প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

যৌনব্যবসা ও আইন

Prostitution বা বেশ্যাবৃত্তি সাধারণভাবে ভারতে বে-আইনী নয়, কিন্তু ব্যবসার জন্য যৌনতার ব্যবহার sexual exploitation for commerical purpose) শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দ্য ইম্মর্যাল ট্র্যাফিক অ্যাক্ট ১৯৫৬ (The Immoral Traffic Act 1956) রচিত হয়েছে এটি রোধ করার জন্য। এই আইনের উদ্দেশ্য হল নারী ও শিশু পাচার বা যৌনকর্মে লিপ্ত করার জন্য তাদের সংগ্রহ বন্ধ করা, যাতে কাউকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌনব্যবসার বলি না হতে হয়। এই লেখাটির শেষে খুব সংক্ষেপে আইনটি বর্ণনা করা হয়েছে (প্রসঙ্গতঃ আইনে কোনো লিঙ্গভেদ করা হয় নি।)

Prostitute কথাটার পরিবর্তে sex-worker বা 'যৌনকর্মী' শব্দটি আজকাল বেশি ব্যবহার হচ্ছে। শব্দটি হঠাত্ সৃষ্টি হয় নি, এই শব্দ চয়নের পেছনে কিছু চিন্তা-ভাবনা কাজ করেছে। যৌনব্যবসাকে আইনত স্বীকৃতি দেবার ব্যাপারে বেশ কিছু যৌনকর্মী সংগঠন ও সেইসঙ্গে কয়েকটি নারী প্রতিষ্ঠান আলোচনা ও আন্দোলন সুরু করেছেন। কারণ বর্তমান আইন যৌনকর্মীদের প্রতি সহানুভুতিশীল নয়, আর পুলিশ তার সুযোগ নিয়ে যৌনকর্মীদের ইচ্ছেমত হেনস্তা করছে। যৌনকর্মীদের কাজ আইনত দণ্ডনীয় না হলে এই সমস্যা থাকবে না। কারখানার শ্রমিক, বা অফিসের কর্মী হবার মত, যৌনকর্মী হওয়াটাও হবে মেয়েদের একটি পেশা। অন্যান্য পেশার মত ইচ্ছেমত সেই পেশা তারা নির্ভয়ে গ্রহণ করতে পারবে। যৌনকর্মীদের লাইসেন্স দেওয়া হবে, একটা নির্দিষ্ট জায়গায় তাদের ব্যবসা করতে দেওয়া হবে। লাইসেন্স রাখতে নিয়মিত তাদের স্বাস্থ্য-পরীক্ষা করাতে হবে, তাদের ট্যাক্স দিতে হবে, ইত্যাদি।

অন্যপক্ষে বহু নারীবাদী সংস্থা 'যৌনকর্মী' শব্দটি নিয়ে অসুবিধা বোধ করেন। তাঁদের বক্তব্য এটি কারখানা-কর্মী বা অফিসকর্মী-র মতো কোনো পেশা নয়। এই বৃত্তির 'শ্রম' আসলে শ্রম নয়। এই বৃত্তিতে নিয়োজিত নারীদের মানবিক অধিকার প্রতি মুহূর্তে লঙিঘত হচ্ছে, পদে পদে নারীরা ধর্ষিতা হচ্ছে - যা শুধু দৈহিক দিক থেকে নয়, মানসিক দিক থেকেও চুড়ান্ত অনিষ্টকর। সর্বোপরি এই বৃত্তি তারাই গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে, যাদের কাছে সমাজ ও অন্যান্য বাধার ফলে জীবনধারণের অন্য কোনো পথ খোলা নেই।

যৌনব্যবসা মূলতঃ নারীকে নিয়ে হলেও, আসলে সে এই ব্যবসার 'বলি'। এই বিশাল যৌনব্যবসায় জড়িয়ে আছে একদল ব্যবসায়ী যারা নারীর যৌনতাকে ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত লাভবান হচ্ছে; রয়েছে খদ্দের, দালাল, নারী পাচারকারী, নারী সংগ্রহক, বেশ্যালয়ের চালক, অন্ধকার জগতের গুণ্ডা, সেইসঙ্গে দুর্নীতিপরায়ণ পুলিশ ও আরও অনেকে। এটা একটি অমানবিক ব্যবসা যা নারীকে তার যৌনতা থেকে স্বতন্ত্র্য করে ফেলে - তাকে যৌনযন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে পুরুষের লালসা চরিতার্থ করায়। নিজ-দেহের উপর নারীর কর্তৃত্ব থাকা, নারীদেহকে ব্যবসার পণ্য না করা, ইত্যাদি ব্যাপারে নারীবাদী সংস্থার বক্তব্য খুবই স্পষ্ট। বেশ্যাবৃত্তিকে আইনত স্বীকৃতি দেওয়ার মানে মানবিক অধিকারের মূলে আঘাত করা। শুধু তাই নয়, এতে সমস্যা আরও বাড়বে। এমনিতেই আমাদের দেশে আইন ও পুলিশী ব্যবস্থা শিথিল। এর ফলে নারীপাচারকারীরা আরও অবাধে তাদের কাজ চালাবে। আরও বহু অসহায় নারীকে এই চক্রের বলি হয়ে ইচ্ছের বিরুদ্ধে যৌনকর্মীর জীবনযাপন করতে হবে।

সাধারণভাবে মনে হয় যে দুদিকের বক্তব্যেরই মূল্য আছে। যাঁরা বর্তমানে যৌনকর্মীর জীবন যাপন করছেন, তাঁরা অবশ্যই উপকৃত হবেন আইন তাঁদের কাজকে স্বীকৃতি দিলে। সংখ্যায় তাঁরা অল্প নন। তাঁদের এই দাবী অন্যায় বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অন্যপক্ষে এই স্বীকৃতি একটা বিরাট অপরাধ-চক্রকেপরোক্ষভাবে সমর্থন জানাবে - যেটা অন্যান্যদের জন্য একটা অশুভ বার্তা নিয়ে আসবে।


পরিশিষ্ট:

The Immoral Traffic (Prevention) Act 1956-এর কিছু কিছু অংশ:

ধারা (৩) বেশ্যালয়১ চালানো বা বেশ্যালয় হিসেবে ব্যবহারের জন্য জায়গা দেওয়া:

(১) যদি কেউ কোনো বেশ্যালয়ের মালিক হয় বা সেটি চালায় বা চালাতে সাহায্য করে, তাহলে প্রথম অপরাধের জন্য তার অন্ততঃ এক বছরের (অনুর্ধ তিন বছর) সশ্রম কারাদণ্ড এবং সেইসঙ্গে দু হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হবে। দ্বিতীয় বা তার পরবর্তী অপরাধের জন্য সাজার পরিমান অন্ততঃ দুবছরের সশ্রম কারাদণ্ড (অনুর্ধ পাঁচ বছর) এবং সেই সঙ্গে জরিমানা যা দু হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
(২) যে কোনও ব্যক্তি যে,
(অ) কোনও জায়গার ভাড়াটে, লীজধারী, দখলদার অথবা তত্ববধায়ক হিসেবে সেই জায়গা বা তার কোনও অংশ বেশ্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে অথবা জ্ঞাতসারে অন্য কাউকে বেশ্যালয় হিসেবে ব্যবহার করতে দেয়, অথবা
(আ) কোনও জায়গার মালিক, লীজদাতা বা ভূস্বামী, অথবা সেই জায়গার মালিক, লীজদাতা বা ভূস্বামীর দালাল (এজেণ্ট) হিসেবে সেই জায়গা বা তার এক অংশ ভাড়া দেয় এই জেনে যে, সেটা বা তার কোনও অংশ বেশ্যালয় হিসেবে ব্যবহার করার উদ্দেশ্য রয়েছে, অথবা স্বেচ্ছায় সেই জায়গা বা তার কোনও অংশকে বেশ্যালয় বানাতে অংশগ্রহণ করে, তাহলে প্রথম অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে দুবছর পর্যন্তকারাদণ্ড এবং দু হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হবে। দ্বিতীয় বা তার পরবর্তী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে পাঁচ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং সেই সঙ্গে জরিমানাও ধার্য হবে।

ধারা (৪) বেশ্যাবৃত্তির২ আয় থেকে জীবনধারণের শাস্তি:

আঠারো বছরের বেশি বয়সী কোনো ব্যক্তি যদি জেনেশুনে বেশ্যাবৃত্তিতে জড়িত অন্যকারোর অর্থে পুরোপুরি বা আংশিক ভাবে জীবনধারণ করে, তাহলে তার দুবছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে অথবা এক হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা দুইই ধার্য হতে পারে। যদি যৌনব্যবসায়ে যে জড়িত সে শিশু৩ বা অপ্রাপ্তবয়স্কা হয়, তাহলে তার অন্ততঃ সাত বছর (অনধিক দশ বছর) কারাদণ্ড হবে।

ধারা (৫) বেশ্যাবৃত্তির উদ্দেশ্যে জোগাড় করা, ঢোকানো, অথবা নিয়ে যাওয়া:

(১) যে কোনও ব্যক্তি যে -

(অ) বেশ্যাবৃত্তিতে ঢোকানোর উদ্দেশ্যে কাউকে (তার সম্মতি থাকুক বা না থাকুক) জোগাড় করে বা জোগাড় করার চেষ্টা করে; অথবা
(আ) কাউকে কোথাও নিয়ে যায় এই উদ্দেশ্যে যে সে কোনও বেশ্যালয়ে থেকে বা যাতাযাত করে বেশ্যাবৃত্তি করবে ; অথবা
(ই) কাউকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নেয় বা নিতে চেষ্টা করে বেশ্যাবৃত্তি চালাবার জন্য অথবা তাকে বড় করে তোলে বেশ্যাবৃত্তি গ্রহণ করার জন্য;
(ঈ) বেশ্যাবৃত্তি গ্রহণ করার জন্য প্ররোচিত করে অথবা সেটা করার কারণ হয়;
সেক্ষেত্রে, দোষী বিবেচিত হলে, ব্যক্তিটির অন্ততঃ তিন বছর কারাদণ্ড (অনধিক সাত বছর) হবে ও সেইসঙ্গে দু হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা। কিন্তু এই অপরাধ যদি কারো সম্মতি ছাড়া হয়, তাহলে সাত বছরের কারাদণ্ড চোদ্দ বছর পর্যন্ত বাড়তে পারে। যাকে বেশ্যাবৃত্তির জন্য জোগাড় করা হচ্ছে সে শিশু হলে সাজা হবে অন্ততঃ সাত বছর (বা যাবজ্জীবন)।

ধারা (৬) যেখানে বেশ্যাবৃত্তি চলছে সেখানে কাউকে আটকে রাখা:

যদি কেউ অন্য কাউকে তার ইচ্ছা বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে (ক) বেশ্যালয়ে বা (খ) অন্য কোথাও আটকে রাখে এই উদ্দেশ্যে যে তাকে নিজের স্বামী ছাড়া অন্য কারোর সঙ্গে যৌনসংগমে লিপ্ত হতে হবে। সেক্ষেত্রে আটককারী ব্যক্তির অন্ততঃ সাত বছরের কারাদণ্ড হবে (যাবজ্জীবনও হতে পারে)। আদালত বিশেষ ও পর্যাপ্ত কারণ দেখিয়ে কারাদণ্ড সাত বছরের কম করতে পারে।

ধারা (৭) জনগণের ব্যবহৃত স্থানে বা তার নিকটে বেশ্যাবৃত্তি চালানো:

কেউ যদি যৌনব্যবসা চালায় এমন একটি জায়গায় যার ২০০ মিটারের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হোটেল, হাসপাতাল, নার্সিং হোম, মন্দির, মসজিদ, চার্চ, গুরুদোয়ার, বা পুলিশ কমিশনের নির্দেশিত সাধারণ লোকদের ব্যবহারের জায়গা ইত্যাদি আছে, তাহলে তারজন্য সেই যৌনকর্মী ও তার খদ্দেরের তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। যদি এদের মধ্য একজন শিশু হয়, তাহলে অন্যজনের সাত বছর (এ ব্যাপারে আদালত অন্য কোনো বিবেচনা না দেখালে) থেকে যাবজ্জীবন পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

ধারা (৮) বেশ্যাগমণ করার জন্য প্রস্তাব দেওয়া বা প্রলুব্ধ করা:

কেউ যদি জনসাধারণের চলাচলের জায়গায় (public place) অথবা সেখান থেকে দেখা যায় বা শোনা যায় এমন দূরত্ব থেকে - সেটা বাড়ির ভেতর থেকেও হতে পারে (১) কথা বলে, অঙ্গভঙ্গীর সাহায্যে, বা ইচ্ছাকৃত ভাবে দেহ প্রদর্শন করে (জানলার ধারে বা বারান্দায় বসে বা অন্যকোথাও) বা অন্যকোনো ভাবে লোকদের আকর্ষণ করে তাদের যৌনকর্মে লুব্ধ করার চেষ্টা করে; (২) যৌনব্যবসার উদ্দেশ্যে বার বার এসে প্রস্তাব করে বা এমন ভাবে ঘোরাফেরা করে যাতে আশেপাশের লোকদের হাঁটাচলার অসুবিধা হয় বা তারা বিরক্ত হয় অথবা তাদের শ্লীলতা-বোধ লঙিঘত হয়,
সেক্ষেত্রে প্রথম অপরাধে তার ছয়মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে অথবা পাঁচশো টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হতে পারে, অথবা দুইই হতে পারে। দ্বিতীয় ও পরবর্তী অপরাধের জন্য এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও পাঁচশো টাকা জরিমানা ধার্য হতে পারে।

ধারা (৯) তত্বাবধানে থাকাকালীন প্রলুব্ধ করা:

তত্বাবধানে থাকাকালীন তত্বাবধানকারী যদি কাউকে যৌনব্যবসায় নিয়োজিত করে বা তাতে প্রলুব্বì করার ব্যাপারে অংশগ্রহণ করে তাহলে তার সাত বছর থেকে যাবজ্জীবন পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে - যদি না আদালত কোনো কারণ দেখিয়ে সেটি কমায়।


ধারা (১৩) বিশেষ পুলিশ অফিসার ও উপদেষ্টা মণ্ডলী :

এই আইন সংক্রান্ত অপরাধগুলির মোকাবিলা করতে সরকার-নির্দিষ্ট প্রত্যেকটি অঞ্চলে এর জন্য একজন করে বিশেষ পুলিশ অফিসার সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হবেন।
(২) এই বিশেষ পুলিশ অফিসার ইনস্পেক্টরের নিচু পদ-মর্যাদার হবেন না। তবে ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট যদি প্রয়োজন বা সুবিধাজনক মনে করেন, তাহলে উনি কোনও অবসারপ্রাপ্ত পুলিশ বা মিলিটারি অফিসারের উপর আংশিক বা পূর্ণভাবে এই দায়িত্ব অর্পণ করতে পারেন। তবে -
(ক) অবসর-প্রাপ্ত পুলিশ অফিসারকে অবসর নেওয়ার সময় ইনস্পেক্টর বা তার উঁচু পদে থাকতে হবে।
(খ) অবসর-প্রাপ্ত মিলিটারি অফিসারকে অবসর নেওয়ার সময়ে কমিশনড অফিসার থাকতে হবে।

(৩) বিশেষ পুলিশ অফিসারের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করার জন্য -
(গ) সরকার প্রয়োজন হলে কিছু অধঃস্তন পুলিশ অফিসার (তাদের মধ্যে সম্ভব হলে নারী পুলিশ অফিসার) রাখবেন; এবং
(ঘ) এই পুলিশ অফিসারের সঙ্গে অনধিক পাঁচ সদস্যের (যাঁরা সেই অঞ্চলে সামাজ সেবায় নিযুক্ত - সম্ভব হলে নারী সমাজসেবী নিয়ে) একটি বেসরকারী উপদেষ্টামণ্ডলী থাকবে যাঁরা এই আইনের ব্যাপারে সাধারণভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলির ব্যাপারে সেই অফিসারকে উপদেশ দেবেন।

(৪) যদি কোনও যৌন-শোষণ একাধিক প্রদেশ জুড়ে হয়, তাহলে কেন্দ্রীয় সরকার এই আইনে অথবা তত্ সংক্রান্ত অন্য কোনও প্রচলিত আইন প্রয়োগ করার জন্য পুলিশ অফিসার নিযুক্ত করতে পারেন পাচার পুলিশ অফিসার হিসেবে। তাঁদের দায়িত্ব এই আইনে বর্ণীত স্পেশাল পুলিশ অফিসারের মত হবে এবং তাঁরা সারা ভারতবর্ষ জুড়ে কাজ করতে পারবেন।

ধারা (১৪) এই আইন ভঙ্গ করার অপরাধ কগ্নিজ্বল হবে:

কোড অফ ক্রিমিন্যাল প্রসিজিওর, ১৯৭৩ [১৯৭৪-এর ২]-এ অন্য কিছু লেখা না থাকলে,
(অ) স্পেশাল পুলিশ অফিসার দ্বারা অথবা তাঁর নির্দেশ বা তত্বাবধানে অথবা তাঁর পূর্ব সম্মতিতে ওয়ারেণ্ট ছাড়া গ্রেপ্তার করা যাবে;
(আ) স্পেশাল পুলিশ অফিসারের অবর্তমানে এই আইন প্রয়োগের জন্য অধঃস্তন কোনও অফিসারকে যদি ওয়ারেণ্ট ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করতে হয়, তাহলে স্পেশাল পুলিশ অফিসারকে লিখিত আদেশ দিতে হবে। তাতে উল্লেখ থাকবে কাকে গ্রপ্তার করতে হবে এবং কোন অপরাধে তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। যিনি গ্রেপ্তার করছেন গ্রেপ্তারের সময়ে সেই আদেশের সারমর্ম যাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তাকে জানাতে হবে।
(ই) বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে অধঃস্তন অফিসারও গ্রেপ্তার করতে পারেন। তার শর্তগুলি এই আইনে দেওয়া আছে।

ধারা (১৫) ওয়ারেণ্ট ছাড়া তল্লাসী চালানো:

(১) যদি কোনও স্পেশাল পুলিশ অফিসার (বা পাচার পুলিশ অফিসার) যুক্তিসঙ্গত কারণে মনে করেন যে এই আইনে নির্দিষ্ট কোনও অপরাধ কোনও জায়গায় (ব্যক্তিবিশেষের ওপর) সংঘটিত হয়েছে বা হতে চলেছে, এবং তার জন্য এখনই তল্লাসী চালাতে হবে, ওয়ারেণ্টের জন্য অপেক্ষা করলে চলবে না; তাহলে সেই তল্লাসী ওয়ারেণ্ট ছাড়াই চালানো যাবে।
(২) উপধারা (১)-এ উল্লেখিত সেই তল্লাসী চালাবার আগে স্পেশাল পুলিশ অফিসারকে (বা পাচার পুলিশ অফিসারকে) সেই অঞ্চলে বসবাসকারী দুই বা তার বেশি সম্মানিত ব্যক্তিদের (তাঁদের একজন অন্ততঃ মহিলা হতে হবে) ডেকে তাঁর সামনে এই তল্লাসী চালাতে হবে। প্রয়োজন হলে লিখিত ভাবে তাঁদের সেই কাজ করার জন্য নির্দেশ দিতে হবে। মহিলার ক্ষেত্রে সেই অঞ্চলে বসবাসকারী হওয়াটা বাধ্যতামূলক নয়।
(৩) যদি কেউ কোনও যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়া ডাকা সত্বেও এই তল্লাসীতে উপস্থিত থাকতে রাজি না হন, তাহলে ভারতীয় দণ্ডবিধি-র ১৮৭ ধারা তিনি ভঙ্গ করছেন।
(৪) স্পেশাল পুলিশ অফিসার (পাচার পুলিশ অফিসার) সেই জায়গা থেকে পাওয়া ব্যক্তিদের সরিয়ে নেবার অধিকার থাকবে;
(৫) সরিয়ে নেওয়া ব্যক্তিদের অবিলম্বে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাজির করাতে হবে। (৫ অ) এই ব্যক্তিদের চিকিত্সকদের পরীক্ষা করিয়ে দেখতে হবে তারা প্রাপ্তবয়স্ক কিনা। এছাড়া তাদের যৌন-নির্যাতন সংক্রান্ত কোনও আঘাত আছে কিনা, বা তাদের যৌন-রোগ হয়েছে কিনা।
(৬) স্পেশাল পুলিশ অফিসার (পাচার পুলিশ অফিসার) ও অন্যান্যরা যাঁরা এই তল্লাসীতে অংশগ্রহণ করেছেন বা সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত তাঁদের কারো বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারী বা দেওয়ানী মামলা আনা যাবে অন্য কোনও বিধি ত্মারা ভঙ্গ না করলে। (৬ অ) তবে এই তল্লাসীতে অন্ততঃ দুজন নারী পুলিশ অফিসার থাকবেন এবং যদি কোনও নারীকে সেই স্থান থেকে সরানো হয়, তাহলে তাকে জেরা করবেন নারী পুলিশরা। যদি কোনও নারী পুলিশ না থাকেন, তাহলে কোনও সমাজসেবী প্রতিষ্ঠানের মহিলা সদস্যের সামনে সেই জেরা করা হবে।

ধারা (১৬) ব্যক্তিকে উদ্ধার:

যদি কোনও ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ বা সরকার কর্তৃক ক্ষমতাদত্ত অন্য কোনও ব্যক্তির বা অন্য কারো কাছ থেকে পাওয়া খবর থেকে যুক্তিযুক্ত ভাবে মনে করেন যে, কোনও ব্যক্তি একটি বেশ্যালয়ে বসবাস করছেন অথবা সেখানে বেশ্যাবৃত্তি করছেন বা করতে বাধ্য হচ্ছেন, তাহলে তিনি একজন পুলিশ অফিসারকে (যাঁর পদমর্যাদা সাব-ইনস্পেক্টারের নীচে নয় ) আদেশ করতে পারেন সেই ব্যক্তিকে নিয়ে এসে তাঁর কাছে হাজির করতে।
(২) সেই পুলিশ অফিসার ব্যক্তিটিকে সরিয়ে এনে অবিলম্বে আদেশ-দাতা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাজির করবেন।

ধারা (১৭) ১৫ ধারা অনুসারে যাদের সরানো হল বা ১৬ ধারা অনুসারে উদ্ধার করা ব্যক্তির অন্তর্বর্তীকালীন হেফাজত:

যদি কোনও কারণে সরানো বা উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিকে ১৬ বা ১৫ ধারায় নির্দিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অবিলম্বে উপস্থিত করা সম্ভব না হয়, তাহলে সবচেয়ে কাছাকাছি যে কোনও শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সেই ব্যক্তিকে হাজির করতে হবে। তিনি উপযুক্ত ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাজির না করা পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালের কালের জন্য নিরাপদ হেফাজতে কোথায় রাখা যায় তার আদেশ দেবেন। তবে কোনও ক্ষেত্রেই এই অন্তর্বর্তীকালীন হেফাজত ১০ দিনের বেশি স্থায়ী হবে ন। অথবা এমন কারোর হেফাজতে রাখা হবে না যে এই ব্যক্তির উপরে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।
(২) ১৫ ও ১৬ ধারায় যে ম্যাজিস্ট্রেটের কথা বলা হয়েছে, তিনি সমস্ত ঘটনাবলী শুনে, প্রয়োজনীয় তদন্ত করিয়ে ব্যক্তিটির বয়স, চরিত্র ও পূর্বাপর বিচার করে; তার পিতা-মাতা, অভিভাবক বা স্বামীর ভার নেবার যোগ্যতা আছে কিনা বিচার করে; এবং তাকে বাড়িতে পাঠানো হলে সেই গৃহের পরিবেশ কী ভাবে তাকে প্রভাবিত করতে পারে সেটা বিবেচনা করে একজন প্রোবেশন অফিসারকে নিযুক্ত করতে পারেন (প্রোবেশন অফ অফেণ্ডার্স অ্যাক্ট, ১৯৫৮ অনুসারে) যিনি পুরো পরিস্থিতি ও ব্যক্তিটির মানসিকতা চিন্তাভাবনায় নিয়ে তার পুনর্বাসনের সম্ভাবনা বিচার করবেন।
(৩) এই অনুসন্ধান যখন চলছে, সেই সময়কালের জন্য ব্যক্তিটিকে নিরাপদ হেফজতে রাখার জন্য আদেশ জারি করতে পারেন। তবে যাকে উদ্ধার করা হয়েছে সে যদি শিশু বা অপ্রাপ্তবয়স্ক হয়, তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট তাকে চিল্ড্রেন অ্যাক্ট অনুসারে অনুমোদিত যে কোনও প্রতিষ্ঠানে রাখার আদেশ দিতে পারেন। তবে কাউকেই এই হেফাজতে তিন সপ্তাহের বেশি রাখা চলবে না এবং কাউকেই এমন কারোর হেফাজতে রাখা চলবে না যে উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিটির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
(৪) যদি ম্যাজিস্ট্রেট তদন্তের পর সন্তুষ্ট হন যে, যে তথ্য তিনি পেয়েছেন,
(ই) সেটি ঠিক , এবং
(ঈ) ব্যক্তিটির দেখাশোনা ও সুরক্ষার প্রয়োজন,
সেক্ষেত্রে তিনি আদেশ জারি করতে পারেন যে, ব্যক্তিটিকে অন্ততঃ এক বছর, অনুর্ধ তিন বছর একটি সুরক্ষিত স্থানে - উদ্ধারাশ্রমে protected home) অথবা অন্য কারো তত্বাবধানে রাখার। কিন্তু এই আদেশের কারণ লিখিত ভাবে দর্শাতে হবে। তবে কোনও ক্ষেত্রেই তত্বাবধায়কের ধর্ম উদ্ধার হওয়া ব্যক্তির ধর্মের থেকে ভিন্ন হবে না। এবং যাকে বা যাদের তত্বাবধানের দায়িত্ব দেওয়া হবে, তাদের একটি বণ্ডে সই করানো হতে পারে কী ভাবে ব্যক্তিটির দেখভাল করা হবে, তার শিক্ষা, তার প্রশিক্ষণ, তার চিকিত্সা ইত্যাদি ব্যাপারে। এছাড়া আদালত ব্যাপারটা তত্বাবধান করার জন্য কাউকে নিয়োগ করবে।
(৫) ২ অনুচ্ছেদের বর্ণীত কাজে সাহায্যের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট ৫ জন সম্মানিত ব্যক্তির একটি দল সমন পাঠিয়ে গঠন করতে পারেন, সম্ভবপর হলে তাঁদের তিনজন মহিলা হবেন; এবং এই কাজের জন্য অভিজ্ঞ সামাজসেবী কর্মী, বিশেষ করে মহিলা কর্মী যাঁরা নারীদের পাচার ইত্যাদি নিয়ে কাজ করছেন।
(৬) ৪ অনুচ্ছেদের আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করা যাবে সেশন আদালতে, যার রায় চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।


১বেশ্যালয় (brothel) বলতে ধরা হচ্ছে যে কোনও ঘর, যান, বা জায়গা, অথবা বাড়ি, ঘর, যান বা জায়গার কোনও অংশ - যেটা অন্য কোনও ব্যক্তি অথবা দুই বা তার অধিক বেশ্যাবৃত্তিতে নিযুক্ত ব্যক্তির লাভের জন্য যৌন শোষণ বা নির্যাতনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ;
২এখানে বেশ্যাবৃত্তি কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে বাণিজ্যের খাতিরে ব্যক্তির যৌন শোষণ অথবা নির্যাতন; এবং এরই ভিত্তিতেই বেশ্যা কথাটি বুঝতে হবে।
মন্তব্য: বেশ্যা হল একজন নারী যে তার দেহ ভাড়া দেয় যথেচ্ছ যৌন-সংসর্গের জন্য [অক্সফোর্ড ডিকশনারি] (রাজিয়া বনাম ইউ.পি সরকার, এ আই আর ১৯৫৭)
৩শিশু - যার বয়স এখনো ১৬ বছর হয় নি।

 

[আইন বিষয়ক যে-সব আলোচনা অবসর-এ রয়েছে তার উদ্দেশ্য সাধারণ ভাবে আইনের ব্যাপারে পাঠকদের অবহিত করা। এই আলোচনা কোনও ভাবেই উকিলের পরামর্শের বিকল্প নয়। কারোর আইন সংক্রান্ত কোনও সমস্যা থাকলে, তাঁর উচিত সরাসরি কোনও আইনজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা।]

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।