নারী
এপ্রিল ১৫, ২০১৫
আমার স্বাস্থ্য, আমার সত্তা
নিজের যত্ন (৫)
(আগের অংশ)
নিজের জীবন-সঙ্গীর হাতে নির্যাতন
জীবন-সঙ্গীর হাতে নির্যাতন বা অত্যাচার পারিবারিক নির্যাতনের মধ্যে পড়ে। এই অপরাধ বাইরের লোক সবচেয়ে কম জানতে পারে। জীবনসঙ্গীর সঙ্গে মতান্তর, মনোমালিন্য ইত্যাদি অনেক সময়ে হতেই পারে। সঙ্গীর ওপর রেগে আগুন হওয়া, তুমুল তর্কবিতর্ক ও চ্যাঁচামেচি করা এ সব অবশ্যই ঘটবে। এতে মনে কষ্ট হতে পারে কিন্তু তাকে পারিবারিক নির্যাতন বলা যায় না। পারিবারিক নির্যাতনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল নির্যাতিতার মনে ভয় ও বিভীষিকার সঞ্চার হওয়া ।
একজন নির্যাতিতার নিজের কথায়
আমি যখন স্বামীর ঘর করতে এলাম, প্রথম কয়েকদিন সবকিছুই বেশ শান্ত ছিল। তারপর উনি জোর করে আমাকে দিয়ে অনেক কিছু করাতেন, যা আমি করতে চাইতাম না। আমি রাজী না থাকলেও উনি শুনতেন না। জোর করতেন, না করে আমার নিস্তার ছিল না।
কি ভাবে স্বামী জোর খাটাতেন তা এখানে স্পষ্ট করে না বলা হলেও বলপ্রয়োগ নানা ভাবে করা যায়। শারীরিক ভাবে, যেমন চড় থাপ্পড় ঘুঁষি মেরে, গলা টিপে ধরে, চাবুক মেরে, চুল ধরে টেনে, যৌন অত্যাচার করে। মানসিক ভাবেও জোর খাটানো যায় যেমন, সন্তান বা পোষা প্রাণীর ক্ষতি করার ভয় দেখিয়ে, গালিগালাজ করে, অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার ভয় দেখিয়ে, কিংবা টাকা-পয়সা না দিয়ে, ঘরে আটকে রেখে, কারোর সঙ্গে মিশতে না দিয়ে। এ ধরণের আচরণ সব সময় করতে হয় না। এমন ব্যবহার মাঝেমাঝে প্রকাশ করে নির্যাতিতাকে ভয় পাইয়ে দিয়ে তার ওপর কর্তৃত্ব ফলানো যায়। এ রকম ব্যবহারের উদ্দেশ্য হল নির্যাতিতাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা।
পারিবারিক অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ নয়। অত্যাচারীকে ছেড়ে চলে যেতে গেলে সে অনেক সময়ে পেছু নেয়। নিজের স্ত্রী হলে তো কথাই নেই। 'আমাকে ছেড়ে গেলে শেষ করে দেব; এই হুমকি অনেক স্বামীই দিয়ে থাকেন। মহিলারাও ভয়ে সংসার থেকে বেরিয়ে যেতে পারেন না।
পারিবারিক নির্যাতনের ফলে বহু মহিলার মৃত্যু হয়েছে। অনেক সময়ে স্বামী বা পরিবারের কেউ তাদের পুড়িয়ে মেরেছে, গলা টিপে হত্যা করেছে, অথবা প্রচণ্ড মারের আঘাতে তাদের মৃত্যু হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ক্রমাগত অত্যাচার সহ্য না করতে পেরে বধূটি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। আমাদের দেশে বধূ-নির্যাতনের একটি উদ্দেশ্য হল বাপের বাড়ি থেকে আরও পণ বা টাকা আনা। তা না হলে অনেক সময়ে বৌটিকে হত্যা করা হয় বা আত্মহত্যায় প্ররোচিত করা হয় যাতে ছেলের আবার বিয়ে দিয়ে পণের টাকা পাওয়া যায়।
পারিবারিক নির্যাতন ও আইন
সম্প্রতি আমাদের দেশে পারিবারিক নির্যাতন বন্ধ করার উদ্দেশ্যে অনেকেগুলি আইন সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমেই উল্লেখ করা যায় পুরনো একটি ধারা, যেটি ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮ (ক) হিসেবে পরিচিত। এটির সৃষ্টি হয়েছিল নারীর প্রতি তার স্বামী বা স্বামীর আত্মীয়দের নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধের জন্যে। এই আইনে বলা হয়েছে স্বামী বা তার কোন আত্মীয় যদি নারীর ওপর নিষ্ঠুর আচরণ করে, তাহলে তার জন্যে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং সেই সঙ্গে জরিমানা হতে পারে। নিষ্ঠুরতার সংজ্ঞাও এতে দেওয়া হয়েছে:
ইচ্ছাকৃত কোন আচরণ যা নারীকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দেয় বা তাকে ঘোরতর ভাবে আহত করে, অথবা তার প্রাণ-সংশয়, অঙ্গহানি, বা স্বাস্থ্যহানি (শারীরিক বা মানসিক) ঘটায়।
অথবা
নারীকে হেনস্থা করা। এই হেনস্থার উদ্দেশ্য সম্পত্তি বা মূল্যবান গচ্ছিতের ওপর বে-আইনী দাবী মেটানোর জন্যে নারী বা তার আত্মীয়কে চাপ দেওয়া, অথবা সেই বে-আইনী দাবী নারী বা তার আত্মীয় মেটায় নি বলে হেনস্থা করা।
নারীদের নির্যাতনের থেকে রক্ষার জন্য ২০০৫ সালে 'পারিবারিক নির্যাতন থেকে নারীর সুরক্ষা আইন, ২০০৫' নামে একটি সর্বাত্মক আইন সৃষ্টি করা হয়েছে। এই আইনে পারিবারিক নির্যাতন-এর সংজ্ঞা ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। পারিবারিক নির্যাতনের আওতায় পড়ে যে কোন দৈহিক, যৌন, মৌখিক, মানসিক বা আর্থিক-অত্যাচার যা নারীর ক্ষতি করতে পারে, তাকে আহত করতে পারে, তার স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, জীবন বা অঙ্গ-হানি ঘটাতে পারে, অথবা তার শারীরিক বা মানসিক সুস্থ জীবনযাপনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। ১
অনেক সময়ে লোকে প্রশ্ন করে স্বামীর ঘরে বা জীবনসঙ্গীর হাতে অত্যাচারিত হওয়ার পরেও মেয়েরা কেন সেই অবস্থার মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। এর উত্তর একাধিক। বেশির ভাগ সময়ে মেয়েরা ভালোবাসার বন্ধনে আটকে পড়ে, মনে করে হয়ত এক সময় তার প্রিয়জনের শুভবুদ্ধি হবে, এ ধরণের ব্যবহার আর করবে না। সুতরাং একটু ধৈর্যের অপেক্ষা। এছাড়া আন্যান্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে আমাদের সমাজব্যবস্থা যা স্বামী ত্যাগ করলে মেয়েদের দোষারোপ করে, খারাপ চোখে দেখে। এ ছাড়া রয়েছে মেয়েদের আর্থিক নির্ভরতা। অনেক মেয়েরাই স্বাধীনভাবে উপার্জন করেন না এবং সে ক্ষমতা তাদের নেই। তাছাড়া লোকলজ্জা, স্বামীর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য পারিবারিক চাপ, বাপের বাড়িতে স্থান না পাওয়া, সন্তানদের দুঃখ না দেওয়ার চেষ্টা, এ সব তো রয়েছেই।
রোকেয়া বেগম
এই সংগঠনে এখন আমি ২০ জনের একটি ক্ষুদ্র ঋণ (মাইক্রো ক্রেডিট) গোষ্ঠীর গ্রুপ লীডার। আমি খুব ভাল জরির কাজ করি - আমার কাজের কদর আছে। আমার বিয়ে হয়েছিল কিন্তু আমি যখন তিন মাসের অন্তঃসত্বা তখন আমার স্বামী হঠাৎ চলে যায়। বহুদিন তাঁর কোন খোঁজ খবর পাই নি। আমার মেয়ে জন্মায় আমার বাপের বাড়িতে। তারপর আমার স্বামী আবার বাড়িতে ফেরে এবং আমাকে নিয়ে সংসার করতে মেটিয়াবুরুজে নিয়ে যায়।
আমার স্বামী আমাকে মারধর করত, আর কারোর সঙ্গে কথা বলতে দিত না, ঘরে বন্ধ করে রাখত। মেটিয়াবুরুজে গিয়েও কিছুদিনের মধ্যে সে আমাদের ছেড়ে পালিয়ে গেল। কি ভয়ঙ্কর বিপদে পড়েছিলাম আমি! বুঝতে পারছিলাম আমাদের বাড়িওয়ালা খুবই খারাপ লোক। আমাকে অসহায় পেয়ে লাইনের ব্যবসায় নামিয়ে দেবে। কোন রকমে আমি গ্রামে ফিরে আসি। তারপর থেকে আমি ৭ বছর বাপের বাড়িতে আছি এবং স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে কেস এনেছি। সে কেস তুলে নিতে শেষ পর্যন্ত সে আমার সঙ্গে মোটা টাকার রফা করে। কেসটা ৪ থেকে ৫ বছর চলেছিল - আমিও আর টানতে পারছিলাম না।
সন্তানের ওপর মায়ের নির্যাতনের প্রভাব
ছেলেমেয়েদের পক্ষে বাবার হাতে মাকে মারধোর খেতে দেখা এক নিদারুণ অভিজ্ঞতা। বাড়ির এই পরিস্থিতিতে অবশ্যই তারা ভয় ও শঙ্কা নিয়ে সময় কাটায়। বাবা ও মা দুজনই তাদের আপনজন ও অভিভাবক - দুজনের প্রতিই তাদের টান থাকে। সেখানে একজন অন্যজনকে মারছে, গালিগালাজ করছে, বা মানসিক কষ্ট দিচ্ছে দেখা অসহায় ছোট্ট মানুষদের মনে কি পরিমাণ কষ্ট ও নিরাপত্তার অভাব সৃষ্টি করবে তা কিছুটা অনুমান করা যায়। এসব বাড়ির বাচ্চারা নানান মানসিক সমস্যায় ভোগে। অনেকে বড় হয় এই ধারণা নিয়ে যে, কোন সমস্যার সমাধান করতে হলে মারপিট করলেই চলবে। সমস্যা সমাধানের সেই একমাত্র পথ। এই ছেলেরাই বড় হয়ে আবার নিজের স্ত্রীকে মেরে শায়েস্তা করে, সন্তানদের মারধোর করে সিধে রাখে। অন্যদিকে কন্যা সন্তান শেখে নির্যাতন হজম করতে। তাদের ধারণা হয় মেয়েদের জীবনই এ রকম।
আপনি যদি অত্যাচারিতা হন, তাহলে কী করবেন
আপনি নিজে যদি নির্যাতনের শিকার হন তাহলে নিরাপদে থাকার জন্যে কয়েকটি কাজ করতে পারেন যা আপনার সন্তান ও আপনাকে কিছুটা নিশ্চিন্ততা দেবে। আর যদি চান তাহলে অত্যাচারী স্বামী বা সঙ্গীর থেকেও ধীরে ধীরে মুক্তি পাওয়ার পথ খুঁজে পাবেন। এ সব নির্দেশগুলো সবার ক্ষেত্রেই সমান কাজ করবে তা বলা যায় না। তবে এ সব তথ্য জানা থাকলে দৈনন্দিন জীবনে অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তি পাবার পথ কিছুটা সহজ হতে পারে।
স্বামী যখন আপনাকে মারধোর করার চেষ্টা করছে তখন কি কি করতে পারেন
যতটা সম্ভব মাথা ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করুন ।
বলিশ বা অন্য কিছু দিয়ে নিজের মাথা এবং পেট আড়াল করার চেষ্টা করুন যাতে সেখানে আঘাত না লাগে। শরীরে যাতে কম আঘাত লাগে তার জন্য যা যা করতে পারেন করুন।
সুযোগ পেলে ফোন বা মোবাইলে ১০০ ডায়াল করে পুলিশকে জানান। তা সম্ভব না হলে সাহায্যের জন্য চিৎকার করুন, যাতে পাড়া-পড়শী শুনতে পায়।
নিজের নিরাপত্তার জন্য কি কি করণীয়
যদি মনে করেন আপনার পক্ষে শীঘ্র গৃহত্যাগ করা সম্ভব নয়, তাহলে নিরাপত্তার জন্যে প্রথমে আপনার নিকটবর্তী থানায় ফোন করুন।
দেশে নারী নির্যাতন সংক্রান্ত যেসব আইন আছে সে সব সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল হোন। আপনার কাছাকাছি নারী-নির্যাতন নিয়ে কাজ করে এমন যেসব এনজিও রয়েছে তাদের ফোন নম্বর ও ঠিকানা সংগ্রহ করুন। আপনার বর্তমান অবস্থা তাদের জানান এবং তাদের কাছ থেকে জেনে নিন নিজের সুরক্ষার জন্যে আপনি কি কি করতে পারেন।
একটি বন্ধুগোষ্ঠী গড়ে তুলুন যাঁরা আপনাকে বিপদে সাহায্য করতে পারবে।
মারধোর বা অত্যাচার আরম্ভ হওয়ার আগে আপনার স্বামী বা সঙ্গী কী রকম ব্যবহার করেন বা কী ধরণের পরিস্থিতিতে তিনি নির্যাতন শুরু করেন সেগুলো বোঝার চেষ্টা করুন। সেক্ষেত্রে আত্মরক্ষার জন্য প্রস্তুত থাকতে পারবেন।
ছেলেমেয়েদের শিখিয়ে রাখুন বিপদের সময়ে তারা কার সঙ্গে যোগাযোগ করবে।
যেসব দরকারি ফোন নম্বর, ঠিকানা, এবং তথ্য আপনি জোগাড় করেছেন, সেগুলি পরিষ্কার করে লিখে এমন জায়গায় রাখুন যা আপনার অত্যাচারী স্বামী বা জীবনসঙ্গীর চোখে পড়বে না। দরকার হলে কোন বিশ্বস্ত বন্ধুর কাছে সেগুলো জমা রাখুন। এই তথ্যগুলি এক জায়গায় থাকলে প্রয়োজনের সময়ে খুবই কাজে লাগবে।
অত্যাচারী পুরুষের কিছু বৈশিষ্ট্য
মানসিক অত্যাচারের নিদর্শন -
গালাগাল দেওয়া বা আপনার কাজে নানান খুঁত ধরা
আপনাকে নানা ভাবে দমিয়ে দেওয়া
সবার সামনে এবং যখন তখন অপমান করা
আপনার পছন্দের কারোর প্রতি বেশিমাত্রায় হিংসা প্রকাশ করা
সব ভুল ভ্রান্তি এবং দুর্ঘটনার জন্যে আপনাকে দোষারোপ করা
আত্মহত্যা করবেন বলে আপনাকে ভয় দেখানো
আপনার পরিবার এবং বন্ধìবান্ধবের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বারণ করা
আপনাকে অর্থনৈতিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা অর্থাত্ টাকাকড়ি না দেওয়া
মদ বা অন্য মাদকদ্রব্যে আসক্ত হওয়া
আপনি বাইরে কাজ করতে বা উপার্জনশীল হতে চাইলে বাধা দেওয়া
মিথ্যেকথা বলা
নিজের অন্যায় ব্যবহার বা কাজ স্বীকার না করা
আগ্রাসী ব্যবহারের বৈশিষ্ট্য
আগ্রাসী ব্যবহার আপনার বা আপনার পোষা জন্তুর প্রতি অথবা আপনার প্রিয় অন্য কোন ব্যক্তির প্রতি হতে পারে।
আকার-ইঙ্গিতে রাগ দেখানো
জিনিসপত্র ভাঙচুর করা
মারধোর করবে বলে ভয় দেখানো
যৌন নির্যাতন করা, এমনকি আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে সংগম করা
দৈহিক নির্যাতন করা
অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা
সব নির্যাতনই দোষণীয়। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে অত্যাচার ভয়াবহ আকার নিতে পারে, বিশেষ করে যখন স্বামী বা জীবনসঙ্গী নেশায় আসক্ত হয়, তার কাছে অস্ত্র থাকে, বা সে তার স্ত্রী বা সঙ্গিনীর দেহমনের ওপর পরিপূর্ণ কর্তৃত্ব স্থাপন করতে চায়।
নির্যাতনকারীর সঙ্গে ঘর করেও কী করে নিজের সুরক্ষা বাড়ানো যায়
সবসময়ে প্রয়োজনীয় ফোন নম্বরগুলো (যেমন, পুলিশ, হাসপাতাল, কয়েকজন বন্ধু, নারী সুরক্ষা সংস্থা, স্কুল ইত্যাদির) আপনার সঙ্গে রাখুন ও আপনার সন্তানদের দিন। এগুলি এমন জায়গায় রাখুন যা আপনার স্বামী বা জীবনসঙ্গী দেখতে না পান। যদি আপনার একটি মোবাইল ফোন থাকে তাহলে খুবই ভালো।
বিশ্বস্ত কাউকে জানান যে আপনি নির্যাতিত হচ্ছেন। কোনও সহৃদয় প্রতিবেশীর সঙ্গে অলোচনা করে একটা সংকেত ঠিক করুন। আপনাকে মারধোর করার সময় সেই সংকেত করলে, প্রতিবেশী বুঝতে পারবেন যে আপনাকে নির্যাতন করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে তিনি তৎক্ষণাৎ পুলিশে খবর দিতে পারবেন বা পাড়ার লোক জড়ো করে আপনাকে নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন।
আগে থেকেই তিন চারটে জায়গা স্থির করে রাখুন যেখানে দরকার হলে আপনি আত্মগোপন করতে পারেন, যাতে স্বামী বা জীবনসঙ্গী আপনাকে খুঁজে না পান। পালাবার কোন জায়গা যদি আপনার না থাকে তাহলে কতগুলো শেল্টার বা মহিলাদের জন্যে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ জেনে রাখুন। বাস্তুচ্যুত নারীদের থাকার আশ্রয় বা শেল্টারের একটি তালিকা অবসর ওয়বসাইটে রয়েছে।
যে সমস্ত নথিপত্র নিজের কাছে রাখতে চান, সেগুলি আগে থেকেই গুছিয়ে রাখুন।
নিজের নামে একটা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউণ্ট খুলুন। সেখানে যতটা পারেন টাকা জমাতে থাকুন। হাতের কাছে কিছু পয়সা সবসময়ে রাখবেন যাতে ফোনের খরচ বা বাস ভাড়া দিতে পারেন।
কখন, কি ভাবে পালাতে পারেন তার একটা খসড়া মনে মনে তৈরি করে রাখুন। এ ব্যাপারে দু একবার মহড়া দিয়ে রাখুন যাতে বিশেষ দরকারের সময় সহজে পালাতে পারেন।
সুরক্ষার জন্য যে প্ল্যানটি করেছেন তা মাঝে মাঝে যাচাই করবেন। অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তা বদলান।
যদি ঠিক করে ফেলেন যে আপনি স্বামী বা জীবনসঙ্গীকে ছেড়ে চলে যাবেন, তাহলে কি কি নথিপত্র বা জিনিষ সঙ্গে নেওয়া প্রয়োজনীয়:
টাকাপয়সা, চেকবই, ব্যাঙ্কের পাসবই, ভল্ট থাকলে তার চাবি ও কাগজপত্র, ক্রেডিট কার্ড থাকলে সেটি, র্যাশন কার্ড, বিয়ের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, প্যান কার্ড, বার্থ সার্টিফিকেট, ড্রাইভার্স লাইসেন্স, বাড়ীর চাবি, পাসপোর্ট, কোর্টের কাগজপত্র, স্কুল কলেজের সার্টিফিকেট, বাড়ির দলিলপত্র, ইনসিওরেন্সের কাগজ, পুলিশে ডায়েরী করা হয়ে থাকলে তার নম্বর বা এফ.আই.আর-এর নম্বর, দরকারি ওষুধপত্র, জামাকাপড়। এছাড়া সন্তানের প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র সঙ্গে নিতে ভুলবেন না।
তালিকাটি লম্বা এবং এর মধ্যে অনেক কিছু আপনার না থাকতে পারে বা সব কিছু আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নাও হতে পারে। কিন্তু যে নথিপত্র আপনার আছে তা সঙ্গে নেবেন।
কিছু নারী অধিকার সংক্রান্ত সংস্থা
নারী নির্যাতন প্রতিরোধ মঞ্চ
২৯/১ এ ওল্ড বালিগঞ্জ সেকেণ্ড লেন
কলকাতা ৭০০ ০১৯
সংহিতা
৮৯বি রাজা বসন্ত রায় রোড
কলকাতা ৭০০ ০২৯
(টেলি) ২৪৯৯-০৭৩৯, ৪০০০-৪৭৩০
উইমেনস ইণ্টারলিঙ্ক ফাউণ্ডেশন
২১/১ ওল্ড বালিগঞ্জ সেকেণ্ড লেন
কোলকাতা ৭০০ ০১৯
(টেলি) ২২৮১-৫৫০৮/৫৫০৭
দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি (যৌনকর্মীদের সহায়ক সংস্থা)
১২/৫ নীলমণি স্ট্রীট
কলকাতা ৭০০ ০০৬
(টেলি) ২৫৪৩/৭৫৬০/৭৪৫১, ২৬৩০-৩১৪৮/৬৬১৯
সচেতনা
৩১ মহানর্বাণ রোড
ক লকাতা ৭০০ ০২৯
(টেলি) ২৪৬৩-৪৪৮৫
স্বয়ম
৯/২ বি দেওদার স্ট্রিট
কলকাতা ৭০০০১৯
(টেলি) ২৪৮৬-৩৩৬৯/৩৩৭৮/৩৩৫৭
সংলাপ
৩৮ বি মহানির্বাণ রোড
কলকাতা ৭০০ ০২৯
(টেলি) ২৪৬৪-৯৫৯৬।
উইমেনস গ্রিভান্স সেল (সরকারী সংস্থা)
১৮ লালবাজার স্ট্রিট
কলকাতা ৭০০ ০০১
(টেলি) ২২১৪-৫০৪৯/১৪২৯
ওয়েস্ট বেঙ্গল কমিশন ফর উইমেন
১০ রেইনি পার্ক
কলকাতা
(টেলি)২৪৮৬-৫৩২৪/৫৬০৮,৫৬০৯
ইনস্টিট্যুট অফ সোশাল ওয়ার্ক
২৯বি চেতলা রোড
কলকাতা ৭০০ ০২৭
(টেলি) ২৪৭৯-৬৬০৭
সরোজ নলিনী দত্ত মেমোরিয়াল অzাসোসিয়েশন
২৩/১ বালিগঞ্জ স্টেশন রোড
কলকাতা ৭০০ ০১৯
(টেলি) ২৪৪০-৬৮৫২
টালিগঞ্জ উইমেন ইন নীড
৮ সি ড রাধাগোবিন্দনাথ সরণি
কলকাতা ৭০০ ০৩৩
(টেলি) ২৪১৭-৬১৬৪
এই সংস্থাগুলি বিভিন্ন ভাবে নির্যাতিত মহিলাদের সাহায্য করে। কাউন্সেলিং ছাড়াও এরা আইনী সাহায্য
দিয়ে থাকে।
১(সূত্র: অবসর ওয়েবসাইট)
২০০৯ সালে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের অনুদানে শমীতা দাশ দাশগুপ্তের সম্পাদনায় 'মানবী' ও 'সংলাপ'-এর যৌথ উদ্যোগে 'আমার স্বাস্থ্য, আমার সত্তা' বইটি প্রকাশিত হয়। অনুবাদে সহযোগিতা করেন সুজন দাশগুপ্ত ও অলোক গোস্বামী, আলোকচিত্রে সুবীণ দাশ ও চিত্রাঙ্কনে সাগরিকা দত্ত । ১৫০০ কপি ছাপা হয়েছিল বিভিন্ন এনজিও-র মাধ্যমে বিনামূল্যে বিতরণের জন্যে, এখন এটি দুষ্প্রাপ্য। বইটিতে অবসর-এ পূর্ব-প্রকাশিত কিছু কিছু লেখাও অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। বইটি প্রকাশ করার অনুমতি আমরা পেয়েছি। এর আগে মেয়েদের যৌন স্বাস্থ্য বিষয়ক অলোচনার একাংশ প্রকাশিত হয়েছিল। গত কয়েকটি সংখ্যা থেকে পুরো বইটাই ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হচ্ছে।
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
অবসর-এর
লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য
অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।