প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

কোদাইকানেল (প্রথম পর্ব)

কোদাইকানেল তামিলনাড়ুর তালুক জেলায় একটি আকর্ষণীয় হিল স্টেশন। এটি দক্ষিণ ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পূর্বদিকের ঢালে পারেপ্পার ও গুন্ডার উপত্যকার মাঝে ‘পালানি পর্বতের’ উপর একটি ছোট শহর। এর উচ্চতা ২১৩৩ মিঃ। এই শহরটি আমেরিকান খ্রিষ্টান মিশনারি এবং ইংরেজ অফিসাররা ১৮৩৫ সালে তৈরি করেছিলেন। এখানে প্রধানত ‘পালাইয়ার’ আদিবাসীদের বাসস্থান ছিল। কোদাইকানেল শহরটি পত্তনের পর এটি প্রধানত ইংরেজ অফিসারদের গ্রীষ্মাবাস হিসাবে ব্যবহার হত। পরে অনেক ধনী ভারতীয় এখানে বসবাস শুরু করেন। এখানে শিক্ষিতের সংখ্যা প্রায় ৯০% কাছাকাছি। এখন কোদাইকানেল একটি পর্যটন নির্ভর শহর।

তামিল ভাষায় কোদাইকানেল শব্দের অর্থ “পাহাড়ের রানি” অথবা “বনের অবদান”। দুটি অর্থই আক্ষরিক ভাবে প্রযোজ্য। এত সুন্দর হিল স্টেশন খুব কমই আছে যেখানে পাহাড়, বন, লেক, মেঘ এবং আরও কিছু মিলে এক অপূর্ব পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এই শহরে এবং পাহাড়ে অনেক জায়গাতেই লম্বা ঘাস এবং এক রকম সুন্দর হলুদ রঙের জংলী ফুলের ছড়াছড়ি (ছবি নং ১)।

১ নং ছবি – সুন্দর হলুদ ফুল। কোদাইকানেলে যত্রতত্র এরা ফুটে থেকে কোদাইকানেলের সৌন্দর্য বাড়ায়।

এছাড়া ফুল ভরা বড় বড় গাছ যেমন রোডোডেনড্রন ও ম্যাগনোলিয়া এর সৌন্দর্য আরও বারিয়ে দিয়েছে। প্রকৃতির দেওয়া এবং মানুষের তৈরি অনেক বাগান কোদাইকানেলের সম্পদ। আর আছে ইউক্যালিপটাস, সাইপ্রাস, আকাসিয়া ও ‘সোলার’ জঙ্গল। নাসপাতির মত সুস্বাদু ফলের গাছও এখানে আছে অনেক। কিন্তু সবার উপরে আছে পাহাড় – বিশাল ও সুন্দর পাহাড়।

বাস বা গাড়ী করে কোদাইকানেল আসতে হয় কারণ এর খুব কাছে কোন রেল ষ্টেশন বা এয়ারপোর্ট নেই। সব থেকে কাছের রেল ষ্টেশন পালানি কোদাইকানেল থেকে ৬৪ কিঃ মিঃ দূরে। আরও দূরে আছে কোদাই রোড রেল ষ্টেশন (৮০ কিঃ মিঃ) ও ডিঙ্গিগুলি রেল ষ্টেশন (১০০ কিঃ মিঃ)। সব থেকে কাছের এয়ারপোর্ট গুলোর মধ্যে আছে মাদুরাই ১৩৫ কিঃ মিঃ, কোইম্বাটোর ১৭০ কিঃ মিঃ ও ত্রিচি ২০০ কিঃ মিঃ দূরে।

আমরা কোইম্বাটোরের দিক থেকে বাসে করে এসেছিলাম। আসার রাস্তা যেমন খুবই ভাল তেমনি আকর্ষণীয় পালানি হিলের বা বাটলাগুন্দুর আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা। দুপাশের পাহাড় এবং জঙ্গলের দৃশ্যও অপূর্ব সুন্দর। (ছবি নং ২)।

২ নং ছবি – কোদাইকানেল আসার পথে বাস থেকে দেখা সুন্দর দৃশ।

ল ঘাট রোড দিয়ে কোদাইকানেলে ঢোকার বাঁকের মুখেই (কোদাইকানেলের কেন্দ্র থেকে ৮ কিঃ মিঃ দূরে) দেখা যাবে সুন্দর জলপ্রপাত – সিলভার আরকেড। (ছবি নং ৩)।

৩ নং ছবি – জলপ্রপাত ‘সিলভার আরকেড।‘ কোদাইকানেল লেকের জলে পুষ্ট এই সুন্দর জলপ্রপাত আরও সুন্দর হয়ে ওঠে।

কোদাইকানেল লেকের জল এই জলপ্রপাত দিয়ে দুভাগে ভাগ হয়ে ৫৫ মিঃ নিচে নেমে এসে এক অপূর্ব দৃশ্য ও মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি করে। সিলভার আরকেডের জল নীচে নেমে আরও একটা জলপ্রপাত সৃষ্টি করেছে। সেটিও খুব সুন্দর। এখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাতে ইচ্ছে করে।

অবশ্য এই জলপ্রপাতটি সুন্দর হলেও এর জল দূষণ মুক্ত নয় এবং স্নানের উপযুক্ত নয়। এখানে অনেক পর্যটক আসেন তাই এখানে অনেক ছোট ছোট সুভেনিরের ও খাবারের দোকান আছে। নৈনীতালের মত এখানেও ঘরে তৈরি সুস্বাদু চকোলেট পাওয়া যায়।

এছাড়া পর্যটকদের আকর্ষণ করার মত অনেক জায়গা কোদাইকানেলে আছে – যেমনঃ

গ্রিন ভালী ভিউ (ছবি নং ৪,৫)। ৪ নং ছবি বড় করে দেখতে হলে ছবির ওপর ক্লিক করুন।

৪ নং ছবি - গ্রিন ভালী ভিউ বা সুইসাইড পয়েন্টের প্যানারমিক ভিউ।

৫ নং ছবি - গ্রিন ভালী ভিউ থেকে ১৫০০ মিঃ নীচের ক্লোজআপ ভিউ। নীচে অনেক উইন্ড পাওয়ার জেনারেটর (সাদা রং এর) দেখা যাচ্ছে।

কোদাইকানেলের বাস স্ট্যান্ড থেকে ৫ কিঃ মিঃ দূরে এই পয়েন্টটি খুব সুন্দর। তবে ঢোকার মুখে অনেক সারি সারি দোকান পাট আছে যা বেনারসের বিশ্বনাথ গলির কথা মনে করিয়ে দেয়। আগে এই জায়গাটাকে কেন জানিনা সুইসাইড পয়েন্ট বলা হত- এখানে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকলে মন উদাস হয়ে যায় তাই হয়তো। দক্ষিণ দিকে ১৫০০ মিঃ নিচে সমতল ভূমির মনোরম প্যানারমিক দৃশ্য সত্যই মন উদাস করে দেয়। এখান থেকে ভাইগাই ড্যামও দেখা যায়।

পিলার রক (ছবি নং ৬, ৭ ও ৮)।

৬ নং ছবি - তিনটি উঁচু বিশাল পাথরের চ্যাঁই থামের বা পিলারের মত দাড়িয়ে আছে। তাই এর নাম পিলার রক।

৭ নং ছবি – তিনটি পিলারের মধ্যে দুটিই মেঘে ঢেকে গেছে। প্রায়ই তিনটি পিলারই মেঘের আড়ালে হারিয়ে যায়। বেশ মজার ব্যাপার।

৮ নং ছবি - পিলার রক দেখতে অনেকে আসেন। কিন্তু জায়গাটা বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে।

বাস স্ট্যান্ড থেকে ৮ কিঃ মিঃ দূরে এবং গ্রিন ভালী ভিউ পয়েন্ট থেকে ৩ কিঃ মিঃ দূরে এই জায়গাটিকে তামিলনাড়ু সরকারের বন দপ্তর ফুলের বাগান দিয়ে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছে। এখান থেকে পাথরের তিনটি ১২২ মিঃ উঁচু বিশাল চ্যাঁই দেখা যায়। মনে হয় যেন তিনটি বিশাল থাম (পিলার) দাড়িয়ে আছে। তাই এর নাম পিলার রক। অপূর্ব পরিবেষ, মেঘের আনাগোনা এবং আরও মজার ব্যাপার – ক্ষণে ক্ষণে এর রূপ বদলায়। মুহূর্তের মধ্যে হয়ত একটি, দুটি বা তিনটি পিলারই চক্ষের সামনের থেকে উধাও হয়ে গেল। ব্যাপারটা চাক্ষুষ না করলে অনুভব করা মুশকিল।

যারা ফুল ভাল বাসেন তাদের জন্য এই জায়গাটার একটি অতিরিক্ত আকর্ষণ সুন্দর ফুলের বাগান। নানান ধরনের সুন্দর ফুলের সংগ্রহ চোখ ও মন দুইই ভরিয়ে দেয়। (ছবি নং ৯)

৯ নং ছবি - পিলার রক চত্বরের সুন্দর ফুলের বাগান।

কোয়েকার্স ওয়াক (ছবি নং ১০) ।

১০ নং ছবি – ‘কোয়েকার্স ওয়াকের’ পাশে খাদ ভরতি শুধু মেঘ আর মেঘ।

বাস স্ট্যান্ডের খুব কাছে (৫০০ মিঃ) পায়ে চলার এই অপূর্ব রাস্তাটি লেঃ কোয়েকার ১৮৭২ সালে তেরি করান। এই ১ কিঃ মিঃ লম্বা পায়ে চলার রাস্তাটি নেবো পাহাড়ের দক্ষিণ ধার ঘেঁসে একে বেকে চলে গেছে ‘ভান এলেন হাসপাতালের’ পাশ দিয়ে। এই রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে এক সুন্দর অনুভূতি হয় – যেন মেঘের রাজ্যে ভেসে বেড়াচ্ছি। এক বাঙালি পরিবারের কর্তাকে মোবাইল ফোনে বলতে শোনা গেল –“জায়গাটা খুব সুন্দর, এই মাত্র এক খণ্ড মেঘ এসে আমাদের ঢেকে দিল, আমরা মেঘের ভিতর দিয়ে হাঁটছি।“ আমাদের কপাল ভাল ছিলনা। এত বেশি মেঘ ছিল যে প্রায় কিছুই দেখা যায়নি। মাঝামাঝি যে অবজারভেটরি আছে সেখানকার টেলিস্কোপেও কিছু দেখতে পাওয়া যায়নি।

প্রথম পর্ব এখানেই শেষ করছি। দ্বিতীয় পর্বে আরও কিছু দর্শনীয় স্থান যোগ করছি। এছাড়াও কোদাইকানেলের বিষয়ে একটি বিশেষ ও জরুরী তথ্য দ্বিতীয় পর্বে থাকছে।

বিমল কুমার বসাক

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।