত্তিতে জুডিহিযাল সেপারেশনও চাওয়া যেতে পারে।

 

[আইন বিষয়ক যে-সব আলোচনা অবসর-এ রয়েছে তার উদ্দেশ্য সাধারণ ভাবে আইনের ব্যাপারে পাঠকদের অবহিত করা। এই আলোচনা কোনও ভাবেই উকিলের পরামর্শের বিকল্প নয়। কারোর আইন সংক্রান্ত কোনও সমস্যা থাকলে, তাঁর উচিত সরাসরি কোনও আইনজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা।]

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।