উস্তাদ
বিলায়েত খান (১৯২৮
- ২০০৪)
জন্ম
বাংলাদেশের ময়মনসিংহ গ্রামের গৌরীপুরে। বাবা সেতার ও সুরবাহার
বাদক এনায়েত্ খান, মা বশিরন বেগম। বিালয়েত্-এর ঠাকুর্দা বিখ্যাত
সঙ্গীতজ্ঞ ইমদাদ খান। তাই ওঁর শিক্ষা ইমাদাদখানী বা এটাওয়া ঘরানায়।
বিলায়েত্ খান বহু বছর কলকাতায় কাটিয়েছেন। এক সময়ে তিনি ও তাঁর
ছোটভাই ইমরাত খান (সুরবাহার) একসঙ্গে বহু অনুষ্ঠানে বাজাতেন। পরে
ওঁদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। দুবার বিয়ে করেছিলেন বিলায়েত্।
কন্যা জিলা খান একজন প্রতিষ্ঠিত সুফি গায়িকা। ছেলে সুজাত খান ইতিমধ্যেই
সেতার বাদক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। কনিষ্ঠ পুত্র হিদায়ত্ও সেতার
বাদক।
বিলায়েত্ খান প্রথম জীবনে অতি সৌখীন মানুষ ছিলেন। অর্থ যেমন উপার্জন
ব্যয়ও করেছেন সেইভাবে। দামী গাড়ি, উত্তম বেশভুষা, দুäপ্রাপ্য অzাণ্টিক
সংগ্রহ ইত্যাদিতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছেন। ঘোড়ায় চড়তে ভালো বাসতেন;
পুল খেলা, সাঁতার, বলরুম ডান্স - সবকিছুতেই ওঁর উত্সাহ ছিল। শেষের
জীবনে এসব জিনিসে ওঁর আগ্রহ কমতে থাকে।
বিলায়েত্ খানের সেতারের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল। সাধারণ সেতারের যা
গঠন তাতে অনেকগুলি উচ্চ-স্বর পর্যন্ত মীড় দিতে গেলে তারের টানে
অন্যান্য তারগুলির সুর হারানোর সম্ভাবনা থাকে, বাজনার ফাঁকেই তাদের
নতুন করে বাঁধতে হয়। এই সমস্যা দূর করার জন্য বিলায়েত্ খান বাদ্যযন্ত্র-নির্মাতাদের
সাহায্য নিয়ে সেতারের গঠনকে মজবুত করেন। তবলী (নিচের গোলাকৃতি
তুম্বার-এর কাঠের ঢাকনা) এবং তারগহনকে (দণ্ডের উপরে সেতারের কান
থেকে বার হয়ে তারগুলি যেখানে বসে নিচে নেমে আসে) সুদৃঢ় করেন। এছাড়া
সেতারের ঘাটগুলোতে (ফরএতস)@ তিনি আরও বক্রতা দেওয়ান এবং তার ও
ঘাটের মধ্যে দূরত্বটা বাড়ান যাতে তারকে টেনে পাঁচ-স্বর পর্যন্ত
মীড় দেওয়া সম্ভব হয়। সেতারের সাতটি প্রধান তারের বদলে তিনি ছয়তারের
সেতার চালু করেন। অন্যান্য কিছু তারকে এমন ভাবে বাঁধেন, যাতে রাগের
ফাঁকে ফাঁকে সেগুলো বাজিয়ে ভরাট করা যায় - তানপুরার সহযোগিতা ছাড়াই
বাজানো যায়।
বিলায়েত্ খানকে অনেক পুরষ্কার বা সম্মান দেবার চেষ্টা করা হয়েছে,
যার বেশির ভাগই তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। ভারত সরকারের দেওয়া
পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, পদ্ম-বিভূষণ সবকিছুই তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন।
অনেকের ধারণা এটা অহঙ্কারের জন্য। তিনি মনে করতেন, সেতারের সংক্রান্ত
যে কোনও সম্মান তাঁরই প্রথম পাওয়া উচিত। ওঁর সমসাময়িক আরেক সেতারবাদক
রবিশঙ্করের সঙ্গে ওঁর প্রতিদ্বন্দিতার কথা অনেক সময়েই পত্রপত্রিকায়
প্রকাশিত হয়েছে। দুজন অসামান্য প্রতিভাশালী বাদক একই সময়ে সংগীত
জগতে বিচরণ করলে, সত্য হোক মিথ্যে হোক - এ ধরণের আলোচনা সবসময়েই
ঘটবে।
সঙ্গীত শিক্ষা দেবার ব্যাপারে বিলায়েত্ খানকে তেমন উদ্যোগ নিতে
দেখা যায় নি। তাঁর শিষ্যের সংখ্যা বেশি নয়। অনেক প্রতিকুলতার মধ্যে
কোনও বড় ওস্তাদের স্নেহচ্ছায়ায় না থেকে নিজের অক্লান্ত চেষ্টাতেই
তিনি বড় হয়েছিলেন। তাই হয়তো শিষ্য গড়ে তোলা ব্যাপারে তিনি তাগিদ
অনুভব করেন নি।
ছবির
সূত্র: একটি সিডি-র কভার থেকে। কভার ফটো: Lyle Wachowsky