সংলাপ
৩৮ বি মহানির্বাণ রোড
কলকাতা ৭০০০২৯
ইমেইল
sanlaap@rediffmail.com ওয়েবসাইট
www.sanlaapindia.org


পরিমার্জনা, প্রকাশন
ও সংরক্ষণ -
অবসর
তথ্য ও বিনোদনের
বাংলা ওয়েবসাই


 


 

পাচারের কয়েকটি বাস্তবচিত্র:



বাংলাদেশী মেয়ের বাড়ী ফিরে যাওয়া

১৪ বছরের রহিমা কুষ্টিয়া থেকে চলে আসে কাজের আশায়| দালালরা তাকে বিক্রী করে লালবাতি এলাকায়| পুলিশ তাকে উদ্ধার করে| রহিমা এখন বাড়ী ফিরে যেতে চায়|


যা করণীয়:

যত্ন ও সুরক্ষার জন্য রহিমাকে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির (CWC) সম্মুখে হাজির করতে হবে (১৮ উর্দ্ধ হলে হবে না)|

রহিমার বর্তমান অবস্থা ও বাড়ীর ঠিকানা বাংলাদেশ সরকারকে জানাতে হবে (বাংলাদেশ দূতাবাস ও বাংলাদেশী এন জি ও'র মাধ্যমে)|

বাংলাদেশ সরকারের ফিরিয়ে নেওয়ার অনুমতি আসার পর রাজ্য সরকার এবং CWC কে জানিয়ে তাদের অনুমতি নিতে হবে|

ঐ অনুমতি পাবার পর বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানাতে হবে

দূতাবাসের সম্মতি পেলে BSF- কে জানাতে হবে এবং তারা ফিরে যাবার দিন, সময় ও সীমানা বলে দেবে|

দিন ও সীমানা বাংলাদেশ সরকারকে জানাতে হবে|

নির্ধারিত দিনে নির্ধারিত সীমানায় BSF, BDR, Immigration- এর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার রহিমাকে তাদের দেশে ফিরিয়ে নেবে| বাংলাদেশী এন জি ওর সীমান্তে থাকা প্রয়োজন|

যতদিন সে বাড়ী না ফিরে যায় ততদিন তাকে J.J.act- এর আওতায় হোমে রাখতে হবে| তার চিকিত্‌সা ও মন:সামাজিক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে|

তার পরিবার সম্পর্কে জানতে হবে|

যদি IPC-র কোন ধারায় ঐ দালাল বা বাড়ীওয়ালীদের বিরুদ্ধে কোন মামলা চালু থাকে, তবে বাড়ী ফিরে যাওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট আদালতের অনুমতি নিতে হবে|


যা করা যাবে না:

রহিমাকে কখনোই আসামী হিসাবে গণ্য করা যাবে না|

কোনোভাবেই তাকে Foreigners act-এ ধারা ১৪-র আওতায় আনা যাবে না|



শাকিলার কাহিনী:

১৫ বছরের মেয়ে শাকিলা| ঢাকার খুব কাছাকাছি ময়মনসিংহ, সাঁত গাঁ-এ তার বাড়ি| শাকিলার বাবা ক্ষেত মজুরের কাজ করেন, মা বাড়িতেই গুড় বানান| তিন ভাই, দুই বোন নিয়ে শাকিলা বেশ খুশীতে আছে| যদিও কেউ তাকে স্কুলে যাওয়ার কথা বলে নি- সে স্কুলে যায়ওনি| একদিন সে শুনল তার নিকা হবে| খুব একটা ভয় হয় নি - কারণ তার হবু স্বামী তার খুব পরিচিত| তার ফুফুর ছেলে| কিন্তু ভীষণ একটা রোমাঞ্চ যে, সে তাকে বিয়ে করে তার শ্ব্শুরবাড়ী ভারতে নিয়ে যাবে - সে দেশ বিশাল, মাঝে মাঝে T.V-.তে সে ঝলক দেখে|

বিয়ে হয়ে যায়| শাকিলা চলে আসে ভারতে - কলকাতায়, কিন্তু এ জায়গা তার বড় অচেনা, শুধু মেয়েরা, কিন্তু এরকম জামাকাপড় পরে আছে কে?ন এই পোষাক তো সেই পোষাক যা তার বাবা/মা ছোটবেলায় কিনে দিত| অসম্ভব বিচ্ছিরি গন্ধ, কেউ স্বাভাবিক ভাবে হাঁটে না, দাঁড়াতে পারে না| তার স্বামী, তার শ্বশুর, শ্বাশুড়ী তাকে বাইরে যেতে নিষেধ করেছে, শাকিলা ধীরে ধীরে বুঝেছে তার স্বাধীনতা নেই হঠাত্‌ একদিন তার শ্বাশুড়ী সেই রকম অচেনা পোশাক নিয়ে তাকে পরতে বলে এবং সাজতে বলে| শাকিলা লজ্‌জা পেয়ে মুদু প্রতিবাদ করলে তার গালে পড়ে চড়| সেই সঙ্গে কিছু অজানা মানুষ আসে শাকিলার কাছে| সেই শুরু এবং সেই থেকে প্রতিদিন চলতে থাকে যৌন নির্যাতন| প্রতিবাদ করার ক্ষমতা বা ভাষা সে হারিয়ে ফেলেছে| অদ্ভুতভাবে এখন তার নাম 'মনিমা'| সে যে শাকিলা তার গ্রাম, ভাই, বোন সবই তার এখন স্মৃতি|

এরকম অবস্থায় হঠাত্‌ একদিন দুপুরবেলা কিছু উর্দিপরা মানুষ হা রে রে করে ঢুকে এল, শাকিলা এবং আরও মেয়েদের একটা বড় গাড়িতে তোলা হল, বেশ কিছু মহিলা শাকিলার শ্বাশুড়িকেও গাড়িতে তুললো| তার শ্বাশুড়ি চোখ রাঙিয়ে তাকে 'পুলিশে'র কাছে কিছু বলতে নিষেধ করে| কিন্তু কি হল শাকিলার ? গাড়ির মধ্যে সবার কান্না, সবাই চিত্‌কার করে বলছে 'বাড়ী যাব঑, কিন্তু শাকিলা সেদিন অনেকদিন পর দেখল মুক্ত আকাশ| অসম্ভব কিছু করবে বলে সে পুলিশের কাছে সব বলে দিল| একটাই আশা যে আবার তার সেই বাংলাদেশ গ্রামে ফিরে যেতে পারবে| কিন্তু কি হল? তাকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হল যেখানে কিছু কালো কোটপরা মানুষ অবোধ্য কিছু ভাষায় কিছু বলল তারপর সে আর একটি নতুন জায়গায় গেল নতুন দরজার ভিতরে|

সেখানে আবার অন্য একটি পরিবেশ| সেখানে সে কিছু আস্বাস-এর কথা শুনতে পেল| সে বাড়ী যেতে পারবে| সে ঠিকানা দিল| এর মধ্যেই দুটো ঘটনা শুনল একটা খুন দু:খের, একটা খুব আনন্দের| দু:খের খবর তার শ্বশুর ও শাশুড়ি, স্বামী নাকি জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে, সুখের ঘটনা তার বাবা সুদূর বাংলাদেশ থেকে এসেছে তাকে নিয়ে যেতে| কিন্তু অনুমতি পাওয়া গেল না- কারণ সে অভিযোগ করছে তার শ্বশুরবাড়ীর বিরুদ্ধে, তার নাকি তদন্ত হচ্ছে- আর যতদিন তা না শেষ হবে সে নাকি বাড়ী যেতে পারবে না| এখন শাকিলা প্রায় ১৯ বছরের| আজও সে কোর্টে যায়, কিছু বুঝতে না পারলেও একটা জিনিষ বোঝে যে, যাদের বিরুদ্ধে তার অভিযোগ তারা আসছে না বলে তদন্ত এগোচ্ছে না| সে প্রতিদিন হতাশা নিয়ে ফেরত্‌ আসে কোর্ট থেকে থেকে, শুধু নিয়ে ফেরে 'তারিখ঑|



রীনার জীবন:

নদীয়ার চপড়ার ১৪ বছরের মেয়ে রীণা| রীণার বাবা দিনে ভাল থাকে, দিন মজুরের কাজ করে; কিন্তু সন্ধ্যে হলেই শুরু হয় তার মদ খাওয়া আর চিত্‌কার চেঁচামেচি| রীণার আর তার ভাই বোনদের সেই পরিবেশ ভাল লাগে না| মদের পিছনে সমস্ত পয়সা চলে যাওয়ায় অর্ধেক দিন তারা থাকে অভুক্ত| সংসার আর চলে না| এরকম অবস্থায় তার বাবার এক বন্ধু রীণার জন্য কলকাতা শহরে একটা বাড়ীর কাজ-এর খবর নিয়ে এল| বাবা রাজী হয়ে যায়, মা-এর মুদু আপত্তি থাকলেও বাবার কারণে সে আপত্তি টেকে নি| রীণারও মনে হয় যদি কলকাতায় যায় তাহলে সে এই অস্বস্তিকর পরিবেশ থেকে অন্যত্র যেতে পারবে এবং কিছু পয়সাও পাবে| কাকুর সাথে সে ট্রেনে করে চলে আসে কলকাতায়| একটা বাড়িতে সে রাত কাটায়| পরদিন সকালে তার কাকুর সাথে আসে এক অচেনা মহিলা| সেই নাকি রীণাকে নিয়ে যাবে তার কাজের জায়গায়| সেই মহিলাকে বেশ ভাল লাগে রীণার| অনেক মনের কথা তাদের আদানপ্রদান হয় - মাসী আশ্বাস দেয় তাকে বাড়ীর ঝামেলায় যেতে হবে না - মাসে মাসে মাসীই ব্যবস্থা করবে তার উপার্জনের কিছু টাকা তার মাকে পাঠানোর, বাকী টাকা তার নামে জমা থাকবে| বেশ ভাল লাগে রীণার| মাসী এও বলে কাজটা টিকিয়ে রাখতে হলে তাকে কাজটাকে মানিয়ে নিতে হবে| সন্ধ্যেবেলা মাসী রীণাকে নিয়ে রওনা দেয় তার কাজের বাড়ীতে| জায়গাটার নাম শুনল 'খিদিরপুর'| ছোট ছোট গলি, ছোট্ট ছোট্ট ঘর, মেয়েরা সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে - কিরকম ছোট ছোট জামাপরা, ভাল লাগে না| মাসী একটা ঘরে তাকে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়| খেতেও দেয়, রীণা ঘুমিয়ে পড়ে| পরদিন রীণা সকালে উঠে মাসীকে জিজ্ঞাসা করে, কি কাজ করবে? মাসী বলে কাজ সন্ধ্যেবেলা| রীণা বুঝতে পারে না| সন্ধ্যে এলে সে বুঝতে পারে 'কাজ'টা কি? প্রতিদিন যৌন নির্যাতন| রীণা কি এই কাজ চেয়ে
ছিল?

Copyright © 2007 Abasar.net. All rights reserved.