প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

বিবিধ প্রসঙ্গ: পিটা আইন

যৌনব্যবসা ও আইন নিয়ে অবসর-এর অন্যত্র কিছু আলোচনা আগেই করা হয়েছে। এক সময়ে ভারতবর্ষে দেহব্যবসা সংক্রান্ত আইন ছিল সিটা বা Suppression of Immoral Traffic Act, 1956। ১৯৮৬ সালে সেটি পরিমার্জনা করে পিটা বা আই টি (পি) আইন, Immoral Traffic (Prevention) Act, 1956 প্রণয়ন করা হয়। সিটা দেহব্যবসাকে অবলুপ্ত (abolition) করার চেষ্টা করে নি, কিন্তু সেটাকে দমন করতে চেষ্টা (suppresion) করেছিল। পিটার লক্ষ্য দেহব্যবসাকে দমন নয়, তার পরিবর্তে সেটার প্রতিরোধ (prevention)। পিটা আইনে জীবিকা হিসেবে দেহব্যবসাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু পণ্য হিসেবে ইচ্ছেমত বাজারে বিক্রি করার অনুমতি দেওয়া হয় নি। এই আইন অনুসারে কিছু নির্দিষ্ট নিয়মকানুন মেনে ব্যক্তিগতভাবে এ ব্যবসা চালানো যেতে পারে। নিয়মাকানুন বা শর্তগুলি এই আইনে বিশদ করা আছে। এই আইনে বেশ্যালয়ে কেউ যৌনব্যবসা চালাতে পারবে না। বস্তুতঃ বেশ্যালয়ের (brothel) মালিক হওয়া বা সেটি চালানো, বা জেনেশুনে বাড়ি-অলার (বা ভাড়াটের) অন্যকাউকে বেশ্যালয় চালাতে দেওয়া এই আইনে অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। কিন্তু যদি একটি মেয়ে নিজের জীবনধারণের জন্য কোনো জায়গায় বেশ্যাবৃত্তি চালায় - যে জায়গার রক্ষণাবেক্ষণে অন্য কোনো লোক বা দেহোপজীবিনি জড়িত নয়, তাহলে সেই জায়গা বেশ্যালয় বলে ধরা হবে না। এ ছাড়া বেশ্যাবৃত্তিতে নিয়োজিত নারীকে যে-সব শর্ত পালন করতে হবে তার অনেকগুলি সংক্ষিপ্ত ভাবে অবসর-এ যৌনব্যবসা ও আইন-এ আলোচনা করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি শর্ত নিয়ে অনেক বিতর্কেরও সৃষ্টি হয়েছে। সেগুলি বাস্তবোচিত নয় বলেই অনেকে দাবী করেছেন। বিতর্কিত শর্তগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • দেহব্যবসার রোজগারের উপরে পরিবারের সদস্যদের নির্ভরশীল হয়ে বেঁচে না থাকা।
  • সর্বসাধারণের ব্যবহৃত জায়গায় দেহব্যবসা না করা এবং তারজন্য প্ররোচিত না করা।
  • দেহব্যবসার জন্য খদ্দেরকে আমন্ত্রণ না জানানো।
  • বাসস্থান বা জনসাধারণের ব্যবহৃত বা প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানের ২০০ মিটারের মধ্যে দেহব্যবসা না করা।
মুশকিল হল বহু নারীই দারিদ্রের জ্বালায় নিতান্ত নিরুপায় হয়ে এই বৃত্তি বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন। বহুক্ষেত্রেই এঁদের পারিবারিক দায়দায়িত্ব থাকে। কিন্তু যেহেতু পিটা-র একটি ধারা অনুযায়ী ১৮ বছরের বেশি কোনো ব্যক্তিই সেই নারীর অর্জিত আয়ের উপর আংশিক বা পুরোপুরি বির্ভরশীল হতে পারবেন না, সেক্ষেত্রে বৃদ্ধ বাবা-মা ও অন্যান্য যাঁদের জন্য নারীটি এই বৃত্তি নিতে বাধ্য হয়েছেন তাঁদের আইনতঃ তিনি সাহায্য করতে পারবেন না। এটা মানবিক দিক থেকে কতটা সমর্থনযোগ্য সেটা প্রশ্ন।

এই আইনে বেশ্যাবৃত্তি চালানোর অধিকার দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সর্বসাধারণের ব্যবহৃত জায়গায় বেশ্যাবৃত্তি চালানোর অধিকার দেওয়া হয় নি। যেখানে লোক চলাচল নেই সেখানে লোককে আনতে হলে যেখানে লোক চলাচল আছে সেখানে গিয়ে আমন্ত্রণ জানাতে হবে। কিন্তু খদ্দেরকে আমন্ত্রণ জানিয়ে সংগ্রহ করার অধিকার দেওয়া হয় নি। অর্থাত্ এটিকে বৃত্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও, সেই বৃত্তিতে সফল হবার সুযোগ এতে বিশেষ দেওয়া হয় নি। এক দিক থেকে বিচার করলে - সেটাই এই আইনের উদ্দেশ্য। এই আইনে দেহব্যবসা বে-আইনী করা হল না বটে, কিন্তু শর্ত মেনে চলতে হলে সেই ব্যবসায় সফলকাম সম্ভাবনা সাধারণভাবে ক্ষীণ।

এগুলো অবশ্য আইনের দিক। লোকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে আইনের যখন এতো কড়াক্কড়ি তাহলে কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে যেমন, সোনাগাছি, বৌবাজার, কালীঘাট, ওয়াটগঞ্জ, ফ্রি-স্কুল স্ট্রিট, প্রভৃতি জায়গায় রমরমা যৌনব্যবসা চলছে কি করে? এগুলো কি সর্বসাধারণের ব্যবহৃত জায়গা নয়? দেহোপজীবিনি বা দালালরা কি সেখানে খদ্দেরদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন না? এইসব জায়গাগুলিতে কি বেশ্যালয় নেই? এর উত্তর, আইনতঃ যা হওয়া উচিত আর বাস্তবে যা ঘটছে - তা সব সময়ে এক নয়। দেহব্যবসা দুর্গম জায়গায় দুয়েকজনের ব্যক্তিগত বিচ্ছিন্ন ব্যবসা নয় - এটি বহু ক্ষেত্রেই সংগঠিত এবং এর বিশালত্বও উপেক্ষণীয় নয়। নারী-পাচার চক্র ভারতবর্ষে প্রবল ভাবে সক্রিয়। বহু প্রাপ্ত-অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীদের পাচারকারীরা নিয়মিত ধরে এনে জোর করে এই ব্যবসায় নিয়োজিত করছে। তার কিছু কিছু খবর পত্রপত্রিকায় চোখে পড়ে; অনেক ক্ষেত্রে পাচারকারীরা ধরা পড়ে এবং শাস্তিও পায়। মাঝেমধ্যে বেশ্যালয়ে, বিশেষ করে যেগুলো তথাকথিত লাল-আলো অঞ্চলের বাইরে, পুলিশ রেইডের কথা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তাতে গণিকারা ও বেশ্যালয় পরিচালকরা শাস্তি পেলেও তাদের খদ্দেরদের শাস্তি দেওয়া হয় না, হলেও দেওয়া হয় নামমাত্র। এ ব্যাপারে কিছু কিছু সংশোধনী প্রস্তাব (যেমন, খদ্দেরদেরও সম পরিমান শাস্তি দেওয়া) সরকারের বিবেচনাধীনে আছে।

এটা অনস্বীকার্য যে, নানাবিধ কারণে পিটা আইন সামগ্রিক ভাবে কার্যকরি করা সম্ভব হয় নি। যখন কোনো আইন থাকে, কিন্তু সেটা কাজে পরিণত হয় না, তখন সেই আইন সম্পর্কে সাধারণের মনে কোনো সুস্পষ্ট ধারণা গড়ে ওঠে না। কোনটা বৈধ, কোনটা অবৈধ - সে ব্যাপারে অনেক সময়েই সংশয় থাকে। পিটা আইনও তার ব্যতিক্রম নয়।

[আইন বিষয়ক যে-সব আলোচনা অবসর-এ রয়েছে তার উদ্দেশ্য সাধারণ ভাবে আইনের ব্যাপারে পাঠকদের অবহিত করা। এই আলোচনা কোনও ভাবেই উকিলের পরামর্শের বিকল্প নয়। কারোর আইন সংক্রান্ত কোনও সমস্যা থাকলে, তাঁর উচিত সরাসরি কোনও আইনজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা।]

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।