বিশ্বে
কারবন-নিঃসরণ কমানোর কাজে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
কি নেতৃত্বের পথে
?
২০০৭
থেকে ২০১১- এই চার বৎসরে মাঃ. যুক্তরাষ্ট্রে
কয়লা ব্যবহার থেকে কারবন-নিঃসরণ কমেছে ১০
শতাংশ। একই সময়ে তেলের ব্যবহার থেকে নিঃসরণ
কমেছে ১১ শতাংশ, কিন্তু প্রাকৃতিক গ্যাসের
ব্যবহার নিঃসরণ বাড়িয়েছে ৬ শতাংশ। সব মিলিয়ে
দাড়াচ্ছে নিঃসরণ কমেছে ৭ শতাংশ চার বৎসরে।
মনে হচ্ছে- এই শুরু।
কিয়োটো
প্রোটোকলের (যার শেষ আগামী বৎসর- ২০১২ খ্রী-তে)
পর যে কটা বিশ্ব সম্মেলন হয়েছে তার কোনটাই
সাফল্যের মুখ দেখেনি শিল্পোন্নত এবং উন্নয়নশীল
দেশগুলির মধ্যে মতানৈক্যের ফলে। বিশ্ববাসী
হতাশ হয়েছিল। কিন্তু আমেরিকাবাসীরা বুঝেছিলেন
যে রাষ্ট্রপ্রধানরা বিফল হলেও তাদের একটা
নৈতিক কর্তব্য আছে। ফলে, একটা আন্দোলন গড়ে
উঠেছে কয়লা-চালিত নূতন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের
বিরুদ্ধে। একটি সারা রাজ্যব্যাপী জনমত সমীক্ষায়
৯৭- শতাংশ মার্কিন-বাসী কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ-কেন্দ্রের
বিপক্ষে রায় দিয়েছেন। তাঁরা বুঝেছেন, কয়লা-চালিত
কেন্দ্রের নিঃসরণই শ্বাসপ্রশ্বাস-জনিত রোগের
জন্য ( বিশেষতঃ শিশুদের মধ্যে ) দায়ী। তাঁরা
দেখছেন গড়ে প্রতি বৎসরে ১৩,২০০ মার্কিনবাসীর
মৃত্যু হচ্ছে কারবন-নিঃসরণের জন্য ( যা
বিগত দশ বৎসরের ইরাক ও আফগানিস্তানের যুদ্ধে
হত মার্কিন সৈন্যের সংখ্যার থেকে বেশী )
।
আন্দোলনের দ্বিতীয় ধাপে বর্তমানের চালু
কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলি বন্ধ করার দাবী
উঠেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আছে ৪৯২টি
কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র যার মধ্যে ৬৮টি বন্ধ
করার সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছে। মার্কিন পরিবেশীয়
সংরক্ষণ সংস্থার (U.S. Environmental Protection
Agency ) বায়ু গুণমান রক্ষার নিয়মাবলী,
বিশেষতঃ পারদ, গন্ধক এবং ওজোন নিঃসরণ-বিষয়ে,
রক্ষা করতে হলে আরও কিছু পুরানো কেন্দ্র
বন্ধ করতে হবে।
গত
আগস্ট, ২০১১-তে দেশের সর্বপেক্ষা গৌরবময়
অর্থনৈতিক পত্রিকা (The American Economic
Review )-এ বলা হয়েছে যে, কয়লা পোড়ানো থেকে
বায়ুদূষণ জনিত অর্থনৈতিক ক্ষতি কয়লা-বিদ্যুৎকেন্দ্রে
উৎপাদিত বিদ্যুৎ-এর মূল্য থেকে অনেক বেশি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিবিষয়ক ডিপার্টমেণ্টের
মতানুসারে গার্হস্থ্য-বিদ্যুতের চাহিদা
৫ শতাংশ কমবে বর্তমান দশকে। ২০০৭ খ্রী-র
'শক্তি-স্বাধিনতা ও প্রভূতি আইন (Energy
Independence and Security Act) অনুযায়ী
২০১২ খ্রী-র জানুয়ারি মাস থেকে বাজারে ১০০-ওয়াট
ভাস্বর দীপ (Incandescent lamp) থাকবে না
; জানুয়ারি ২০১৪ থেকে ৭৫-, ৬০- এবং ৪০-ওয়াটের
ভাস্বর দীপ শেলফ থেকে বিদায় নেবে। এগুলি
CFL ও LED বাতি দিয়ে পুনঃস্থপিত হলে গার্হস্থ্য-বিদ্যুতের
প্রয়োজন কমে যাবে ৮০ শতাংশ।
একদিকে
কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ-কেন্দ্রগুলি বন্ধ হচ্ছে
বা হবে, অন্যদিকে বায়ু, সৌর এবং ভূতাপীয়
বিদ্যুৎ উৎপাদন তাদের স্থান পূরণ করবে।
গত চার বছরে ৪০০-টি বায়ু-কেন্দ্রে (মোট
উৎপাদন ক্ষমতা ২৭,০০০ মেগা-ওয়াট) উৎপাদন
চালু হয়েছে, যার দ্বারা ৮ মিলিয়ন বসতবাড়ী
আলোকিত হবে। আরও প্রায় ৩০০,০০০ মেগা-ওয়াট
গ্রিড-সংযোগের অপেক্ষায়।
টেক্সাস,
যা বহুকাল থেকে তৈল-উৎপাদনের জন্য খ্যাত,
এখন বায়ু-বিদ্যুতে প্রথম। তার পরেই আছে
ক্যালিফর্নিয়া, মিনেসোটা, ও ইলিনয়। পশ্চিম
টেক্সাস থেকে মধ্য ও পূব টেক্সাস পর্যন্ত
বিদ্যুৎ-পরিবহন লাইন সমাপ্তির অপেক্ষায়-
এটা শেষ হলেই রাজ্যের বিদ্যুৎ- ব্যবস্থার
উন্নতি হবে নাটকীয়ভাবে।
সৌর-বিদ্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২২,০০০
মেগা-ওয়াটের মতো বিদ্যুৎ ব্যবহারের অপেক্ষায়।
এই হিসাবের মধ্যে গার্হস্থ্য-প্রয়োজন ধরা
হয়নি।
কয়লা-চালিত
বিদ্যুৎকেন্দ্র গুলি বন্ধ হয়ে গেলে পরোক্ষে
প্রাকৃতিক তেল-এর ব্যবহার কমে যাবে কারণ
বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় কয়লার
আনুমানিক ৪০ শতাংশ বহন করে ডিজেল-চালিত
রেল-ব্যবস্থা। এর প্রয়োজন থাকবে না। অবশ্য
যুক্তরাস্ট্রে তেল-এর প্রয়োজন কিছুটা কমেছে
গত চার বছরে- কিছুটা নূতন মোটর গাড়ীর উন্নত
'কার্যদক্ষ' জ্বালানির জন্য, কিছুটা গাড়ীর
সংখ্যা কমে যাওয়ার জন্য।
আমেরিকায় মোট গাড়ীর সংখ্যা ২৫০ মিলিয়নে
'শীর্ষস্থানে' পৌঁছেছে বলে মনে করা হেচ্ছ
২০০৮ খ্রী-তে ; এখন যত নূতন গাড়ী বিক্রী
হচ্ছে তার চাইতে গাড়ী বাতিল হওয়ার সংখ্যা
বেশি। তা' ছাড়া, নিম্নগামী অর্থনৈতিক কারণে
যুবসম্প্রদায়ের মধ্যে তত আসক্তি দেখা যাচ্ছে
না। আর উন্নত প্রযুক্তির কল্যাণে গাড়ীর
জ্বালানী-কার্যদক্ষতা বেড়ে যাচ্ছে ক্রমাগত
; নূতন 'ম্যাণ্ডেট' অনুযায়ী ২০২৫ খ্রী-থেকে
যেসব নূতন গাড়ী বিক্রয় হবে সেগুলি ২০১০
খ্রী-র চাইতে অর্ধেক পরিমাণ গ্যাসোলিন ব্যবহার
করবে।
গ্যাসোলিনের
ক্রমবর্ধমান মূল্যের জন্য এবং চলমান অর্থনৈতিক
মন্দার জন্য নিজস্ব গাড়ীর ব্যবহারও কমে
গেছে অর্থাৎ প্রতি গাড়ী কম মাইল ভ্রমণ করছে
; মানুষ 'পাবলিক যানবাহন ' ও বাইসাইকেলের
দিকে ঝুঁকছে। অনেক শহরেই, যেমন, ওয়াশিংটন
ডি. সি., শিকাগো এবং নিউ ইয়র্ক-এ এখন বাইসাইকেলের
জন্য আলাদা 'র্ট্যাক' এবং পথপার্শ্বে 'পার্কিং
র্যাক'-এর ব্যবস্থা হয়েছে এবং হচ্ছে।
'প্লাগ-যুক্ত সংকর' (পলগে-নে হযয়রদে) এবং
পুরো ইলেক্ট্রিক মোটর গাড়ী বাজারে এলে গ্যাসোলিনকে
সরিয়ে দেবে বিদ্যুৎ। হারভার্ড-এর অধ্যাপক
মাইকেল ম্যাকএলমি দেখিয়েছেন যে বায়ু থেকে
উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যবহার করার মূল্যমান
হবে গ্যালন-প্রতি গ্যাসলিনের মূল্য ৮০ সেণ্ট-এর
সমান।
কয়লা-চালিত
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলি যতই বন্ধ হচ্ছে, কারবন-নিঃসরণ
ততই কমছে ; সঙ্গে কমছে তেলের ব্যবহার। এর
সঙ্গে ঊর্ধগামী প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য
কখনই পাল্লা দিতে পারবে না ; ফলে আমেরিকায়
কারবন-নিঃসরণ কমবে ক্রমাগত।
আমরা এখন এমন একটি অবস্থায় রয়েছি যেখানে
দাঁড়িয়ে বলা যায় যে ২০০৭ খ্রী-তে ৭-শতাংশ
কম কারবন-নিঃসরণ ২০২০ খ্রী-তে গিয়ে দাঁড়াবে
২০ শতাংশে ; এমনকি ৩০ শতাংশও হতে পারে।
তা'হলে বলা যায় কারবন-নিঃসরণ কমানো এবং
আবহাওয়া-সুস্থিতির কাজে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে।
নভেম্বর
০২, ২০১১ লেস্টর আর. ব্রাউন (Lester M.
Brown)
আর্থ পলিসি ইনস্টিটুট (Earth Policy Institute)
www.earth-policy.org/plan_b_updates/2011/update101
ভাবানুবাদ : শঙ্কর সেন