বিংশশতাব্দীতে
বিজ্ঞানে কিছু
আবিষ্কার ও উদ্ভাবন এবং ঘটনা
( ৪১
)
বেতার-জ্যোতির্বিদ্যা
আবিষ্কার : ১৯৩০ খ্রীষ্টাব্দ
বিজ্ঞানী : কার্ল জানস্কি
বেতার-জ্যোতির্বিদ্যা(Radio astronomy)হল
নক্ষত্র, ছায়াপথ ইত্যাদি অন্তরীক্ষ-বস্তুর
থেকে নির্গত রেডিয়ো-কম্পাঙ্কগুলির অধ্যয়ন
। রেডিয়ো-তরঙ্গ উত্পন্ন হয় স্বাভাবিকভাবে
বিদ্যুত্ ও ভূমণ্ডলের বিভিন্ন বস্তুর দ্বারা
অথবা মনুষ্যকৃত যোগাযোগ ও সম্প্রচার কৃত্কৌশল
দ্বারা ।
পৃথিবীর মধ্যে চতুর্দিকে ছড়িয়ে রাখা হয়েছে
অনেক রেডিয়ো টেলিস্কোপ যেগুলি সাহায্য করছে
নূতন নক্ষত্র ( এমনকি যেগুলি থেকে আলো নির্গত
হয়না ) ও ছায়াপথ আবিষ্কারে । জ্যোতির্বিদ্যার
এই নূতন দিকা্ দর্শন করিয়েছেন কার্ল জানস্কি,
যিনি আখ্যাত হয়েছেন ' বেতার-জ্যোতির্বিদ্যার
জনক '- হিসাবে ।
১৯৩০ খ্রীষ্টাব্দে জানস্কি প্রথম দেখতে পেলেন
অন্তরীক্ষ-বস্তু ( প্রাথমিকভাবে ছায়াপথ )
থেকে নির্গত বেতার-তরঙ্গ । পরবর্তী পর্যবেক্ষণগুলি
আরও কয়েকটি বিভিন্ন উত্সকে শনাক্ত করলো
। এগুলিতে নক্ষত্র, ছায়াপথ ছাড়া আরও কিছু
বস্তু পাওয়া গেল যেমন, বেতার-তারকাপুঞ্জ(radio
galaxies), কোয়াসার(quasars), পালসার(pulsars)এবং
মেসার(mesars)। মহাজাগতিক মাইক্রোওয়েভ স্বাভাবিক
বিকিরণ(cosmic microwave background radiation)-
এর আবিষ্কার ( যা' পরবর্তীকালে Big Bang-এর
অকাট্য প্রমাণ দিয়েছিল ), বেতার-জ্যোতির্বিদ্যা
দ্বারা সম্পন্ন হয়েছিল ।
(
৪২ )
আধুনিক বিবর্তনীয সংশ্লেষণ
সময়কাল : ১৯১৮ থেকে ১৯৩২ এবং ১৯৩৬ থেকে ১৯৪২
খ্রীস্তাব্দ
বিজ্ঞানী : রোনাল্ড ফিশার, জে.বি.এস. ঃলডেন
এবং অন্যান্যেরা ।
১৯১৮
থেকে ১৯৩২ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে বংশগতি বিজ্ঞানে
গবেষণার সমারোহে বিপুল উত্সাহের সঞ্চার
হয়েছিল তার থেকে বেড়িয়ে এলো যে, মেণ্ডেলিয়ান
বংশগতি তত্ত্ব প্রাকৃতিক নির্বাচন(natural
selection)এবং ক্রম-বিবর্তন(gradual evolution)-
একে অপরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ । ১৯৩৬ থেকে
১৯৪৭ খ্রীস্টাব্দের মধ্যে এই সংশ্লেষণ একটা
সম্মিলিত ভাবধারার সৃষ্টি করলো বিবর্তনের
গতিপ্রকৃতি বিষয়ে । সৃষ্টি হল ' আধুনিক বিবর্তনীয
সংশ্লেষণ '(modern evolutionary synthesis)যা'
প্রদান করলো বিবর্তনের এক বহু স্বীকৃত কারণ
। এই সমন্বয় বর্তমানে বহুলাংশে বিবর্তনীয
জীববিদ্যার আদর্শ ।
পরীক্ষামূলক জীববিজ্ঞান এবং বিবর্তনের মধ্যে
এবং একইভাবে মেণ্ডেলীয় জেনেটিক-তত্ত্ব, প্রাকৃতিক
নির্বাচন এবং উত্তরাধিকার বিষয়ে ক্রোমোজোম-তত্ত্ব(chromosome
theory)- এর মধ্যে একটি গুরুতর যোগসূত্র এসেছিল
টমাস মরগানের fruit flyDrosophila melanogaster
উপর গবেষণা থেকে । উত্তরাধিকার বিষয়ে তিনি
ও তাঁর সহকর্মীরা মেণ্ডেলীয় ক্রোমোজোম-তত্ত্ব
ব্যক্ত করেন ১৯১৫ খ্রী-তে তাঁদের গবেষণাপত্র
The Mechanism of Mendelian inheritance-এর
মধ্য দিয়ে । এসময়ে বহু জীববিজ্ঞানীই ক্রোমোজোমের
মধ্যে জীনের অস্তিত্ব স্বীকার করে নিয়েছেন,
তবে কিভাবে এটি প্রাকৃতিক নির্বাচন ও ক্রমিক
বিবর্তনের সঙ্গে সুসঙ্গত তা' পরিষ্কার হয়নি
।
প্রশ্নটির আংশিক সমাধান দিলেন রোনাল্ড ফিশার
১৯১৮ খ্রী-তে তাঁর গবেষণাপত্র The Correlation
Between Relatives on the Supposition of
Mendelian Inheritance-এর মধ্য দিয়ে । ফিশার
দিয়েছিলেন মেণ্ডেলিয়ীয় উত্তরাধিকার তত্ত্বের
একটি দৃঢ় পারিসাংখ্যিক মডেল যা মেণ্ডেলীয়
ও জীবমিতি (biometric)- দুটি ধারাকেই সন্তুষ্ট
করেছিল । এই পত্রটিকে অনেক সময় বলা হয় সংশ্লেষণ-তত্ত্বের
প্রথম ধাপ ।
মরগানের ছাত্র Theodosius Dobzhansky প্রথম
প্রয়োগ করলেন মরগানের ক্রোমোজোম তত্ত্ব এবং
সংশ্লিষ্ট জনসমষ্টির বংশগতি-বিজ্ঞানকে প্রাকৃতিক
জীবগুলির জনসংখ্যা নির্ণয়ে, বিশেষভাবে Drosophila
pseudoobscura । ১৯৩৭ খ্রী-তে তাঁর লেখা Genetics
and the Origin of Species-কে গণ্য করা হয়
neo-Darwinism- এর প্রথম পুর্নাঙ্গ কাজ ।
মেণ্ডেলের কাজের এই নব-আবিষ্কার সৃষ্টি করলো
ডারউইনের অভিব্যক্তি বাদ তত্ত্বের একদল সমালোচক
( Bateson, deVries ও অন্যান্যেরা ) যারা
বিশ্বাস করতেন যে জনপ্রতি বিচ্ছিন্ন বিশেষত্বের
বিভেদগুলি ডারউইনের বাহ্যসত্তার ধীরগতি পরিবর্তনের
সঙ্গে খাপ খায়না । চিন্তানায়কদের আর একটি
গ্রুপ, যারা বিংশ শতাব্দীর প্রথম দুই দশকে
আবির্ভুত হয়েছিলেন জীবমিতি(biometrics)- কে
কেন্দ্র করে যথা,(Karl Pearson, Francis Galton
ও অন্যান্যেরা ) মেণ্ডেলবাদীদের বিরুদ্ধতা
করতেন । এরা তথাকথিত পরিমানজ্ঞাপক লক্ষণগুলিকে
অধ্যয়ন করছিলেন পারিসাংখ্যিক প্দ্ধতির দ্বারা,
ধরে নিয়ে যে, লক্ষণগুলির উপর জীনের ক্রিয়া
খুবই সামান্য । এই মতবিরোধ মেটালেন ফিশার
( ১৯১৮ খ্রী ) যিনি দেখালেন যে মেণ্ডেলের
উত্তরাধিকার তত্ত্ব এবং বাহ্যসত্তার ক্রমিক
পরিবর্তন এক নয় । পরবর্তী দু'-দশকে ফিশার,
জে.বি.এস.হলডেন এবং সেওয়াল রাইট-সহ অন্যেরা
গণিতের সাহায্যে জীন-তত্ত্ব ও ডারউইনের বিবর্তনবাদ-এই
দু'-এর সমন্বয় দেখালেন যার দ্বারা আধুনিক
সংশ্লেষণ (modern synthesis)-তত্ত্বের পথ
সুগম হল ।
' আধুনিক বিবর্তনীয সংশ্লেষণ '(modern evolutionary
synthesis)- কে আরও কয়েকটি নামে অভিহিত করা
হয় যথা, নূতন সংশ্লেষণ (the new synthesis),
আধুনিক সংশ্লেষণ (the modern synthesis),
বিবর্তনীয় সংশ্লেষণ(the evolutionary synthesis),
শতাব্দীর
সংশ্লেষন(millennium synthesis)এবং নব-ডারউইন
সংশ্লেষণ(neo-Darwinian synthesis)
আধুনিক সংশ্লেষন কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন
Julian Huxley তাঁর লেখা পুস্তকে- Evolution:
The Modern Synthesis. ।
শঙ্কর
সেন
( চলবে
)