প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান

বিংশশতাব্দীতে বিজ্ঞানে কিছু
আবিষ্কার ও উদ্ভাবন এবং ঘটনা

( ৪)

জৈব যৌগ পৃথকীকরণে কলাম ক্রোমাটোগ্রাফির কৃত্কৌশল
( Column Chromatography Technique for Organic Compound Separation )

আবিষ্কার : ১৯০১ খীষ্টাব্দ
বিজ্ঞানী : মিখাইল টিভেট, রশিয়া

একটা সাদা দড়ি বা সুতা (string)-র একটা দিক ঝুলন্ত অবস্থায় রঞ্জকের পাত্রে নিমজ্জিত করে রাখলে দড়িটি রঞ্জককে শুষে নিতে শুরু করে । কিন্তু রং বিভিন্ন হলে দড়ি ধরে ওঠার দূরত্বও হবে বিভিন্ন । বহুদিন ধরেই রঞ্জক প্রস্তুতকারকরা 'ক্রোমাটোগ্রাফি' ব্যবহার করে আসছেন, মিশ্রণ থেকে বিভিন্ন রংকে আলাদা করার কাজে, বিশেষতঃ যদি মিশ্রণের উপাদানগুলি অল্প পরিমাণে হয় । এই কৃত্কৌশলটি অত্যন্ত প্রযোজ্য যখন মিশ্রণের উপাদানগুলির ভৌতিক (physical) ও রাসায়নিক (chemical) ধম একই হয় এবং সাধারণ পৃথক্করণের উপায়গুলি কাজে দেয় না । 'ক্রোমাটোগ্রাফি' কথাটির অর্থ রং দিয়ে লেখা [গ্রীক ভাষায় : khromatos অর্থ রং, graphos অর্থ লিখিত]। ক্রোমাটোগ্রাফি কৃত্কৌশলটি আবিষ্কার করেন মিখাইল সোয়েট (Mikhail tswett) ১৯০৬ খ্রীষ্টাব্দে ।

ক্রোমাটোগ্রাফি-তে আলাদা করার কৃত্কৌশলগুলির ভিত্তি হল মিশ্রণে উপাদানগুলির বিন্যাস- স্থির (stationary) এবং সচল (mobile) অবস্থা । স্থির অবস্থাটি হতে পারে একটি শোষকের কলাম, একটি কাগজ, একটি পাতলা শোষকের আবরণ কাচের উপর, ইত্যাদি, যার মধ্য দিয়ে সচল অবস্থা যায় । সচল অবস্থাটি হতে পারে তরল পদার্থ বা গ্যাস । যখন স্থির কঠিন অবস্থাকে একটি কলাম হিসাবে নেওয়া হয়, প্রথাটিকে বলা হয় 'কলাম ক্রোমাটোগ্রাফি' ( চিত্র ) ।

কলাম ক্রোমাটোগ্রাফি


চিত্র : কলাম ক্রোমাটোগ্রাফি

কলাম ক্রোমাটোগ্রাফি-তে সাধারন শোষকগুলি হল সিলিকা, আলুমিনা, ক্যালসিয়াম কার্বনেট, ক্যালসিয়াম ফসফেট, ম্যাগনেসিয়া, স্টার্চ, ইত্যাদি । দ্রাবক (solvent) নির্বাচন করা হয় শোষক ও দ্রাবকের প্রকৃতি বিচার করে । মিশ্রণের উপাদানগুলির কত তাড়াতাড়ি পৃথক্করণ হবে তা' নির্ভর করবে শোষকের তত্পরতা এবং দ্রাবকের বিপরীত-ধর্মিতার উপর । যদি শোষকের তত্পরতা খুব উচ্চ হয় এবং দ্রাবকের বিপরীত-ধর্মিতার খুব কম হয়, পৃথক্করণ হবে খুব ধীরে, কিন্তু তার গুণমান হবে ভাল । অন্যদিকে যদি শোষকের তত্পরতা নিম্নস্তরের হয় এবং দ্রাবকের বিপরীত-ধর্মিতার উচ্চস্তরের হয়, পৃথক্করণ হবে খুব তাড়াতাড়ি, কিন্তু গুণমান হবে নিকৃষ্ট অর্থাত্ উপাদানের পৃথক্করণ ১০০-শতাংশ বিশুদ্ধ হবে না ।
শোষককে তরলায়িত (slurry) করা হয় উপযুক্ত তরল পদার্থ সংযোগে এবং ঢালা হয় একটি নলাকৃতি টিউবে যার তলাটি হল ছিদ্রপূর্ণ বা তুলা দিয়ে আটকানো । যে মিশ্রণটিকে আলাদা করতে হবে, তাকে একটি উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত করে টিউবে উপর দিক থেকে ঢালতে হবে । মিশ্রণ টিউব ধরে যত নামবে উপাদানগুলি বিভিন্ন উচ্চতায় শোষিত হবে ; যার শোষণ-ক্ষমতা সবথেকে বেশি সে থাকবে সবথেকে উপরে এবং সেই মতন নলের উপরথেকে নীচে আলাদা আলাদা ব্যাণ্ড তৈরি হবে । যে পদ্ধতিতে শোষক থেকে উপাদানগুলিকে ব্যাণ্ডে রূপান্তর করা হয়, তাকে বলে 'এলুশন' (এলতেেওন) ।


( ৫)

মনুষ্য-রক্তের শ্রেণির আবিষ্কার

আবিষ্কার : ১৯০১ খ্রীষ্টাব্দ
বিজ্ঞানী : কার্ল ল্যাণ্ডস্টাইনার

১৭১৮ খ্রীষ্টাব্দে হারভে 'রক্তসংবহন' আবিষ্কার করার পর থেকেই ক্রমাগত প্রচেষ্টা চলেছিল মানুষের দেহে শোণিত সংক্রমণ করার জন্য । ফরাসী দার্শনিক ডেনিস এবং শল্যচিকিত্সক মারে প্রথম চেষ্টা চালান মানুষের দেহে ভেড়ার রক্ত (১৫০ মিলিলিটার) সংক্রমন করার । পরবর্তীকালে আরও অনেকে এই প্রচেষ্টা চালান কিন্তু ফল হয় মারাত্মক । ফলশ্রুতি হিসাবে শোণিত সংক্রমণ বন্ধ হয়ে যায় ।
এক শতাব্দী পরে আবার প্রচেষ্টা হয় শোণিত সংক্রমণের । ১৮১৯ খ্রী-তে ব্ল্যান্ডেল ইতিহাসে প্রথম সাফল্যের সঙ্গে শোণিত সংক্রমণ করান, একজন মানুষের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে । তবে সাধারণভাবে বলা যায় শোণিত সংক্রমণ প্রচেষ্টা হতাশাজনক হয়ে দাঁড়ায় ; কখনও বা রোগী সুস্থ হন, কখনও বা তাঁর মৃত্যু হয় । বস্তুতঃ, এর কারণ মানুষের কাছে অজ্ঞাত ছিল ।
অস্ট্রিয়া-র স্কলার কার্ল ল্যাণ্ডস্টাইনার এই বিষয়ে গবেষণা শুরু করেন ১৯০০ খ্রী-তে । একটা টেস্ট টিউবে তিনি নিজের লোহিত রক্তকণিকা সঙ্গে মেশালেন নিজের শরীরের রক্তাম্বু (blood serum), কোনও পুঞ্জীভবন হতে দেখলেন না : যখন বিভিন্ন ব্যক্তির রক্তকণার সঙ্গে রক্তাম্বু মেশালেন, দেখলেন পুঞ্জীভুত হচ্ছে বা কখনও কখনও হচ্ছে না । এই ঘটনা অবশ্য অনেকেরই নজরে এসেছিল, কিন্তু ল্যাণ্ডস্টাইনার ছাড়া কেহই ব্যাখ্যা দিতে পারেননি । লোহিত রক্তকণিকার দু'প্রকারের বিশেষ গঠনবিন্যাস আছে যারা একত্রে অথবা আলাদা ভাবে থাকতে পারে । রক্তাম্বু-র একটি প্রতিরক্ষিকা (antibody) আছে, নাম লোহিত রক্তকণিকার ভিতরের বিশেষ গঠনের agglutinin; এই agglutinin যখন লোহিত রক্তকণিকার বিশেষ গঠনবিন্যাসের মধ্যে পড়ে, পূঞ্জীভবন হয় যা রোগীর রক্তসংবহন-কালে মারাত্মক হতে পারে । এর থেকে ল্যাণ্ডস্টাইনার একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, মনুষ্য রক্ত-শ্রেণী হল বংশাণুধৃত ।
১৯০৯ খ্রী-তে সমস্যার সমাধানকল্পে ল্যাণ্ডস্টাইনার রক্তকে চারটি শ্রেণী-তে ভাগ করলেন- A, B, AB এবং O। ডাক্তাররা রোগীর রক্ত পরীক্ষা করে সঠিক শ্রেণী নির্ধারণ করে রক্তসংবহন করতেন ।
যেহেতু রক্ত-সংবহন পূর্বে ধারাবাহিকভাবে বিফল হয়েছে, সাধারণ চিকিত্সকরা এটি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতেন ; তবে বহু সংখ্যক বিজ্ঞানী এটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যাচ্ছিলেন । নাটকীয়ভাবে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এনে দিল রক্ত-সংবহন পরীক্ষার এক বিশাল সুযোগ । যেহেতু যুদ্ধে আহতদের জীবন নিয়ে সমস্যা, রক্ত-সংবহন প্রথা হয়ে দাঁড়ালো আহতদের মৃত্যুর নিশ্চিত দরজা থেকে ফিরিয়ে আনার এক অস্ত্র । ডাঃ ওল্ডেনবার্গ প্রথম পুঞ্জীভবনের প্রতিক্রিয়া জানবার জন্য রক্ত-মিলান পরীক্ষা শুরু করলেন রক্ত-সংবহন প্রক্রিয়ার আগে । দু'জন ব্যক্তির মধ্যে রক্তসংবহন তখনই সম্ভব যখন কোনও পূঞ্জীভবন হবে না লোহিত রক্তকণিকা আর রক্তাম্বু মেশালে । এই প্রক্রিয়া বিশাল সাফল্য এনে দিল এবং প্রচুর জীবন বাঁচলো । পরবর্তী বত্সরগুলিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ব্যবহারের ফলে রক্ত-সংবহন হয়ে দাঁড়ালো একটি নিরাপদ ব্যবস্থা, এবং ১৯২০ খ্রী-র শেষদিকে ইয়োরোপ ও উত্তর আমেরিকায় রক্ত-সংবহন হয়ে দাঁড়ালো মেডিকেল শাস্ত্রের একটি সফল ও সর্বগ্রাহ্য প্রক্রিয়া ।
আমরা এখন জানি বিভিন্ন জাতির নরনারীর রক্ত-শ্রেণী বিভিন্ন রকমের । যথা, শ্রেণী O খুবই সাধারন UKতে, শ্রেণী B- এশিয়া মহাদেশে । O শ্রেণী হল সব থেকে পুরাণো- প্রস্তরযুগ থেকে এর অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে । শ্রেণীদ্বয় A ও B পরে এসেছে অভিপ্রয়াণ মারফত্, যেমন আফ্রিকা থেকে ইয়োরোপ খ্রী-পূর্ব ২০,০০০ থেকে ১০,০০০ -এর মধ্যে ।

বিশদ তথ্যের জন্য দেখুন : অবসর-স্বাস্থ্য বিভাগ, 'রক্ত অনুপ্রবেশীকরণের কথা' ।


দ্র: The Discovery of Human Blood Group, www.nobelkepu.org.cn/english/life/134450.shtml

শঙ্কর সেন

( চলবে )

 

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।