প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

উস্তাদ আলী আকবর খান (১৯২২ - ২০০৯)

হিন্দুস্তানী রাগসঙ্গীতের মাইহার ঘরনার বিখ্যাত সরোদ-শিল্পী। জন্ম অধুনা বাঙলাদেশের কুমিল্লা জেলায়। কিন্তু শিশু বয়সেই পিতার কর্মস্থল মাইহার (এখনকার মধ্য প্রদেশ) চলে যান। । পিতা ছিলেন বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ আলাউদ্দীন খান, মাতা মদিনা বেগম। সঙ্গীতের-শিক্ষা পিতার কাছে। নানান বাদ্যযন্ত্র বাজানোর পর শেষে সরোদই ওঁর সঙ্গী হয়। সেই সময়ে আরও অনেক বিখ্যাত শিল্পী আলাউদ্দীনের কাছে সঙ্গীত শিখতেন - পান্নালাল ঘোষ (বাঁশী), তিমির বরণ (সরোদ), বোন রোশনারা খান - পরে রবিশঙ্করকে বিয়ে করে অন্নপূর্ণা দেবী (সুরবাহার) এবং রবিশঙ্কর (সেতার)।

মাত্র ১৩ বছর বয়সে আলী আকবর এলাহাবাদে এক সঙ্গীত সম্মেলনে আত্মপ্রকাশ করেন। কয়েকবছর বাদে সেখানেই রবিশঙ্কর ও উনি যৌথভাবে যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন। উনি বাজান সরোদ আর রবিশঙ্কর সেতার। মাত্র ১৫ বছর বয়সে অল ইণ্ডিয়া রেডিওতে বাজাবার সুযোগ পান। ২১ বছর বয়সে পিতার আশ্রয় ছেড়ে পেশাদার সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে ভাগ্য অন্বেষণে বেড়িয়ে পড়েন। কিছুদিনে রেডিওতে চাকরি করে, পরে মহারাজ জোধপুরের রাজসভায় বাজিয়ে উনি মুম্বাই যান। সেখানে বেশ কিছু চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্ব পান। ওঁর সুরারোপিত ছবির মধ্যে কিছু বাংলা ছবিও ছিল, যেমন সত্যজিত্ রায়ের দেবী এবং তপন সিংহের ক্ষুধিত পাষাণ। মার্চেণ্ট আইভরির দ্য হাউসহোল্ডার ছবির সুরারোপও আলী আকবরই করেছিলেন। ১৯৫৫ সালে উনি বিশ্ববিখ্যাত বেহালাবাদক ইহুদী মেনুহিন-এর আমন্ত্রণে আমেরিকায় যান। ফিরে এসে ১৯৫৬ সালে কলকাতায় আলী আকবর কলেজ অফ মিউজিক প্রতিষ্ঠা করেন। এর এগারো বছর বাদে সেই একই নামে ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলে-তে আরেকটা স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। পরে তিনি ক্যালিফোর্নিয়াতেই স্থায়ীভাবে বসবাস আরম্ভ করেন। ১৯৮৫ সালে আরেকটি আলী আকবর কলেজ স্থাপিত হয় সুইটজারল্যণ্ডে।

ভারতীয় রাগসঙ্গীতের সঙ্গে পাশ্চাত্যবাসীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে যাঁদের বিশেষ ভূমিকা আছে, তাঁদের মধ্যে তিনি অন্যতম। সারা বিশ্বে তিনি রাগসঙ্গীত পরিবেশন করেছেন - কখনো একা, কখনো যৌথভাবে। প্রথমদিকে উনি যুগলবন্দি করতেন রবিশঙ্করের সঙ্গে। পরে নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়, এল. সুব্রাহ্মনিয়াম এবং কয়েকবার বিলায়েত্ খানের সঙ্গেও ওঁকে বাজাতে দেখা গেছে। রাগসঙ্গীত সৃষ্টির ক্ষেত্রেও আলী আকবর তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। ওঁর নিজের সৃষ্টি একটি মিশ্র রাগ চন্দ্রনন্দন সঙ্গীতমহলে খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৮৯ সালে ভারত সরকার ওঁকে পদ্ম-বিভূষণ দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করে।

আলী আকবর তিনবার বিয়ে করেছিলেন। প্রথম স্ত্রী জুবেদা বেগমের পুত্র আশিস খান একজন বিখ্যাত সরোদ বাদক।

চিত্রটির সূত্র অজ্ঞাত

 

অবসর-এ প্রকাশিত আলী আকবর প্রসঙ্গে ---


অবসরে সঙ্গীতজ্ঞদের জীবনী প্রকাশে উদ্যোগী হয়েছেন দেখে আনন্দ পেলাম। ওস্তাদ আলি আকবর খান নিয়ে লেখাটি পড়ে দুতিনটি কথা মনে এলো। ১৯৫৫ সালে আমেরিকার এঞ্জেল রেকর্ডস্ আলি আকবরের একটি ৩৩ আরপিএম-এর বড়ো রেকর্ড প্রকাশ করেন, Morning and Evening Ragas -- Sindhi Bhairabi and Pilu, তবলায় চতুরলাল, ইয়েহুদি মেনুহিনের ভূমিকাসহ। আমি যতদূর জানি, বিদেশী লেবেলে এটিই প্রথম ভারতীয় উচ্চাঙ্গসঙ্গীতশিল্পীর বড়ো করে আত্মপ্রকাশ।

আপনাদের লেখায় দেখছি খানসাহেব মুম্বইতে বেশ কিছু ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন। মেদয় ঘেঁটে দেখলাম যে প্রায় ছ দশকের সঙ্গীতজীবনে তিনি মাত্র দশটি ছবিতে সুর দিয়েছেন, তার মাত্র দুটি হিন্দি। এই প্রসঙ্গে একটা কথা মনে এলো। আমার স্মরণে আসছে যে দেবী ছবিতে সত্যজিত রায়ের সঙ্গে কাজ করে আলি আকবর খুব খুশী হননি। এদিকে বিজয়া রায় লিখছেন যে সত্যজিতবাবুও রবিশঙ্কর, আলি আকবর এবং বিলায়েতকে দিয়ে তাঁর ছবিতে সুর দেবার পর কোনো কারণে সমস্ত ব্যাপারটাতেই বীতশ্রদ্ধ হয়ে শেষে নিজেই নিজের ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করতে শুরু করেন। আরেকটু তলিয়ে দেখছি যে ক্লাসিকাল সঙ্গীতের শিল্পীরা চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনার দিক মাড়াননা খুব একটা -- যদিও যাঁরা মাঝে মধ্যে ওদিকে গেছেন তাঁরা অসাধারণ সুর দিয়েছেন। হয়তো শাস্ত্রমতে ভালো সুর দিলেও তাঁরা জনপ্রিয় সুর দিতে পারেননা, বা মুখ্য পরিচালকের অধীনস্থ থাকাটা তাঁদের সৃষ্টিকর্মে ব্যাঘাত ঘটায় বা অন্য কিছু। আপনার পাঠকদের (রাগসঙ্গীত প্রবেশিকার পুেäপন্দুবাবুর কথা মনে আসছে) এবিষয়ে কিছু চিন্তা থাকলে জানার ইচ্ছে রইলো।

তৃতীয় কথা। ভারত সরকারের মাপকাঠিতে আলি আকবর খানসাহেব পদ্মবিভূষণ ছাড়িয়ে ভারতরত্নে আর পৌঁছতে পারেননি। অবশ্য ভারতরত্ন খেতাব অনেকদিন ধরে এইসব নাচগানের, অর্থাত্ লাইনের লোকেদের নাগালের বাইরে ছিলো, তাবড় তাবড় দেশনেতারাই এ সম্মান পেতেন।এম্ এস্ সুব্বুলক্ষ্মী পংক্তিতে ঢোকেন প্রথম ১৯৯৮-তে তারপর রবিশঙ্কর,বিস্মিল্লা,আর শেষ এই সেদিন ভীমসেন জোশী দল ভারী করলেন। খানসাহেবকে মরণোত্তর এই সম্মান দিলে তাঁর কিছুই এসে যাবে না, বুঝতেই পারছেন, তবে আমরা, অর্থাত্ খানসাহেবের স্তাবকরা খুশী হতে পারি। তবে লাইনের লোকদের সম্মানিত করার গোলমালটা বুঝতে পারছেন তো -- "শ্রীরাধিকে চন্দ্রাবলী, কারে রাখি আর কারে ফেলি"।

নমস্কারান্তে, ভবদীয়

সুমিত রায়



 

 

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।