প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

ডেনমার্কের পরিক্রমা- স্বল্প-কারবন, শক্তি-দক্ষ অর্থনীতির পথে

বিশ্ব-জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং নবোত্থিত রাষ্ট্রগুলির অর্থনীতির সম্প্রসারণ-এর ফলশ্রুতি হিসাবে অপরিহার্য আগামী কয়েক দশকের শক্তি- উত্পাদন ও ব্যবহারের প্রতিযোগিতা। এই কারণে বিশ্বের পরিমেয় তেল-সহ অন্যান্য জ্বালানির ( যা' মাত্র কয়েকটি রাজনৈতিকভাবে অস্থির রাষ্ট্রের হাতে আছে ) মূল্য অবশ্যম্ভাবী ভাবে বৃদ্ধির পথে। আন্তর্জাতিক শক্তি এজেন্সীর (International Energy Agency) হিসাব-অনুসারে বিশ্বের শক্তি-চাহিদা ২০৩৫ খ্রী নাগাদ বৃদ্ধি পাবে ৩৪ শতাংশ।
ডেনমার্ক-এ আমরা স্থির করেছি, এই শক্তি-প্রতিযোগিতায় থাকবো না। আমরা চলবো 'সবুজ' অর্থনীতির পথে, যেখানে আছে অফুরন্ত পরিরক্ষিত শক্তির উত্স। আমাদের সরকার ঘোষণা করেছে যে, আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে আমরা সম্পূর্ণভাবে জীবাশ্ম-জ্বালানির আওতা থেকে মুক্ত হবো পুনর্নবীকরণ শক্তি উত্স-ব্যবহারের মাধ্যমে। এর জন্য মাস কয়েক আগে ঘোষিত হয়েছে 'শক্তি- তত্পরতা ২০৫০ (Energy Strategy 2050) - বিশ্বে এই প্রথম।

ডেনমার্ক-এর শক্তি-চাহিদা ও ব্যবহার পর্যায়।

১৯৭৩: ডেনমার্কের শক্তি-প্রয়োজন -এর ৯৫ শতাংশ মেটানো হয়েছে আমদানী-কৃত তেল থেকে।
১৯৮৫: বিদ্যুত্ ও তাপশক্তি এসেছে কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে। বর্ধিত শক্তি- সক্ষমতাবা। উত্তর-সমুদ্রের তেল ও গ্যাস ব্যবহার।
২০১১: সু-উচ্চ শক্তি-সক্ষমতা। পুনর্নবীকরণ শক্তি-উত্স ব্যবহার বাড়ানো। নীট শক্তি রপ্তানী।
২০৫০: ডেনমার্ক- জীবাশ্ম-জ্বালানি মুক্ত।
স্বল্প-কারবন ও শক্তি-দক্ষ অর্থনীতির পথে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছে কয়েক দশক আগে যখন ১৯৭০ খ্রী-র তৈল-সংকট হল। আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে শক্তি-মডেল পাল্টানোর জন্য সচেষ্ট হলাম। শুরু করলাম "গাড়ী-মুক্ত রবিবার" পালনের এবং গ্যাসের মূল্য-বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে।

শক্তি-প্রয়োজন মেটাতে ১৯৭৩ সালে আমাদের প্রয়োজনীয়-তেলের প্রায় ৯৫ শতাংশ বিদেশ থেকে আমদানী করতে হত। তখন থেকেই এই পর-নির্ভরতাকে ভাঙতে আমরা জোর দিলাম (শিল্প ও গৃহস্থ- দুটিতেই) শক্তি-দক্ষতা বাড়াতে ও শক্তি- বিষয়ে মিতব্যয়ী হতে। পাশাপাশি, নিজস্ব তেল ও গ্যাস প্রসন্ধান-এ জোর দেওয়া এবং পুনর্নবিকরণ শক্তি উত্স ব্যবহারে অর্থলগ্নী করা হল। ফলে, আজ ডেনমার্ক ইওরোপের শক্তি-দক্ষ রাষ্ট্রগুলির অন্যতম এবং নীট-শক্তি রপ্তানিকারক। আমরা তেল-এর ব্যবহার কমিয়ে শক্তির জন্য মোট ব্যবহারের ৪০-শতাংশ করেছি। মোট শক্তি- ব্যবহারের ২৩ শতাংশ এবং শুধু বিদ্যুত-ব্যবহারের ৩০-শতাংশ আসছে পুনর্নবিকরণ শক্তি-উত্স থেকে। ঐ শক্তির দু-তৃতীয়াংশ দিচ্ছে বায়ু-বিদ্যুত্।

গৌরবের বিষয়- প্রসঙ্গতঃ যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ বিষয়ে বিতর্ক চলছে- আমরা এইসব করতে পেরেছি অর্থনৈতিক বৃদ্ধি বজায় রেখে। ১৯৮০ সাল থেকে, ডেনমার্কের অর্থনীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে ৮০-শতাংশের মতন যখন শক্তি-ব্যবহার প্রায় সমতল (flat) এবং কারবন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমে যচ্ছে। একটি শক্ত-সমর্থ বিশ্ব-প্রতিযোগিতামূলক শক্তি-দক্ষতা ও পরিরক্ষিত শক্তি-শিল্প সম্পাদনে আমরা ব্রতী।

WWF-এর একটি রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে যে ডেনমার্ক বিশ্বের 'পরিচ্ছন্ন শিল্প-সংস্থা' গুলি থেকে তার GDP-র ৩.৪-শতাংশ জাতীয় আয় রক্ষা করতে পেরেছে, যা বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম। তুলনায়, চীনদেশের স্থান দ্বিতীয়- ১.৩ শতাংশে। আমাদের রপ্তানীর ১৩-শতাংশ আসছে 'পরিচ্ছন্ন-শিল্প' থেকে ; বায়ু-টারবাইনে ডেনমার্ক বিশ্বের নেতৃত্বে এবং Vestas একাই বিশ্ব-বাজারের ১২ শতাংশের অংশীদার।

প্রান্তীয় ব্যবহারের বিষয়ে, আমরা দৃঢ়ভাবে গৃহ ও যন্ত্রপাতিগুলির শক্তি-দক্ষতার আদর্শ (standard) নিরূপণ করেছি, গার্হস্থ্যকর্মে মিতব্যায়িতা রক্ষার উপর এবং শক্তি -ব্যবহারে ট্যাক্স-বিষয়ে ( যা পরিবেশ সংক্রান্ত সব রকমের খরচাপাতি বহন করে ) জনসাধারণকে জ্ঞাত ও শিক্ষিত করার প্রচার চালাচ্ছি।
উত্পাদনের বিষয়ে, বিদ্যুত্ ও তাপীয়-সহ-উত্পাদন-যন্ত্র (CHP) ব্যবহার করে ৩০-শতাংশ জ্বালানি-ব্যয় কম্রছে। ডেনমার্কের মোট বিদ্যুত্-উত্পাদনের ৫৩-শতাংশ ব্যবহার করে নিঃসরণ-খর্বীকরণ-ক্ষমতাসহ CHP।

অস্ট্রিয়া-র মত আমাদের সাফল্যের পিছনে রয়েছে স্বতন্ত্র জনসমাজ (individual community)-এর যোগদান। উদাহরণ-স্বরূপ উল্লেখ করা যায় সামসো (Samsoe)-র ৬১,০০০ অধিবাসীর কথা। দিনেমার-সরকারের পুনর্নবীকরণ-শক্তি-উত্পাদন বাড়ানো এবং কারবন পদচিহ্ন কমানোর প্রোগ্রামে সারা দেয় কাছাকাছি আরও ৪-টি দ্বীপ নিয়ে সামসো -র জনসাধারণ, এবং সাফল্য লাভ করে। সামসো সম্পূর্ণ স্বনির্ভর হওয়ার খাতিরে প্রোগ্রামটি চালিয়ে যায় এবং অতিরিক্ত বায়ু-বিদ্যুত্ বাইরে বিক্রী করতে সমর্থ হয়। এ ছাড়া কারবন-নিঃসরণ ১৪০ শতাংশ কমাতে সক্ষম হয়। যেহেতু সামসো অন্যত্র পরিচ্ছন্ন-শক্তি বিক্রয় করতে সমর্থ, এর কারবন-নিঃসরণ বস্তুতঃ ঋণাত্মক (Negative) ।

চিত্র: সামসো ও তার শক্তি-উত্স।

সামসো-র মডেলের সাফল্যের পিছনে রয়েছে জনগণের দৃঢ় যোগদান এবং স্থানীয় মালিকানা। এখন অজস্র পরিদর্শক আসছে বিশ্বের এই পরিরক্ষিত-শক্তির শো-কেশ (showcase) দেখতে। কিন্তু আমাদের যাত্রা মোটেই শেষ হয়নি। সরকারের নূতন শক্তি-স্ট্র্যাটেজি নিয়ে আমাদের এগোতে হবে।

২০৫০-খ্রী পর্যন্ত পথপরিক্রমায় আমাদের প্রথম সীমানা ২০২০ খ্রী, যার মধ্যে জীবাশ্ম-জ্বালানির ব্যবহার ২০০৯ খ্রী-র তুলনায় ৩৩-শতাংশ কমাতে হবে ; পাশাপাশি বাড়াতে হবে পুনর্নবীকরণ শক্তি উত্পাদন ( মোট শক্তি ব্যবহারের ৩৩-শতাংশ এবং বিদ্যুতে ৬২-শতাংশ )।

সরকার নানারকমের কৃত্কৌশল ব্যবহার করবে বিদ্যুত্ ও তাপীয় শক্তি উত্পাদনে যথা, বায়ু-শক্তি, বায়োমাস এবং বায়োগ্যাস। এছাড়া নূতন পুনর্নবীকরণ শক্তি-উত্স সন্ধানে ব্রতী হবে। যথা, কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে বায়োমাসে ছব*-র জ্বালানি পরিবর্তন একটি প্রোগ্রাম। এর জন্য সবরকমের সুবিধা, ব্যুরোক্র্যাটিক-স্তরে, সরকার দেবে।

যানবাহন-ক্ষেত্রে আমরা পুরোপুরি জীবাশ্ম-জ্বালানির উপর নির্ভর- মোট ব্যবহারের এক-তৃতীয়াংশ। আগামী দশকগুলিতে এর একটা মৌলিক পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে। উন্নত কৃত্কৌশল ও উন্মীলিত বাজার ভবিষ্যতে আশাকরি সুবিধা আনবে।

প্রকৃতপক্ষে, ডেনমাকের এই প্রচেষ্টা জয়ের পক্ষে। আমরা যতই ভবিষ্যতকে শক্তি-স্বাধীনতা দিতে পারবো, ততই আমরা মুক্ত হবো বিশ্বের সদা-বর্ধিত শক্তি-মূল্যের হাত থেকে। আমাদের প্রচেষ্টা সপ্রমাণ করছে বিশ্ব-সংগতির প্রতি এবং আবহাওয়া- পরিবর্তনের প্রতি আমাদের দায়িত্ব। সঙ্গে আছে আমাদের নিজগৃহে নূতন এবং নব- প্রবর্তনীয় কৃত্কৌশলের ব্যবহার ও বৈদেশিক বাজারে 'স্মার্ট শক্তি সমাধানে' ডেনমার্কের পদার্পন। যদিও সরকারের এই স্ট্র্যাটেজি সম্পূর্ণভাবে লগ্নীকৃত, ব্যবহারকারীদের কিছু বাড়তি মূল্য দিতে হবে। তবে সেটাকে ভবিষ্যতের জ্বালানি-মূল্যের বৃদ্ধির বিরুদ্ধে একটা পারিতোষিক হিসাবে দেখা যেতে পারে।

Anders Østervang,
First Secretary, Economic Affairs, Danish Embassy
Climate and Energy Revolt
13 May, 2011

অনুবাদ: শঙ্কর সেন

 

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।