বিংশশতাব্দীতে
বিজ্ঞানে কিছু
আবিষ্কার ও উদ্ভাবন এবং ঘটনা
(৩৪)
বোস-আইনা্স্টাইন
সাংখ্যায়ন
আবিষ্কার : ১৯২৪
বিজ্ঞানী : সত্যেন্দ্রনাথ বোস
আলোর দ্বৈত চরিত্রের
স্বরূপ বিষয়ে কিছু অসাচ্ছ্ব্যন্দ ছিল যা দূর
হল বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বোসের একটি প্রবন্ধ
দ্বারা ( ১৯২৪ খ্রী-র জুন মাস )- Planck's
law and the hypothesis of light quanta ।
প্রবন্ধটি ছাপা হয়েছিল Zeitschrift fur physik
জার্নালে ( অনুবাদক আইন্স্টাইন নিজে ) ঐ বত্সর
জুলাই মাসে । বোস বিকিরণকে এমন এক গ্যাসের
মতন ভাবলেন যা ফোটন দিয়ে পূর্ণ । পারিসাংখ্যিক
বলবিদ্যার সাহায্যে কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণ এক
নূতন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ব্যাখ্যা হল । প্রচলিত
পারিসাংখ্যিক বলবিদ্যায় বোলজা্ম্যানের চিন্তা
অনুসারে প্রত্যেক অণুদের একটি নিজস্ব পরিচয়
আছে ; প্রত্যেক অণুগুলিকে আলাদাভাবে চিহ্ণিত
করতে পারা যায় । বিপরীতক্রমে বোসের চিন্তায়
আলোক কণারা সবাই এক ও অভিন্ন । বোলজা্ম্যানের
চিন্তায় B অণুর জায়গায় A অণুকে বসালে সম্পূর্ণ
নূতন বিন্যাস পাওয়া যাবে ; যাকে আলাদাভাবে
গণনা করতে হবে । বোসের চিন্তায় দু'টি একই
ধরণের কণা স্থানান্তর করলে নূতন সজ্জা পাওয়া
যাবে না । এর ফল হলো কৃষ্ণবস্তু বিকিরণের
ফরমূলার নূতন প্রমাণ ।
আইনা্স্টাইন বুঝতে পেরেছিলেন বোস-এর পরিসাংখ্যিক
পদ্ধতি সাধারণ পরমাণুদের বেলাতে প্রয়োগ করা
যাবে । তিনি ১৯২৪ খ্রী-তেই বোস-এর কাজের উপর
ভিত্তি করে একটি প্রবন্ধ রচনা করেন ; জন্ম
নিল নূতন এক সাংখ্যায়ন⤒ 'বোস-আইনা্স্টাইন
সাংখ্যায়ন' ।
(৩৩)
তাপীয় আয়নন তত্ত্ব
আবিষ্কার : ১৯২০
বিজ্ঞানী : মেঘনাদ সাহা
তারকা-সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রে বারোটি
মৌলিক আবিষ্কারকে বিজ্ঞানী আর্থার এডিংটন
মাইল-স্টোন হিসাবে cিহ্ণিত করেছেন বৃটানিকায়,
তার মধ্যে মেগনাদ সাহার তাপীয় আয়নন তত্ত্ব
অন্যতম । কালানুসারে এই তালিকায় আছেন এডমণ্ড
হ্যালি, উইলিয়াম হার্সেল -প্রথম দিকে, সাহার
আবিষ্কারকে এডিংটন দ্বাদশতম বলে গণ্য করেছেন
।
যদি কোনও পরমাণু থেকে কোনও রকমে একটি ইলেকা্ট্রন
বেড়িয়ে আসে বা তার সঙ্গে যুক্ত হয়, তা'হলে
এরূপ তড়িতাহত কণাকে আয়ন বলে । সেই পদ্ধতিকে
বলে আয়নীকরণ(ionisation )। উচ্চচাপে জটিল
রাসায়নিক অণু ভেঙ্গে গিয়ে সরল অণুতে পরিণত
হয় তারপর হয় পরমাণু । আরো উচ্চচাপে পরমাণুর
ইলেকা্ট্রন বিযুক্ত হয়ে পরমাণুগুলি আয়নিত
হয় । মেঘনাদ সাহা প্রস্তাব করেন যে নক্ষত্রদের
ভিতরে যে উচ্চতাপ আছে তা'তে মূল পরমাণুগুলি
আয়নিত হয়ে যায় । নক্ষত্রদের বর্ণালীতে যে
সকল মৌলের উজ্জ্বল রেখা পাওয়া যায় না তার
কারণ হল যে নক্ষত্রের বর্নালীতে মূল পরমাণুর
রেখা থাকা সম্ভব নয়, তাই ঐ আয়নিত পরমাণুর
রেখা পাওয়া যায় না । অসাধারণ গাণিতিক প্রতিভায়
তিনি হিসাব করে এদের স্থান নির্ধারণ করেন
। পর্যবেক্ষকগণ বর্ণালী-বিশ্লেষণে এদের পান
সাহা- নির্দেশিত স্থানে । সাহার গাণিতিক ফরমুলাটি
Saha's Ionisation formula নামে জগদা্বিখ্যাত
হয়ে যায় ।
সাহার আয়নন সূত্র ১৯২০ খ্রীষ্টাব্দে গবেষণা-আকারে
“ Ionisation in the Solar chromosphere”
প্রকাশিত হলেও ঐ সময়ে প্রকশিত বিভিন্ন গবেষণা-প্রবন্ধে
তাঁর আয়নন তত্ত্ব সংক্রান্ত ভাবনার পরিচয়
পাওয়া যায় । এই বত্সরেই প্রকশিত “ Elements
in the Sun” গবেষণাপত্রে তিনি বলেন, পৃথিবীর
সব মৌলিক উপাদনেরই সূর্যে বর্তমান থাকা স্বাভাবিক
। সূর্য ও নক্ষত্রের আবহমণ্ডলে তাপ ও চাপই
তার উপাদান মৌলিক পদার্থের উত্তেজিত বা আয়নিত
অবস্থা নিয়ন্ত্রিত করে ।
সাহার
গবেষণার বৈশিষ্ট্য নিয়ে কেমব্রিজ আষ্ট্রোফিজিক্যাল
অবসারভেটরির ই এ মিলা্নে অবসারভেটরি পত্রিকায়
লেখেন 'In spite of the complexity of detail
offered by the ground covered, Dr. Saha's
paper offer an example of the combination
of physical chemistry, the quantum theory,
and of theories of atomic structure which
can not fail to appeal one's sense of the
beauty of the systematic co-ordination of
physical phenomena' ।
শঙ্কর
সেনের সৌজন্যে
( চলবে
)