বিংশশতাব্দীতে
বিজ্ঞানে কিছু
আবিষ্কার ও উদ্ভাবন এবং ঘটনা
(৫৮)
সুমেরুর
বরফ-সঙ্কোচন ও জাহাজের গমনাগমন
অক্টোবর
০৭, ২০১৩ তারিখে Nordic Orion বিশালাকার মালবাহী
জাহাজ সম্পূর্ণ করল তার যাত্রা কানাডার ভানকুভার
থেকে ফিনল্যাণ্ডের পোরি (Pori) পর্যন্ত, প্রথমে
উত্তরমুখী হয়ে আলাস্কার চারদিক ঘুরে উত্তর-পূর্ব
পথ ধরে ( ১- চিত্র ১-এ ) ।
চিত্র
১ : সুমেরু-অন্তরে পথ ।
১- উত্তর-পশ্চিম পথ; ২- উত্তরের রাস্তা ।
সুমেরুর
বরফাচ্ছাদিত জলে এটাই প্রথম বাণিজ্যিক জাহাজ
। পানামা খালের পথ ত্যাগ করে এ-পথে ৫ দিন সময়
এবং জ্বালানিতে ৮০ হাজার ডলার সাশ্রয় হল । পানামা
থেকে গভীর রাস্তায় যাত্রা করার ফলে জাহাজ নিতে
পারল অনেক বেশি ভারী মাল যথা, কয়লা ।
সুমেরুর মধ্য দিয়ে অন্য বিকল্প পথ হল উত্তরের
রাস্তা (২- চিত্র ১-এ) । এই রাস্তা পরিবহনের
জন্য খুলছে আরও বেশি করে । ২০০৭ সালে মাত্র
দুটি জাহাজ রাশিয়ার উত্তরে গিয়েছিল ; ২০১০-এ
১০টি, রাস্তাটি আরও ব্যাস্ত হয়ে পড়ল । ৭১-টি
জাহাজ পূর্ণ করলো যাত্রা ২০১৩ সালে- চীনের প্রথম
মালবাহী জাহাজ । চীনের জাহাজে ছিল জাহাজীয় container.
অন্যান্য জাহাজে- জীবাশ্ম জ্বালানি যথা, ডিজেল
জ্বালানি ।
চিত্র
২ : উত্তরের সমুদ্রপথে জাহাজের যাতায়াত, ২০০৭
- ২০১৩ খ্রী ।
উত্স : Northern Sea Route Information office.
জাহাজ-সংখ্যার
এই বৃদ্ধি সম্ভব হয়েছিল বরফ-আচ্ছাদনের নাটকীয়
সঙ্কোচনের ফলে । সুমেরুর বরফের এত সঙ্কোচন আগের
সহস্র বছরে দেখা যায়নি । গ্রীষ্মে সুমেরুর আচ্ছাদনের
ঐতিহাসিক রেকর্ড আছে ১৪০০ বছরের বেশির । তারপরেই
মুক্ত-পতন শুরু হয়ে গেল- উপগ্রহ-চিত্রে দেখা
যাচ্ছে ১৯৭৯ সাল থেকে- প্রতি দশকে ১৪ শতাংশ
করে সঙ্কোচন হচ্ছে । ২০১২ সালের গ্রীষ্মে ইউ.এস.
ও মেক্সিকোর যুক্ত আয়তনের বরফ গলে গেল- আচ্ছাদন
কমে দাঁড়ালো ১৯৭৯-২০০০ সালের মধ্যে সবথেকে কমের
অর্ধেক । ২০১৩-র গ্রীষ্মে সুমেরু বরফের ঠিক
এতটা সঙ্কোচন হয়নি, তবুও ঘনহিসাবে চতুর্থ সবথেকে
কম ।
চিত্র
৩ : গ্রীষ্মশেষে সুমেরু-সমুদ্রে বরফের আয়তন,
৫০০ - ২০১৩ খ্রী ।
উত্স : Kinnard et al, NSIDC, NOAA, ESRL,
Worldwatch
তুষার
ও বরফ যা' সৌর-শক্তিকে প্রতিফলিত করে, তা' গলতে
শুরু করলে আরও তাপ শোষণ করে, আরও তুষার ও বরফ
গলে, বিশ্ব-উষ্ণায়ণ বর্ধিত হয় । সুমেরু নিম্ন
অক্ষাংশের থেকে দ্বিগুণ তাড়াতাড়ি উত্তপ্ত হয়
; ১৯৬০ থেকে এই অঞ্চলের তাপমাত্রা বেড়েছে ২
ডিগ্রী সেলসিয়াস । সুমেরু বরফাচ্ছাদিত হচ্ছে
১২৫,০০০ বছর ধরে, কিন্তু বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যত্বাণী
করছেন যে, ২০৫০-সালের আগেই কোনও গ্রীষ্মে হিমমুকুট(ice
cap)অদৃশ্য হয়ে যাবে । লস এঞ্জেলেসের ক্যালিফর্নিয়া
বিশ্ববিদ্যালয় মডেল নির্মাণের মাধ্যমে দেখিয়েছেন
কি ভাবে জাহাজগুলি উত্তর মেরু পার হয়ে সোজাপথে
যেতে পারবে । বিদ্রুপের মত শোনাবে- বরফের গলন
সুবিধা করে দিচ্ছে পরিবহন ও জীবাশ্ম জ্বালানি
বহন দুটোকেই- যারা তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্য
করছে । বিলুপ্ত-বরফ প্রলুব্ধ করছে সেই সব কোম্পানিগুলিকে
যারা আশা করে আছে কখন সুমেরু অঞ্চলের অনাবিস্কৃত
৯০ বিলিয়ন ব্যারেল তেলে এবং ১.৭ quadrillion
ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাসে তাদের থাবা বসাবে- একটি
বিপজ্জনক প্রচেষ্টা । রাশিয়া ফরাসী ও চৈনিক
শক্তি-কোম্পানিগুলির সহযোগিতায় গড়ে তুলছে একটি
তরল প্রাকৃতিক গ্যাস শিল্প ; প্লান করেছে এশিয়া
মহাদেশে রপ্তানী করবে উত্তর সমুদ্রের পথ দিয়ে
।
যখন জাহাজ- ও শক্তি-কোম্পানিগুলি গলনকে ভাবছে
এক অনপেক্ষিত প্রাপ্তি, বিজ্ঞানিরা একে ভাবছে
একটি সাবধানবাণী । উত্তপ্ত সুমেরু এলাকার বাইরে
অনেক দূর পর্যন্ত আবহাওয়া পাল্টে দেবে এবং গ্রীণল্যাণ্ডের
বিশাল বরফের স্তরের গলনের সঙ্গে সঙ্গে সারা
বিশ্বের সমুদ্র-লেভেল উন্নীতকে ত্বরান্বিত করবে
। এখনও সময় আছে গ্রীষ্মে সুমেরু-কে বরফ-হীন
না দেখার- যদি ত্বরান্বিত করা যায় শক্তি-অর্থনীতিকে
অচিরাচরিত-শক্তি দ্বারা আবৃত করার কাজ ।