বিংশশতাব্দীতে
বিজ্ঞানে কিছু
আবিষ্কার ও উদ্ভাবন এবং ঘটনা
(২৯)
মহাদেশীয় সঞ্চরণ (Continental
drift)
আবিষ্কার : ১৯১২ খ্রী
বিজ্ঞানী : আলফ্রেড ওয়েজেনার
জার্মাণ
বিজ্ঞানী আলফ্রেড ওয়েজেনার প্রথম প্রস্তাব
দিলেন মহাদেশীয় সঞ্চরণ বা মহীসঞ্চরণ-এর ।
তিনি তর্ক করলেন যে, আজিকার মহাদেশগুলি একসময়
একটি ভূখণ্ডে আবদ্ধ ছিল । তিনি এর নাম দিলেন
প্যাঞ্জিয়া (Pangaea), গ্রীক ভাষায় যার অর্থ
'এক জমি' (all land) । পৃথিবীর পৃষ্ঠদেশ কম
নিবিড় পদার্থ দ্বারা নির্মিত হওয়ায় ছোট ছোট
ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং দু'-এক সেণ্টিমিটার
করে আলাদা হয়ে যাচ্ছে বিগত কয়েক লক্ষ বত্সর
ধরে। চিত্রে দেখানো
চিত্র
- Pangaea-র প্লেট-চালন দ্বারা সঞ্চলন
হয়েছে
কি ভাবে Pangaea-র প্লেট-চালন দ্বারা বহু
বত্সর ধরে মহীসঞ্চরণ হয়ে আসছে । এটা সম্ভব
যে প্লেটগুলি চালিত হয় গুরুমণ্ডলে (Pangaea)
পরিচলন প্রবাহের (convection current) জন্য
।
পৃথিবীর
সমস্ত মহাদেশগুলিকে ম্যাপে আনার পর দেখা গেল
বেশ কয়েকটি সৈকতাঞ্চল, যেমন দক্ষিণ আমেরিকা,
আফ্রিকা এমনই, যে তাদের একত্র করা যায় 'ধাঁধা-ঘুটির
(puzzle pieces) মত' । আলফ্রেড ওয়েজেনারের
মনে হল, যে ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্রাঘিমাংশ অনুযায়ী
গ্রীনল্যাণ্ড ইওরোপের মূল ভুখণ্ড থেকে সরে
এসেছে বিগত একশ বছরে । ইওরোপের প্যারী এবং
উত্তর আমেরিকার ওয়াশিংটন-এর মধ্যে প্রতি বছরেই
যেন ১৫ ফুট দুুরত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে ; আর সান
ডিয়াগো ও সাংহাই প্রায় ৬ ফুট কছাকাছি চলে
এসেছে । তার উপর ওয়েজেনার জানতে পারলেন, ছোট
ছোট প্রাণীরা, যারা মহাসাগর পাড়ি দেবার ক্ষমতা
রাখে না, তাদের জীবশ্ম পাওয়া গেছে বিভিন্ন
মহাদেশে সেসময় খুব অল্প সংখ্যক মানুষ ওয়েজেনারের
দেওয়া তথ্য গ্রহণ করেছিল । ওয়েজেনারের মৃত্যুর
পরে আরথার হোমস প্রকাশ করলেন যে পৃথিবীর গুরুমণ্ডলে
তাপীয় পরিচলন-এর জন্য এই সঞ্চলন সম্ভব । হোমস
আরও ইঙ্গিত করলেন যে মহাদেশগুলি চালিত হয়নি,
বরং ভূত্বক (earth's crust)দ্বারা 'বাহিত'
হয়েছে । ১৯৬০ খ্রীষ্টাব্দে নূতন প্রমাণ সামনে
এলো । মধ্য-মহাসাগরীয় ভূশিরার (ridge) আবিষ্কার
এবং হ্যারী হেস ও অন্যান্যদের গবেষণাপত্রগুলি
'ভূগাঠনিক প্লেট' (plate tectonic)-এর ধারণা
নিয়ে আসায় ভাবনাগুলি পেল এক পূর্ণাঙ্গরূপ,
যার শিকড় কিন্তু রয়েছে আলফ্রেড ওয়েজেনারের
কাজে ।
(৩০)
নিউরোট্রান্সমিটার (Neurotransmitter)
আবিষ্কার : ১৯২১ খ্রীষ্টাবদ
বিজ্ঞানী : অটো লিউই
১৯২১
খ্রীষ্টাব্দে অষ্ট্রিয়ার বিজ্ঞানী অটো লিউই
(Otto Loewi) প্রথম নিউরোট্র্যান্সমিটার (Neurotransmitter)
আবিষ্কার করলেন । রাসায়নিক সংঘটক দ্বারা স্নায়ু-প্রবাহগুলির
পরিবহন প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে যাথর্থতা পেল
। পরীক্ষায় তিনি ব্যবহার করেছিলেন দু'টি ব্যাং-এর
হৃৎপিণ্ড । একটিকে ( বলা যায় হৃৎপিণ্ড ১ )
ভেগাস নার্ভ (Vegas nerve)-এর সঙ্গে যুক্ত
থাকা অবস্থায় লাবণ (saline)-পূর্ণ একটি প্রকোষ্ঠে
রাখা হয়েছিল । এই প্রকোষ্ঠটি যুক্ত ছিল আর
একটি প্রকোষ্ঠের সঙ্গে, যেখানে ছিল দ্বিতীয়
হৃত্পিণ্ডটি । প্রকোষ্ঠ ১ থেকে তরল পদার্থ
পাঠানো হল প্রকোষ্ঠ ২-এ । ভেগাস নার্ভ-এর
বৈদ্যুতিক উদ্দীপন (stimulation) যথানিয়মে
হৃত্পিণ্ড ১-কে মন্থর করলো । কিছুক্ষণ বাদে
লিউই দেখলেন দ্বিতীয় হৃৎপিণ্ডটিও মন্থর হয়ে
আসছে । লিউই প্রস্তাব করলেন ভেগাসের বৈদ্যুতিক
উদ্দীপন প্রথম প্রকোষ্ঠে মুক্ত করেছে একটি
রাসায়নিক যা' দ্বিতীয় প্রকষ্ঠে প্রবাহিত হয়েছে
। লিউই এই রাসায়নিক-এর নাম দিলেন "Vagusstoff"
। পরবর্তীকালে এই রাসায়নিক পরিচিত হয় acetylcholine
নামে ।
১৯২১
থেকে ১৯২৬ খ্রী সময়ে অটো লিউই তাঁর গবেষণাগার
থেকে ৬-টি গবেষণাপত্র দিয়ে এই নূতন প্রকটিত
কৌশলের মূল চরিত্রগুলি প্রকাশ করেছিলেন ।
এই সকল গবেষণা থেকে একটি ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে
যে একটি মূল রাসায়নিক কাঠামো রয়েছে সমস্ত
স্বতঃক্রিয় গ্যাংগ্লিয়নের প্রান্তসন্নিকর্ষ
(synapses)-গুলিতে এবং সাধারণ ঐচ্ছিক পেশির
চেষ্টিয় স্নায়ু-শেষে ।
১৯৩৬
খ্রীষ্টাবদে শরীরবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার
লাভ করেন স্যর হেনরি ডেল- সহ অটো লিউই ।
শঙ্কর
সেনের সৌজন্যে
( চলবে
)