প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

পুরনো দিনের বই - মহাস্থবির জাতক

প্রেমাঙ্কুর আতর্থীর জন্ম ১৮৯০ সালে, মৃত্যু চুয়াত্তর বছর বয়সে ১৯৬৪-তে। কলেজে পড়ার সুযোগ ওঁর হয় নি। ছেলেবেলায় বাড়ি থেকে পালিয়ে মুম্বাইয়ে যান। ফিরে এসে কলকাতার চৌরঙ্গীতে একটি খেলার দোকানে কাজ নেন। সাংবাদিক-জীবনের শুরু হিন্দুস্থান পত্রিকায়। পরে বিভিন্ন সময়ে বৈকালী, নাচঘর ও জাþবী পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বেতার জগৎ পত্রিকার তিনিই ছিলেন প্রথম সম্পাদক।

বাংলা চলচ্চিত্র জগতে প্রেমাঙ্কুর তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। এ ব্যাপারে তিনি দক্ষতা অর্জন করেন লাহোরের একটি চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠানে। কলকাতার নিউ থিয়েটার্সের প্রথম সবাক ছবি 'দেনা পাওনা'র পরিচালক ছিলেন তিনি। ওঁর পরিচালিত অন্যান্য ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল 'ভারত-কী-বেটী', 'অবতার', 'চিরকুমার সভা', 'ইহুদী কী লেড়কী', প্রভৃতি। ওঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ 'আনারকলি', 'বাজীকর', 'চাষার মেয়ে', 'কল্পনা দেবী' এবং 'মহাস্থবির জাতক'। এদের মধ্যে 'মহাস্থবির জাতক' নিঃসন্দেহে ওঁর শ্রেষ্ঠ কীর্তি।

'মহাস্থবির জাতক'-এর প্রথম খণ্ডের ভূমিকায় 'মহাস্থবির' (প্রেমাঙ্কুর আতর্থী) লিখেছিলেন: "মানুষের জীবনের কাহিনীই সব-চাইতে বিচিত্র উপন্যাস - উপন্যাসের ঘটনা ও চরিত্রের জন্য আশা করি কারও কাছে কোনও জবাবাদিহিতে পড়তে হবে না"। চার-খণ্ডের সম্পূর্ণ বইটি লিখে ও বলে শেষ করতে ওঁর লেগেছিল কুড়ি বছর। চতুর্থ খণ্ড প্রকাশিত হয় প্রেমাঙ্কুর আতর্থীর মৃত্যুর পরে। এই খণ্ডটি লেখার সময়ে তিনি প্রায় দশ বছর শয্যাশায়ী ছিলেন। কবি উমা দেবীকে মুখে মুখে বলতেন, আর তিনি সেগুলো লিপিবদ্ধ করতেন। চতুর্থ পর্ব-এর নিবেদনে উমা দেবী লিখেছিলেন: "মহাস্থবির জাতকের প্রথম পর্ব যখন লেখা হচ্ছিল, তখন একদিন কথা প্রসঙ্গে (প্রেমাঙ্কুর আতর্থী) বলেছিলেন, যে, পঁচিশ বছর বয়স পর্যন্ত সময়ের কথাই তিনি লিপিবদ্ধ করবেন। কিন্তু কিছুদিন পরেই তিনি সে ইচ্ছে ত্যাগ করেন।"

'মহাস্থবির জাতক' স্থবির-এর জীবনের গল্প। স্থবিরের জীবনের নানান ঘটনার সঙ্গে তার অসীম সাহসী বাবা মহাদেবের কাহিনী প্রথম খণ্ডের অনেকাংশই জুড়ে আছে। শিবনাথ শাস্ত্রীর শিষ্য স্থবিরের বাবা মহাদেব ছিলেন অত্যন্ত আদর্শবাদী। কঠোর হাতে ছেলেদের তিনি শাসন করতেন। অকুতোভয় মহাদেব একটি বিধবা মেয়েকে দুজন আততায়ীর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য খালি হাতে তাদের সঙ্গে যুঝেছিলেন - তার বিস্তৃত বিবরণ বইটিতে রয়েছে। বাস্তব জীবনে প্রেমাঙ্কুরের আদর্শবাদী শাসন-প্রিয় ব্রাহ্ম পিতা মহেশচন্দ্র দুর্বৃত্তদের হাত থেকে মহিলাদের রক্ষা করতে গিয়ে আহত হয়েছিলেন। বইটিতে রয়েছে স্থবিরের একাধিক বার বাড়ি ছেড়ে পালানোর কাহিনী - প্রথম বার পনেরো বছর বয়সে এক নিäফল প্রেমের পরে; তবে মুম্বাইয়ে নয় - কাশীতে।

ঘটনাবহুল মহাস্থবির জাতক-এ বহু চরিত্র একের পর এক এসেছে। রম্যরস, ঘটনাবৈচিত্র্য ও রোমাঞ্চপূর্ণ চারখণ্ডের এই বইটি একবার পড়তে শুরু করলে শেষ না করে থাকা কঠিন। চতুর্থ খণ্ডের শেষে রয়েছে: "আজ সর্ব-সমক্ষে এই কথা বলে যেতে পারি যে প্রান্তরের গান আমার এই জাতকে আমি কোনও কৃত্রিম ঘরবাড়ি বসাই নি। মানুষকে দেখেছি, কিন্তু তাকে সাজাই নি। তার বিষ ও তার অমৃত দুই-ই দু'হাতে ভরে নিয়ে সর্বাঙ্গে লেপেছি। কোনও ছেঁদো-কথার জাল ফেলে উড়ন্ত-পাখির ডানা বাঁধতে চাই নি।"

নিঃসন্দেহে নিজের জীবনের অনেক ঘটনাই উনি এতে লিপিবদ্ধ করেছেন। তবে 'মহাস্থবির জাতক' কাল্পনিক চরিত্র স্থবিরের আত্মকথা না প্রেমাঙ্কুর আতর্থীর আত্মকথা - সত্যান্বেষী খুঁতখুঁতে পাঠকদের সে ব্যাপারে একটা সংশয় থেকে যাবে। কিন্তু তারজন্য সাহিত্যপাঠের আনন্দরস থেকে তাঁরা বঞ্চিত হবে না।

সুজন দাশগুপ্ত

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।