মাইসোর – ২য় ভাগ
আগের বার মাইসোর প্যালেস নিয়ে
লিখেছি। এবার মাইসোরের অন্য জায়গা গুলো নিয়ে লিখব। মাইসোরে বেড়াবার
অনেক জায়গা আছে। কিন্তু সীমিত সময়ে সব জায়গা দেখা সম্ভব নয়।
আজ আমি শুধু লিখব সেন্ট ফিলমেনার গির্জা, চামুণ্ডা হিল, চামুণ্ডাস্বরি
মন্দির, মাহিসাসুর, নন্দি ও বৃন্দাবন গার্ডেনস সম্বন্ধে।
১। সেন্ট ফিলমেনার গির্জা
মাইসোরের মহারাজ নালভাদি কৃষ্ণারাজ
ওদেয়ার-৪ সেন্ট ফিলমেনার সম্মানে এই গির্জাটি তৈরি করান। মাইসোরের
মহারাজ ২৮ সে অক্টোবর ১৯৩৩ সালে এই গির্জাটির ভিত্তি প্রস্তর
স্থাপন করেন। সেই সময় তিনি বলে ছিলেন যে এই নূতন গির্জাটি মজবুত
ভাবে গড়ে উঠবে দুটি ভিত্তির ওপর– স্বর্গীয় আশীর্বাদ ও মানুষের
শ্রদ্ধা ও ভরসা । এই গির্জাটি যেখানে তৈরি হয় সেখানে মহারাজ
নালভাদি কৃষ্ণারাজ ওদেয়ার-৩ এর তৈরি একটি পুরনো গির্জা ছিল।
কাজেই এই গির্জাটির পিছনে আছে ২০০ বছরের ঐতিহ্য।
গির্জাটির নির্মাণ কাজ তত্ত্বাবধান করেন বিশপ রেনে। গথিক স্থাপত্য
রীতি অনুযায়ী এই গির্জাটি তৈরি হয়। সেন্ট ফিলমেনার সৃতি চিহ্ন
গির্জাটির ভিতরে বেদির ওপর স্থাপন করা হয়। এটি এশিয়ার বৃহত্তম
গির্জা। (ছবি নং ১, ২)।
ছবি
নং ১ - সেন্ট ফিলমেনার গির্জার সামনের দিক। লক্ষ করুন – এর দুটি
চুড়া আছে।
ছবি
নং ২ - সেন্ট ফিলমেনার গির্জার পাশের দিকে বিশাল চত্বর।
২।
চামুণ্ডা হিল, চামুন্ডেশ্বরী মন্দির, মহিসাসুর, চামুন্ডেশ্বরী
মাইসোর প্যালেস আমরা আগেই
দেখেছি। এখান থেকে ৩ কিঃ মিঃ দক্ষিণ – পূর্বে আছে একটা পাহাড়
যার নাম চামুণ্ডা হিল (সমুদ্র পৃষ্ট থেকে ১০৫০ মিঃ উচ্চতায়)।
যদিও আমরা বাসে করে চামুণ্ডা হিলের উপরে উঠেছিলাম (বেশীর ভাগ
পর্যটক তাই করেন), কিন্তু পাহাড়ে উঠার জন্যে সিঁড়ি আছে ১০০৮
টা সিঁড়ি।
বাস থেকে নেমেই দেখা যাবে মহিষাসুরের মূর্তি। আগের বার উল্লেখ
করা হয়েছিল যে এই মহিষাসুরের নাম অনুসারে মাইসোর শহরের নামের
উৎপত্তি। মূর্তিটি বেশ রংচঙে (ছবি নং ৩) কিন্তু যুদ্ধের বেশে
ভয়ংকর দর্শন – এক হাতে তরবারি আর অন্য হাতে বিশাল কেওটে সাপ।
তাই বাচ্চারা মজাও পায় আবার ভয়ও পায়। এই মূর্তিটির একটা আকর্ষণ
নিশ্চয়ই আছে।
ছবি
নং ৩ - চামুণ্ডাহিলের উপর মহিষাসুরের মূর্তি। মন্দিরে যাওয়ার
আগে এটাই চোখে পরবে।
চামুণ্ডা হিলের প্রধান
আকর্ষণ কিন্তু মহিষাসুরের মূর্তি নয়। চামুন্ডেশ্বরী মন্দিরই
এখানকার প্রধান আকর্ষণ। মহিষাসুরের মূর্তির দেখে বা দিকে বেশ
খানিকটা হেটে যেতে হবে এই মন্দির দেখার জন্যে। দেবী চামুন্ডেশ্বরী
(মা কালী) এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠিতা দেবী। চামুন্ডেশ্বরীর নাম
অনুসারেই এই পাহাড়ের নাম। এই পাহাড়ের নাম আগে ছিল মহাবালাছালা।
চামুন্ডেশ্বরী মন্দির ছাড়াও এখানে মহাবালেস্বরা নামে আর একটি
প্রাচীনতর মন্দির আছে। মোটামুটি ১৩০০ সালের কাছা কাছি কোন সময়ে
এটি তৈরি হয়। কিন্তু দেবী চামুন্ডেশ্বরীই রাজ পরিবারের দেবী
হিসাবে পূজিত হতেন। রাজা কৃষ্ণরাজ ওদেয়ার ৩ ১৮২৭ সালে এই মন্দিরের
সংস্কার ও পরিবর্ধন করেন। মন্দিরের বর্তমান রূপ তারই দেওয়া।
(ছবি নং ৪, ৫)।
ছবি
নং ৪ - চামুণ্ডা হিলের প্রধান আকর্ষণ চামুন্ডেশ্বরী মন্দিরে
যাওয়ার রাস্তা থেকে মন্দিরের পাশের দিকটাই দেখা যায়।
ছবি
নং ৫ - চামুন্ডেশ্বরী মন্দিরের সামনের দিকটাই।
মন্দিরের বাইরের দেওয়ালে
নানা রকম সূক্ষ্ম কারুকার্য মন ভরিয়ে দেয়। বিভিন্ন উচ্চতায় নানান
ভঙ্গিমায় অনেক সুন্দর সুন্দর মূর্তি (ছবি নং ৬) মন্দিরের সৌন্দর্য
আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
ছবি
নং ৬ - বাইরের দেওয়ালে সূক্ষ্ম কারুকার্য ও বিভিন্ন উচ্চতায়
নানান ভঙ্গিমায় সুন্দর সুন্দর মূর্তি।
একটা কথা বলতেই হবে -
যদিও ভক্তদের প্রচুর ভীর তবুও সব কিছু সুশৃঙ্খল ভাবে চলার জন্যে
মন্দির দর্শন বা পুজো দিতে কোন অসুবিধায় পরতে হয়নি।
৩। নন্দী
ছবি
নং ৭ - একটি আস্ত কাল পাথরের খণ্ড থেকে তৈরি শিবের বাহন নন্দী
মূর্তিটি ১৬ ফুট উঁচু এবং ২৫ ফুট লম্বা। এর পেছন দিকে একটি ছোট
শিব মন্দির আছে।
চামুণ্ডা হিলের উপরে ওঠার
জন্য যে ১০০৮ টা সিঁড়ি আছে তারই পাশে দেখা যাবে শিবের বাহন এই
বিশাল নন্দী মূর্তি। একটি আস্ত পাথরের খণ্ড থেকে তৈরি এই মূর্তিটি
(ছবি নং ৭) ১৬ ফুট উঁচু এবং ২৫ ফুট লম্বা। পাথরের খণ্ডটি ওখানেই
ছিল, অন্য কথাও থেকে আনতে হয়নি। শিল্পীর অসাধারণ দক্ষতায় তৈরি
এই অপূর্ব সুন্দর কাল পাথরের মূর্তিটি রাজা ডোড্ডা দেবরাজ ওয়দেয়ার
১৬৬৪ সালে তৈরি করান। মূর্তিটি নিজের এক মহিমা নিয়ে সদর্পে বসে
আছে যেন বীর্যের প্রতীক হয়ে।
৪। বৃন্দাবন গার্ডেনস
বৃন্দাবন গার্ডেনস - ৬০
একর জমির ওপর গড়ে ওঠা এই সুন্দর বাগানটি দেখভাল করেন কর্ণাটক
সরকারের কাবেরি নীরাভারি নিগম অর্থাৎ কাবেরি ইরিগেসন ডিপার্টমেন্ট।
এর পাশে আছে ফলের বাগান ও নাগা-বন এবং চন্দ্রবন নামে দুটি হর্টিকালচার
ফার্ম। বৃন্দাবন গার্ডেনসের মধ্যেই আছে একটা সুন্দর লেক যেখানে
বেটিং এর ব্যবস্থা আছে। এই লেকটি বাঁধের জলে পুষ্ট (ছবি নং ৮)।
ছবি
নং ৮ – কাবেরির বাঁধের জল বৃন্দাবন গার্ডেনসের লেকের ভিতর ঢুকছে।
বাগানটি তিনটি ধাপে উপরের
দিকে উঠে গেছে। প্রতিটি ধাপ বাহারি পাতা ও ফুলের গাছ, ফোয়ারা
এবং আলোর মালা দিয়ে সাজান। (ছবি নং ৯, ১০) এই সাজান বাগান দেখতে
খুবই ভাল লাগল।
ছবি
নং ৯ – বৃন্দাবন গার্ডেনসের লেকের পাশে উঁচু ফোয়ারার সারি।
ছবি
নং ১০- বৃন্দাবন গার্ডেনসে তিন ধাপে আলো, ফোয়ারা এবং বাহারি
পাতা ও ফুলের গাছ দিয়ে সুন্দর করে সাজান অনেক বাগান
বিশাল লেকের উপর দিয়ে
পায়ে চলার রাস্তা, ফুলের বাগান ইত্যাদি মনটা অনেকটা ভাল করে
দিল। এই বাগানের প্রধান আকর্ষণ মিউজিক্যাল ফাউন্টেন। বাজনার
তালে তালে ফোয়ারার জল ওঠা নামা করে আর তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে
আলোর তীব্রতা ও রং পালটাতে থাকে (ছবি নং ১১, ১২) । এই ফোয়ারার
চারদিক ঘিরে ভীর আর ভীর।
ছবি
নং ১১ - বৃন্দাবন গার্ডেনসের প্রধান আকর্ষণ মিউজিক্যাল ফাউন্টেন।
ছবি
নং ১২ – বাজনার তালে তালে ফোয়ারার আকার, আকৃতি ও রং ক্ষণে ক্ষণে
পাল্টায়।
ছোট বেলায় দেখা বৃন্দাবন
গার্ডেনস এবার আমাকে নিরাশ করেছে। আগের বার বৃন্দাবন গার্ডেনস
যতটা ভাল লেগেছিল এবার ততটা ভাল লাগেনি। আগে যতটা পরিষ্কার পরিছন্ন
এবং ছকছকে ছিল এখন তটটা নেই। প্রচুর দোকান পাট (বেশির ভাগ খাবার
দোকান) হওয়ার ফলে যায়গাটা অনেকটা নোংরা হয়েছে। ভিড়ও বেড়েছে প্রচুর।
কিন্তু নিরাশার প্রধান কারণ – আমরা বড় হয়ে গেলে আর ছোট বেলার
চোখ দিয়ে কিছু দেখতে পারিনা। ছোট বেলায় সামান্য কিছু দেখলেই
যেরকম আনন্দ হত এখন বড় বেলায়
আর তা হয়না।
বিমল কুমার
বসাক
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
অবসর-এর
লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য
অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।