আসলে
অনেক সময় নিজেদের উপযোগী সংখ্যার/তথ্যের দরকার
হয়;তখন নিজের মত করে তথ্য সংগ্রহ করে ব্যাখ্যা
করে জনসাধারণকে পরিবেশন করা হয়। সাম্প্রতিক
কালে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপসমূহে সুনামি
দুর্গতদের সম্পর্কে একটি প্রতিবেদনে দেখা
গেলো - মহিলা ও শিশুদের মধ্যে মৃতের সংখ্যা
অনেক বেশি: sex ratio অভূতপুর্ব কমে গেছে
- ইত্যাদি ইত্যাদি। ঐ রিপোর্টে দেওয়া অন্য
তথ্যের সংগে সংগতি খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল ৫০%
মহিলার সংগে সংগে ৪৭% পুরুষও মৃত। এখানে ইচ্ছে
করে একপেশে তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে।
এখন
ভুল ঠিক বোঝার উপায় কী? সাধারণভাবে যে কোনো
স্ট্যাটিস্টিকাল বা পরিসাংখ্যিক ব্যাখ্যার
ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজতে
হবে।
(১)
তথ্য কোথা থেকে এল? কারা সার্ভে করলো? কোনো
বিশেষ উত্তরের উপর তাদের পক্ষপাতিত্ব থাকতে
পারে কিনা?
(২) তথ্য নেওয়ার পদ্ধতি কী ছিল? কাদের থেকে
নেওয়া হল? তাদের select করা হল কিভাবে?
তুলনামূলক
সংখ্যার জাদুতে ঠকবেন না। দুটো ঘটনা একসংগে
ঘটলেও তারা কাকতালীয় বা অন্যান্য অনেক তথ্যের
উপর নির্ভরশীল হতে পারে। রাজনীতিকরা এভাবেই
বলেন এই নীতির জন্যেই দেশের সু/কু ফল ফলছে।
সাধারণভাবে বলা যেতেই পারে সিগারেট কোম্পানীর
করা 'passive smoking' এর কুফল সম্পর্কিত
তথ্য নিরপেক্ষ হওয়া অসম্ভব।একই রকমভবে ওষুধ
কোম্পানীর করা ওষুধের কার্যকারিতা সংক্রান্ত
তথ্যের উপরও ভরসা করা অনুচিত; এখানে ওষুধের
জায়গায় সাবান, পেস্ট, ফিনাইল, গাড়ীর টায়ার
যা কিছু হতে পরে। এসব ক্ষেত্রে জরুরি হল sample
size, selected individual আর method of selection।
আবার বিভিন্ন ভাবে পরিবেশিত গ্রাফেও অনেক
গণ্ডগোল থাকে। base line এর অসাম্য scale-এর
ত্রুটি, এমনকি রং ব্যবহারের তারতম্যও ভুল
বিশ্লেষণ বা ভুল ব্যাখ্যার উৎস হতে পারে।
আসলে
স্ট্যাটিস্টিকসের জাদুশক্তি অপরিসীম - সাধারণ
ভাবে 'অঙ্কে ভীত' জনসাধারণকে কিছু সংখ্যার
কারিকুরি দেখলে 'ও বাবা এ কিছু জটিল ব্যাপার
হবে' এই ভাবখানাই প্রবল হয়ে থাকে। এই সুযোগে
খুশি মত অপব্যাখ্যা করা হয় ও স্ট্যাটিস্টিকসের
'মিথ্যেবাদী' দুর্নাম ছড়াতে থাকে।
আবোল
তাবোল তথ্য উপস্থাপিত করা সহজ কিন্তু সঠিকভাবে
সংগৃহীত তথ্য সঠিকভাবে পরিবেশনের জন্য স্ট্যাটিসটিকস
বিষয়ে দক্ষতা, সাধারণ বুদ্ধি এবং সততা তিনটিই
সমানভাবে দরকার। যতদিন তা না হচ্ছে ততদিন
দুটো ছাগল চারটে কাক, তিনটে বাঁদরের তুলনামূলক
বিশ্লেষণ লেখা চলতে থাকুক এবং সাধারণে পড়তে
থাকুক। বিষয় হিসেবে স্ট্যাটিসটিকস সিরিয়াস
অধ্যয়নসাধ্য। শুধুমাত্র mean, standard deviation
ইত্যাদি শিখে 'ংMS-Excel' এর সাহায্যে তৈরি
রিপোর্ট, বিশ্লেষণ এবং ব্যাখ্যা করলে যে জিনিস
দাঁড়াবে তা এ রচনার শিরোনাম।
স্ট্যাটিসটিকসের
ক্ষেত্রেও Computer Application-এর GIGO -
Garbage In Garbage out সমানভাবে
প্রযোজ্য। যদি কোনো সার্ভেতে ভুল প্রশ্ন ভুল
লোককে ভুল ভাবে জিজ্ঞাসা করা হয় তবে তার থেকে
অর্থ যুক্ত বিশ্লেষণ করা অসম্ভব। এ সম্পর্কে
বিখ্যাত স্ট্যাটিস্টিশিয়ান R.A.Fisher-এর
এক অনুপম বিবৃতি আছে - 'The
Statistician is no longer an alchemist expected
to produce gold from any worthless material
offered to him. He is more like a chemist
capable of assaying exactly how much value
it contains, and capable also of extracting
this amount, and no more ।'
তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যা, এবং পরিবেশন
একটা গোটা বিষয় এবং এর কোনো অংশে ফাঁক/ফাঁকি
থাকলে অর্থহীন তথ্যের বোঝা বেড়ে চলে এবং মার্ক
টোয়েনের উক্তির যাথার্থতা বজায় থাকে।
বন্দনা
দাশগুপ্ত