প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

আমার স্বাস্থ্য, আমার সত্তা (সূচী)

বিকল্প চিকিৎসা

অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসার সাথে সাথে বিকল্প চিকিৎসা চালু থাকলে এইচ আই ভি সংক্রমণের লক্ষণগুলির তীব্রতা কমতে ও রোগ-প্রতিরোধ শক্তি বাড়তে পারে। চীনদেশীয় চিকিৎসায় (আকুপাংচার ও ভেষজ) সি ডি ৪ কোষের সংখ্যা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কার্যকারিতা বাড়তে পারে, ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া কমতে পারে, এবং কিছু উপসর্গ (যেমন রাত্রে ঘাম হওয়া, গা-বমি ভাব, পেট খারাপ, এবং স্নায়ুর রোগ বা নিউরোপ্যাথি) একেবারে নির্মূল হতে পারে। তবে বিভিন্ন ওষুধে পরস্পর বিরোধী প্রতিক্রিয়া, রাসায়নিক বিক্রিয়া ইত্যাদি বিষয়ে সাবধান হওয়া দরকার। ধ্যান, বিশ্রাম, ব্যায়াম, যোগাভ্যাস, মালিশ, এবং কগনিটিভ থেরাপি (মনোরোগ সারাবার একটি প্রথা) রোগ-প্রতিরোধ প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা বাড়ায় ও জীবনের মান উন্নত করে। আকুপাংচার এবং কাইরোপ্র্যাকটিস (শরীর সঞ্চালন বিদ্যা) রক্তচাপ ও পেশীর টেনশন কমাতে পারে, ফলে অনিদ্রা, স্নায়ুর অসু (নিউরোপ্যাথি), ও মাথা ধরা ইত্যাদি উপসর্গ কমতে পারে। ইদানীংকালে
কিছু নিরীক্ষায় দেখা গেছে হোমিওপ্যাথির ব্যবহারে ভাইরাল লোড কমেছে ও লিম্ফোসাইটের সংখ্যা বেড়েছে। বিকল্প চিকিত্সায় রোগের কিছুটা উপশম হয়
বলে কোন কোন সংগঠন রোগীর আর্থিক সংগতি নির্বিশেষে বিকল্প চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।


এইচ আই ভি ও গর্ভধারণ

মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় বা জন্মের সময়ে মায়ের শরীর থেকে শিশুর শরীরে এইচ আই ভি সংক্রমণ ঘটতে পারে। আপনি যদি সন্তান চান এবং মনে করেন যে ইতিপূর্বে আপনার এইচ আই ভি সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি ছিল, তাহলে অন্তঃসত্বা হওয়ার আগে পরীক্ষা করিয়ে নিন। সন্তানের জন্মদানে ইচ্ছুক এইচ আই ভি সংক্রামিত মহিলাদের আশার আলো দেখিয়েছে অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল থেরাপি।
কিছু সমীক্ষায় দেখা গেছে সন্তান জন্মের আগে অথবা জন্মকালীন অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ খেলে এবং যথাযথ সময়ে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করলে সন্তানের মধ্যে সংক্রমণের হার দুই শতাংশের মত কম হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সন্তান জন্মের সময়ে র্যা পিড এইচ আই ভি পরীক্ষা করে সংক্রামিত মহিলাদের অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল ওষুধের একটি ছোট কোর্স খাওয়ানো হয়। ফলে তাঁদের থেকে শিশুদের শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমে। মাতৃদুগ্ধের মাধ্যমে এইচ আই ভি সংক্রমণ হতে পারে বলে সংক্রামিত মায়েদের শিশুকে স্তন্যপান না করানোই বাঞ্ছনীয়। যেক্ষেত্রে স্তন্যপান করানো আবশ্যিক সেক্ষেত্রে অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল থেরাপির মাধ্যমে সংক্রমণ রোধ করা যায় কিনা সে বিষয়ে গবেষণা চলছে। যে এইচ আই ভি সংক্রামিত মহিলারা সন্তান চান এবং যাঁদের পুরুষ সঙ্গীও এইচ আই ভি সংক্রামিত, তাঁদের বেলায়ও কিছু উপায় আছে। এই ভাবনার মধ্যে দত্তক নেওয়া সবচাইতে ভালো পদ্ধতি। যে মহিলারা এইচ আই ভি সংক্রমণহীন কিন্তু তাঁদের পুরুষসঙ্গী এইচ আই ভি সংক্রামিত, তাঁরা কোন এইচ আই ভি সংক্রমণশূন্য পুরুষের শুক্রের সাহায্যে কৃত্রিম উপায়ে (আর্টিফিশিয়াল
ইনসেমিনেশান) গর্ভধারণ করতে পারেন। এতে শিশুর শরীরে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে না।

শুক্র ধৌতিকরণ নামে একটি নতুন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংক্রামিত শুক্র থেকে ভাইরাস সরিয়ে দিয়ে এইচ আই ভি হীন মহিলার জরায়ুতে স্থাপন করে কৃত্রিম প্রজনন নিয়ে গবেষণা চলছে। এই প্রক্রিয়ায় মহিলার সন্তানের পিতা, তাঁর এইচ আই ভি সংক্রামিত পুরুষসঙ্গীই হতে পারেন। আপনি সন্তান ধারণ করতে চাইছেন কিন্তু আপনার সঙ্গী এইচ আই ভি সংক্রামিত, এমন অবস্থায় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। কিছু নীতি নির্ধারকেরা এইচ আই ভি সংক্রামিত মহিলাদের অন্তঃসত্বা হতে বাধা দিচ্ছেন এবং অন্তঃসত্বা হয়ে গেলে গর্ভপাত করতে উপদেশ দিচ্ছেন। অনেক সময়ে আবার এইচ আই ভি সংক্রামিত মহিলা গর্ভপাত করাতে গেলে চিকিত্সকেরা ফিরিয়ে দিচ্ছেন অথবা মোটা টাকা চাইছেন। জন্ম দিতে গিয়েও মহিলাদের এই বৈষম্যমূলক ব্যবহারের সম্মুখীন হচ্ছেন। সেই জন্যে সমাজকর্মীরা এইচ আই ভি আক্রান্ত মহিলাদের মানবিক অধিকার, স্বাধীনতা, প্রজননের অধিকার, ও কোন রকম বৈষম্য ছাড়া চিকিৎসার সুযোগ পাওয়ার অধিকার সুনিশ্চিত করতে লড়াই করে চলেছেন।


কিছু ব্যক্তিগত প্রশ্ন

এইচ আই ভি/এইডস আক্রান্ত মহিলা ও তাঁদের পরিবারগুলির সমস্যার তালিকা দীর্ঘ। আমার যৌন-জীবন কেমন হবে? আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে আমার সন্তানদের দেখাশুনা কে করবে? আমি কি আমার এইচ আই ভি সংক্রমণের কথা পরিবারের সবাইকে ও বন্ধìদের জানাবো? আমার সহকর্মীদের? আমার সন্তানদের? লোকে জানতে পারলে কি হবে? যে চিকিত্সক বা স্বাস্থ্যকর্মী আমাকে যথেষ্ট সম্মান দিচ্ছেন না, তাঁদের সঙ্গে আমি কিরকম ব্যবহার করব? সকলের সাহায্য কি ভাবে পেতে পারি? এইচ আই ভি সংক্রামিত হওয়ার কারণে বৈষম্যের শিকার হলে আমি কি কি আইনী সহায়তা পেতে পারি? আমার মৃত্যুর সম্ভাবনার সঙ্গে কি ভাবে মোকাবিলা করবো?


শিশুদের যত্ন

যদিও অনেক মানুষ এইচ আই ভি সংক্রমণ নিয়ে দীর্ঘদিন বেঁচে আছেন, তবুও এটি একটি মারণ রোগ। মায়েদের পক্ষে গুরুতর অসুস্থ হয়ে সন্তানের যত্ন নিতে অপারগ হওয়া বা সন্তানকে শিশু অবস্থায় রেখে মারা যাওয়া বড়ই কষ্টকর। অনেক দেশে পিতামাতার অবর্তমানে তাঁদের সন্তানকে কে দেখবে সে বাবদে স্ট্যাণ্ডবাই 'গার্ডিয়ানশিপ আইন' প্রণীত হয়েছে। এই আইনের জোরে মা বাবার অবর্তমানে তাঁদের শিশুদের অভিভাবক কে হবেন তা আগে থেকেই নির্ধারণ করা যাবে।


অধিকারের আন্দোলনে যুক্ত হওয়া

বহু এইচ আই ভি/এইডস আক্রান্ত মহিলা তাঁদের সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভিন্ন সমাজ কল্যাণমূলক কাজে যুক্ত হয়ে তাঁদের মানসিক এবং আধ্যাত্মিক জীবনের উন্নতি ঘটিয়েছেন, যেমন হাসপাতালে গিয়ে এইডস রোগীদের প্রতি ভাল ব্যবহার ও তাদের চিকিৎসার উন্নতির জন্যে চাপ সৃষ্টি করা, এইডস রোগীদের জন্যে আরও নতুন ও সদর্থক আইন প্রণয়নের জন্যে আন্দোলন করা, ধর্মীয় সংঠনগুলিকে এ বিষয়ে রক্ষণশীল মনোভাব ত্যাগ করতে উদ্বুদ্ধ করা, সমাজের সকলকে বন্ধাত্বের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্যে অনুরোধ করা। অনেক এইচ আই ভি সংক্রামিত মহিলা নিজেই কাউন্সেলর হয়েছেন, এইচ আই ভি/এইডস সম্পর্কে সমাজের বিভিন্ন স্তরে চেতনা বাড়ানোর জন্যে কাজ করছেন। অনেকে পুনর্বাসন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে অন্য মহিলাদের মাদক বা মদের নেশা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্যে উত্সাহ যোগাচ্ছেন। এক সংক্রামিত মহিলা বলেছেন শুধু একজন ব্যক্তিকে সুরক্ষিত ভাবে বাঁচিয়ে রাখাও আমাদের পক্ষে অত্যন্ত জরুরী কাজ।


সূত্রঃ আমার স্বাস্থ্য, আমার সত্তা


(শেষ)

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।