সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা
অনুসারে যৌন হেনস্থা হল:
-
গায়ে
হাত দেওয়া বা হাত দেবার চেষ্টা করা;
-
যৌন সম্পর্ক স্থাপনের ইচ্ছে প্রকাশ (দাবী বা অনুরোধ);
-
যৌন রসাত্বক মন্তব্য বা রসিকতা করা;
-
অশ্লীল ছবি বা বই প্রদর্শন করা;
-
অন্য যেকোনো অবাঞ্ছিত যৌন আচরণ - দৈহিক, মৌখিক বা ইঙ্গিতসূচক।
এ ধরণের আচরণের প্রতিবাদ
জানালে চাকরি চলে যেতে পারে; পদোন্নতির সম্ভবনা নষ্ট হতে পারে,
কর্মক্ষেত্রে একটা প্রতিকুল (hostile) পরিবেশ সৃষ্টি হতে পার
- কর্মক্ষেত্রে এই নিরাপত্তার অভাব নারীকে এক পরম অপমানজনক
পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে। এতে তার জীবিকা অর্জনের অধিকার খর্ব
হয়, তার স্বাস্থ্য-হানিও ঘটতে পারে।
সুপ্রিম
কোর্টের রায় লাঞ্ছিত নারীকে কিছু হাতিয়ার দিয়েছে যৌন হেনস্থর
হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য। কিন্তু তার জন্য নারীকে
সক্রিয় হতে হবে। প্রথমে তার প্রতি যে আচরণটি করা হয়েছে বা
হচ্ছে সেটি অবাঞ্ছিত - সেটা প্রমাণ করতে হবে। উত্যক্তকারীকে
উপেক্ষা না করে তাকে নিজের অস্বোয়াস্তি বা আপত্তির কথা জানাতে
হবে। রেজিস্ট্রি পোস্টে আপত্তি জানালে সেটি প্রমাণ হিসেবে
থাকবে। তারিখ দিয়ে হেনস্থার বিবরণ লিখে রাখা, বিষয়টি নিয়ে
সহানুভুতিসম্পন্ন সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করা, ঘটনার সাক্ষী
থাকলে তার সাক্ষ্য রাখা। কর্ম সংস্থায় যৌন হেনস্থা সম্পর্কে
ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তি থাকলে তার সঙ্গে আলোচনা করা - এগুলো সবই
অবাঞ্ছিত আচরণ প্রমাণে সাহায্য করবে। অনেক ক্ষেত্রে এই রকম
আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। না হলে
অভিযোগ শোনার জন্য যে কমিটি থাকে - তাদের কাছে অভিযোগ জানাতে
হবে।
যৌন হেনস্থা দূর করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের বিধান অনুযায়ী
কর্তৃপক্ষের প্রধান দায়িত্ব নারীদের জন্য বৈষম্যমুক্ত কাজের
পরিবেশ তৈরি করা। তার জন্য কর্তৃপক্ষকের জন্য কোর্টের যে নির্দেশাবলীতে
রয়েছে, তার কয়েকটি হল:
(১) যৌন
হেনস্থা সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা ও সার্কুলার জারি করা;
(২) সরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মক্ষেত্রে আচরণ সংক্রান্ত নিয়মাবলীর
মধ্যে যৌন হেনস্থা ও তার শাস্তির উল্লেখ করা।
(৩) বেসকরারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে 'ইণ্ডাস্ট্রিয়াল এমপ্লয়েমেণ্ট
(স্ট্যাণ্ডিং অর্ডারস) অ্যাক্ট, ১৯৪৬'-এর যে হুকুমনামা আছে
- তার মধ্যে যৌন হেনস্থার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা।
(৪) কর্মক্ষেত্রে কাজ করার জায়গা, বিশ্রাম নেবার জায়গা, স্বাস্থ্যরক্ষা
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্য হওয়ার জায়গা এমন
ভাবে তৈরি করা যাতে কোনো নারীকর্মীর পক্ষেই সেটি অসুবিধাজনক
পরিস্থিতির সৃষ্টি না করে।
(৪) যদি কোনো আচরণ ভারতীয় দণ্ডবিধির (Indian Penal Code) আওতায়
পড়ে বা অন্য কোনো আইন তাতে লঙিঘত হয়, তাহলে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার
দায়িত্ব সেটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো। তাঁদের আরও দায়িত্ব
থাকবে যে যার উপর যৌন হেনস্থা করা হয়েছে আর যারা সেই হেনস্থার
সাক্ষী - তাদের উপর যেন কোনো বৈষম্যমূলক আচরণ বা অন্যায় না
হয় দেখা।
(৫) এই আচরণ যদি চাকরির নিয়মাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে অসদাচারণ
বলে বিবেচিত হয়, তাহলে সেই অনুসারে পদক্ষেপ নেওয়া।
(৬) যৌন হেনস্থার অভিযোগ নেবার জন্য অভিযোগ শুনানির কমিটি
গঠন করা, যেখানে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অভিযোগের মোকাবিলা
করা যায়।
(৭) ইউনিয়ন বা কর্মীপরিষদের দায়িত্ব হল মিটিং-এ কোনো কর্মী
যৌন হেনস্থা নিয়ে আলোচনা করতে চাইলে, তা করতে দেওয়া এবং মালিক-কর্মীর
মিটিং-এ এ নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা করা।
দুর্ভাগ্যবশতঃ
আমাদের দেশে বেশির ভাগ নারীই কাজ করছেন অসংগঠিত সংস্থায়। সেখানে
মালিক-কর্মীর আচরণ সংক্রান্ত কোনো নিয়মাবলীও নেই, অভিযোগ জানানোর
কোনো কমিটিও নেই। তাই বহু ক্ষেত্রেই যৌন হেনস্থা থেকে বাঁচার
একমাত্র উপায় চলে গিয়ে অন্য কোথাও কাজ নেওয়া।