আমার
দেখা অঙ্কোর ভাট (Angkor Wat)
আমি যখন ক্লাস সেভেনে
পড়তাম, তখন আমাদের একটা world history-র ক্লাস
করতে হত। এই ক্লাসে আমি প্রথম বার অঙ্কোর ভাট-এর
কথা জানলাম। কম্বোডিয়ার এই বিশাল মন্দিরের কথা
পড়ে খুব ঔৎসুক্য হয়েছিলো। ভারতবর্ষ ছাড়া যে
অন্য কোন দেশে এত বড় মন্দির বানানো হয়েছে এটা
তো আগে জানতাম না! তখন থেকেই খুব ইচ্ছা ছিলো
এই সৃষ্টিকে সামনে থেকে দেখার। আজ তার কুড়ি
বছর পরে আমি আর আমার উনি সেই অঙ্কোর ভাট দেখার
জন্যে কম্বোডিয়ার টিকিট কাটলাম।
প্রথমে কলকাতা থেকে
Bangkok, সেখান থেকে Siem Reap গেলাম। কি সুন্দর
দেশ। প্লেন থেকে নিচে তাকালে মনে হয় গ্রাম বাংলার
ওপর দিয়ে যাচ্ছি। সবুজ ধান ক্ষেত, তার মধ্যে
ছোট ছোট বাড়ী, পুকুর আর দেদার তাল গাছ।
ছোট এয়ারপোর্ট,
দেখলে মনে হবে যেন কোনো হিল স্টেশন – ছিমছাম
, পরিষ্কার । আমরা কম্বোডিয়ার সরকারী ওয়েবসাইট
থেকে ই-ভিসা করিয়ে নিয়েছিলাম, তাই সবার আগে
ইমিগ্রেশন দিয়ে বেরিয়ে গেলাম। বাইরে আমাদের
হোটেলের ঠিক করা ড্রাইভার দাঁড়িয়ে ছিল - আমাদের
নাম লেখা বোর্ড হাতে নিয়ে। আমাদের দেখে আগে
একটা প্রণাম করলো – অনেকটা আমরা যেমন কারুকে
দেখলে নমস্কার করি – সেই রকম – কিন্তু একটু
মাথাটা বেশী ঝুঁকিয়ে। লোকটি ভারী ভদ্র আর সব
সময় মুখে হাসি।
Siem Reap ছোট শহর , অনেকটা আমাদের দেশের মতোই
কিন্তু রাস্তা ঘাট পরিস্কার। হোটেলে পৌঁছে জিনিস
পত্র ফ্রণ্ট ডেস্কে রেখে বেড়িয়ে পরলাম মন্দির
দেখতে।
Siem Reap থেকে
৮ কিলোমিটার দূরে অঙ্কোর ভাট। যারা এই এই জায়গাটা
সম্পর্কে বেশী খবর রাখেন না তাদের বলি, যদিও
অঙ্কোর ভাটই সব থেকে বড় মন্দির, কিন্তু এ ছাড়াও
বিশাল জায়গা জুড়ে প্রচুর মন্দির। অঙ্কোর কথাটার
উৎপত্তি সংস্কৃত থেকে - যার মানে হল নগর বা
city। অর্থাৎ এটি হল মন্দিরের শহর বা “Temple
City”। ৯০০ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ১২০০ খ্রীষ্টাব্দের
মধ্যে তৈরি এই মন্দিরগুলি। বেশির ভাগ হিন্দু
মন্দির। সেই কালে ভারতের প্রচুর বাণিজ্য পথ
ছিল যেগুলি বর্মা, কম্বোডিয়া এবং ভিয়েৎনামের
উপকূল অবধি যেত। ভারত তখন এই প্রান্তের সব থেকে
প্রগতিশীল দেশ ছিল। লোকেরা মনে করত যে ভারতীয়দের
সাফল্যের পেছনে তাদের দেবতাদের বড় আশীর্বাদ
রয়েছে। লোককথা অনুসারে কম্বোডিয়ার উৎপত্তি একটি
ব্রাহ্মণ আর একটি নাগ কন্যার বিবাহ থেকে। তার
পর থেকে কম্বোডিয়াতে হিন্দু ধর্ম আস্তে আস্তে
স্থাপিত হয়। জনমানসে বিশেষ স্থান অধিকার করে
মহাভারত , রামায়ণ এবং বেশ কিছু হিন্দু পুরাণ
কাহিনী। দেবতাদের মধ্যে শিবের ভক্তই ছিল বেশী
– তারপর স্থান ছিলো বিষ্ণুর। অঙ্কোরভাট এবং
তার আসে পাশের বেশির ভাগ মন্দিরই শিবের।
আমরা
প্রথমে গেলাম Preah Khan-এ। একাদশ শতাব্দীর
এই মন্দিরটি যদিও শিব মন্দির, এটির গঠন বুদ্ধ
বিহার এর মতন। এটি সেই সময়ে তৈরি যখন কম্বোডিয়ার
রাজা হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে বৌদ্ধ ধর্মকে আশ্রয়
করার কথা ভাবছেন। পাথরের ওপর পাথর বসিয়ে তৈরি
মন্দির –কোথাও কোনও সিমেণ্টের চিহ্ন নেই। ৮০০
মিটার লম্বা ভেতরের দেওয়ালে নিখুঁত কারুকার্য
আজও দেখা যায়। দেখা যায় প্রচুর অপ্সরাদের মূর্তি।
কম্বোডিয়ার সংস্কৃতিতে অপ্সরাদের একটা উচ্চ
স্থান ছিল, খানিকটা আমাদের দেশের দেবদাসীদের
মত। ভগ্নস্তুপের মধ্যে বেশ কিছু গাছ গজিয়ে আছে।
দেখে বোঝা যায় যে গাছগুলি বেশ কয়েকশো বছর ধরেই
আছে।
শিকড়গুলি কোনও কোনও জায়গায় মন্দিরের পাথরগুলোকে
আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে আছে যেন তারা প্রাণের বন্ধু।
তা নাহলে এই পাথরগুলি কোন কালে স্থানচ্যুত হয়ে
ছড়িয়ে পড়ত।
এখান থেকে
আমরা এলাম Neak Preah Pom-এ। যেহেতু আমরা কম্বোডিয়ায়
বর্ষাকালের শেষে গিয়েছিলাম, এই মন্দিরের রাস্তাটি
পুরোপুরি জলে ভরা ছিল। এর মধ্যে দিয়ে একটি কাঠের
ব্রিজের মতন বানানো যেটা দিয়ে অনেকটা গেলে Neak
চোখে পরে। এটি ঠিক মন্দির নয় – রাজার বানানো
খুব বড়সর জলাশয় বলা যেতে পারে। মাঝখানের চোবাচ্চায়
বিশাল বাসুকি নাগের মতন মূর্তি। চার পাশে আরও
চারটি চোবাচ্চা। যখন এটি তৈরি করা হয়েছিল ,
তখনকার কারিগররা নাকি এই পাঁচটি চোবাচার জল
এদিক ওদিক করার ব্যবস্থা করেছিল। আজও অনেক প্রত্নতাত্বিক
গবেষকরা অঙ্কোরের এই জল পরিবহনের এই ব্যবস্থাটি
বোঝার জন্যে দিন রাত লেগে আছেন।
আমাদের পরের গন্তব্য
Ta Som। ছোট মন্দির, একেবারে পোড়ো পোড়ো অবস্থা।
অনেক জায়গাতে কাঠের আর লোহার ভাড়ার মত বেঁধে
মন্দিরের দেওয়ালগুলিকে ঠেসান দিয়ে দাঁড় করিয়ে
রাখতে হয়েছে। যারা এটিকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে
আনার কাজ করছে, তাদের কাছে এই আধ ভাঙ্গা মন্দিরগুলি
jigsaw puzzle-এর মতন। মন্দিরের আসেপাশে এখনো
পাথরের স্তুপ পড়ে রয়েছে। যে পাথরগুলো ঠিকমত
বসানো গেছে, সেগুলো বসানো হয়েছে। এই পাথরগুলো
মন্দিরের কোথায় ছিল এখনো বোঝা যায়নি বলে পাশে
রেখে দিয়েছে। প্রতিটিতে নিখুঁত খোদাই করা কাজ।
এর
পর আমরা অঙ্কোরের প্রধান চত্বর থেকে ১৬ কিলোমিটার
দূরে একটা ছোট মন্দির দেখতে গেলাম, যার নাম
Banteay Srei। পিঙ্ক স্যান্ডস্টোন দিয়ে তৈরী
এই দেবী মন্দিরটি বানানো হয়েছিলো ৯০০ খ্রীষ্টাব্দে।
এটিই সবচেয়ে পুরানো মন্দির এবং একমাত্র মন্দির
যেটি রাজার বানানো নয় এবং দেবীকে উৎসর্গ করা।
ফরাসীরা যখন মন্দিরগুলির সংস্কার আরম্ভ করে
Banteay Srei-কে নিয়েই তাদের কাজ শুরু করেছিলো।
এই মন্দিরের কারুকার্য এতোই নিখুঁত যে পি.সি.চন্দ্রও
লজ্জিত হবে। প্রত্যেকটি পাথরের গা যেন গয়নার
মতন করে সাজানো - নে দেখলে বিশ্বাস হয় না। মন্দিরের
চূড়াগুলো দেখলে অনেক চেনা জিনিস চোখে পড়ে - রামায়ণের
ছবি, শিব ঠাকুরের তাণ্ডব নৃত্য , রামের বানরসেনা
আর অনেক কিছু। প্রধান দরজার ভেতরে ছোট ছোট চারটি
মন্দির – প্রত্যেকটি যেন অলঙ্কার।
আবার ফিরলাম অঙ্কোরের
চত্বরে সূর্যাস্ত দেখার জন্যে। বেশির ভাগ ট্যুরিস্টরাই
সূর্যাস্ত দেখতে Phnom Bakheng-এ যায়। এটি হল
পাহাড়ের ওপর একটি মন্দির – যেখান থেকে অঙ্কোরভাট
অনেকটা কাছে। কিন্তু ট্যুর-গ্রুপগুলি ওখানে
এত ভিড় করে যে গড়িয়াহাট এর মোড়ে দাঁড়িয়ে বা
পৌষ মেলাতে শান্তিনিকেতনে গিয়ে যদি কেউ সুর্যাস্ত
দেখতে যায়, অবস্থা অনেকটা সেরকম হবে। তাই আমরা
গেলাম Pre Rup। অঙ্কোরের বেশির ভাগ মন্দির মেরু
পর্বতকে নকল করে বানান। তিন বা চার ধাপের মন্দির,
কিন্তু এক একটি ধাপ বিশাল উঁচু। একদম ওপরের
ধাপে গর্ভ গৃহ। Pre Rup-এর গায়ের প্রায় সব কারুকার্য
এখন খসে গেছে – এক আধটা বাদে। মন্দিরের একদম
ওপরের ধাপে আরও অনেকের সাথে বসে সূর্যাস্ত দেখলাম।
দিনের শেষে ভরা মন আর ক্লান্ত পা নিয়ে হোটেল
এ গিয়ে ধরাশায়ী হলাম।
পরের
দিন ভোর ৫ টাতে বেরিয়ে গাড়ি করে গেলাম - অঙ্কোর
ভাট-এ সূর্যোদয় দেখতে। অঙ্কোর ভাটের মন্দির
একটি বিশাল সুরক্ষা পরিখা দিয়ে ঘেরা। ঘুটঘুটে
অন্ধকারে পড়ি কি মরি করে সেটা পেরলাম পাথরের
একটি বিশাল ব্রিজ দিয়ে গিয়ে দাঁড়ালাম মন্দিরের
সামনে যেখানে আরও অনেক লোক জমা হয়েছে। মন্দিরটা
তখন খুব আবছা দেখা যাচ্ছে। আস্তে আস্তে আকাশ
হাল্কা হতে লাগলো আর মন্দিরটা যেন প্রায় ফুঁড়ে
বেরুল। সেই আলোতে দেখলে সত্যি মনে হয় যেন আকাশ
ছোঁয়া মেরু পর্বত। মন্দিরের সামনে পুকুর আর
তার মধ্যে ফুটে আছে গোলাপি শালুক। সূর্যটা ঠিক
যেন মন্দিরের স্তুপের গা ধরে ধরে আকাশে উঠল
– সে যে কি অপরূপ দৃশ্য, তা ঠিক লিখে ব্যাখ্যা
করা মুস্কিল।
এরপর আমার ঢুকলাম মন্দিরের ভেতরে। তিন ধাপের
মন্দির। এত বড় মন্দির আমি কোনদিন ভারতে দেখিনি।
পরে পড়ে জানলাম
যে অঙ্কোর ভাট দুনিয়ার সব থেকে বড় হিন্দু মন্দির
– জলের সুরক্ষা পরিখা সমেত এটি ২০০ হেক্টা একর
জায়গা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনেক সিঁড়ি বেয়ে মন্দিরের
প্রথম ধাপে পৌঁছলাম – এই ধাপে শুধু লম্বা বারান্দা
যেটি চার দিক ধরেই আছে। এক একটি দিকে দুটি করে
নিচু নক্সা-দেয়াল। দেওয়াল জুড়ে খোদাই করা সচিত্র
নানা কাহিনী । প্রথমটি হল মহাভারতের যুদ্ধ ।
একপাশে ভীষ্মকে দেখলাম তীরের শয্যাতে শোওয়া
- আরেকদিকে রথে অর্জুন আর তার সাথে সারথি কৃষ্ণ।
এর চারিপাশে যুদ্ধরত অনেক সৈন্য আর ঘোড়া। এরকম
আরও দুটো নক্সা-দেয়াল। আমাদের চেনা কাহিনী –
একটি রামায়ণ আর একটি সমুদ্র মন্থন। এ ছাড়া রাজা
সূর্যবর্মণের জীবনী নিয়ে দুটি নক্সা-দেয়ালও
দেখলাম। যারা মহাবাল্লিপুরমের নক্সা-দেয়াল দেখেছেন
– তাদের বলি, অঙ্কোর ভাটের এর একটি নক্সা-দেয়াল
মহাবাল্লিপুরমের দশগুণ কি আরও বেশী লম্বা। বারান্দাগুলির
ভেতর থেকে আরেকটা লম্বা সিঁড়ি উঠে গেছে দ্বিতীয়
ধাপে। আসল সিঁড়িগুলি এতো ক্ষয়ে গেছে যে কাঠের
সিঁড়ি বানানো রয়েছে। দ্বিতীয় ধাপটি প্রথমটির
থেকে আকারে ছোট আর চার কোণাতে চারটি স্তূপ এবং
স্তূপগুলির মধ্যে টানা বারান্দা। সেখানে দাঁড়িয়ে
একদম ওপরের ধাপটা দেখলে মনে হয় যেন ওটি আকাশ
ছুঁয়ে রয়েছে। প্রত্যেকটি স্তূপের গা-ভর্তি কারুকার্য,
যেদিকে তাকাই সেইদিকেই অপ্সরারা হাসিমুখে আমাদের
দিকে তাকিয়ে আছে।
এতো
বছরে কোন কোন অপ্সরা অনেকটাই ক্ষয়ে গেছে শুধু
মাত্র হাস্যময় ঠোঁট দেখা যাচ্ছে মাত্র। এখান
থেকে শেষ ধাপে ওঠার সিঁড়ি ভীষণ খাড়া এবং অনেকটা
উঁচু। এই ধাপের চার কোণে চারটি স্তূপ আর একদম
মধ্যিখানে চার মুখী গর্ভ গৃহ। দেওয়ালের গায়ে
নিখুঁত কারুকার্য। গর্ভ গৃহে এক সময় বিষ্ণুর
মূর্তি ছিল; আজও তার কিছুটা অখণ্ড আছে। চতুর্দশ
আর পঞ্চদশ শতাব্দীতে অঙ্কোর ভাট বৌদ্ধমঠ ছিল।
সেই সময় এখানে বুদ্ধের মূর্তি স্থাপনা করা হয়েছিল।
আজ সেই বুদ্ধের মূর্তির সামনে আর পেছনে অন্ধকারে
দেখা যায় বিষ্ণুর মূর্তি। নিচে নেমে মন্দিরের
প্রধান দরজা দিয়ে বেরিয়ে এলাম। এই দরজাটির দু
পাশে বাসুকির পাহারা। সব দেখে অবাক লাগে যে
হিন্দু ধর্ম অন্য কোন দেশে এতো গভীর শিকড় গেড়েছিল।
কিন্তু আজ কম্বোডিয়েতে একটিও হিন্দু নেই – সবাই
বৌদ্ধ। ইতিহাস পড়লে মনে হয় যেন মুঘলরা , ব্রিটিশরা
ডাচরাই দুনিয়ার অন্য জায়গা জয় করে রাজত্ব করেছিল
– কিন্তু ভারতবর্ষও যে কখন এরকমই করেছিল – এখান
থেকে এটা একটা নতুন জানা।
অঙ্কোর ভাটের ঠিক
পেছনে অঙ্কোর থম। এটি বানানো হয়েছিল এক শহর
হিসাবে। এর গেটের ওপরে চারটে মাথা – অনেকটা
আমাদের অশোক স্তম্ভের মতন।কেউ কেউ বলে মুখগুলো
বোধিসত্ব অবলোকিতেশ্বরের। অনেকে আবার মনে করে
এগুলো রাজার মুখ ; প্রজাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
অঙ্কোরর থমের দরজা দিয়ে ঢুকে প্রথমে পরে Bayon।
মন্দিরের মতন বানানো এই গৃহে ৫৪ টি স্তুপ আছে
আর প্রতিটির ওপর চারটে মুখ – সব মিলিয়ে ২১৬-টি
মুখ আমাদের দিকে সব দিক থেকে আর প্রত্যেক কোণ
থেকে সব সময় তাকিয়ে আছে মনে হয়। অদ্ভুত একটা
অনুভূতি হয় এখানে দাঁড়ালে। অবশ্য অনেকগুলি মুখের
বেশীর ভাগ ক্ষয়ে গেছে – কারো হয়ত বা শুধু চোখ
দেখা যায়, কারো নাক, বা কারো ঠোঁট। Bayon এর
পাশে আরেকটি খুব আকর্ষণীয় গৃহ – Baphuon। এটিও
মন্দির , সেই মেরু পর্বতের নক্সাতে বানানো –
কিন্তু অনেক বেশী ঘন-সন্নিবিষ্ট। ফরাসীরা মন্দিরটিকে
পুনঃনির্মাণ করার জন্যে প্রতিটি পাথর নামিয়ে
ছিল, এবং প্রতিটি পাথরে একটা নম্বর দিয়ে রেখেছিল
যে কোনটা কোথা থেকে এসেছে। তারপর jigsaw র মতন
পাথরগুলো সাজিয়ে মন্দিরটি আবার বানিয়েছিল। ১৯৭৫
সালে যখন Khmer Rouge কম্বোডিয়াতে এলো তখন এগুলি
Phnom Penh-এর যুদ্ধে পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। তার
প্রায় ২৫ বছর পরে ফরাসীরা আবার এই jigsaw টি
শেষ করার কাজে লেগেছে। এখন মন্দিরের চারি পাশে
অনেক jigsaw র মত পাথর পড়ে আছে। এই দুটি মন্দির
ছাড়া অঙ্কোর থমে আছে রাজার পুরনো ভাঙ্গা প্রাসাদ
এবং দুটি বিশাল বড় চাতাল যেখান থেকে রাজা প্রজাদের
দর্শন দিতেন।
একদম
শেষে আমরা গেলাম আরেকটি মন্দির, Ta Prohm। যখন
এই মন্দিরগুলির খোঁজ পাওয়া যায়, তখন বেশির ভাগ
মন্দিরই গভীর জঙ্গলে ঘেরা ছিল। Ta Prohm মন্দিরটিকে
জঙ্গল প্রায় গিলে খাবার চেষ্টা করছে বলে মনে
হয়। এই মন্দিরকে এমন ভাবে রাখা হয়েছে যাতে পর্যটকরা
দেখে বুঝতে পারে যে কিরকম অবস্থাতে বেশীর ভাগ
মন্দিরগুলি পাওয়া গিয়েছিল। Ta Prohm-এর রক্ষণাবেক্ষণ
আর পুননির্মাণের এর কাজ করছে Archaelogical
Society of India – বোর্ডে এই লেখাটা দেখে আমার
বুকটা গর্বে বেশ ফুলে গেল। মন্দিরটি ছোট, কিন্তু
সব জায়গা থেকে গাছ ফুঁড়ে বেরোচ্ছে। বিশাল গাছ
– এত বড় গাছ আমি আগে দেখিনি । মোটা মোটা শিকড়
পাথরের ভেতর থেকে বেরিয়ে চারদিকে পাকিয়ে , জড়িয়ে
রয়েছে। এত গেলো গেলো অবস্থা যে শিকড়গুলো কাটলে
পুরো মন্দির ই ভেঙ্গে পরবে। অদ্ভুত গাছ এগুলি;
শিকড়গুলো চিকচিক করে – যেন সোনার জল দিয়ে পালিশ
করা। মন্দিরের চারটি টানা বারান্দার মধ্যে আড়াইটে
ধ্বসে পড়ে গেছে। চতুর্থটি পুনঃনির্মান করা হয়েছে।
এমন করে যে ভাঙ্গা জিনিস নতুন করে গড়া যায় –
না দেখলে বিশ্বাস হয়না।
Ta
Prohm আমাদের অঙ্কোর ভ্রমণের শেষ জায়গা। আমাদের
দেখা মন্দির ছাড়াও আরও ছোট বড় অনেক মন্দির আছে।
সারা কম্বোডিয়াতে তে এরকম মন্দির প্রচুর বানানো
হয়েছিল। আমাদের এই যাত্রায় তার মাত্র কয়েকটি
দেখারই সুযোগ হল। যারা পুরনো স্থাপত্য দেখতে
ভালবাসেন, তাদের অনুরোধ করবো যে একবার দেখে
আসুন কি জিনিস তৈরি করেছিল ওরা।
ধর্মপ্রচার দুনিয়ার বড় বড় ধর্মের একটা অঙ্গ, হিন্দু
ধর্ম বাদে। আমি ধার্মিক নই, কিন্তু আমার কাছে
খুবই কৌতূহলের বিষয়, কি ভাবে হিন্দু ধর্ম এতো
দূরে ছড়াল এবং কেনই বা সেটা হারিয়ে গেল। হিন্দু
ধর্ম থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে এরা কি অপূর্ব মন্দিরগুলো
বানিয়ে রেখে গেছে , এটা একটা অতি আশ্চর্য ব্যাপার।
শ্রুতি
দেবরায়
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)