ছোটদের যৌন অত্যাচার
ও অপরাধের হাত থেকে রক্ষা করার জন্যে
The Protection of
Children from Sexual Offences Bill, 2011 বিলটি
কয়েকদিন আগে রাজ্যসভায় পাশ হয়েছে। এইসব অপরাধের বিচারের
জন্যে বিশেষ আদালত সৃষ্টি করার কথাও এই বিলটিতে রয়েছে। প্রসঙ্গত,
১৯৯২ সালে শিশুদের অধিকার বিষয়ক ইউ.এন কনভেনশনে ভারতও সই
করেছিল। সেই কনভেনশনে সাক্ষরকারী দেশগুলির দায়িত্ব হল শিশুদের
অবৈধ যৌনকর্মে লিপ্ত করার অপচেষ্টাকে রোধ করা।
এই বিল-এ শিশু বলতে
বোঝাচ্ছে যাদের বয়স ১৮ বছরের কম। শিশুদের উপর করা বিভিন্ন
যৌন অপরাধের [যৌননিগ্রহ (sexual harassment), যৌন-অত্যাচার
(sexual assault), যৌন সংসর্গ (penetrative sexual assault),
গুরুতর যৌন সংসর্গ (aggravated penetrative sexual assault)]
শাস্তির বিধান এতে দেওয়া আছে।
যৌননিগ্রহ বলতে বোঝাচ্ছে
কোনও শিশুকে যৌন উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলা বা দেহ প্রদর্শন
করা, পর্নোগ্রাফি দেখানো, অথবা শিশুকে যৌনকর্মে লিপ্ত অবস্থায়
গণমাধ্যমে প্রচারের ভয় দেখানো। এই অপরাধের জন্যে শাস্তির
বিধান হল তিন বছর পর্যন্ত জেল এবাং জরিমানা।
যৌন-অত্যাচার বলতে
বোঝাচ্ছে যৌন ইচ্ছে মেটাতে শিশুর যোনি, লিঙ্গ, পায়ু, বা
স্তন-এ হাত দেওয়া। শিশুর বয়স ১৬ থেকে ১৮-র মধ্যে হলে – বিবেচনা
করতে হবে এই কর্মে শিশুর সম্মতি ইচ্ছের বিরুদ্ধে আদায় করা
হয়েছে কিনা অথবা ভয় দেখিয়ে অথবা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে পাওয়া
গেছে কিনা। এর জন্যে শাস্তি তিন থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড
এবং জরিমানা।
গুরুতর যৌন অত্যাচার
বলা হবে যখন পুলিশ, মিলিটারি বা সরকারী কর্মচারী এই অপরাধ
করে। এর জন্যে শাস্তি পাঁচ থেকে সাত বছরের জেল ও জরিমানা।
যৌন সংসর্গ বলতে বোঝাচ্ছে
যৌনাঙ্গ শিশুর যোনি, মুখ বা পায়ুতে প্রবেশ করানো অথবা শিশুকে
দিয়ে এই কাজ করা্নো অথবা কোনও বস্তু শিশুর দেহে ঢোকানো অথবা
শিশুর বিভিন্ন অঙ্গে মুখ প্রদান করা। তবে শিশুর বয়স যদি
১৬ থেকে ১৮-র মধ্যে হয়, তাহলে দেখতে হবে যে এই কর্মে সম্মতি
শিশুর ইচ্ছের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে কিনা, অথবা প্রতারণা
করে, ওষুধ খাইয়ে, অন্যরূপে বা অনুচিত প্রভাব খাটিয়ে এবং
যখন শিশু নিদ্রামগ্ন বা অজ্ঞান অবস্থায় রয়েছে তখন কর হয়েছে
কিনা। এক্ষেত্রে শাস্তি হল সাত বছর থেকে যাবজ্জীবন এবং জারিমানা।
গুরুতর যৌনসংসর্গ তখন
বলা হবে যখন যৌনসংসর্গ কোন পুলিশ, মিলিটারি বা সরকারী কর্মচারী
করে। গণধর্ষণ, মারণাস্ত্র, আগুন এবং ক্ষয়কারক পদার্থ নিয়ে
আক্রমণও এই শ্রেণীতে পড়বে।
যৌনসংসর্গকে গুরুতর
বলা হবে যদি এর ফলে শিশুর যৌনাঙ্গের ক্ষতি হয় অথবা এটি দাঙ্গার
সময় হয় অথবা এর ফলে শিশু গর্ভবতী হয় অথবা তার কোনো ভয়াবহ
অসুখ হয় অথবা শিশুর বয়স ১২ বছরের কম হয়।
শিশুকে পর্নোগ্রাফিতে
ব্যবহার করা বলতে বোঝাবে যে কোনও মাধ্যমে শিশুর যৌনাঙ্গ
দেখানো বা শিশুকে যৌনকর্মে লিপ্ত করানো বা যৌনতৃপ্তির জন্যে
অন্যান্য অশ্লীল উপস্থাপন। এর সাজা পাঁচ বছর পর্যন্ত সশ্রম
কারাদণ্ড এবং জরিমানা। এইসব পর্নগ্রাফিক জিনিস সংগ্রহ করে
রাখাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অপরাধের বিচার হবে
একটি বিশেষ আদালতে। স্থানীয় পুলিশ বা বিশেষ পুলিশ অপরাধ
সংঘটিত হবার ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদালতকে জানাবে। শিশুর দেখভালের
জন্যে পুলিশকে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। যদি কেউ জেনেশুনে
এই অপরাধ পুলিশকে না জানায়, তাহলে তারও শাস্তি হবে। মিথ্যে
অভিযোগ করলেও শাস্তির বিধান আছে।
অপরাধী যদি নিজেও শিশু
হয়, তাহলে তার বিচার হবে জুভেনাইল জাস্টিস (কেয়ার এন্ড প্রোটেকশন
অফ চিলড্রেন) অ্যাক্ট, ২০০০ অনুসারে।
আলোচনাঃ
এ ধরণের আইনের-এর
প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করা যায় না। ১৩-টি প্রদেশের সমীক্ষায়
দেখা গেছে ৩৩ শতাংশ শিশু যৌনভবে ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু এটাও
সত্য যে সমাজের পরিবর্তনের ফলে যৌন ব্যাপারে ছেলেমেয়েরা
কম বয়স থেকেই সক্রিয় হয়ে উঠছে। তাই এটি কার্যকরী করা খুব
একটা সহজসাধ্য ব্যাপার হবে না। প্রসঙ্গত, শিশুবিবাহ প্রতিরোধ
আইন বহু বছর খাতায় কলমে আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে
অগ্রগতি খুব অল্পই হয়েছে। ২০০৫-৬ সালে রাজস্থানে ন্যাশেনাল
হেলথ সার্ভিস ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সের বিবাহিত মেয়েদের একটি
সমীক্ষা করেছিল। তাদের ৫৭ শতাংশর বিয়ে হয়ে গিয়েছিল ১৮ বছর
পৌঁছানোর আগেই। সাম্প্রতিক UNICEF (State of the World's
Children report 2012) রিপোর্টে রয়েছে এখন যেসব মেয়েদের
২০ থেকে ২৪-এর মধ্যে বয়স তাদের মধ্যে ৪৭ শতাংশেরই ১৮ বছর
পোঁছনোর আগেই বিয়ে হয়ে গেছে, ২২ শতাংশ সন্তানেরও জন্ম দিয়েছে।
১৮ শতাংশের বিয়ে হয়েছে ১৫ বছরে পৌঁছনোর আগে। এদিকে ধর্ষণ
আইন অনুসারে ১৫ বছরে পৌছনোর আগে সংসর্গ করা হলে – সেটা হবে
ধর্ষণ। সেই আইন মানলে ১৮ শতাংশ মেয়ের স্বামীকে কারাগারে
পুরতে হবে। অর্থাৎ শুধু আইন করে এ সমস্যার সমাধান করা যাবে
না। সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে প্রবল
ভাবে।
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)