হিন্দু
উত্তরাধিকার আইন, ১৯৫৬
এই আইন আনুসারে মৃত ব্যক্তির কোনও উইল বা ইচ্ছাপত্র
না থাকলে, তার সম্পত্তি নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে বণ্টন করা হবে:
প্রথমতঃ যে-সব আত্মীয়রা প্রথম শ্রেণীর উত্তরাধিকারী বলে গণ্য
তাদের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টন করা হবে। মৃত ব্যক্তি যদি পুরুষ
হয়, তাহলে প্রথম শ্রেণীর আত্মীয়রা হবে: পুত্র, কন্যা, বিধবা
স্ত্রী, মাতা, মৃত পুত্রের পুত্র ও কন্যা, মৃত পুত্রের বিধবা
স্ত্রী (যদি সে ইতিমধ্যে পুনর্বিবাহ না করে থাকে), মৃতা কন্যার
পুত্র ও কন্যা, মৃত পুত্রের মৃত পুত্রের পুত্র ও কন্যা এবং মৃত
পুত্রের মৃত পুত্রের বিধবা স্ত্রী (যদি সে ইতিমধ্যে পুনর্বিবাহ
না করে থাকে)।
যদি প্রথম শ্রেণীর কোনও উত্তরাধিকারী না থাকে, তাহলে পর্যায়ক্রমে
দ্বিতীয়, তৃতীয়, ইত্যাদি শ্রেণীভুক্ত আত্মীয়দের মধ্যে সম্পত্তি
বণ্টন করা হবে। দ্বিতীয় শ্রেণীর উত্তরাধিকারীরা হল:
(১) পিতা;
(২) (ক) পুত্রের কন্যার পুত্র, (খ) পুত্রের কন্যার কন্যা, (গ)
ভ্রাতা, (ঘ) ভগিনী;
(৩) (ক) কন্যার পুত্রের পুত্র , (খ) কন্যার পুত্রের কন্যা, (গ)
কন্যzর কন্যার পুত্র, (ঘ) কন্যার কন্যার কন্যা;
(৪) (ক) ভ্রাতার পুত্র, (খ) ভগিনীর পুত্র, (গ) ভ্রাতার কন্যা,
(ঘ) ভগিনীর কন্যা;
(৫) পিতার পিতা; পিতার মাতা;
(৬) পিতার বিধবা স্ত্রী - জন্মদাত্রী মা নয়। ভ্রাতার বিধবা স্ত্রী;
(৭) পিতার ভ্রাতা, পিতার ভগিনী;
(৮) মাতার পিতা; মাতার মাতা;
(৯) মাতার ভ্রাতা; মাতার ভগিনী।
প্রথমে সম্পত্তি সমানভাবে ভাগ করা হবে পুত্র, কন্যা, বিধবা
স্ত্রী ও মাতার মধ্যে। পুত্র বা কন্যা মৃত হলে তাদের প্রাপ্য
সম্পত্তি ভাগ করা হবে তাদের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে, অর্থাৎ বিধবা
স্ত্রী, পুত্র ও কন্যাদের মধ্যে। কন্যার মৃত্যু হয়ে থাকলে তার
ভাগ সেইরকম ভাবে যাবে তার পুত্র ও কন্যার কাছে।
প্রথম শ্রেণীর কোনও উত্তরাধিকারী না থাকলে দ্বিতীয় শ্রেণীর
উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টন করা হবে। সেক্ষেত্রে তালিকা
যেভাবে সাজানো আছে সেভাবে উত্তরাধিকারীরা গুরুত্ব পাবে। অর্থাত্
দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রথমে আছে পিতা। পিতা জীবিত থাকলে পিতা একাই
পুরো সম্পত্তি পাবে। পিতা মৃত হলে দ্বিতীয় স্থানে যারা আছে,
শুধু তারাই সবাই মিলে সমান ভাগে সম্পত্তি পাবে। দ্বিতীয় স্থানের
যদি কেউ জীবিত না থাকে, সেক্ষেত্রে তৃতীয়স্থানে যারা আছে তারা
সমান ভাগে সম্পত্তি পাবে। ইত্যাদি।
দ্বিতীয় শ্রেণীর উত্তরাধিকারীদের কেউ না থাকলে তার অ্যাগনেটরা
সম্পত্তি পাবে। অ্যাগনেট হল দুজন ব্যক্তি যদি সম্পূর্ণভাবে পুং
পূর্বপুরুষের দ্বারা রক্তের সূত্রে অথবা দত্তকসূত্রে পরস্পরের
সাথে সম্পর্কীত হয়।
যদি কোনও অ্যাগনেট না থাকে, তাহলে কগনেটরা সম্পত্তি পাবে। কগনেট
হল দুই ব্যক্তি যদি রক্তের সূত্রে বা দত্তকসূত্রে পরস্পরের অঙ্গে
সম্পর্কীত হন, কিন্তু ঐ রক্তের সূত্র যদি সম্পূর্ণভাবে পুং পূর্বপুরুষ
দ্বারা না হয়ে থাকে।
মৃত ব্যক্তি যদি নারী হয়, তাহলে প্রথমে সেই নারীর সমস্ত সম্পত্তি
(নিজের পিতা-মাতার কাছ থেকে পাওয়া, স্বামী বা শ্বশুর বাড়ি থেকে
পাওয়া এবং স্বোপার্জিত) তার পুত্র ও কন্যা (জীবিত ও মৃত) এবং
স্বামী সমান ভাবে পাবে। এ ধরণের উত্তরাধিকারীরা না থাকলে সম্পত্তি
পাবে তার মৃত স্বামীর উত্তরাধিকারীরা। তারাও না থাকলে, সম্পত্তি
যাবে নারীর পিতা ও মাতার কাছে (অন্যথায় তার পিতার উত্তরাধিকারীদের
ও পরিশেষে তার মাতার উত্তরাধিকারীদের কাছে)।
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: হিন্দু পুরুষের উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে পুত্র,
কন্যা ও বিধবা স্ত্রীর মধ্যে সমভাবে সম্পত্তি বণ্টনের যে কথা
উল্লেখ করা হয়েছে - সেটি হিন্দুরা যারা দায়ভাগ নিয়মের মধ্যে
পড়েন (পশ্চিমবঙ্গে এই নিয়মটিই চালু আছে) - তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
মিতাক্ষরা নিয়মে (পশ্চিমবঙ্গের বাইরে নানান জায়গায় প্রচলিত)
যৌথপরিবারের সম্পত্তি (যেটি স্বোপার্জিত বা একান্ত হয়ে যাওয়া
সম্পত্তি নয়) বণ্টনের প্রথা পুরনো নিয়মেই চলবে।)
মোটামুটি ভাবে এই আইনে হিন্দু নারীদের সম্পত্তিতে পূর্ণ অধিকার
দেওয়া হয়েছে। তবে বসতবাড়ির উত্তরাধিকারের ব্যাপারে সমতা রক্ষা
করা হয় নি। মৃত ব্যক্তি*র উত্তরাধিকারীদের মধ্যে যদি পুরুষ ও
নারী উভয়েই থাকে এবং বসতবাড়িটি পরিবারের ব্যবহারের জন্য থাকে,
তাহলে সেই বসতবাড়িতে নারীদের বাস করার অধিকার থাকবে, যদি সে
অবিবাহিত, বিবাহ-বিচ্ছিন্না, স্বামী পরিত্যক্তা বা বিধবা হয়।
অর্থাত্ বিবাহিত নারীদের সেই বাড়িতে বাস করার অধিকার থাকবে না।
শুধু তাই নয়, এই বসতবাড়ির ওপরে নারীদের উত্তরাধিকারীদের প্রাপ্য
অংশ থাকবে ঠিকই, কিন্তু সেই অংশ ভাগ করার দাবী তারা তুলতে পারবে
না, যতক্ষণ না পর্যন্ত পুরুষ উত্তরাধিকারীরা বাড়িটি ভাগ করে
নিজেদের অংশগুলি নেবার সিদ্ধান্ত না নেয়।
*হিন্দু উত্তরাধিকার আইন, ১৯৫৬-র সংশোধন হয়েছে ২০০৫ সালে। এই সংশোধনীতে পুরনো আইনে যে লিঙ্গবৈষম্য ছিল সেটাকে
সরিয়ে দিয়ে মেয়েদের নীচের অধিকারগুলি দেওয়া হয়েছে -
যৌথ-সম্পত্তিতে কন্যা সন্তানের অধিকার পুত্র সন্তানেরই সমান। পুত্র ও কন্যাকে সমভাবে সম্পত্তি বন্টন করতে হবে। যৌথসম্পত্তির ধারদেনাও সমভাবে পুত্র ও কন্যাদের ওপর বর্তাবে।