বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান

বিংশশতাব্দীতে
বিজ্ঞানে কিছু
আবিষ্কার ও উদ্ভাবন এবং ঘটনা
(
২ )
সুমেরুজ্যোতি
(Aurora Borealis)
আবিষ্কার : ১৯০০ খ্রীষ্টাব্দ
বিজ্ঞানী : খ্রিসচিয়ান বার্কল্যাণ্ড
'উত্তরের
আলো' এবং 'সুমেরুজ্যোতি' ( 'aroraa boriYaalis'
) নাম দেওয়া হয়েছে একটি ব্যাপারকে যা' হাজার
হাজার বত্সর ধরে ঘটে চলেছে পৃথিবীর প্রায়
সর্বত্র, কিন্তু চোখে দেখা যায় শুধুমাত্র
পৃথিবীর অতি-উত্তর অংশে। উত্তরের আলো সত্যসত্যই
একটা অতি আশ্চর্যজনক দৃশ্য তার অত্যুজ্জ্বল
ও ঝল'সানো পরিমণ্ডল নিয়ে যা ঐসকল স্থানের
অধিবাসী এবং পর্যটকদের একইভাবে বিমোহিত ও
আশ্চর্যান্বিত করে।

চিত্র
১ : সুমেরুজ্যোতি।
উত্স : NOAA
১৯০০
খ্রীষ্টাব্দে নরওয়ে-বাসী খ্রিসচিয়ান বার্কল্যাণ্ড
(Kristian
Birkeland) একটি সূত্র প্রদান
করেন- যে আলো আকাশে দেখা যাচ্ছে তা' গঠিত
হয় সৌরকলঙ্ক (sunspot
) থেকে নির্গত বিদ্যুত্গ্রস্থ
কণা (charged
particle) বিশ্বের আবহমণ্ডলের
সংস্পর্শে এলে এবং পরে আকার ধারণ করে ভূচৌম্বকীয়
শক্তি দ্বারা। তিনি একটি বায়ুশূণ্য প্রকোষ্ঠে
আহিত (charged)
ধাতুর গোলককে রেখে চুম্বকশক্তিসম্পন্ন করে
দেখালেন সেটা থেকে বিচ্ছুরিত আলোকের রঙ বদল
হচ্ছে ; যত চুম্বকশক্তি বাড়ানো যায়, বিচ্ছুরণ
তত প্রবল হয়।
বার্কল্যাণ্ডের
তত্বকে প্রমাণ করতে গেলে পৃথিবী-পৃষ্ঠের ৮০
কিলোমিটার ঊর্ধে আয়নমণ্ডলে যাওয়া দরকার যেটা
সম্ভব হয়েছিল ১৯৭৪ খ্রী-তে। ঐ বত্সর ALfred
Zmuda এবং James Armstrong
একটি চুম্বকীয় ম্যাপ নির্মাণ করেছিলেন যাকে
বলা হয় 'বার্কল্যাণ্ড কারেণ্ট' ম্যাপ।
( ৩ )
গামারশ্মি
আবিষ্কার
: ১৯০০ খ্রীষ্টাব্দ
বিজ্ঞানী : পল ভিলার্ড
গামা
রশ্মিগুলি হল তড়িত্চুম্বকীয় তরঙ্গ যাদের তরঙ্গদৈর্ঘz
খুবই কম। ১৯০০ খ্রীষ্টাব্দে পল ভিলার্ড (
Paul Villard ) এই রশ্মি আবিষ্কার করেন এবং
গামারশ্মি নাম দেন আর্নস্ট রাদারফোর্ড ( Ernest
Rutherford )।
এই ব্রহ্মাণ্ডে
আছে শক্তির নানারূপ এবং বিভিন্ন উপায়ে তারা
প্রতিভাত হয়। একটা সাধারণ রূপ হল বিকিরণ।
বিকিরণ হল তড়িত্-চুম্বকীয় বল দ্বারা উত্পাদিত
তরঙ্গশক্তি। এরা নানাপ্রকারের, যাদের ক্ষমতা
তিনভাগে বিভক্ত করা যায়- আলফা যারা সরলরেখায়
ধাবিত হয়। কিন্তু এদের মাত্রা বিভিন্ন ; আলফা
রশ্মি হল সব থেকে দুর্বল, মানুষের চামড়া ভেদ
করে সজীব তন্তু পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না,
গামা রশ্মি হল সব থেকে বলিষ্ঠ, কেবলমাত্র
শিসা-র মতন ঘন পদার্থ একে প্রতিহত করতে পারে।
আবার,
গামা রশ্মি তাদের গঠনে আলফা ও বিটা থেকে ভিন্ন।
আ লফা ও বিটা রশ্মিদ্বয় অসংবদ্ধ sub-atomic
কণাদ্বারা গঠিত ; যার ফলে এই রশ্মিগুলিকে
সহজেই বিপথে পাঠানো সম্ভব অল্পঘন বস্তুর দ্বারা।
গামা রশ্মিগুলি অন্য বিভিন্ন স্তরের- শুধুমাত্র
কঠিন ঘনবস্তু এদের অন্যপথে চালিত করতে পারে।
বস্তুতঃ, গামা রশ্মি হল সবথেকে সবল বিকিরণ-
যার ফলে আনবিক বিকিরণ এতো ভয়াবহ। এই উচ্চ
শক্তিসম্পন্ন বিকিরণ মানুষের তন্তুকে বিনষ্ট
করে দিতে পারে এবং পরিব্যক্তি (mutation )
ঘটাতে পারে।
গামা
রশ্মিগুলির সবথেকে ঔত্সুক্য উদ্দীপনকারী চরিত্র
হল যে এদের শক্তির স্তর বিভিন্ন। কোনও কোনও
ক্ষেত্রে শক্তি-মাত্রা এতো কমে বাড়ে যে সব
রকমের মানদণ্ডে এগুলি ব্যবহার্য, তবে একস্-রে
থেকে এদের শক্তি-মাত্রা কম।
মহাবিশ্বের প্রায় সর্বত্রই গামারশ্মি দেখতে
পাওয়া যায়। সবথেকে ভালো উদাহরণ হল সূর্য
এবং পালসার। এরা সকলেই সুবৃহত্ শক্তির উত্স-
সুবৃহত্ আণবিক বিক্রিয়া ঘটে চলেছে হাইড্রোজেন
দহনের মধ্য দিয়ে। ফলে রশ্মির আকারে বিশাল
বিকিরণ নির্গত হয়। পৃথিবীর রক্ষাপ্রদ বায়ুমণ্ডলের
বাইরে বিকিরণের রূপ নেয় কসমিক রশ্মির আকারে।
কসমিক রশ্মি বিশাল শক্তির অধিকারী গামারশ্মির
কারণে।
দুটি
আইসোটোপ, কোবল্ট-৬০ এবং পটাসিয়াম-৪০ গামারশ্মিগুলি
নির্গত করে। কোবল্ট-৬০ তৈরি হয় ত্বরক যন্ত্রে
(Accelerator) এবং হাসপাতালে ব্যবহৃত হয়।
পটাসিয়াম-৪০ আসে প্রকৃতি থেকে।
শঙ্কর
সেন
( চলবে
)