
জীবশ্ম-জ্বালানির প্রকৃত মূল্য নির্ধারণের
খেলায় চাতুরী চল্ছে অনেকদিন- আমরা যুক্ত করিনা
পরিবেশ ও স্বাস্থ্য-জনিত মূল্যগুলি । তার
উপর ভরতুকি দিয়ে খেলাটিতে আরও কৌশল করা হচ্ছে
। Global Subsidies Initiative এবং International
Energy Agency-র রক্ষণশীল এস্টিমেট থেকে জানা
যাচ্ছে যে ২০১১ খ্রী-তে বিশ্বে জীবাশ্ম-জ্বালানি-ভরতুকিতে
খরচ হয়েছে ৬২০ বিলিয়ন মাঃ. ডলার- উত্পাদনে
১০০ বিলিয়নের মতো, ব্যবহারে ৫২৩ বিলিয়ন ।
এটা ২০১০- এর থেকে ২০ শতাংশ বেশি, তেলের বিশ্বমূল্য
বেশি হওয়ার কারণে । শক্তি ব্যবহারের ৫২৩ বিলিয়নের
মধ্যে ২৮৫ গিয়েছে তেল-এ, ১০৪ বিলিয়ন প্রাকৃতিক
গ্যাসে এবং ৩ বিলিয়ন ডলার কয়লায় । বাকী ১২৩
বিলিয়ন তিন জ্বালানি শক্তি-উত্সের মধ্যে
ভাগ হয়েছে বিশেষতঃ বিদ্যুত্ ব্যবহারের জন্য
। এই ভরতুকির মধ্য দিয়ে বিভিন্ন সরকার জীবাশ্ম-শক্তি
উত্স ব্যবহারে জনসাধারণের দেয় অর্থের পরিমাণ
কমিয়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ, যার ফলশ্রুতি অপচয়কে
উত্সাহদান এবং তাপমানকে সুস্থিত করার প্রয়াসে
বাধার সৃষ্টি করা ।
সবকটি
রাষ্ট্রের মধ্যে ইরান খরচ করেছে সব থেকে বেশি
৮২ বিলিয়ন ডলার, যা' ঐ রাষ্ট্রের জি-ডি-পি-র
১৭ শতাংশ । এর অর্ধেক গেছে তেল-এ । বিশ্ব-বাজারের
মূল্য থেকে মোটর-জ্বালানির মূল্য কম রেখে
তেহরান কি পেল ?- রাস্তাগুলিতে সীমাহীন জ্যাম
ও শ্বাসরোধকারী বায়ু দূষণ । শক্তি-রপ্তানির
অন্যদুই বড় রাষ্ট্র সৌদি আরব ও রাশিয়া ভরতুকিতে
ব্যয় করেছে যথাক্রমে ৬১ বিলিয়ন ( প্রায় পুরোটাই
তেল-এর জন্য ) ও ৪০ বিলিয়ন মাঃ. ডলার ( প্রাকৃতিক
গ্যাস ও বিদ্যুতে ভাগাভাগি করে ) । ভারত খরচা
করেছে ৪০ বিলিয়নের মতো ( প্রায় ৮০ শতাংশ বেশি
২০১০-এর তুলনায় ) আর চীন ৩১ বিলিয়ন ( প্রায়
সবটাই তেলের জন্য ) ।
জনপ্রতি
ব্যবহারের ক্ষেত্রে তালিকার শীর্ষে রয়েছে
মধ্য-প্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলি । ২০১১-তে ইউনাইটেড
আরব এমিরেটা্স জীবাশ্ম-জ্বালানি ব্যবহারে
ভরতুকিতে খরচ করেছে বিশাল ৪,২০০ মাঃ. ডলার
জনপ্রতি ; কুয়ায়েত ও কাতার প্রত্যেকে জনপ্রতি
৩,৬০০ ডলারের বেশি । এদের প্রত্যেকেরই বিশের
জনপ্রতি কারবন- নিঃসরণের অখ্যাতির তালিকায়
উপরেরদিকে অবস্থান ।
২০০৯
সালে G-20 রাষ্ট্রগুলি দায়বদ্ধ হয়েছিল ধাপে
ধাপে দূর করতে ' অক্য্যকরী জীবাশ্ম-জ্বালানি
ভরতুকি যা' অপচয়পূর্ণ ব্যবহারকে উত্সাহ
দেয় ' । কিন্তু তারা এবিষয়ে খুব একটা অগ্রসর
হয়নি । তেলের ক্রমবর্ধমান বিশ্ব-মূল্য বহু
রাষ্ট্র, যারা গ্যাসোলিন ও ডিজেল ব্যবহারে
ভরতুকি দিচ্ছে, তাদের বাজেটকে আঘাত করেছে,
যার ফলে কিছু রাষ্ট্র যথা, মরক্কো ও মেক্সিকো,
তাদের সাহায্য কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে । ডিসেম্বর
২০১০-এ ইরান একটি পাঁচ বত্সরের প্রোগ্রাম
নিল ভরতুকি কমাবার উদ্দেশ্যে । ফলে রাতারাতি
প্রায় চারগুণ হয়ে গেল গ্যাসোলিনের মূল্য ।
এই সংস্কার না হলে ইরানকে ২০১১ সালে আরও বেশি
ভরতুকি দিতে হত । অবশ্য বিশ্বের জীবাশ্ম-জ্বালানির
জন্য ভরতুকি ৬২৩ বিলিয়ন সঠিকভাবে দেখায় না
সাহায্যের মোট অঙ্ক, যেহেতু রাষ্ট্রদের বহন
করতে হয় আরও কিছু ব্যায় যথা, ট্যাক্স-ছাড়
এবং গবেষণা ও পরিকাঠামো উন্নয়নের ব্যায় ।
তুলনায় মাত্র ৮৮ বিলিয়ন মাঃ. ডলার দেওয়া হয়েছে
পুনর্নবীকরণ শক্তি উত্সের জন্য, যা' পাবে
উত্পাদকরা, যে অর্থ মোটামুটি সমানভাবে ভাগ
হবে সৌর ফোটোভোল্টাইক, বায়ু, বায়োমাস-বিদ্যুত্
এবং বায়ো-জ্বালানি ( ইথানল ও জৈব-ডিজেলে )
। ভরতুকির পাল্লা যে জীবাশ্ম-জ্বালানির দিকে
ভারী সেটা সহজেই বোঝা যাচ্ছে ।
IEA-র
হিসাবমতো যদি সমস্ত জীবাশ্ম-জ্বালানির ভরতুকি
ধাপে ধাপে তুলে নেওয়া হয় ২০২০ সালের মধ্যে,
কারবন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমে যাবে প্রায়
২ গিগাটন, যা' সমতুল হবে রাস্তা থেকে ৩৫০
মিলিয়ন মোটর গাড়ী তুলে নেওয়া । জীবাশ্ম-জ্বালানি-কোম্পানিগুলির
কোনও প্রয়োজন নেই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ভরতুকি
; ২০১২ সালে পাঁচটি বড় কোম্পানি- Royal Dutch
Shell, ExxonMobi, BP, Chevron এবং CONOCOPhilips-
মিলে ১৩৭ বিলিয়ন ডলার লাভ করেছে ।
নোংরা জ্বালানি থেকে সব রকমের ভরতুকি তুলে
নিয়ে পরিচ্ছন্ন সবুজ শক্তি ( যথা, বায়ু, সৌর
ও ভূতাপীয় )-তে নিয়োগ করলে ত্বরান্বিত হবে
বিশ্বের এক নূতন ও চিরস্থায়ী শক্তি-ইকোনমিতে
পৌঁছাতে ।
ফেব্রুয়ারি
২৭, ২০১৩ Emily E. Adams
www.earth-policy.org/data_highlights/2013/highlights36
অনুবাদক : শঙ্কর সেন
শঙ্কর
সেন
( চলবে
)