প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 


জুভেনাইল জাস্টিস (কেয়ার এন্ড প্রোটেকশন অফ চিল্ড্রেন) অ্যাক্ট ২০০০

সম্প্রতি শান্তিনিকেতনের হস্টেলে একটি ছাত্রীর উপর হস্টেলের ওয়ার্ডনের অমানবিক ব্যবহারের পরিপ্রেক্ষিত জুভেনাইল জাস্টিস (কেয়ার এন্ড প্রোটেকশন অফ চিল্ড্রেন) অ্যাক্ট ২০০০-এর প্রসঙ্গটি বিভিন্ন সংবাদ পত্রে প্রকাশিত হয়েছে। আনন্দবাজারের সংবাদ অনুয়ায়ী (বুধবার ১১ জুলাই, ২০১২, ইন্টারনেট সংস্করণ)পুলিশ যখন ওয়ার্ডেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে, তখন প্রথমে এই আইনের কোনও ধারা তারা ব্যবহার করে নি। বিচারক এটি উল্লেখ করায় পুলিশ পরে অন্যান্য ধারার সঙ্গে এই আইনের একটি ধারাও যোগ করে।। আনন্দবাজারের সাংবাদিক অবশ্য ভুল করে এটিকে ‘প্রিভেনশন অফ জুভেনাইল জাস্টিস, কেয়ার অ্যান্ড প্রোটেকশন অ্যাক্ট’ বলে উল্লেখ করেছেন। জুভেনাইল জাস্টিস (কেয়ার এন্ড প্রোটেকশন অফ চিলড্রেন) অ্যাক্ট ২০০০ (যেটা ২০০৬ সালে সংশোধিত হয়)-এর ২৩ নম্বর ধারায় শিশু বা অপ্রাপ্তবয়স্কদের উপর নিষ্ঠুর ব্যবহার (cruelty) করার শাস্তি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে – যার ওপর শিশু ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ন্যস্ত আছে, সে যদি তাদের উপর অত্যাচার করে, পরিত্যক্ত করে, বে-আব্রু করে, বা ইচ্ছাকৃত ভাবে অবহেলা করে, অথবা তাদের অত্যাচারিত, পরিত্যক্ত, বে-আব্রু বা অবহেলিত হবার কারণ হয় – যার ফলে অপ্রাপ্তবয়স্ক বা শিশুদের অনাবশ্যক মানসিক বা শারীরিক নিগ্রহ হয়, তাহলে তার ছয় মাস পর্যন্ত কারাদন্ড, অর্থদন্ড বা দুইই হতে পারে। বিচারক এই ধারাটিই অভিযোগে যুক্ত করতে বলেছিলেন।

জুভেনাইল জাস্টিস (কেয়ার এন্ড প্রোটেকশন অফ চিল্ড্রেন) অ্যাক্ট ২০০০-এর অনেক ধারার সঙ্গেই সাধারণ লোক, সংবাদ প্রতিষ্ঠান এমন কি পুলিশও যথেষ্ট ওয়াকিবহাল নয় বলে মনে হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পেরে – এই আইনের আইনের ২১ নম্বর ধারায় রয়েছে অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর কিশোরী যারা কোনও কারণে নিরাপদ রক্ষণাবেক্ষণে (protective custody) রয়েছে – তাদের নাম বা তাদের সম্পর্কীত কোনও তথ্য (যেমন, ঠিকানা, ফোন নম্বর, ছবি, স্কুলের নাম, বাবা-মা বা আত্মীয়দের নাম, ইত্যাদি) সংবাদপত্র বা অন্য কোনো পাবলিক মিডিয়াতে যেন প্রকাশ না করা হয়। এগুলি প্রকাশিত হলে এইসব শিশু বা অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষতি হওয়া সম্ভব। শুধু তাই নয়, তারা এবং তাদের পরিবারও মিডিয়া নির্যাতনের শিকার হতে পারে। এই বিধি উপেক্ষা করলে তার শাস্তির বিধান দেওয়া আছে - ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা। এই আইন থাকা সত্ত্বেও বহু পত্রপত্রিকাই এটি উপেক্ষা করে। বিভিন্ন বাংলা পত্রপত্রিকায় অপ্রাপ্তবয়স্কদের অপরাধের কাহিনী তাদের নামধাম সহ প্রকাশ হওয়া অনেক পাঠকেরই চোখে নিশ্চয় পড়েছে। ইংরেজী নামি দামি পত্রিকাও এর ব্যাতিক্রম নয়। টাইমস অফ ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান টাইমস-এর বহুল প্রচারিত ইংরেজি পত্রিকাও এই দোষে দোষী। শুধু সংবাদপত্র নয় অনেক সময়ে পুলিশ কর্তৃপক্ষকেও এ ব্যাপারে দোষারোপ করা হয়েছে। ২০০৮ সালে দিল্লীতে যে বোমা ফাটে তার জন্যে ভারতীয় মুজাহাদিন বলে যাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল – জামিয়া টিচার্স সলিডারিটি ফ্রন্টের তথ্য অনুযায়ী সে ছিল অপ্রাপ্তবয়স্ক। কিন্তু তার হাতকড়া দেওয়া ছবি ও নাম পুলিশ মিডিয়াকে সরবরাহ করেছিল বলে ফ্রন্টের পেসিডেন্ট দাবী করেন। দিল্লী পুলিশের মুখপাত্র এ নিয়ে তখন কোনও মন্তব্য করতে চান নি ব্যাপারটা নিয়ে অনুসন্ধান চলছিল বলে। এই ধরণের অবাঞ্ছিত ও বে-আইনী তথ্য প্রকাশ নিয়ে আদালতে কতগুলো নালিশ হয়েছে – তার কোনও তথ্য এই প্রতিবেদকের জানা নেই। তবে বড় বড় পত্রিকার পক্ষে ২৫ হাজার টাকা জরমানা দেওয়া বিরাট কোনও ব্যাপার নয়। অর্থদন্ডের পরিমান বাড়লে (ওটা আগের ১ হাজার থেকে ২০০৬ সালে ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে) হয়তো বিভিন্ন মিডিয়া আরেকটু সচেতন হবে।

প্রসঙ্গত পাশ্চাত্য দেশের মিডিয়া কিন্তু এ ব্যাপারে বিশেষ সচেতন। এই সচেতনটা বোধহয় এসেছে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সেটা না মানলে তার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না – এই বোধ থেকে। আমাদের দেশে আইন আছে এবং সেগুলি সৃষ্টি হয়েছে অনেক চিন্তা ভাবনা করেই। কিন্তু আমাদের প্রশাসনিক গাফিলতি, ঘুষ নেওয়া ও দেওয়ার প্রবণতা এবং লোকেদের আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা সেগুলির সুষ্ঠু ব্যবহার হতে দিচ্ছে না।

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

[আইন বিষয়ক যে-সব আলোচনা অবসর-এ রয়েছে তার উদ্দেশ্য সাধারণ ভাবে আইনের ব্যাপারে পাঠকদের অবহিত করা। এই আলোচনা কোনও ভাবেই উকিলের পরামর্শের বিকল্প নয়। কারোর আইন সংক্রান্ত কোনও সমস্যা থাকলে, তাঁর উচিত সরাসরি কোনও আইনজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা।]

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।