জৈব-জ্বালানী
ডঃ
রুডলফ্ ডিজেল,
ডিজেল ইঞ্জিন
এবং জৈব-জ্বালানী
১৮৯৫ খ্রীষ্টাব্দে ডিজেল ইঞ্জিন আবিষ্কার করলেন ডঃ রুডলফ্ ডিজেল।
নানা রকমের জ্বালানী দ্বারা এই ইঞ্জিন চালনো যাবে, এটাই তাঁর
সদিচ্ছা ছিল। ১৯১১ খ্রী-তে তিনি বলেছিলেন, "ডিজেল ইঞ্জিনকে
চালানো যাবে উদ্ভিজ জ্বালানী দ্বারা এবং ফলে বিভিন্ন রাজ্য যারা
এটা ব্যবহার করবে সেখানে কুষিতে উন্নয়ন হবে "। ১৯১২ খ্রী-তে
তিনি বললেন, "আজ ইঞ্জিনের জ্বালানী হিসাবে উদ্ভিজ তেলের
ব্যবহার অতীব সামান্য। কিন্তু, একদিন আসবে যখন এই তেল বর্তমানের
পেট্রোলিয়াম এবং কয়লা- টার (Coal Tar) থেকে উত্পন্ন তেলের মতই
গুরুত্বপূর্ণ হবে "।
১৯০০ খ্রীষ্টাব্দে রুডলফ
ডিজেল প্যারী-তে বিশ্বপ্রদর্শনীতে তাঁর ইঞ্জিন দেখালেন যেটা
বাদাম (peanut) তেলে চলে। পেটেণ্ট করা এই ইঞ্জিন চলতো গ্যাসোলিন
থেকে মটর-তেল, সকল রকম জ্বালানীতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হেনরি
ফোর্ড ১৯০৩ থেকে ১৯২৬ খ্রী-র মধ্যে ডিজাইন করেন এমন জ্বালানী
পদ্ধতি (fuel system) এবং নির্মাণ করেন 'ফোর্ড মোটর গাড়ী T',
যা পুরোপুরি উদ্ভিজ তেল দ্বারা চালানো হয়েছিল।
১৯১৩ খ্রীষ্টাব্দে ফ্রান্স
থেকে ইংল্যাণ্ডে পাড়ি দেবার সময়ে ডঃ ডিজেল অকস্মাত্ নিরুদ্দিষ্ট
হন। তিনি সেই সময়ে ইংল্যাণ্ডের সাবমেরিনে ডিজেল ইঞ্জিন বসানোর
বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছিলেন। ফরাসী সাবমেরিনে তার আগে, ১৯০৫
খ্রী-তে, ডিজেল ইঞ্জিন বসানো হয়ে গেছে। [কথিত আছে, ফরাসীরা তাঁকে
হত্যা করেন, কারণ তারা চাননি ইংল্যাণ্ডে সাবমেরিনে ডিজেল ইঞ্জিন
বসুক। ]
ডঃ ডিজেলের ভবিষ্যত্বাণীর
মূল্য আজ বিশ্ববাসী বুঝতে পারছেন। অবশ্য, ডিজেলের সময়েই ইঞ্জিনকে
তত্কালীন সব থেকে সস্তা জ্বালানী, পেট্রোলিয়াম, ব্যবহারের উপযোগী
করে ৫রপান্তর করা হয়েছিল। তাঁর অকস্মাত্ প্রয়াণের পর পেট্রোলিয়াম
শিল্প ডিজেলের নামকে পুঁজি করে ফেললো গ্যাসোলিন-পাতনের একটি
উপজাত দ্রব্যের নাম 'ডিজেল জ্বালানী' রেখে। সেই থেকে 'সস্তা'
এবং 'নোংরা' ডিজেল জ্বালানী হয়ে উঠল ডিজেল ইঞ্জিনের জ্বালানী,
আর ডঃ ডিজেলের মূল প্রস্তাবিত জৈব-জ্বালানীর কথা লোকে ভুলে গেল।
ডঃ ডিজেল
তাঁর আবিষ্কারের বিশ্বব্যাপী প্রয়োগ দেখে যেতে পারেননি। বস্তুতঃ
উদ্ভিজ-জ্বালানীর প্রতি কোনও বিশেষ নজর পরবর্তী পাঁচ-সাড়ে পাঁচ
দশকে দেওয়া হয়নি কারণ অসংস্কৃত (crude) তেলের মূল্য ছিল কম।
১৯৭০ খ্রীষ্টাব্দের পরে তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে তেল-আমদানীকারী
রাগ্ষ্ট্রগুলির তাগিদে উদ্ভিজ তেলের ব্যবহারে গবেষণা শুরু হল।
ঐ সময়ে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করলেন কি ভাবে সহজ রাসায়নিক প্রক্রিয়ায়
উদ্ভিজ-তেলের সান্দ্রতা (viscosity) কমানো যায়। এর ফলে আধুনিক
ডিজেল ইঞ্জিনকে উদ্ভিজ-জ্বালানীতে চালানো সহজ হল; এই জ্বালানীর
নাম দেওয়া হল 'জৈবডিজেল' বা 'বায়োডিজেল' (BioDisel)|
শঙ্কর
সেন