প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

পরিপূর্ণ গ্রহ, কিন্তু থালা শূন্য- খাদ্যাভাবে নূতন ভূমি-রাজনীতি


চতুর্থ অধ্যায় :
খাদ্য না জ্বালানি ?

১৯৭০ খ্রীষ্টাব্দে যখন আরব দেশের তৈল রপ্তানী বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল, তেল আমদানীকারক দেশগুলি খোঁজ করতে শুরু করল তেলের বিকল্পের কথা। কিছু দেশের কাছে যথা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইওরোপের কিছু ও ব্রাজিলের কাছে ফসল থেকে গাড়ীর জন্য জ্বালানি বিষয়টি অর্থবহ মনে হল।

বিশ্ব-ইতিহাসে এই হল বিপর্যয়ের শুরু। ব্রাজিল সফল হল একটি ক্রান্তীয় উদ্ভিদ আখ, থেকে ইথানল জ্বালানি প্রস্তুত করতে। বিশ্বের বাকী দেশগুলিকে শঙ্কায়িত করে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে জ্বালানির রসদ হল শস্যদানা(corn)| ১৯৮০ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে ইথানল জ্বালানির জন্য শস্যদানার বাড়ল ১ মিলিয়ন থেকে ৪১ মিলিয়ন টনে।
তার পরেই আগষ্ট ২০০৫ সালে এল হারিকেন কাট্রিনা, যা লণ্ডভণ্ড করে দিল উপসাগরীয় দেশগুলির দ্বারা প্রতিষ্ঠিত পরিশোধনাগারগুলি এবং গ্যাসোলিন পাইপলাইনগুলিকে। মাঃ. যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসোলিনের মূল্য এক ধাক্কায় বেড়ে হল গ্যালনে ৩ ডলার ; ২ ডলার বুশেলের শস্যদানা যার থেকে ২.৮ গ্যালন ইথানল তৈরী হতে পারে, সেটা হয়ে গেল অত্যন্ত লাভজনক।

ফলশ্রুতি হল অর্থসংগ্রহ ও পাতনযন্ত্র নির্মাণের জন্য হুড়োহুড়ি। নভেম্বর ২০০৫ থেকে জুন ২০০৬ সালের মধ্যে প্রতি নয় দিনে একটি নূতন ইথানল প্লাণ্ট নির্মাণ হতে লাগল মাঃ. যুক্তরাস্ট্রে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর নির্মাণকে ত্বরান্বিত করা হল প্রতি পাঁচদিনে একটি প্লাণ্ট, অক্টোবর ২০০৬-এ তা' হল প্রতি তিনদিনে একটি। ২০০৫ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে গাড়ীর জ্বালানির জন্য শস্যদানার ব্যবহার বেড়ে গেল ৪১ মিলিয়ন থেকে ১২৭ মিলিয়নে- যুক্তরাষ্টের মোট ফসল উৎপাদনের এক-তৃতীয়াংশ। এখন যুক্তরাষ্ট্র চেষ্টা করছে কিছু তৈলভূমি(oilfield )-কে শস্যদানা-ভূমিতে রূপান্তর করার, গাড়ীর জ্বালানির প্রয়োজনে। গাড়ীর জ্বালানির জন্য শস্যদানার বিশাল ব্যবহার খাদ্যের মূল্যকে এমন বাড়িয়ে দিল যার ফলে পৃথিবীর সর্বত্র অল্প আয়ের গ্রাহকরা এমন বিপদে পড়লো যা' ইতিহাসে কখনও আগে হযনি। মধ্য-২০১২ খ্রী-তে বিশ্বে গম, ভুট্টা ও সয়াবীনের মূল্য দ্বিগুণে পৌঁছে গেল।

গাড়ীর ক্ষুধা যেন তৃপ্ত হবার নয়। রেসের গাড়ীর ২৫ গ্যালনের জ্বালানি- ট্যাঙ্ক একবার ভর্তি করতে যত ইথানলের প্রয়োজন হয় তা' দিয়ে একজন মানুষের এক বছরের খাদ্যের সংস্থান হয়ে যায়। মাঃ. যুক্তরাস্ট্রে ২০১১ খ্রীতে যত শস্যদানার প্রয়োজন হয়েছে ইথানল প্রস্তুত করতে, তা' দিয়ে সারা বিশ্বের ৪০০ মিলিয়ন মানুষের খাদ্য সংস্থান হয়ে যেত গড় খাদ্য-গ্রহণ হিসাবে। কিন্তু প্রতি বছরে যদি ইউ. এস. -এর সমস্ত শস্যদানা ইথানলে রূপান্তরিত করা যায়, এতে গাড়ীর বর্তমান জ্বালানির চাহিদার ১৮-শতাংশ মিটবে। পাতন-ধারকত্বের কি বিশাল বৃদ্ধি ! মাঃ. যুক্তরাষ্ট্র ব্রাজিলকে খুব তাড়াতাড়ি পরাভূত করে বিশ্বের জৈব-জ্বালানিতে প্রথম স্থানে চলে এল।

২০১১ সালে মাঃ. যুক্তরাষ্ট্র উৎপাদন করল ১৪ বিলিয়ন গ্যালন ইথানল যখন ব্রাজিলের উৎপাদন ৬ বিলিয়নের কিছু কম ; যুগ্মভাবে দু'দেশ করল বিশ্বের মোট উৎপাদনের ৮৭-শতাংশ। ইউ.এস.-এর ১৪ বিলিয়ন গ্যালন শস্য-থেকে উৎপাদিত ইথানল ঐ দেশের মাত্র ৬-শতাংশ গ্যাসোলিনের চাহিদা মিটিয়েছে। খাদ্যের ফসল থেকে ইথানল প্রস্তুতকারী দেশগুলি হল চীন, কানাডা, ফ্রান্স ও জার্মানি।

ইথানল উৎপাদনে এই বৃদ্ধি হয়েছে গত কয়েক বছরে। ১৯৮০ সালে বিশ্বে খুব সামান্যই, মাত্র ১ বিলিয়ন গ্যালন ইথানল উৎপাদিত হয়েছিল। ২০০০ সালে সেটা গিয়ে দাঁড়াল ৪.৫ বিলিয়নে। এখনও বেড়ে চলেছে- ৮.২ বিলিয়ন ২০০৫ খ্রী-তে, তারপর থেকে ২০১১-তে উৎপাদন লাফিয়ে বাড়ল ২৩ বিলিয়ন গ্যালনে। মাঃ. যুক্তরাস্ট্র-সহ কিছু দেশ তৈলবাহিত শস্য থেকে জৈব-ডিজেল উৎপাদন করছে। বিশ্বে জৈব-ডিজেল উৎপাদন ১৯৯১ সালে সামান্য ৩ মিলিয়ন গ্যালন থেকে ২০০৫ সালে ১ বিলিয়নের কিছু কম হয়েছিল। পরবর্তী ৬ বছরে বাড়ল ছয়-গুণ, প্রায় ৬ বিলিয়ন গ্যালনে। তা' সত্ত্বেও বিশ্বে জৈব-ডিজেলের উৎপাদন ইথানলের এক-চতুর্থাংশের কম।

জৈব-ডিজেলের উৎপাদন ইথানলের থেকে বিভিন্ন দেশে অনেক বেশি সমভাবে বণ্টিত। উপরের প্রথম ৫-টি দেশ হল মাঃ. যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আর্জেণ্টিনা, ব্রাজিল ও ফ্রান্স- উৎপাদন হল প্রতি বছরে ৮৪০ মিলিয়ন গ্যালন মাঃ. যুক্তরাস্ট্র থেকে ফ্রান্সে ৪২০ মিলিয়ন গ্যালন।
জৈব-ডিজেল প্রস্তুত করতে নানা বিভিন্ন ফসল ব্যবহার হতে পারে। ইয়োরোপে সূর্যমুখীর বীজের তেল, পাম তেল এবং রেপসিড তেল হল অগ্রণী খাদ্য-তেল ; এর মধ্যে রেপসিড জৈব-ডিজেল উৎপাদনে ব্যবহার হয় বেশি। মাঃ. যুক্তরাস্ট্রে সয়াবীন হল খাদ্য এবং জৈব-ডিজেল- দুটোতেই ব্যবহার হয় বেশি। অন্যত্র, পাম তেল ব্যবহার হয় খাদ্য ও জৈব-ডিজেল উৎপাদনে।
যদিও ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলগুলিতে খাদ্য-তেলের অন্য ব্যবহার খুবই সীমাবদ্ধ, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে সয়াবীন ও রেপসিড থেকে জৈব-ডিজেল উৎপাদন প্রতি একরে হয় অনেক বেশি। তবে, একটা উৎকণ্ঠার কারণ হল পাম বৃক্ষের চাষ হচ্ছে ক্রান্তীয় বনসম্পদ ধ্বংস করে। জৈব-জ্বালানি উৎপাদনের কোনও জমি খাদ্য উৎপাদনের জন্য প্রাপ্তব্য নয়।

জৈব-জ্বালানি শুধু যে খাদ্যের মূল্য এবং পরোক্ষে ক্ষুধিতের সংখ্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে তা' নয়, শক্তির কার্যদক্ষতার হিসাবে এটি কোনও মতেই যুক্তিসঙ্গত নয়। যদিও ইথানল তৈরী হতে পারে অনেক উদ্ভিদ থেকে, চিনি ও শর্করা-জাতীয় উদ্ভিদ অনেক বেশি শস্তা। আবার এই ধরণের বিভিন্ন উদ্ভিদের মধ্যে কার্যদক্ষতা পাওয়া যায় বিভিন্ন রকমের। আখ থেকে ইথানল উৎপাদন হয় একরে ৬০০ গ্যালনের মত, শস্যদানার থেকে তিন-গুণ বেশি। এর একটি কারণ হল আখের ফলন হয় ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয অঞ্চলে সারা বছর ধরে। তুলনায়, ভুট্টার ফলন হল বছরে তিন মাসের মত।

শক্তি-কার্যদক্ষতা হিসাবে শস্যদানা থেকে ইথানল প্রস্তুত একটা পুরো ক্ষতি। আখের বেলায়, ইথানলে আকারিত (embodied) শক্তি হতে পারে জৈব-জ্বালানির শক্তির আটগুণ। তুলনায়, শস্যদানা থেকে উৎপাদিত ইথানলে শক্তি পাওয়া যাবে ১.৫ থেকে ১-এর মধ্যে। জৈব-ডিজেল উৎপাদনে পাম তেলের অনেক বেশি শক্তি-কার্যদক্ষতা, প্রায় নয়-গুণ। সয়াবীন ও রেপসিড থেকে জৈব-ডিজেল উৎপন্ন করলে শক্তির আগম (return) হয় প্রায় ২.৫ থেকে ১। জমির উৎপাদন ক্ষমতা বিচার করলে প্রতি একর পাম তেল উৎপাদন করে বছরে ৫০০ গ্যালন জ্বালানি- সয়াবীন ও রেপসিডের থেকে ছয় গুণ বেশি। আরও বেশি উৎপাদন পেতে গেলে হয় অন্য ফসলী জমি বা নূতন জমি অধিকার করতে হবে।

আরও বেশি শস্যদানাকে জ্বালানিতে রূপান্তর করার অর্থ হল শস্যদানার মূল্যকে তেলের মূল্যের সঙ্গে বেঁধে দেওয়া। যদি শস্যদানা থেকে জ্বালানির মূল্য তেলের থেকে কম হয়, তা'হলে শস্যদানা থেকে জ্বালানিতে রূপান্তরে লগ্নি বাড়বে। অতএব তেলের মূল্য ধরা যাক, ২০০ ডলার হল ব্যারেল-প্রতি, ইথানল পাতনযন্ত্রের জন্য আরও লগ্নীর প্রয়োজন হবে শস্যদানাকে জ্বালানিতে রূপান্তরের জন্য। যদি ভূট্টার মূল্য আরও বাড়ে, তখন পাতনের মূল্য আর লাভজনক থাকবে না।
বিশ্বের খাদ্য ও জ্বালানির অর্থনীতিকে একসূত্র বেঁধে দেওয়ার অর্থ হল বিশ্বের ১ বিলিয়ন মোটরগাড়ীর মালিকদের বিশ্বের সব থেকে দরিদ্র্য মানুষের সঙ্গে লড়াইয়ে নামা এক মুঠো শস্যের জন্য। কে জিতবে তা নির্ভর করবে পরষ্পরের আর্থিক অবস্থার উপর। যখন, মোটর গাড়ীর মালিকের বার্ষিক আয় হল ৩০,০০০ ডলারের উপরে, ২ বিলিয়ন দরিদ্রতম মানুষের মোট আয় হবে ২,০০০ ডলার।

খাদ্যের মূল্য-বৃদ্ধি যে কোনও সময় সামাজিক অস্থিরতার রূপ নিতে পারে। ২০০৭ খ্রী থেকে মধ্য-২০০৮ খ্রী-র মধ্যে যখন শস্য-মূল্য দ্বিগুণ হয়েছিল, তখন অনেক দেশেই প্রতিবাদ ও দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছিল। খাদ্য-মূল্যবৃদ্ধির মতন অর্থনৈতিক সমস্যা রূপ নেয় রাজনৈতিক সমস্যায় যা' অনেক দেশের সরকারের আয়ত্তাধীন থাকে না। ইউ.এস. স্বরাষ্ট্রদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে ৬০-টি দেশে খাদ্য-হাঙ্গামা হয়েছে, যার মধ্যে আছে আফগানিস্তান, ইয়েমেন, ইথিয়োপিয়া, সোমালিয়া, সুদান, কঙ্গো গনতান্ত্রিক রিপাবলিক ও হাইতি।
আন্তর্জাতিক খাদ্য-সাহায্য যোজনাগুলিও বর্ধিত খাদ্যমূল্যের দ্বারা গভীরভাবে বাধা প্রাপ্ত হয়। যেহেতু সাহায্যকারী সরকারগুলির বাজেট অনেক আগেই স্থির করা হয়, খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি সাহায্যের পরিমাণকে হ্রাস করে। রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশ্ব খাদ্য সাহায্য প্রোগ্রাম যেটা বিশ্বের ৬০-এর অধিক দেশকে সাহায্য করে থাকে, তার খাদ্য পাঠানোর প্রোগ্রামকে কেটে ছোট করে দেওয়া হয়। এদিকে অনাহার ও সংশ্লিষ্ট অসুখে ৭,০০০ শিশু মারা যাচ্ছে।

সরকারগুলি যখন খাদ্যের জন্য জৈব-জ্বালানি উৎপাদনে ভর্তুকী দেয়, তারা প্রকৃতপক্ষে আয়করদাতাদের অর্থ খরচ করে। মাঃ. যুক্তরাষ্ট্রে ইথানল জ্বালানি উৎপাদনে উৎসাহ দেওয়া হয় ট্যাক্স-ক্রেডিট মারফৎ- গ্যালন-প্রতি ইথানল যা গ্যাসোলিনের সঙ্গে মিশানো হয়। অবশ্য, এই ট্যাক্স-ক্রেডিট শেষ হয়ে গেছে ২০১১ খ্রী-তে। এর স্থানে চালু হয়েছে Renewable Fuel Standard যা' ইউ.এস.কৃষিদপ্তর মনে করে আমেরিকার গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য। এই হুকুমনামায় জৈব-জ্বালানিকে বাড়ানো হবে ৩৬ বিলিয়ন গ্যালন পর্যন্ত ২০২২ সালের মধ্যে। এর মধ্যে ১৬ বিলিয়ন গ্যালন আসবে সেলুলোজ খাদ্য-তৃণাদি যেমন, শস্য-ডাটা, ঘাস বা কাষ্ঠখণ্ড থেকে।
তবুও দৃশ্যমান ভবিষ্যতে সেলুলোজভিত্তিক জ্বালানির উপরোক্ত লেভেলে পৌঁছবর সুযোগ কম। চিনি বা শ্বেতসার যথা, ভূট্টা ও আখ থেকে ইথানল উৎপাদন হয় এক ধাপে ; অন্যদিকে সেলুলোজভিত্তিক বস্তু থেকে উৎপাদনে প্রয়োজন হয় দু'ধাপ- প্রথমে, বস্তুটিকে বিভক্ত করতে হবে চিনি বা শ্বেতসারে , তারপরে ইথানল। তা'ছাড়া, সেলুলোজ-বস্তু অনেক স্থুল, অন্যস্থান থেকে পাতনযন্ত্রে আনা ব্যয়সাপেক্ষ। এ ছাড়া, কৃষি-অবশেষ যথা, ভূট্টা-ডাটা ও গমের খড় মাঠ থেকে তুললে জমি হারায় প্রয়োজনীয় জৈব -খাদ্য।
এটি দুঃখজনকভাবে সত্য যে সেলুলোজ-জৈবজ্বালানির পথ জুড়ে আছে দেউলিয়া সংস্থাদের দ্বারা যারা কোনও অর্থৈতিকভাবে সফল প্রযুক্তি নির্মানে সক্ষম হয়নি।
অন্যদিকে ইয়োরোপীয় ইউনিয়নের নির্দেশনামা যার ফলে ২০২০ সালের মধ্যে পরিবহনক্ষেত্রে ১০ শতাংশ জৈব-শক্তি ব্যবহার বাধ্যতামূলক, সেটা মনে হয় উচ্চাভিলাষ। আন্তর্জাতিক কৃষি-ব্যবসায়ীদের কাছে এটি একটি বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে আরও জমি দখল করার- বিশেষতঃ আফ্রিকায়, যেখানে জৈব-জ্বালানি উৎপাদিত হবে ইয়োরোপের জন্য। যেহেতু, ইয়োরোপের গাড়ীগুলিতে সাধারণতঃ ব্যবহার হয় ডিজেল তেল, লগ্নীকারীরা খুজছে পাম তেল এবং জাত্রোফা।

ইয়োরোপীয় ইউনিয়নের এই নির্দেশনামার বিরুদ্ধাচরণ করছে পরিবেশ-সংস্থাগুলি, the European Environment Agency এবং অন্য 'স্টেক- হোল্ডেররা'। জমি-দখলের ফলে হবে বনাঞ্চল-নিধন ও বাস্তুহারা মানুষ। তা'ছাড়া, জৈব-জ্বালানি কখনই প্রতিশ্রুত নির্মল আবহাওয়া এনে দিতে সক্ষম হবে না।
জৈব-জ্বালানির সমথকরা বলছেন যে, এর দ্বারা গ্রীণহাউস গ্যাস নিঃসরণ গ্যাসোলিন অপেক্ষা কম। এটা বহু বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চ্যালেঞ্জ করেছে। জার্মানির ম্যক্স প্লাঙ্ক ইন্সটিটুটের রসায়ন বিদ্যায় বিশেষজ্ঞ নোবেল পুরস্কার প্রাপক Paul Crutzen-এর রিপোর্ট অনুযায়ী জৈব-জ্বালানি উদ্ভিদ চাষ করতে যে নাইট্রোজেন সার ব্যবহার করা হয় তা' থেকে নির্গত ঒নাইট্রাস অক্সাইডও আবহাওয়াকে ঠাণ্ডা করার বদলে গরম করে।
Rice বিশ্ববিদ্যালয় একটি রিপোর্টে, যারা গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণ বিশেষভাবে পরীক্ষা করেছেন, বলছেন- ঒ এটা সংশয়ের সৃষ্টি করে যে জমির সঠিক ব্যবহার এবং নাইট্রাস অক্সাইড নিঃসরণ বিবেচনা করলে বর্তমানের জৈব-জ্বালানি উৎপাদন পরম্পরাগত গ্যাসোলিন অপেক্ষা কোনও বিশেষ হিতকর উৎকর্ষসাধন করে কি না। জৈব-জ্বালানি উৎপাদনে গ্রীনহাউস গ্যাসের উপকারিতার খাতিরে কোনও আইনগত ব্যবস্থা বাঞ্ছনীয় নয় ঒। জৈব-জ্বালানি উৎপাদনের জন্য মৃত্তিকা, জল এবং আবহাওয়ার উপরে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন U.S. National Academy of Sciences-ও।

খাদ্য না জ্বালানি- এই বিচার্য বিষয়ে একটি সুসংবাদ আছে। এপ্রিল, ২০১২ সালের শিল্প-রিপোর্টে জানাচ্ছে- ঒ বিশ্ব-ইথানল ইঞ্জিন গোলমাল করছে ঒|প্রতীয়মান হয়, ইউ.এস. ইথানল উৎপাদন ২০১১ খ্রী-তে শীর্ষে পৌঁছে গেছে এবং ২০১২-তে উৎপাদন ২-শতাংশ কম হবে। ২০১৩ খ্রী-তে আরও বেশি কমবার সম্ভাবনা যেহেতু তেলের মূল্য কমবে এবং ইউ.এস.মধ্য-প্রাচ্যে তাপ ও খরা শস্যমূল্যকে বাড়িয়ে দেবে। অনেক পাতনযন্ত্রে লাভের অংশ ২০১২ সালে শূণ্য হয়ে গেছে। জুলাই ২০১২ খ্রী-র প্রথমদিকে একটি তেল-কোম্পানী এবং মূখ্য ইথানল উৎপাদক, Valero Energy Corporation তাদের ১০-টি ইথানল পাতনযন্ত্রের দ্বিতীয়টিকে বসিয়ে দেবার কথা ঘোষণা করেছে। বেশ কিছু পাতনযন্ত্র বসিয়ে দেবার মুখে।
যদি ইথানল-নির্দেশনামা ধীরে ধীরে তুলে নেওয়া হয়, ইউ.এস. পাতন-শিল্পগুলি তাদের উৎপাদিত ইথানলের বাজার সম্বন্ধে আরও হতাশায় ভুগবে। তেল ও শস্যদানার ব্যাপক তেজি-মন্দ মূল্যের জন্য ইথানল উৎপাদন সব সময়ে লাভনীয় হতে নাও পারে।

এছাড়া, ইউ.এস.এ-তে গাড়ীর জ্বালানি-মূল্য ২০০৭ খ্রী-তে শীর্ষে পৌঁছে ২০১২ খ্রী-তে ১২-শতাংশ কমেছিল। শহরগুলিতে বসবাসকারী যুবকরা তাদের পিতামাতার মতন গাড়ী-ভক্ত নয় ; তারা গাড়ী- সংস্কৃতির অংশ নয়। এর থেকে বোঝা যায় কেন ইউ.এস.এ-তে গাড়ীর সংখ্যা এক শতাব্দী ধরে বৃদ্ধি পেয়ে ২০০৮ সালে শীর্ষ ২৫০ মিলিয়নে পৌঁছেছিল। এখন মনে হচ্ছে গাড়ীর সংখ্যা আরও কমবে।

আগস্ট, ২০১৩ লেষ্টার আর. ব্রাউন
(Lester R. Brown)
অনুবাদক : শঙ্কর সেন ।
Earth Policy Release
www.earth-policy.org/books/fpep/fpepch1


[ পরবর্তী প্রকাশ : পঞ্চম অধ্যায় : মৃত্তিকার অবক্ষয়ে অন্ধকার আমাদের ভবিষ্যৎ ]

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

 

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।