প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

ভ্রুণের সমস্যা-নির্ধারক পরীক্ষা (THE PRE-NATAL DIAGNOSTIC TECHNIQUES [REGULATION AND PREVENTION OF MISUSE] ACT, 1994 )

[এই আইনটি জানুয়ারি ১, ১৯৯৬ থেকে বলবৎ করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য কন্যাভ্রুণ হত্যা বন্ধ করা। এই আইন অনুসারে ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারণ এবং সেটি প্রকাশ করা নিষিদ্ধ। এছাড়া এতে ভ্রুণের লিঙ্গ-নির্ধারণ বিষয়ক যে কোনও বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হয়েছে; করলে তার শাস্তির বিধান দেওয়া আছে। সেই শাস্তি কারাদণ্ড এবং জরিমানা দুই-ই। যেসব নতুন প্রযুক্তি বাজারে এসেছে, সেগুলি বিবেচনা করে এই আইন দুবার সংশোধিত হয়েছে। নিচে আইনটির মূল সূত্রগুলি সংক্ষেপে লেখা হল।]

ভ্রুণের সমস্যা-নির্ধারক পরীক্ষা কোথায় করা যাবে?

ভ্রুণের সমস্যা-নির্ধারক পরীক্ষা আইন-অনুমোদিত রেজিস্টারড জেনেটিক কাউন্সেলিং কেন্দ্র, জেনেটিক গবেষণাগার বা জেনেটিক ক্লিনিক ছাড়া * আর কেউ করতে পারবে না বা আর কেউ সেই কাজে সাহায্য বা সহযোগিতা করতে পারবে না।

জেনেটিক কাউন্সেলিং কেন্দ্র, জেনেটিক গবেষণাগার বা জেনেটিক ক্লিনিকগুলি উপযুক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা (যা এই আইনে বিশদ করে বলা আছে) ছাড়া কাউকে নিয়োগ করতে পারবে না।

কেউই এই আইন অনুসারে রেজিস্ট্রিকৃত স্থানে ছাড়া অন্য কোথাও কোনও রকম ভ্রুণ সমস্যা-নির্ধারক পরীক্ষায় যুক্ত থাকতে পারবে না।


কোন কোন ক্ষেত্রে ভ্রুণের সমস্যা-নির্ধারক পরীক্ষা করা যাবে?

নিচের যে কোনও একটি শর্ত পূর্ণ হলে ভ্রুণের সমস্যা-নির্ধারক পরীক্ষা করা যাবে - যদি:
(1) সংশ্লিষ্ট গর্ভবতী নারীর বয়স পঁয়ত্রিশ বছরের বেশি হয়।
(2) সংশ্লিষ্ট গর্ভবতী নারীর দুই অথবা তার অধিকবার স্বতঃস্ফূর্ত গর্ভপাত বা ভ্রুণ নষ্ট হয়ে গিয়ে থাকে ।
(3) সংশিলষ্ট গর্ভবতী নারী কোনও টেরাটোজেনিক বস্তুর সংস্পর্শে ( যেমন, ড্রাগ্স, রেডিয়েশন, সংক্রমণ বা রাসায়নিক পদার্থ, এসে থাকেন।
(4) সংশ্লিষ্ট গর্ভবতী নারী পরিবারে মানসিক প্রতিবন্ধকতা, শারীরিক অঙ্গবিকৃতি, যেমন স্প্যাস্টিসিটি বা অন্য কোনও জেনেটিক অসুখ থাকলে।
(5) অন্য যে কোনও অবস্থা যেটি সেণ্ট্রাল সুপারভাইসারি বোর্ড** নির্ধারিত।

কি ধরণের সমস্যা এই পরীক্ষায় নির্ধারণ করা যাবে?

শুধুমাত্র নিম্নলিখিত সমস্যা নির্ধারণের জন্য গর্ভস্থ ভ্রুণের উপর পরীক্ষা করা যাবে:

ক্রোমোজমের অস্বাভাবিকতা
জেনেটিক মেটাবলিক অসুখ
হিমোগ্লোবিনোপ্যাথিজ
লিঙ্গ-সংক্রান্ত জেনেটিক সমস্যা
জন্মগত ত্রুটি
সেণ্ট্রাল সুপারভাইজারি বোর্ডের নির্দিষ্ট অন্য কোনও অস্বাভাবিকতা।

অন্য কেউ - গর্ভবতী নারীর আত্মীয় বা স্বামী, অন্য কোনও কিছু নির্ধারণের জন্য ভ্রুণ পরীক্ষা করতে চাইবেন না বা উৎসাহ দিতে পারবেন না।


এই পরীক্ষার আগে কি করতে হবে?

ভ্রুণের সমস্যা-নির্ধারক পরীক্ষা কেউ করতে পারবেন না, যদি না পরীক্ষার আগে তিনি -

(ক) এই পরীক্ষা বিষয়ে জ্ঞাত সব রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গর্ভবতী নারীকে জানান;
(খ) গর্ভবতী নারীর লিখিত সম্মতি (সেই ভাষায় - যে ভাষা নারী বোঝেন) নির্দিষ্ট ফর্মে তিনি নেন
(গ) সেই লিখিত অনুমতি পত্রের একটি কপি সেই নারীকে দেন।

যিনি ভ্রুণের সমস্যা-নির্ধারক পরীক্ষা করছেন তিনি গর্ভবতী নারী বা তাঁর কোনও আত্মীয়কে কথায় বা অন্য কোনও উপায়ে ভ্রুণটির লিঙ্গ বিষয়ক তথ্য প্রকাশ করবেন না।

ভ্রুণের সমস্যা-নির্ধারক পরীক্ষা লিঙ্গ নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হবে না:

কোনও জেনেটিক কাউন্সেলিং কেন্দ্র বা জেনেটিক গবেষণা কেন্দ্র কোনও রকম ভ্রুণ সমস্যা-নির্ধারক পরীক্ষা লিঙ্গ নির্ণয় করার জন্য ব্যবহার করবে না।
কোনও ব্যক্তি কোনও রকম ভ্রুণ সমস্যা-নির্ধারক পরীক্ষা লিঙ্গ নির্ণয় করার জন্য ব্যবহার করবে না।

আইন অমান্য করার শাস্তি:

কোনও ব্যক্তি, সংস্থা, জেনেটিক কাউন্সেলিং কেন্দ্র, জেনেটিক গবেষণাগার বা জেনেটিক ক্লিনিক ভ্রুণের লিঙ্গ-নির্ণয়ের ব্যবস্থা কোথাও আছে বলে বিজ্ঞাপন দিতে বা প্রকাশ করতে পারবে না। এটি আমান্য করলে দোষীর তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং দশ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা ধার্য হতে পারে।

কোনও মেডিক্যাল জেনেটিসিস্ট, গায়নোকলজিস্ট না রেজিস্টারড ডাক্তার বা ন্য কোনও ব্যক্তি যিনি জেনেটি কাউন্সেলিং কেন্দ্র, জেনেটিক গনেসণাগার বা ক্লিনিকের মালিক অথবা এই প্রতিষ্ঠানগুলিতে কাজ করেন, তিনি এই আইনের কোনও ধারা ভঙ্গ করলে প্রথম অপরাধের জন্য তাঁর তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং দশ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা ধার্য হতে পারে। অপরাধী রেজিস্টারড ডাক্তার হলে এর জন্য প্রথম অপরাধে দু বছর এবং পরবর্তী অপরাধে চিরকালের জন্য তাঁর রেজিস্ট্রেশন হারাতে পারেন।

যদি কেউ কোনও জেমেটিক কাউন্সেলিং কেন্দ্র, জেনেটিক গবেষণাগার বা জেনেটিক ক্লিনিকে গিয়ে কোনও গর্ভবতী নারীর উপর ভ্রুণের সমস্যা-নির্ধারক পরীক্ষা ব্যবহার করতে বলেন যা এই আইনে অনুমোদিত উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোনও উদ্দেশ্যে, তাহলে তাঁরও শাস্তি হবে। প্রথম অপরাধের জন্য তিন হাজার টাকা পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং দশ হাজার টাকার জরিমানা। পরবর্তী অপরাধের জন্য পমাচ বছরের কারাদণ্ড এবং পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা।


*ভ্রুণ সমস্যা নির্ধারণ পরীক্ষা বলতে বোঝাচ্ছে যে গর্ভবতী নারীর উপর কোনও কোনও গাযনোকলজিক্যাল বা অব্স্টেট্রিক্যাল পদ্ধতি, যেমন আল্ট্রা-সনোগ্রাফি, এমিনিওটিক ফ্লুইড সংগ্রহ, কোরিওনিক ভিল্লি, রক্ত অথবা টিস্যু সংগ্রহ করা, ইত্যাদি।

** কেন্দ্রীয় সরকারের গঠিত একটি উপদেষ্টা মণ্ডলী, যেখানে মেডিক্যাল জেনেটিক্স, গায়নোকলজি, শিশু-চিকিত্সা বিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞানে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা এবং নারী কল্যাণ সংস্থার প্রতিনিধিরা থাকবেন।

 

[আইন বিষয়ক যে-সব আলোচনা অবসর-এ রয়েছে তার উদ্দেশ্য সাধারণ ভাবে আইনের ব্যাপারে পাঠকদের অবহিত করা। এই আলোচনা কোনও ভাবেই উকিলের পরামর্শের বিকল্প নয়। কারোর আইন সংক্রান্ত কোনও সমস্যা থাকলে, তাঁর উচিত সরাসরি কোনও আইনজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা।]

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।