স্বল্প-কারবন
ও শক্তি-দক্ষ অর্থনীতির পথে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছে কয়েক
দশক আগে যখন ১৯৭০ খ্রী-র তৈল-সংকট হল। আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে
শক্তি-মডেল পাল্টানোর জন্য সচেষ্ট হলাম। শুরু করলাম "গাড়ী-মুক্ত
রবিবার" পালনের এবং গ্যাসের মূল্য-বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে।
শক্তি-প্রয়োজন মেটাতে
১৯৭৩ সালে আমাদের প্রয়োজনীয়-তেলের প্রায় ৯৫ শতাংশ বিদেশ
থেকে আমদানী করতে হত। তখন থেকেই এই পর-নির্ভরতাকে ভাঙতে
আমরা জোর দিলাম (শিল্প ও গৃহস্থ- দুটিতেই) শক্তি-দক্ষতা
বাড়াতে ও শক্তি- বিষয়ে মিতব্যয়ী হতে। পাশাপাশি, নিজস্ব
তেল ও গ্যাস প্রসন্ধান-এ জোর দেওয়া এবং পুনর্নবিকরণ শক্তি
উত্স ব্যবহারে অর্থলগ্নী করা হল। ফলে, আজ ডেনমার্ক ইওরোপের
শক্তি-দক্ষ রাষ্ট্রগুলির অন্যতম এবং নীট-শক্তি রপ্তানিকারক।
আমরা তেল-এর ব্যবহার কমিয়ে শক্তির জন্য মোট ব্যবহারের
৪০-শতাংশ করেছি। মোট শক্তি- ব্যবহারের ২৩ শতাংশ এবং শুধু
বিদ্যুত-ব্যবহারের ৩০-শতাংশ আসছে পুনর্নবিকরণ শক্তি-উত্স
থেকে। ঐ শক্তির দু-তৃতীয়াংশ দিচ্ছে বায়ু-বিদ্যুত্।
গৌরবের বিষয়- প্রসঙ্গতঃ
যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ বিষয়ে বিতর্ক চলছে- আমরা
এইসব করতে পেরেছি অর্থনৈতিক বৃদ্ধি বজায় রেখে। ১৯৮০ সাল
থেকে, ডেনমার্কের অর্থনীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে ৮০-শতাংশের মতন
যখন শক্তি-ব্যবহার প্রায় সমতল (flat) এবং কারবন-ডাই-অক্সাইড
নিঃসরণ কমে যচ্ছে। একটি শক্ত-সমর্থ বিশ্ব-প্রতিযোগিতামূলক
শক্তি-দক্ষতা ও পরিরক্ষিত শক্তি-শিল্প সম্পাদনে আমরা ব্রতী।
WWF-এর একটি রিপোর্টে
দেখা যাচ্ছে যে ডেনমার্ক বিশ্বের 'পরিচ্ছন্ন শিল্প-সংস্থা'
গুলি থেকে তার GDP-র ৩.৪-শতাংশ জাতীয় আয় রক্ষা করতে পেরেছে,
যা বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম। তুলনায়, চীনদেশের স্থান দ্বিতীয়-
১.৩ শতাংশে। আমাদের রপ্তানীর ১৩-শতাংশ আসছে 'পরিচ্ছন্ন-শিল্প'
থেকে ; বায়ু-টারবাইনে ডেনমার্ক বিশ্বের নেতৃত্বে এবং Vestas
একাই বিশ্ব-বাজারের ১২ শতাংশের অংশীদার।
প্রান্তীয় ব্যবহারের
বিষয়ে, আমরা দৃঢ়ভাবে গৃহ ও যন্ত্রপাতিগুলির শক্তি-দক্ষতার
আদর্শ (standard) নিরূপণ করেছি, গার্হস্থ্যকর্মে মিতব্যায়িতা
রক্ষার উপর এবং শক্তি -ব্যবহারে ট্যাক্স-বিষয়ে ( যা পরিবেশ
সংক্রান্ত সব রকমের খরচাপাতি বহন করে ) জনসাধারণকে জ্ঞাত
ও শিক্ষিত করার প্রচার চালাচ্ছি।
উত্পাদনের বিষয়ে, বিদ্যুত্ ও তাপীয়-সহ-উত্পাদন-যন্ত্র
(CHP) ব্যবহার করে ৩০-শতাংশ জ্বালানি-ব্যয় কম্রছে। ডেনমার্কের
মোট বিদ্যুত্-উত্পাদনের ৫৩-শতাংশ ব্যবহার করে নিঃসরণ-খর্বীকরণ-ক্ষমতাসহ
CHP।
অস্ট্রিয়া-র মত আমাদের
সাফল্যের পিছনে রয়েছে স্বতন্ত্র জনসমাজ (individual community)-এর
যোগদান। উদাহরণ-স্বরূপ উল্লেখ করা যায় সামসো (Samsoe)-র
৬১,০০০ অধিবাসীর কথা। দিনেমার-সরকারের পুনর্নবীকরণ-শক্তি-উত্পাদন
বাড়ানো এবং কারবন পদচিহ্ন কমানোর প্রোগ্রামে সারা দেয়
কাছাকাছি আরও ৪-টি দ্বীপ নিয়ে সামসো -র জনসাধারণ, এবং
সাফল্য লাভ করে। সামসো সম্পূর্ণ স্বনির্ভর হওয়ার খাতিরে
প্রোগ্রামটি চালিয়ে যায় এবং অতিরিক্ত বায়ু-বিদ্যুত্ বাইরে
বিক্রী করতে সমর্থ হয়। এ ছাড়া কারবন-নিঃসরণ ১৪০ শতাংশ
কমাতে সক্ষম হয়। যেহেতু সামসো অন্যত্র পরিচ্ছন্ন-শক্তি
বিক্রয় করতে সমর্থ, এর কারবন-নিঃসরণ বস্তুতঃ ঋণাত্মক (Negative) ।
চিত্র:
সামসো ও তার শক্তি-উত্স।
সামসো-র মডেলের
সাফল্যের পিছনে রয়েছে জনগণের দৃঢ় যোগদান এবং স্থানীয় মালিকানা।
এখন অজস্র পরিদর্শক আসছে বিশ্বের এই পরিরক্ষিত-শক্তির
শো-কেশ (showcase) দেখতে। কিন্তু আমাদের যাত্রা মোটেই
শেষ হয়নি। সরকারের নূতন শক্তি-স্ট্র্যাটেজি নিয়ে আমাদের
এগোতে হবে।
২০৫০-খ্রী পর্যন্ত
পথপরিক্রমায় আমাদের প্রথম সীমানা ২০২০ খ্রী, যার মধ্যে
জীবাশ্ম-জ্বালানির ব্যবহার ২০০৯ খ্রী-র তুলনায় ৩৩-শতাংশ
কমাতে হবে ; পাশাপাশি বাড়াতে হবে পুনর্নবীকরণ শক্তি উত্পাদন
( মোট শক্তি ব্যবহারের ৩৩-শতাংশ এবং বিদ্যুতে ৬২-শতাংশ
)।
সরকার নানারকমের
কৃত্কৌশল ব্যবহার করবে বিদ্যুত্ ও তাপীয় শক্তি উত্পাদনে
যথা, বায়ু-শক্তি, বায়োমাস এবং বায়োগ্যাস। এছাড়া নূতন পুনর্নবীকরণ
শক্তি-উত্স সন্ধানে ব্রতী হবে। যথা, কয়লা ও প্রাকৃতিক
গ্যাস থেকে বায়োমাসে ছব*-র জ্বালানি পরিবর্তন একটি প্রোগ্রাম।
এর জন্য সবরকমের সুবিধা, ব্যুরোক্র্যাটিক-স্তরে, সরকার
দেবে।
যানবাহন-ক্ষেত্রে
আমরা পুরোপুরি জীবাশ্ম-জ্বালানির উপর নির্ভর- মোট ব্যবহারের
এক-তৃতীয়াংশ। আগামী দশকগুলিতে এর একটা মৌলিক পরিবর্তনের
প্রয়োজন আছে। উন্নত কৃত্কৌশল ও উন্মীলিত বাজার ভবিষ্যতে
আশাকরি সুবিধা আনবে।
প্রকৃতপক্ষে, ডেনমাকের
এই প্রচেষ্টা জয়ের পক্ষে। আমরা যতই ভবিষ্যতকে শক্তি-স্বাধীনতা
দিতে পারবো, ততই আমরা মুক্ত হবো বিশ্বের সদা-বর্ধিত শক্তি-মূল্যের
হাত থেকে। আমাদের প্রচেষ্টা সপ্রমাণ করছে বিশ্ব-সংগতির
প্রতি এবং আবহাওয়া- পরিবর্তনের প্রতি আমাদের দায়িত্ব।
সঙ্গে আছে আমাদের নিজগৃহে নূতন এবং নব- প্রবর্তনীয় কৃত্কৌশলের
ব্যবহার ও বৈদেশিক বাজারে 'স্মার্ট শক্তি সমাধানে' ডেনমার্কের
পদার্পন। যদিও সরকারের এই স্ট্র্যাটেজি সম্পূর্ণভাবে লগ্নীকৃত,
ব্যবহারকারীদের কিছু বাড়তি মূল্য দিতে হবে। তবে সেটাকে
ভবিষ্যতের জ্বালানি-মূল্যের বৃদ্ধির বিরুদ্ধে একটা পারিতোষিক
হিসাবে দেখা যেতে পারে।
Anders Østervang,
First Secretary, Economic Affairs, Danish Embassy
Climate and Energy Revolt
13 May, 2011
অনুবাদ:
শঙ্কর সেন