ভারতবর্ষের
মহিলা কমিশন

1990s সালের
জাতীয় মহিলা কমিশন (National Commission of Women's Act, 1990
) অনুসারে ১৯৯২ সালে এই কমিশন স্থাপিত হয়েছে।
এই কমিশনের কাজ:
কমিশনের 10 নং ধারার প্রথম
উপধারায় বলা হয়েছে কমিশন নিচের যে কোনও বা সবগুলি কাজ করতে পারবে:
(ক) সংবিধান এবং বিভিন্ন আইনে নারীদের সুরক্ষা বিষয়ক যেসব ব্যবস্থা
রয়েছে সেগুলি অনুসন্ধান করা এবং পরীক্ষা করা।
(খ) এইসব সুরক্ষাগুলি কতটা
কার্যকরি সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রতি বছর বা প্রয়োজন বোধে
সময়ে সময়ে জানানো।
(গ) নারীদের অবস্থার উন্নতি
সাধনের জন্য এইসব সুরক্ষাগুলিকে কী ভাবে আরও কার্যকরি করা যায়
সে ব্যাপারে রিপোর্ট দাখিল করা।
(ঘ) সংবিধান ও অন্যান্য
আইনের যেসব ব্যবস্থা নারী সংক্রান্ত - সেগুলিকে সময়ে সময়ে পর্যালোচনা
করা এবং যেখানে কোনও ঘাটতি, ত্রুটি বা অসম্পূর্ণতা রয়েছে সেগুলি
কী ভাবে দূর করা যায় সে ব্যাপারে সুপারিশ করা।
(ঙ) সংবিধান ও অন্যান্য
আইনে নারী বিষযক যেসব ব্যবস্থা আছে সেগুলি কোথাও লঙিঘত হলে সেই
ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা।
(চ) কোনও অভিযোগ জমা পড়লে
সেটা দেখা এবং নিজেদের থেকেই উদ্যোগ নিয়ে অনুসন্ধান করা -
(অ)নারীর অধিকার হরণ
করা হচ্ছে কিনা;
(আ) নারীদের সুরক্ষার
এবং তাদের বিকাশ ও সমতার জন্য যেসব আইন রয়েছে সেগুলি অব্যবহৃত
হচ্ছে কিনা;
(ই) নারীদের কষ্ট দূর করা, তাদের ত্রাণ এবং হিতার্থে যেসব
নীতি নির্দিষ্ট রয়েছে সেগুলি মানা হচ্ছে কিনা।
তারপরে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট
কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা।
(ছ) নারী নির্যাতন এবং
পুরুষ-পক্ষপাতিত্বের ফলে উদ্ভুত বিশেষ সমস্যা বা অবস্থার বিষয়ে
গবেষণা করা এবং মূল বাধাগুলি চিহ্নিত করা এবং সেগুলিকে দূর করার
কৌশল সুপারিশ করা।
(জ) সর্ব ক্ষেত্রে নারীদের
অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং কী কী কারণে নারীদের অগ্রগতি ক্ষুণ্ণ
হচ্ছে, যেমন, বাসস্থানের অভাব, অপ্রতুল পরিষেবার ফলে দৈনন্দিন
জীবনযাপনের কষ্ট, কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যহানির ঝুঁকি - সেগুলি
চিহ্নিত করা, এবং কী ভাবে তাদের কর্মদক্ষতা বাড়ানো যায়, সে ব্যাপারে
পরামর্শ দেওয়া।
(ঝ) নারীদের আর্থ-সামাজিক
উন্নয়ন পরিকল্পনায় অংশ গ্রহণ করা ও পরামর্শ দেওয়া।
(ঞ) ভারত ও ভারতের বিভিন্ন
রাজ্যে নারীদের অগ্রগতি কেমন হচ্ছে তার মূল্যায়ন করা।
(ট) জেল, উদ্ধার-আশ্রম
বা আন্যান্য জায়গা যেখানে বন্দী হিসেবে অথবা অন্য কারণে নারীদের
হেফাজতে রাখা হয়, সেগুলি পরিদর্শন করা বা কাউকে দিয়ে করানো এবং
কোনও অব্যবস্থা দেখলে সেটিকে সংশোধন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের
সঙ্গে যোগাযোগ করা।
(ঠ) যে মামলায় বহু নারীর
স্বার্থ জড়িত, সেটি চালাবার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগান দেওয়া।
(ড) নারী সংক্রান্ত যে
কোনও বিষয়, বিশেষকরে যেসব সমস্যা নিয়ে নারীদের বাঁচতে হয় - সেগুলি
সরকারকে নিয়মিত জানানো।
(ঢ) কেন্দ্রীয় সরকার প্রেরিত
বিষয়সমূহ।
এ আইনের 10 নং ধারার চার
উপধারায় আছে: যে, এক উপধারার (ক) ও (চ) -এর (অ) অনুসন্ধান করার
সময়ে দেওয়ানী আদালতের সমস্ত ক্ষমতা এই কমিশনের থাকবে, বিশেষ
করে নিম্নলিখিত ব্যাপারে, যেমন,
(ক) ভারতবর্ষের যে কোনও
ব্যক্তিকে সমন পাঠিয়ে ডেকে পাঠানো এবং তাকে শপথ গ্রহণ করিয়ে
প্রশ্ন করা;
(খ) যে কোনও দলিল বা নথি
দেখতে চাওয়া
(গ) হলফনামার উপর সাক্ষ্য
গ্রহণ করা
(ঘ) যে কোনও আদালত বা অফিস
থেকে পাবলিক রেকর্ড চেয়ে আনা, ইত্যাদি।
কমিশন কী ভাবে গঠিত হবে?
এই আইন অনুসারে জাতীয় কমিশনে
পাঁচজন সদস্য, একজন সদস্য সচিব এবং একজন চেয়ার পার্সন থাকবেন।
এঁরা সবাই হবেন কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক মনোনীত ব্যক্তি। চেয়ার
পার্সন যিনি হবেন তিনি নারী অধিকার রক্ষায় ব্রতী। সদস্যদের মনোনয়নের
ভিত্তি হবে আইন, ট্রেড ইউনিয়নের কাজে বা শিল্প-ব্যবস্থাপন, শিক্ষা,
স্বাস্থ্য, আর্থিক বিকাশ, সামাজিক উন্নতি অথবা নারী সংস্থায়
কাজ করার অভিজ্ঞতা। তবে এই পাঁচজন সদস্যদের মধ্যে অন্ততঃ একজন
হবেন তপশিলি জাতিভুক্ত এবং একজন হবেন তপশিলি উপজাতিভুক্ত। এছাড়া
ব্যবস্থাপন, সংগঠন ইত্যাদি ব্যাপারে অভিজ্ঞ একজন সদস্য সচিব
এই কমিশনে থাকবেন। সদস্যদের কাজের মেয়াদ তিন বছরের বেশি হবে
না - সময়সীমা কেন্দ্রীয় সরকার স্থির করবেন।
কমিশনের কাছে কি কি বিষয়ে
অভিযোগ জানানো যাবে এবং তার পদ্ধতি:
কি করে কমিশনের কাছে অভিযোগ
জানানো যায় সে ব্যাপারে কমিশনের ওয়েবসাইটে (http://ncw.nic.in/ncwcomplaint1/home.asp)
বিস্তারিত লেখা আছে। সাধারণভাবে অভিযোগগুলির বিষয়: পারিবারিক
নির্যাতন, হেনস্থা, ,অত্যাচার, পণ, পরিত্যাগ, বহুবিবাহ, ধর্সণ,
স্বামীর নিষ্ঠুরতা, লিঙ্গ বৈষম্য, কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা।
অভিযোগ জমা পড়লে কমিশন
যে ব্যবস্থাগুলি নেন, তা হল:
• পুলিশকে দিয়ে অনুসন্ধান
করানো, সেটি ত্বরান্বিত করা এবং অনুসন্ধানের অগ্রগতির উপর নজর
রাখা।
• সংশ্লিষ্ট রাজ্য কর্তৃপক্ষের নজরে বিষয়তি আনা যাতে প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা নেওয়া যায়;
• পারিবারিক মতবিরোধ কাউন্সেলিং-এর মারফত্ সমাধান করা।
• কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মসংস্থাকে
চাপ দেওয়া হয় সুপ্রীম কোর্টের রায় (বিশাখা বনাম রাজস্থান রাজ্য)
মেনে ব্যাপারটির আশু সমাধান করার জন্য।
• অন্যান্য গুরুতর অপরাধের জন্য কমিশন অনুসন্ধান কমিটি স্থাপন
করে - যে কমিটি ঘটনাস্থলে গিয়ে তথ্য ও প্রমাণ সংগ্রহ করে, সাক্ষীদের
সাক্ষ্য নেয় এবং সুপারিশ-সহ রিপোর্ট দাখিল করে। সেই সুপারিশগুলি
কতটা গৃহীত হল - সেটা দেখা।
• এই কাজে জাতীয় মহিলা কমিশন রাজ্য মহিলা কমিশন ও এন জি ও-দের
সঙ্গে মিলিত ভাবে কাজ করে।
কি কি অভিযোগ গ্রহণ করা
হবে না:
যেসব অভিযোগ কমিশন গ্রহণ
করব না সেগুলি হল:
• কোনও অস্পষ্ট, নামহীন
বা বেনামে পাঠানো কোনও অভিযোগ গ্রহণ করে না।
• যেসব ক্ষেত্রে নারী অধিকার লঙিঘত হয় নি সে সব ব্যাপারে কমিশন
কোনও পদক্ষেপ নেয় না।
• যেসব ব্যাপার আদালতের বিচারাধীন সে ব্যাপারে কমিশন কিছু করে
না।
• রাজ্য কমিশন বা অন্য কোনও কমিশন হাতে যে অভিযোগ রয়েছে সেই
অভিযোগ জাতীয় কমিশন নেয না।
• যে ব্যাপারে কমিশন একবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে ব্যাপার আবার
গ্রহণ করা হয় না।
পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশন:
জাতীয় মহিলা কমিশন আইনকে
ভিত্তি করে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে রাজ্য মহিলা কমিশন গঠিত হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশন আইন, ১৯৯২ অনুসারে পশ্চিমবঙ্গে একটি
মহিলা কমিশন স্থাপিত হয়েছে। এই সংস্থার ঠিকানা:
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মহিলা
কমিশন
10 রেইনি পার্ক, কলকাতা 700019
টেলিফোন: (033) 2474-5608, (033) 2475-1321
প্রসঙ্গতঃ, মহিলা কমিশন
আদালত নয়। এর সদস্য কে হবেন সেটা রাজ্য সরকার স্থির করেন। তাই
নিজেদের রাজনৈতিক মতাদর্শকে দূরে রেখে কমিশন নিরপেক্ষ ভাবে কতটা
কাজ করতে পারেন - সে নিয়ে মতবিরোধ আছে। সাধারণ মানুষ আশা করে
যে, আদালতের মত কমিশনও নিরপেক্ষ ভাবে তার দায়িত্ব পালন করবে।
[আইন বিষয়ক যে-সব আলোচনা
অবসর-এ রয়েছে তার উদ্দেশ্য সাধারণ ভাবে আইনের ব্যাপারে
পাঠকদের অবহিত করা। এই আলোচনা কোনও ভাবেই উকিলের পরামর্শের
বিকল্প নয়। কারোর আইন সংক্রান্ত কোনও সমস্যা থাকলে,
তাঁর উচিত সরাসরি কোনও আইনজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা।]