পরিপূর্ণ
গ্রহ, কিন্তু থালা শূন্য- খাদ্যাভাবে
নূতন ভূমি-রাজনীতি

সপ্তম অধ্যায় :
শস্য উৎপাদন পৌছতে শুরু করেছে অবর্ধিত অবস্থায়
কৃষির
উৎপাদনকাল থেকে শুরু করে মধ্য-বিংশ শতাব্দীর
কাল পর্যন্ত বিশ্বে শস্যদানার ফসল-তোলা পর্যন্ত
বৃদ্ধি এসেছে কৃষির ক্ষেত্র বাড়ানোর মধ্য
দিয়ে । জমির ফলন বৃদ্ধি ছিল অত্যন্ত মন্থর-
একটি প্রজন্মের মধ্যে বোঝা যেত । মাত্র বিগত
৬০ বা তার কাছাকাছি বৎসরের মধ্যে ফলনের বৃদ্ধি
কৃষি-এলাকার বিস্তারের থেকে ছাড়িয়ে গেছে ।
এই পরিবর্তনটা নাটকীয় । ১৯৫০ থেকে ১৯৭৩ সাল
পর্যন্ত বিশ্বের কৃষকরা শস্য-ফসলের উৎপাদনকে
দ্বিগুণ করেছে ফলন- বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে । অন্যভাবে
বললে, ২৩ বত্সরের বৃদ্ধি সমান-সমান হয়েছে
কৃষির শুরু থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত উৎপাদন-বৃদ্ধির
সঙ্গে । এই আকারগত সম্প্রসারণ সম্ভব হয়েছে
সার-বিজ্ঞানের ব্যবহার, সেচ, এবং উচ্চ-ফলনযুক্ত
বীজ, সঙ্গে রয়েছে বর্ধিত উৎপাদনের জন্য অর্থনৈতিক
প্রয়োজক(incentive )।
বর্ধিত শস্য-ফলনের কারণ হিসাবে প্রথমটি হল
প্রাকৃতিক, অন্যটি হল মনুষ্য-কৃত । প্রাকৃতিক
কারণগুলির মধ্যে পড়ে- মৃত্তিকার সহজাত উর্বরতা,
বৃষ্টিপাত, সৌর-কাল এবং সৌর-প্রাখর্য, যেগুলি
শস্যের বর্ধিত ফলনের জন্য দায়ী । বিশ্বের
নানা স্থানে ছিড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কিছু অঞ্চল
যাদের জমির উর্বরতা সু-উচ্চ, সেগুলি হল :
ইউ.এস. মধ্য-পশ্চিমাঞ্চল ( যাকে বলা হয় corn
belt) , পশ্চিম ইয়োরোপ, ভারতের গাঙ্গেয় অঞ্চল
এবং উত্তর চীনের শস্যভূমি । ইউ.এস.মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলের
মৃত্তিকার আশ্চর্যজনক গভীরতা এবং উর্বরতার
ফলে মার্কিন যুক্তরাস্ট্র সক্ষম হয়েছে বিশ্বের
শস্য-ফলনের ৪০-শতাংশ এবং সয়াবীণ-ফলনের ৩৫-শতাংশ
উৎপন্ন করতে । উদাহরণ স্বরূপ আওয়া রাজ্য
উৎপন্ন করেছে কানাডার চেয়ে বেশি শস্য-ফসল
এবং চীনের থেকে অধিক সয়াবীণ ।
আল্পস
পর্বতমালার পশ্চিমের অঞ্চল যেটা ফ্রান্স ছাড়িয়ে
ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে উত্তর সাগর পর্যন্ত,
সেটা প্রাকৃতিক কারণে অত্যন্ত উর্বর যার ফলে
নিবিড়ভাবে জনমানব-সহ পশ্চিম ইয়োরোপ উৎপাদন
করে আমদানী-সক্ষম গম । একইভাবে, উত্তর ভারতে
পাঞ্জাব থেকে গাঙ্গেয় উপত্যকা নিয়ে হয়েছে
ভারতের breadbasket । আর উত্তর চীনের সমতলভূমি
উৎপাদন করে চীনদেশের অর্ধেক গম এবং শস্য-ফলনের
এক-তৃতীয়াংশ ।
মৃত্তিকার সহজ উর্বরতা ছাড়া, বৃষ্টিপাতের
পরিমাপ ও সময়কাল যেটা ভৌগলিক অঞ্চলগুলির মধ্যে
পরিবর্তনশীল, জমির উর্বরতাকে বিশেষভাবে প্রভাবিত
করে । বিশ্বের বেশিরভাগ গম, যেটা অনাবৃষ্টি-সহনশীল
তারা সেচ ছাড়াই স্বল্প-বৃষ্টিপাত-অঞ্চলে জন্মায়
। উদাহরণস্বরূপ ইউ.এস., কানাডা এবং রাশিয়ার
বেশিরভাগ গমই এই ধরণের শুষ্ক আবহাওয়ায় জন্মায়
। যেসব এলাকা অত্যন্ত শুষ্ক বা অত্যন্ত ঠাণ্ডা
শস্য-ফল বা ধান জন্মায় না, সেই সব এলাকাতে
গম উৎপন্ন হয় ।
শস্য-ফলনের
জন্য প্রাকৃতিক কারণের একটি বিশেষ অংশ নেয়
দিনের বর্ধিত সময়কাল । যুক্তরাজ্য এবং জার্মানীর
এত বিশাল গম উৎপাদনের কারণ এখানকার মৃদু
আবহাওয়া- উপসাগরীয় স্রোতের জন্য, যা' শীত
কালেও গম উৎপাদনে সাহায্য করে । এই গম, শীতের
প্রারম্ভে রোপিত হয়ে কয়েক ইঞ্চ বড় হয় এবং
শীতকাল এলে সুপ্ত হয়ে যায় । শীতের পর বসন্তকালের
আগমনে চারাগুলি দ্রুত বড় হয়, পরিণতি লাভ করে
বছরের লম্বা দিনগুলিত উচ্চ-অক্ষাংশ অঞ্চলে-
মে, জুন ও জুলাই মাসে । এইদুটি উত্তরের দেশে
ফলন হয় প্রতি হেক্টরে ৮ টন, ফ্রান্সে ৭ টনের
কিছু বেশি কেবলমাত্র উচ্চ অক্ষাংশ ও লম্বা
গ্রীষ্মের দিনগুলির জন্য ।
মাঃ.যুক্তরাষ্ট্র
এবং পশ্চিম ইয়োরোপের মধ্যে বড় প্রভেদ হল মৃত্তিকায়
আর্দতা এবং দিনের লম্বা-সময়কাল । ইউ. এস.এ.-তে
বেশিরভাগ গম উৎপন্ন হয় great plains-এর মতন
উষর ভূমিতে, ইয়োরোপে উৎপন্ন হয় সু-জলসেবিত,
বৃষ্টিস্নাত ফ্রান্স, জার্মানী এবং যুক্ত-রাজ্যের
গম-উৎপাদনের কৃষিভূমি । ইউ.এস.-গম উৎপাদিত
হয় কোনওমতে গড়ে হেক্টর-প্রতি ৩ টন ; কিন্তু
পশ্চিম ইয়োরোপের উৎপাদন হল গড়ে হেক্টর-প্রতি
৬ থেকে ৮ টন ।
ঠিক যেমন লম্বা দিন উন্নীত করে বর্ধিত ফলনের,
সেই রকম বিষুব রেখা অঞ্চলের দেশগুলিতে ছোট
দিন দেয় ক্ষুদ্র ফলনের ।
তবে,
গ্রীষ্ম-অঞ্চলের সুবিধা হল এরা বছরে একটার
বেশি ফলন দেয় অবশ্য যদি শুষ্ক ঋতুতে মৃত্তিকায়
যথেস্ট আর্দতা থাকে । দক্ষিণ চীন-এর স্বল্প
জমি, ভারত এবং এশিয়ার অন্যান্য গ্রীষ্মমণ্ডলীয়
ও উপ-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় স্থানে দুবার ও তিনবারের
ফসল পাওয়া অসম্ভব নয় । যদিও ফলন-প্রতি উৎপাদন
কম, বাত্সরিক ফলন কিন্তু বেশি । উদাহরনস্বরূপ,
উত্তর ভারতে শীতের গম এবং গরমের ধান উচ্চ-ফলনের
একটি প্রধান সংযোগ । চীনদেশে, একটি বাত্সরিক
চক্রে শীতের গম ও গরমের- ভূট্টা, তার সঙ্গে
যুক্ত দো-ফসলী চাল দিচ্ছে পৃথিবীর সর্ব- বৃহত্
শস্য-ফলন, একটি আপেক্ষিক কর্ষণযোগ্য জমিতে
।
সৌর-বিদ্যুতের তীব্রতা ফসল-ফলনের উর্ধসীমা
নির্ণয় করে । জাপানে চালের ফলন এশিয়ায় সর্ববৃহত্
হলেও ক্যালিফর্নিয়ার থেকে কম । এর অর্থ এই
নয় যে ক্যালিফর্নিয়ার চালের কৃষকরা জাপানী
প্রতিরূপের থেকে বেশি দক্ষ ; জাপানে চালের
কৃষি হয় মৌসুমি কালে যখন আকাশ থাকে মেঘে পরিবৃত,
তুলনায় ক্যালিফর্নিয়ায় ধান-চাষের সময়ে মাঠ
থাকে উজ্জল সূর্যালোকে স্নাত ।
জাপানী
⤛ খর্বকায় ⤛ গম মাঃ. যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-
পশ্চিমে চালু করার পর নর্মান বোরলগ, মেক্সিকোর
জনৈক কৃষিবিদ কিছু বীজ সংগ্রহ করলেন ১৯৫০
খ্রী-র গোড়ার দিকে । পরে তিনি এই খর্বকায়
বীজ অন্তর্নিবিষ্ট করান ভারত ও পাকিস্তান
সহ অন্যান্য অনেক দেশে, তাদের স্থানীয় অবস্থায়
বীজের চরিত্র নিরুপনের জন্য । সব জায়গাতেই
দেখা গেল গমের উৎপাদন পরম্পরাগত বৈচিত্র্য
অপেক্ষা দ্বিগুণ বা তিনগুণ হচ্ছে । মেক্সিকো-তে
খর্বকায় গমের উৎপাদন দেখা গেল প্রায় চারগুণ,
১৯৫০ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে ।
খর্বকায়
গমের বীজের অসাধারণ অভিজ্ঞতা চালের ক্ষেত্রে
নিয়োজিত হল ১৯৬০ সালে ফিলিপিনের Los banos-এর
নবনির্মিত International Rice Research Institute
(iRRI)-এ । Robert Chandler- এর অধিনায়কত্বে
বিজ্ঞানীরা নিয়ে এলেন চালের উচ্চ-উৎপাদনের
বীজ IR8, যা অনেক দেশে দ্বিগুণ ফলন দিল ।
গম ও চালের নূতন বামন বীজেদের এমন বংশাণু
সংস্থিতি ছিল যা সেচ এবং অজৈব-সারের সহজেই
উপযোগী হয়েছিল । যখন সার প্রয়োগ করা হত পুরাণো
লম্বা উপজাতিতে, উদ্ভিদের মাথা ভারী হওয়াতে
সহজেই ঢলে পড়তো বৃষ্টিতে বা ঝড়ে । নতুন বেঁটে
প্রজাতিগুলি সহজেই খাঁড়া থাকতো ভারী মাথা
নিয়ে ।
১৯৩০
সালে মাঃ. যুক্তরাষ্ট্রের উদ্ভিদ-উৎপাদনকারীরা
শস্য- উৎপাদন করেছেন উচ্চফলনশীল সংকর জাতির
। এটা দেখা গেল, প্রজাতির সঠিক সমাবন্ধনে
এবং সংকরায়ণে ফলন বাড়ে নাটকীয়ভাবে । মাঃ.
যুক্তরাষ্ট্রে সংকর উদ্ভিদ যত ছড়িয়ে গেল,
শস্য-ফলন বেড়ে গেল পাঁচগুণ, ১৯৪০ এবং ২০১০
সালের মধ্যে । গম এবং চালের ফলন ব্যতিরেকে,
যেখানে খর্বীকরণ হচ্ছে ফলন বাড়ানোর চাবিকাঠি,
শস্য-উৎপাদনকারীরা হালের দশকে সংকরায়ণ-পদ্ধতি
প্রয়োগ করেছেন যা সহ্য করেছে উদ্ভিদের জনাকীর্ণতা,
যার ফলে একর প্রতি বেশি উদ্ভিদ ফলন সম্ভব
হয়েছে । অর্ধ-শতাব্দী আগে কৃষকরা ফলাতেন ১০,০০০
শস্য-উদ্ভিদ প্রতি একরে । আজ, যে সব প্রদেশে
মৃত্তিকায় পর্যাপ্ত-পরিমাণে আর্দতা আছে, সেখানে
ফলন হয় একর প্রতি ২৮,০০০ বা তার বেশি ।
যদিও
অনেকেই প্রশ্ন করেন বংশগতি বিজ্ঞান দ্বারা
শস্য-ফলন বাড়ানোর বিষয়ে; তার উত্তর হল, সাফল্য
যা পাওয়া যায় তা' খুবই সীমাবদ্ধ । এর কারণ
এই যে বিজ্ঞানীদের উপদেশ নিয়ে উদ্ভিদ-ফলনকারীরা
পরম্পরাগত পদ্ধতি ব্যবহার করে যে অতিরিক্ত
ফলন পেয়েছেন তারপর জীন-বিজ্ঞান দ্বারা ফলন
বৃদ্ধি বিশেষ লাভজনক হচ্ছে না । ১৯৫০ সাল
থেকে বিশ্বে সেচ-সেবিত এলাকা তিন-গুণ করার
পর উচ্চ-ফলনযুক্ত বীজ যে ফলন দিচ্ছে, তা'তে
জীন-প্রযুক্তি ব্যবহার বিশেষ ফল দেয় না ।
আর জলসেচ আর্দ্রতার অবরোধ দূর করে দেওয়ার
ফলে সারের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
জার্মান
রসায়নবিদ্ Justus von Liebig ১৮৪৭ খ্রী-তে
প্রদর্শন করেছিলেন যে মূল পুষ্টিগত দ্রব্য
যা উদ্ভিদ মৃত্তিকা থেকে শুষে নেয় তা' পুরণ
করা যায় মৃত্তিকায় খনিজ পদার্থ যুক্ত করে
; একটি নূতন শিল্প গড়ে ওঠার দরজা মুক্ত হয়ে
যায় বিশ্ব খাদ্য উৎপাদনে আগামী শতাব্দীতে
। যে ১৬-টি উপাদন উদ্ভিদের প্রয়োজন সঠিকভাবে
পুষ্টির জন্য, তিনটি- নাইট্রোজেন, ফসফরাস
এবং পটাসিয়ম বিশ্ব সারশিল্পে আধিপত্য করে
। বিশে সারের ব্যবহার ১৯৫০ সালে ছিল ১৪ মিলিয়ন
টন, বেড়ে দাড়াল ১৭৭ মিলিয়ন টন ২০১০ সালে,
যার ফলে বিশ্বে শষ্য-ফলন বাড়ল প্রায় চারগুণ
।
বিশ্বে
গ্রামীণ-অর্থনীতি যত শহুরে-অর্থনীতিতে পরিবর্তিত
হতে থাকে, প্রাকৃতিক পুষ্টি-চক্র তত ভঙ্গুর
হতে থাকে । পরম্পাগত গ্রামীণ সমাজে খাদ্য্গ্রহণ
সমাধা হত স্থানীয়ভাবে, মানুষ ও জন্তুর বর্জ
জমিতে ফেরত দেওয়া হত, ফলে, পুষ্টি-চক্র সম্পূর্ণ
হত । কিন্তু উচ্চ শহুরে সমাজে যে খাদ্য গ্রহণ
করা হত প্রস্তুত-স্থানের থেকে অনেক দূরে,
ফলে জমির হারাণো পুষ্তিকে ফিরে পেতে সার ব্যবহার
করে জমির উৎপাদন-ক্ষমতা রক্ষিত হত । এটা
কোনও আশ্চযের কথা নয় যে সার-ব্যবহারের বৃদ্ধি
নগরায়নকে ঘনভাবে অনুসরণ করে, যার বেশিটাই
দেখা যায গত ৬০ বত্সরে ।
তিনটি শস্য-ফসলে চীন, ভারত ও মাঃ. যুক্তরাস্ট্র
যুক্তভাবে ব্যবহার করে বিশ্বের ৫৮ শতাংশ সার
। মাঃ. যুক্ত-রাস্ট্রে সার-ব্যবহারের ঊর্ধসীমা
থেমে গেল ১৯৮০ সালে- যা একটি উৎসাহজনক পরিস্থিতি-
কারণ শস্য-ফলন বেঁড়েই চললো । চীনদেশের সার-ব্যবহার
হালের দশকে বৃদ্ধি পেলেও ২০০৭ সালে বৃদ্ধি
স্থির হয়ে গেল । চীন বত্সরে সার ববহার করে
প্রায় ৫০ মিলিয়ন টন, ভারত ব্যবহার করে প্রায়
২৫ মিলিয়ন টন, সেখানে মাঃ. যুক্তরাষ্ট্র ব্যবহার
করে বছরে মাত্র ২০ মিলিয়ন টন ।
যদি
আমরা ধরি- চীন ও মাঃ. যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যেকে
বত্সরে ৪০০ মিলিয়ন টন শস্য-ফসল উৎপাদন
করে, সারের টন-প্রতি ফসল-উৎপাদন মাঃ.যুক্তরাষ্ট্রে
হয় চীনের দ্বিগুণ । এর প্রাথমিক কারণ হল,
মার্কিন কৃষকরা প্রয়োজনের সমতুল ব্যবহারের
মাত্রা অনেক সঠিক হিসাব করে, তা' ছাড়া মাঃ.
যুক্তরাষ্ট্রের ভৌগলিক অবস্থ্হন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ
সয়াবীণ-উৎপাদকের অনেক দূরে । সয়াবীণ-হল শীম-জতীয়
; মৃত্তিকায় নাইট্রোজেন-সংবন্ধন এর অন্যতম
কাজ যা' পরের কৃষিতে ব্যবহার করা যায় । ইউ.এস.কৃষকরা
প্রথাগতভাবে শস্য ও সয়াবীণ দু' বছরের পর্যায়ে
ব্যবহার করে, যার ফলে শস্য-ফসলে নাইট্রোজেন-সারের
ব্যবহার অনেক কম ।
সাহারা-সন্নিহিত
আফ্রিকার বাইরে শস্যদানার ফলন দ্বিগুণ, তিনগুণ
অথবা কখনও কখনও চারগুণ হয়েছে । বিশ্বের কিছু
স্বাভাবিকভাবে কম উর্বর মৃত্তিকা এবং প্রায়-শুষ্ক
আবহাওয়া ছাড়া সাহারা-সন্নিহিত আফ্রিকায় আদুনিক
কৃষির জন্য না আছে অংগবিন্যাস, না আছে আধুনিক
' ইনপুটগুলি' ।
অল্পদিন
আগে Malawi-র অভিজ্ঞতা দেখায় যে উন্নতির অবকাশ
আছে । ২০০৫ খ্রী-র পরে ঐ দেশের ১৩ মিলিয়ন
মানুষজনের সামনে ছিল ক্ষুধা বা অনাহার । সরকার
ক্ষুদ্র চাষীদের কুপন দিলেন- ২০০ পাউণ্ডের
সার অত্যন্ত স্বল্প মূল্যে এবং শস্যের উন্নত
বীজ বিনা মুল্যে । আংশিক ভাবে বোইদেশিক সাহায্য-
সার এবং বীজ পেয়ে দু'বছরের মধ্যে Malawi শস্য
রপ্তানী এবং কৃষিজীবিদের আয়বৃদ্ধি করতে সক্ষম
হয়েছে ।
অর্থনৈতিক প্রয়োজক এবং উচ্চফলনযুক্ত বীজ এবং
সার পেলে সাহারা-সন্নিহিত আফ্রিকার কৃষকরা
সহজেই ফলন দ্বিগুণ করতে পারে । হেক্টর-প্রতি
১০ টন ফলনে ইউ.এস. শস্য-ফলন যে কোনও স্থানের-বৃস্টিপাত
থেকে বেশি । সুগভীর মৃত্তিকা এবং শস্যদানার
পক্ষে প্রায়-আদর্শ জলবায়ু নিয়ে আয়োয়ার কোনও
কোনও কাউণ্টি হেক্টর-প্রতি ১৩ টনের মতন উৎপাদন
দিয়েছে । চীনে ⤛বৃহত্ তিন⤜ শস্য- গম, চাল
ও শস্যদানার উৎপাদন বর্তমানে ৪ থেকে ৫ টনের
মধ্যে হয় । ভারতে গম-এর ফলন বেড়েছে ৪-গুনের
বেশি ১৯৫০ সাল থেকে, বেড়ে হয়েছে হেক্টর-প্রতি
৩ টন । আমাদের মনে রাখতে হবে ভারতে সব রকম
শস্যদানার ফলন যুক্তরাষ্ট্র, ইয়োরোপ বা চীনের
থেকে কম, কারণ ভারত বিষুব রেখার কাছে হওয়ার
দরুন দিন বেশি লম্বা নয় । ১৯৫০ সাল থেকে ৯৩-শতাংশের
বেশি বিশ্ব শস্য-ফলনের বৃদ্ধি এসেছে ফলন বৃদ্ধির
প্রয়াস থেকে । বাকী ৭-শতাংস এসেছে চাষের জমি-বৃদ্ধি
থেকে ।
বিগত ৬০ বৎসর ধরে যদিও বৃদ্ধি চিত্তাকর্ষক,
শেষ দুটি দশক ধরে গতি কিছুটা মন্থর । ১৯৫০
থেকে ১৯৯০ সালেরে মধ্যে বিশ্ব-শস্যফলন বেড়েছে
গড়ে বত্সরে ২.২ শতাংশ । ১৯৯০ সাল থেকে ২০১১
সালে বার্ষিক বৃদ্ধি কমল ১.৩ শতাংশ । কিছু
কৃষিতে অগ্রগামী দেশে ফলনে নাটকীয় উন্নতি
শেষ হয়ে গেল ফলনে উন্নয়ন স্থির হয়ে যেতে ।
উদাহরণস্বরূপ,
জাপানে হেক্টর প্রতি চালের ফলন এক শতাব্দী
ধরে বাড়ার পর গত ১৭ বত্সর ধরে বাড়েনি ।
এটা ঠিক নয় যে জাপানী কৃষকগণ তাঁদের চালের
ফলনের বৃদ্ধি আর চায়নি । তাঁরা চেয়েছিল ।
স্থানীয় মূল্য বিশ্ব বাজারের মূল্যের থেকে
বেশি হওয়াতে জাপানে ফলন বাড়ানো অত্যন্ত লাভজনক
। সমস্যা হল, জাপানী কৃষকরা জমির উৎপাদন
ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সব রকমের কৃত্কৌশল
ইতিমধ্যেই ব্যবহার করেছেন । জাপানের মতন দক্ষিণ
কোরিয়ায় চালের ফলন সমতলে পৌঁছে গেছে ।
এটি
ঔত্সুক্যের বিষয় যে কোরিয়াতে জাপানের মতন
একেবারে একই লেভেলে চালের ফলন সমতলে এলো,
এবং জাপানে মূল্য সমতলে আসলো ১৯৯৪-তে, আর
কোরিয়াতে ১৯৯৬ সালে । দুটো দেশেই চালের ফলনে
বাধ্যবাধকতা একই । দু'দেশেই ফলন উচ্চ-সীমায়
পৌঁছেচে মনে হয়, দিনের লম্বার মাত্রা, সৌর
প্রাখর্য এবং পরিশেষে, সালোকসংস্লেশ কর্মদক্ষতার
বাধার ফলে । জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া একসঙ্গে
বছরে চাল উৎপাদন করত ১২ মিলিয়ন টন, বিশ্ব-উৎপাদনের
৩ শতাংশ ।
একই
অবস্থা আসছে ইয়োরোপে গমের ক্ষেত্রে । ফ্রান্স,
জার্মানী ও যুক্ত রাজ্যে গমের ফলন এক দশকের
বেশি ধরে সমতল হয়ে আছে । যুক্ত রাজ্য এবং
জার্মানীর গম উৎপাদন, হেক্টর-প্রতি ৮ টন,
মনে হয় জৈব-ঊর্ধসীমা । কযেক ডিগ্রী দক্ষিণে
অবস্থিত এবং যার গ্রীষ্মকালীন দিনগুলি কিছুটা
ছোট, তার উৎপদন ৭ টনের কাছাকাছি । ফ্রান্স,
জার্মানী ও যুক্ত-রাজ্য- এদের সম্মিলিত গমের
উৎপাদন প্রায় ১২ শতান্ঘ, বিশ্ব গমের ফলনের
।
[ পরবর্তী
প্রকাশ : অষ্টম অধ্যায় : বর্ধিত তাপমান, বর্ধিত
খাদ্যমূল্য ]
আগস্ট,
২০১৩ লেষ্টার আর. ব্রাউন
(Lester R. Brown)
অনুবাদক : শঙ্কর সেন ।
Earth
Policy Release
www.earth-policy.org/books/fpep/fpepch1