প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

মাইসোর – ১ম ভাগ মাইসোর প্যালেস

মাইসোরকে সাধারণত “প্রাসাদের শহর“ বলা হয়ে থাকে। কিন্তু মাইসোর প্যালেস বলতে পূরণ দুর্গের ভিতরের নতুন প্রাসাদকেই বোঝায়। এটা “অম্বা বিলাস প্যালেস” নামেও পরিচিত। পর্যটকদের সংখ্যা বিচারে এই মাইসোর প্যালেস তাজমহলের পরেই ভারতে দ্বিতীয় স্থানে আছে (ছবি নং ১)। মাইসোর, ইংরেজদের দেওয়া নামটা এসেছে কর্ণাটক”মহিষুরু” থেকে। কথিত আছে মহিষাসুর নামে এক রাক্ষস এখানে রাজত্ব করতেন। তাঁরই নাম অনুসারে এই রাজ্যের নাম হয়েছিল মহিষুরু, যা পরিবর্তিত হয়ে এখন নাম হয়েছে মহিসুরু এবং মহিসুরু থেকে মাইসুরু যা সরকারি নাম হিসাবে ভারত সরকার ২০১১ সালে মেনে নিয়েছে।

ছবি নং ১

মাইসোর বা মাইসুরু নিয়ে লিখতে গেলে অনেক কিছু লিখতে হবে। তাই এবার শুধু মাইসোর প্যালেস নিয়ে লিখব। বাকি দর্শনীয় জায়গা গুলো নিয়ে পরে লিখব।

এখন যেখানে মাইসোর প্যালেস আছে সেখানে আগে পুরাগেরে নামে একটি গ্রাম ছিল। ১৫২৪ সালে চামারাজা ওদেয়ার -৩ এখানে মহিষুরু দুর্গ তৈরি করেন। পরে এই দুর্গ – প্রাসাদ অনেক বার পুনঃ নির্মাণ করা হয়েছে। আগের প্রাসাদটি আগুন লেগে ধ্বংস হয়ে গেলে তৎকালীন রাজা রাজর্ষি শ্রী শ্রী কৃষ্ণরাজা ওদেয়ার -৪ ১৮৯৭ সালে ইংরেজ স্থপতি হেনরি আরউইনকে নূতন প্রাসাদ নির্মাণের জন্য নিয়োগ করেন। পনের বছর পর ১৯১২ সালে প্রাসাদ নির্মাণের কাজ শেষ হয়।

ছবি নং ২

(ছবি নং ২) প্রাসাদটি নির্মাণের সময় হিন্দু, মুসলিম, রাজপুত এবং গথিক স্থাপত্য রীতি অনুসরণ করা হয়। ১৯১২ সালের পরেও প্রাসাদের সৌন্দর্যায়ন চলতেই থাকে এবং ১৯৪০ সালে তৎকালীন এবং শেষ মাইসুর রাজ স্যার জয়চামারাজেন্দ্রা ওদেয়ার প্রাসাদের পরিবর্ধন করান এবং বর্তমান “পাবলিক দরবার হল” নির্মাণ করান (ছবি নং ৩) ।

ছবি নং ৩

তিন তলা প্রাসাদটি সুন্দর ধুসর গ্রানাইট পাথরের তৈরি। লাল মার্বেল তৈরি গম্বুজ গুলি এর সৌন্দর্য অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে (ছবি নং ৪) ।

ছবি নং ৪

সামনের দিকে বড় বড় থামের উপর অনেক আর্চ প্রাসাদটিতে রাজকীয় সৌন্দর্য যোগ করেছে। মাঝখানের আর্চের উপর স্থাপিত আছেন বাহন গজের ওপর ধন-দৌলতের ও সমৃদ্ধির দেবী গজ-লক্ষ্মী (ছবি নং ৫)।

ছবি নং ৫

প্রাসাদের সামনের ছত্তরটি বিশাল। এর অনেকটা অংশ জুরে আছে সুন্দর বাগান (ছবি নং ৬)।

ছবি নং ৬

এছাড়া বাইরে বেশ কয়েকটা জায়গায় বাঘ বা বাঘের লড়াইয়ের মডেল বানিয়ে রাখা আছে। এর মধ্যে কাল গ্রানাইটের তৈরি বাঘের মডেলটি (ছবি নং ৭) খুবই আকর্ষণীয় । অনেক বাচ্চাদের দেখা গেল এই বাঘের কাছেই বেশী করে সময় কাটাতে – এখান থেকে নড়তেই চাই ছিলনা।

ছবি নং ৭

প্রাসাদের ভিতরের ছবি তোলা বারণ। তাই প্রাসাদের ভিতরের কোন ছবি দেখান গেলনা – কিন্তু সংক্ষেপে কিছু বর্ণনা দেওয়া হচ্ছে। এই বিশাল প্রাসাদ ঘুরে দেখতে আমার মত অনেকেরই প্রচুর পরিশ্রম হয়। পর্যটকদের যে ঘড় দিয়ে ঢুকতে হয় গম্বেথত্তি মানে ডল পাভেলিওন। এখানে উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর নানান পুতুল সাজান আছে। আর আছে কিছু শিল্প কর্ম এবং একটি ৮৪ কিঃ গ্রাঃ সোনায় মোরা হাওদা। এর পরে অম্বাবিলাসা – যেখানে রাজা ব্যক্তিগত অতিথি এবং মন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাত করতেন। এই ঘরের মোজাইকের মেঝে স্বল্প-মূল্যের সুন্দর পাথরের নকশা দিয়ে সাজান। হাতির দাঁতের নকশা করা সুন্দর রোজ উডের দরজা দিয়ে ঢুকলেই গণেশের মূর্তি, থাম গুলিও যথোপযুক্ত ভাবে সাজান। চার দিকে বৈভবের প্রদর্শন।

দেওয়ানি আম মানে জনতার দরবার কক্ষ – যেখানে প্রজা গন তাদের দরখাস্ত নিয়ে রাজার সঙ্গে দেখা করতেন। কল্যাণ মন্টপ বা বিবাহ সভার আট-কোনা ঘরটি গ্লাসগো থেকে আনা রঙিন কাঁচ দিয়ে সাজান। ছাত এবং মেঝে দুটোই ময়ূরের মোটিফ দিয়ে সাজান। এছাড়া দেওয়ালে আছে তৈল চিত্র। একটি কামরায় দেখা গেল অনেক প্রাচীন ও কিছু আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র। জানা দেল এই অস্ত্রশস্ত্র গুলো রাজ পরিবারের কেও না কেও কোন না কোন সময় ব্যবহার করে ছিলেন।

ছবি নং ৮

এই প্রাসাদে ১২ টি মন্দির আছে। তার মধ্যে সোমেশ্বর মন্দির, লক্ষ্মীরামানা মন্দির ও শ্বেত বরাহ-স্বামী মন্দির (ছবি নং ৮)। শ্বেত বরাহ-স্বামী মন্দিরে ভগবান বিষ্ণুর বরাহ অবতারের পূজা হয়। এই মন্দিরটি প্রাসাদের বিপরীত দিকে প্রবেশ পথের (ছবি নং ৯) ডান দিকের দেওয়াল ঘেঁসে তৈরি করা হয়েছে।

ছবি নং ৯

দিনের শেষে এই পথ দিয়ে যখন ক্লান্ত – পরিশ্রান্ত হয়ে ফিরলাম তখন এত ক্লান্তি সত্ত্বেও মনটা ভরে রইল একটা সুন্দর অনুভূতিতে। ভারতীয় রাজ শক্তির অঙ্গ এই ঐতিহাসিক প্রাসাদে এসে আমিও যেন কয়েকশ বছর পিছিয়ে সেই প্রাচীন যুগের স্মৃতি চারণায় মগ্ন।

বিমল কুমার বসাক

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।